আতিয়া ভবনের বাড়িতে কে এই জঙ্গি মুসা ?

Spread the love

206619_126বাংলা সংলাপ ডেস্কঃভোর থেকে সিলেটের শিববাড়ি এলাকায় জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে একটি বাড়ি ঘিরে ফেলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। আতিয়া ভবনের ওই বাড়িতে এখনও অভিযান চলছে। র‌্যাব, পুলিশ, সোয়তের পাশাপাশি সেনাবাহিনীও অভিযানে অংশ নিয়েছে।

পুলিশ বলছে ওই বাড়িতে নব্য জেএমবির শীর্ষ নেতা মুসা ও নারী জঙ্গি মর্জিনা রয়েছে।

ঢাকা-চট্টগ্রামের ওই অভিযানের পর আটককৃত বিভিন্ন জঙ্গিদের দেওয়া তথ্যমতে ঢাকা থেকে আসা কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের সদস্যরা ওই বাড়িতে থাকা জঙ্গিদের সন্ধান পান।

২০০৪ সাল থেকেই জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ে বর্তমানে নব্য জেএমবির অন্যতম শীর্ষ নেতা মঈনুল ইসলাম ওরফে মুসা। ওই সময়ে রাজশাহী অঞ্চলে বাংলা ভাইয়ের অপারেশন শুরু হলে তার হাত ধরেই সে জেএমবিতে যোগ দেয়। তবে বয়সে ছোট হওয়ায় সে সময় প্রশাসনের নজরে আসেনি মুসা। সে সময় মুসা বাগমারা উপজেলার তাহেরপুর ডিগ্রী কলেজের এইচএসসির প্রথম বর্ষের ছাত্র ছিল।

মুসার মা সুফিয়া বেগম  জানান, গত ৮ মাস আগে সে তার নিজ বাড়ি রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার গণিপুর ইউনিয়নের বজ্রকোলা গ্রামে এসেছিল। ওই সময় সৌদি আরব যাবে বলে ৩ লাখ টাকার জমি বিক্রি করে বাড়ি থেকে চলে যায়। এরপর সে আর বাড়ির সঙ্গে কোন যোগাযোগ করেনি। তবে মুসা সর্বশেষ গ্রামে এসে যাওয়ার সময় বাড়িতে থাকা তার ছবিসহ বেশ কিছু কাগজপত্র পুড়িয়ে ফেলে যায় বলে জানান মা সুফিয়া।

মুসা ঢাকার উত্তরায় একটি ভবনের ৬ তলায় থাকতো। সেখানে কয়েকবার গেছেন সুফিয়া বেগম। তিনি বলেন, ‘ওই ভবনে মেজর জাহিদ নামের একজন থাকতো। মেজর জাহিদ ছিল ২ তলা। মুসার সঙ্গে মেজর জাহিদের ঘনিষ্ঠতা বেশি ছিল। মাঝে মধ্যে কিছু লোকজনও আসতো সেই বাড়িতে। ওই ভবনের ছাদে তারা মিটিংও করতো।’

নব্য জেএমবির প্রধান মুসা এটি তার সাংগঠনিক নাম। তার নাম মঈনুল ইসলাম। পিতার নাম আবুল কালাম মোল্লা। তিনি স্থানীয় মসজিদের মোয়াজ্জিন ছিলেন। সম্প্রতি তিনি মারা গেছেন। মুসার মায়ের নাম সুফিয়া বেগম। গ্রামের বাড়ি রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার গণিপুর ইউনিয়নের বজ্রকোলা।

স্থানীয়রা জানায়, ২০০৪-০৫ সেশনে সে বাগমারা উপজেলার তাহেরপুর ডিগ্রি কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র ছিল। ২০০৪ সালের এপ্রিল থেকে বাংলা ভাইয়ের নেতৃত্বে রাজশাহী অঞ্চল তথা বাগমারা, নওগাঁর আত্রাই, রাণীনগর, নাটোরের নলডাঙ্গায় অভিযান শুরু করলে মুসা জেএমবিতে যোগদান করে।

ওই সময় বাংলাভাইয়ের সহযোগী হওয়ার সুবাদে এলাকায় দাপট দেখাতো এবং লোকজনকে জেএমবিতে যোগদানের উৎসাহ দিতো। যারা তার বিরোধীতা করতো তাদের ধরে এনে নির্যাতন করাও ছিল তার কাজ। পরবর্তীতে বাংলাভাই আত্মগোপনে চলে যাওয়ার পর মুসাও কিছুদিন আত্মগোপনে ছিল। এরপর সে আবার এলাকায় ফিরে আসে। এইচএসসি পাশ করার পর সে রাজশাহী কলেজে ভর্তি হয়। পরে সেখান থেকে রেফার্ড নিয়ে ঢাকা কলেজে চলে আসে। এরপর সেখান থেকে পাশ করার পর উত্তরার লাইফ স্কুলে শিক্ষকতা শুরু করে।

এরই মাঝে অর্থাৎ আড়াই বছর আগে সে বাসুপাড়া ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাঁইপাড়া গ্রামের আব্দুস সামাদের মেয়ে তৃষ্ণামনিকে বিয়েও করে। বিয়ের পর সে স্ত্রী নিয়ে উত্তরার ১৩ নম্বর সেক্টরের ৬ তলা ওই বাড়িতে থাকতো। আর এখানেই থাকতো নব্য জেএমবির আরেক নেতা সেনাবাহিনী থেকে অবসরপ্রাপ্ত মেজর জাহিদ। যিনি আজিমপুরের অভিযানে আত্মহত্যা করেন।

মেজর জাহিদের মেয়ে লাইফ স্কুলে পড়তো। আর এখানেই আরেক নেতা তানভির কাদিরসহ নব্য জেএমবির সমন্বয়ক তামিম চৌধুরী, জিয়াসহ অন্যান্য নেতাদের নিয়ে ওই বাসার ছাদে মিটিং করতো বলে জানান মুসার মা।

মঈনুল ওরফে মুসার মা সুফিয়া বেগম ব্রেকিংনিউজকে আরও জানান, টেলিভিশনে দেখে আমি ছেলের জঙ্গি হওয়ার ঘটনা জানতে পারি। মেজর জাহিদসহ কিছু লোকজন তাদের বাড়ির ছাদে মিটিং করতো। কিন্তু কি মিটিং করতো তখন বুঝিনি। এখন বুঝতে পারছি আসলেই তারা জঙ্গির মিটিং করতো।

তিনি বলেন, ‘আমার ছেলের ঘটনায় লজ্জিত আমি। এক সময় আমার ছেলে ভালো ছাত্রও ছিলো। শুক্রবার থেকে আমি আর বাড়ির বাইরে বের হতে পারছিনা। সবাই আমার ছেলের কথা জিজ্ঞাসা করছে। জানিনা আমার ছেলের ভাগ্যে কি আছে। তবে আমার ছেলের মত আর কোন ছেলে যেন জঙ্গিতে জড়িয়ে না পড়ে।’

এদিকে মুসার স্ত্রী তৃষ্ণামনির পিতা আব্দুস সামদ বলেন, ‘৮ মাস থেকে আমার মেয়ের সঙ্গে কোন যোগাযোগ ছিলনা। গত শুক্রবার রাত সাড়ে ৩ টার দিকে অপরিচিত এক নম্বর থেকে আমার মোবাইল ফোনে মিসড কল আসে। পরে আমি ওই নম্বরে ফোন করি। তখন আমার মেয়ে বলে বাবা আমি। আমার মেয়ে জানায় আমার বিপদ, পুলিশ আমাদের বাসা ঘিরে ফেলেছে। তখন আমি তাকে বলি তুমি পুলিশের কাছে যাও। এরপর আর কোন কথা হয়নি।’

তিনি বলেন, ‘মঈনুল বলেন আর মুসাই বলেন সে এখন দেশের শত্রু। জাতির শত্রু। আমি তাকে আর জামাই হিসেবে পরিচয় দিতে চাইনা। তবে আমার মেয়ে যদি অপরাধী হয় তবে প্রচলিত আইনে যে শাস্তি হবে আমি মেনে নেব।’

এক প্রশ্নের জবাবে আব্দুস সামাদ কান্না কণ্ঠে বলেন, ‘ওই সময় আমি বুঝিনি। তার আচরনেও কখনও এমন প্রকাশ পায়নি। আর যদি জানতাম তাহলে আমি কি আর আমার মেয়েকে তার সঙ্গে বিয়ে দিতাম। আমি বঙ্গবন্ধুর আদর্শে রাজনীতি করি। আমার মেয়েও আওয়ামী লীগকে ভোট দেয়। কিন্তু কি করে তাকে এমন অবস্থার মধ্যে ফেলে দিল আমরা কল্পনা করতে পারিনি।’

এক পর্যায়ে তিনি বলেন, ‘আমার মেয়ে যদি সত্যিই জঙ্গি হতো তবে আমাকে ফোন করে বলতো না আমি কি করবো বাবা।’

মুসার গ্রামের বাসিন্দা মঞ্জুরুল আলম বলেন, ‘বাংলাভাইয়ের আমলেও মঈনুল জেএমবির সঙ্গে জড়িত ছিল। সে সময় তার সঙ্গে বাড়িতে কিছু অপরিচিত লোকজন আসতো। তবে যারা আসতো দু’তিনদিন থাকলেও তারা বাড়ির বাহিরে বের হতো না। তাই কিছু বুঝা যেত না।’


Spread the love

Leave a Reply