আওয়ামী লীগের পক্ষে কাজ করছেন খুলনার এডিশনাল পুলিশ কমিশনার

Spread the love

খুলনা সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি নেতা-কর্মী তথা বিএনপির মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জুর কর্মীদের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযানে নেমেছে কেএমপি পুলিশ। খুলনার অতিউৎসাহী পুলিশ কমিশনার হুমায়ুন কবির আর তার প্রধান সহযোগী এডিশিনাল পুলিশ কমিশনার সরদার রকিবুল ইসলাম নব্য আওয়ামী  সেজে পুলিশী হয়রানির মাধ্যমে বিএনপি নেতা-কর্মীদের ঘর-বাড়ি ছাড়া করে আওয়ামী লীগ প্রার্থী তালুকদার খালেককে জেতাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে অতি সম্প্রতি এডিশনাল ডিআইজি পদে প্রমোশন পাওয়া সরদার রকিবুল খুলনার পুলিশ কমিশনার হওয়ার স্বপ্নে বিভোর হয়ে দিন-রাত আওয়ামী লীগের  মতো খালেকের পক্ষে কাজ করছে।   বিএনপি তথা বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার-নির্যাতন-হয়রানি করতে প্রতিদিন অপারেশনে পাঠাচ্ছে কেএমপির ডিবি আর বিভিন্ন থানার সিভিল টিমকে। ঘরে ঘরে হানা দিচ্ছে পুলিশ প্রতি রাতে। এসব কাজ করতে গিয়ে পুলিশ কমিশনারকেও পাত্তা দিচ্ছে না রকিবুল। কারণ সে বর্তমান কমিশনারকে সরিয়ে নিজেই ভারপ্রাপ্ত পুলিশ কমিশনার হতে চায়।

ইলিয়াস আলীর তদবিরেই সে পুলিশের ১৭ ব্যাচের সিনিয়র অনেক অফিসারের আগে প্রমোশন পায়। পোস্টিং পায় মৌলভীবাজারে। সেখানে এডিশনাল এসপির চাকরি করার সময় সরদার রকিবুল অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমানকে শুধু ‘আব্বা’-ই ডাকতো না; পা ধরে সালাম করতো। সিলেট আর মৌলভীবাজারে চাকরি করে লন্ডন-আমেরিকা প্রবাসীদের কাছ থেকে ঘুষ খেয়ে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়ে যায় গরিব ঘরের ছেলে রকিবুল।

বিএনপি ক্ষমতা থেকে যাবার পর চোখ পাল্টিয়ে দেয় রকিবুল। রাতারাতি আওয়ামী লীগ সেজে যায়। পুরনো লিংকে আবার লাইন দেয় বাগেরহাটের আওয়ামীলীগ এমপি তালুকদার খালেকের সাথে। কারণ দুইজনের বাড়িই একই এলাকায়, বাগেরহাটের রামপালে। অবশেষে এবার খুলনার নির্বাচনে সে ইউনিফর্ম খুলে আওয়ামী ক্যাডারের ভূমিকায় নেমেছে। এ কাজের জন্যই অনেক সিনিয়র অফিসারকে ডিঙিয়ে ১৮ বিসিএসের এই জুনিয়র অফিসারকে বানানো হয়েছে এডিশনাল ডিআইজি। পোস্টিং দেয়া হয়েছে কেএমপিতে। ওখানে সে এখন তার নব্য আওয়ামী লীগার পুলিশ কমিশনার হুমায়ুনের চেয়ে বড় আওয়ামীলীগ সেজে মাঠে নেমেছে। ‘৯১ সালে ব্রাক্ষণবাড়িয়ার নৌপরিবহণ প্রতিমন্ত্রী হারুন আল রশিদের তদবিরে পুলিশে চাকরি পাওয়া নিতান্ত গরিব ঘরের সন্তান হুমায়ুন কবির ওয়ান ইলেভেনের পরও বেকায়দায় ছিল। পোস্টিং ছিল খাগড়াছড়ির মহালছড়িতে। ওখানে কনস্টবলদের খাবারের টাকা, অফিসারদের গাড়ির তেলের টাকা চুরি থেকে শুরু করে এমন কোন দুর্নীতি নেই যা হুমায়ুন করেনি। আওয়ামীলীগ আমলে সাবেক আইজি শহিদুল হকের সঙ্গে লাইন দিয়ে, সাপ্লাই দিয়ে রাতারাতি ভাল ভাল পোস্টিং পেয়ে যায় হুমায়ুন। বৌকে ঢাকায় রেখে নিজের মহিলা স্টাফের সাথে তার কেলেংকারি পুলিশে সবাই জানে। এমন রঙ বদলানো হুমায়ুনকে আউট করে দিয়ে কেএমপির ভারপ্রাপ্ত কমিশনার হতে চায় সরদার রকিবুল। তালুকদার খালেক নাকি রকিবুলকে আশ্বাস দিয়েছে, পুলিশ কমিশনারকে বিদায় করে দেয়া হবে, নতুন কোন কমিশনার নিয়োগ দেয়া হবে না। রকিবুল হবে ভারপ্রাপ্ত পুলিশ কমিশনার!

মজার ব্যাপার হচ্ছে, সরদার রকিবলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বার সময় থাকত ছাত্রদল নিয়ন্ত্রিত মুজিব হলে। বিএনপি তখন ক্ষমতায়। পররাষ্ট্র মন্ত্রী কর্ণেল মোস্তাফিজের আশির্বাদপুষ্ট বাগেরহাট গ্রুপ তখন হল সভাপতি মাহবুব তালুকদারের নেতৃত্বে নিয়ন্ত্রণ করত মুজিব হল। ওই গ্রুপের ছেঁচড়া ক্যাডার হিসেবে হল পাহারার কাজ করত বাগেরহাটের ছেলে সরদার রকিবুল। বাগেরহাটের ছেলে বলে তালুকদার মাহবুব হলে সিট দিয়েছিল রকিবুলকে। হল পাহারার বিনিময়ে সে ক্যাডারদের সাথে হল ক্যান্টিনে ফ্রি খেত। আর মাহবুব তালুকদারের ফরমায়েশি কাজ করত।

পরবর্তীতে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে বাগেরহাটের এমপি তালুকদার খালেক ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রী হয়। বিসিএস চাকরির ধান্ধায় খালেকের সঙ্গে লাইন দেয় রকিবুল। ১৮ বিসিএসের মাধ্যমে পুলিশে চাকরি ভাগিয়ে নেয় সে ১৯৯৯ সালে। তার ট্রেনিং – শিক্ষানবিস কাল পার হতে না হতেই ক্ষমতায় আসে বিএনপি। মুজিব হলের ছাত্রদলের পুরনো লিংকে আবার বিএনপি সাজে রকিবুল। পোস্টিং-প্রমোশন-দুর্নীতি করে রকিবুল তখন ছিল মহা বিএনপি। এবার আওয়ামীলীগ আমলে নড়াইলে বিএনপি-ছাত্রদল নেতা-কর্মীদের খুন-গুম-গ্রেপ্তার-নির্যাতন করে এখন সে আবার মহা আওয়ামী লীগ! আবার ক্ষমতা বদল হলে ভবিষ্যতে কি রূপ ধারণ করবে রাজাকার পরিবারের সন্তান সরদার রকিবুল? কে রক্ষা করবে তাকে সীমাহীন দুর্নীতি, খুন আর নির্যাতনের বিচার থেকে?


Spread the love

Leave a Reply