আওয়ামী পুনর্বাসন হবে চব্বিশের বিপ্লবের আত্মঘাত

Spread the love

গত ১৫+ বছর আওয়ামী স্বৈরাচার, ফ্যাসিবাদ, জুলুম, গুম, খুন, নির্যাতন, দুর্নীতি, টেন্ডারবাজি, লুটতরাজ, চাঁদাবাজি, দখলবাজি, মাদক, ভূমিদস্যুতা , ব্যাংক, বীমা, শেয়ার বাজার ধ্বংস, বিদেশে অর্থ পাচার বাংলাদেশের উপর জেঁকে বসেছিলো, ঠিক যেমনটি হাসিনার পিতা মুজিব ১৯৭২-১৯৭৫ থেকে কায়েম করেছিলো। ঠিক ঠিক যেন বাবার স্বপ্ন।

১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট শেখ মুজিব ও তার ফ্যামিলি নিহত হওয়ায় জাতি যেমন আনন্দ প্রকাশ করেছিলো, রাস্তা ঘাটে মিষ্টি বিতরণ করেছিল, অনেকে নফল নামাজ পড়েছিলো, নফল রোজা রেখেছিলো ঠিক একই দৃশ্য দেখা গিয়েছিলো চব্বিশে এসে হাসিনা দেশ ছেড়ে পালানোর সময়ে। হাসিনা ও তার পিতার করুন পরিণতি একইভাবে একই মাসে যেন এক অসম্ভব মিল দেখেছে দেশবাসী। জাতি মুক্তি পেয়েছে হাসিনার ফ্যাসিবাদ থেকে।

ভারত ইতিমধ্যে মাঠে নেমেছে আওয়ামীলীগকে পুনরায় রাজনীতিসহ সকল ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্য নিয়ে আর এতে তারা বেছে নিয়েছে বিএনপিকে, তাদেরকে ক্ষমতার লোভ ও টোপও দিয়েছে।

১৯৭৫ সালে আওয়ামীলীগের পতনের পর বিএনপি ১৯৭৯ সালেও আওয়ামীলীগ পুনর্বাসন করেছিলো। যার খেসারত দিয়েছিলো ১৯৮১ সালে হাসিনা দেশে ফেরার মাত্র দুই সপ্তাহের মধ্যে বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও ডাইনামিক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে নৃশংসভাবে হত্যার মধ্য দিয়ে। তখনও সুযোগ ছিলো সন্ত্রাসী আওয়ামীলীগকে নিষিদ্ধ করার কিন্তু অপরিণামদর্শী বিএনপি তা বুঝতে চূড়ান্তভাবে ব্যর্থ হয়েছিলো।

জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে প্রায় ১৭০০ অধিক ছাত্র জনতার হত্যার মধ্যদিয়ে অন্তর্বর্তী কালীন সরকার দেশ সংস্কার করার (Reform, Rebuild, Reconstruct) ব্রত নিয়ে আওয়ামী জঞ্জালমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে কাজ করছে যেখানে আপামর সাধারণ জনতার রয়েছে অকুন্ঠ সমর্থন, কিন্তু সেখানে বিএনপির যেন তর সইছেনা। দেশের সর্বস্তরের জনগণ যেখানে শেখ হাসিনাসহ আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীর মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার চাইছে এবং সন্ত্রাসী দল হিসেবে আওয়ামীলীগের নিষিদ্ধের দাবি করছে সেখানে আওয়ামীলীগ সম্পর্কে বিএনপির আচরণ এবং মনোভাব জাতিকে খুব হতাশ করছে, ব্যথিত করছে। বিএনপির সাম্প্রতিক সময়ের কথা বার্তা শুনে এটি পরিষ্কার যে তারা ফ্যাসিবাদের পক্ষে তাদের অবস্থান, ফ্যাসিবাদের পুনর্বাসন করতে তারা বদ্ধ পরিকর।

After Sheikh Hasina's Overthrow, Bangladesh's Democracy Needs Western Aid

প্রধান উপদেষ্টা ও অন্যান্য উপদেষ্টারা আওয়ামীলীগ সম্পর্কে সম্পূর্ণ নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করছে এবং পরিষ্কারভাবে তাদের অবস্থান জানান দিচ্ছে যেমন উপদেষ্টা
মাহফুজ আলম স্পষ্টই বলেছিলেন, আগামী নির্বাচনে যাতে আওয়ামীলীগ অংশ নিতে না পারে, এইজন্য সরকার সম্ভাব্য সবকিছুই করবে। নাহিদ বলেছিলেন, মুজিবকে আমি জাতির পিতা মানি না। আসিফ বলেছিলেন, মুজিববাদ মানেই ফ্যাসিবাদ। ডঃ ইউনূস সাহেব বলেছিলেন, আওয়ামীলীগ আর ফ্যাসিবাদের কোন জায়গা বাংলাদেশে নাই। এই কথাগুলোর মর্মার্থ হলো আওয়ামী ফ্যাসিবাদের কোনো স্পেস বাংলাদেশে নেই। বর্তমানে আওয়ামীলীগ তার জন্মের পরে সবচেয়ে কঠিন সময় পার করলেও তাদের মধ্যে কোনো অনুশোচনা নেই, কোনো দুঃখবোধ নেই, কোন লজ্জা নেই, তারা ব্যথিত নয়।

অন্যদিকে বিএনপি ইতিমধ্যে আওয়ামী পুনর্বাসন প্রকল্প হাতে নিয়েছে। অর্থের বিনিময়ে তাদেরকে পুনর্বাসিত করছে যা খুবই উদ্বেগের। এরই মধ্যে গতকাল বিএনপি আরো এক ধাপ এগিয়ে বললো যে আওয়ামীলীগ ছাড়া তারা নির্বাচন করবে না। আওয়ামীলীগসহ সব দলকেই তারা নির্বাচনে চায়। একটু মনে করুনতো ২০১৪, ২০১৮, ২০২৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামীলীগ কি বিএনপিকে নির্বাচনে চেয়েছিলো? কেমন হয়েছিল সেই নির্বাচনগুলো?

বিএনপির ব্যর্থতা ও অপরিণামদর্শিতার জন্য এই ক্রাকডাউনের মধ্যেও যদি কোনভাবে আওয়ামীলীগ স্পেস পায়, রাজনীতির সুযোগপায়, পুনর্বাসিত হয়, লজ্জিত না হয়, মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য ক্ষমা না চায় এবং তাদের বিচার না হয় তাহলে আওয়ামীলীগ বীরদর্পে ফিরবে এবং জাতিকে আবারো খেসারত দিতে হবে ভয়াবহরূপে। বুদ্ধিমানরা কিন্তু একই গর্তে বার বার পা ফেলে না।

বাংলাদেশে আবারো ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হবে যে বাংলাদেশ বার বার সুযোগ পেয়েছে আওয়ামীলীগ নামের সন্ত্রাসী সংগঠনের অভিশাপ থেকে মুক্ত হওয়ার, কিন্তু বিএনপির অসহযোগিতার জন্য আওয়ামী সন্ত্রাস ও অভিশাপ থেকে আর কোনোদিন মুক্ত হতে পারলো না। ইতিহাস যেমন আওয়ামীলীগের নৃশংসতা মনে রাখবে, তেমনি আওয়ামীলীগকে পুনর্বাসনে কারা ভূমিকা পালন করছে, সেটিও মনে রাখবে।
চব্বিশের জুলাই-আগস্ট বিপ্লব বা গণঅভ্যুত্থান আল্লাহর পক্ষ থেকে এক বড় নেয়ামত যে তিনি তার নিজ অনুগ্রহে একদিকে যেমন গত ১৫ বছরের আওয়ামী দুঃশাসন থেকে দেশবাসীকে মুক্তি দিয়েছে অন্যদিকে আওয়ামী ফ্যাসিবাদ চিরতরে বন্ধ করার এক মোক্ষম সুযোগ এনে দিয়েছে। তাই বিএনপিসহ সকল রাজনৈতিক দলসমূহকে আওয়ামী ফ্যাসিবাদ মুক্ত বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার বিকল্প নেই।

লেখকঃ ব্যারিষ্টার ওয়াহিদ মুহাম্মদ মাহবুব
১৯/১১/২০২৪, লন্ডন।


Spread the love

Leave a Reply