ইউরো ২০২০: কোয়ার্টার ফাইনালে কার সাথে কার খেলা

Spread the love

বাংলা সংলাপ রিপোর্টঃ উত্তেজনাপূর্ণ,রোমাঞ্চকর, রুদ্ধশ্বাস- একটি রাউন্ড অফ ১৬ দেখলো ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপের দর্শকরা। যেখানে শেষ মিনিটে গোল, পেনাল্টি শুটআউট, লাল কার্ড, বড় দলের বিদায়, আন্ডারডগ দলের জয় সবই ছিল।

ফুটবল বিশ্লেষক গ্যারি লিনেকার বলেই দিলেন, “আমার দেখা ফুটবলের সেরা দিন হতে পারে এটা। দুটো অসাধারণ ম্যাচ, একটি অন্যটির প্রতিচ্ছবি। অবিশ্বাস্য সব দৃশ্য।”

সেদিন রাতে ২ ম্যাচে মোট ১৪টি গোল হয়েছে। একটি গড়িয়েছে টাইব্রেকারেও।

৮টি ম্যাচে মোট ২৫টি গোল হয়েছে, ৩টি গড়িয়েছে ১২০ মিনিট অর্থাৎ অতিরিক্ত সময় পর্যন্ত। একটা টাইব্রেকার পর্যন্ত।

বিদায় নিয়েছে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর পর্তুগাল, কিলিয়ান এমবাপের ফ্রান্স, থমাস মুলারের জার্মানি, লুকা মদ্রিচের ক্রোয়েশিয়া, গ্যারেথ বেলের ওয়েলস এবং নেদারল্যান্ডস।

শেষ আটে আছে ইতালি, চেক রিপাবলিক, বেলজিয়াম, ইংল্যান্ড, স্পেন, ইউক্রেন, সুইজারল্যান্ড, ডেনমার্ক।

শেষ আট অর্থাৎ কোয়ার্টার ফাইনালের প্রথম ম্যাচটি ২ জুলাই সুইজারল্যান্ড বনাম স্পেন, বিকেল ৫ টায়।

দ্বিতীয় ম্যাচ বেলজিয়াম বনাম ইতালি, ২ জুলাই সন্ধ্যা ৮টায়।

তৃতীয় ম্যাচটি চেক রিপাবলিক ও ডেনমার্কের মধ্যে, ৩ জুলাই বিকেল ৫টায়।

চতুর্থ ও শেষ কোয়ার্টার ফাইনালে মুখোমুখি হবে ইউক্রেন ও ইংল্যান্ড, ৩ জুলাই সন্ধ্যা ৮টায়।

কোন দলের পরিস্থিতি কেমন
শেষ ষোলোতে যারা প্রথম ম্যাচেই সবচেয়ে নাটকীয়তার জন্ম দিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে এসেছে, সেই সুইজারল্যান্ড ও স্পেন মুখোমুখি হবে।

‘অঘটন’ যদি বলা হয় সেটা বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন ও গতবারের ইউরো ফাইনালিস্ট ফ্রান্সের বাদ পড়া, আর সেই অঘটনকে সম্ভব করেছে গ্রানিত জাকার নেতৃত্বে সুইজারল্যান্ড।

সুইজারল্যান্ড এই টুর্নামেন্ট শুরুর সময় খুব একটা ভালো অবস্থায় ছিল না। ইতালির সাথে ৩-০ গোলের হার, ওয়েলসের সাথে ১-১ গোলে ড্রয়ের পরে ফুটবল বিশ্লেষকরা বলছিলেন এই দলটির সমন্বয় হচ্ছে না, শাকিরির মতো তারকারা জ্বলে উঠতে পারছেন না।

ঠিক তার পরের ম্যাচেই তুরস্কের সাথে শাকিরি করেন দুই গোল, সুইজারল্যান্ড করে ৩ গোল, শেষ ষোলোতে জায়গা করে নেয় দলটি নিজেদের গ্রুপের তৃতীয় দল হিসেবে। সেখানে ফ্রান্সের সাথে ৩-৩ গোলে ড্র করে, টাইব্রেকারে জয় পায়

সুইজারল্যান্ড নিজেদের ‘দ্বিতীয় রাউন্ডের দল’ তকমা ঝেড়ে ফেলে এবারে কোয়ার্টার ফাইনালে, সেখানে তাদের প্রতিপক্ষ স্পেন। স্পেনও শেষ ষোলো খেলেছে ১২০ মিনিটের ম্যাচ, যার প্রথম ৯০ মিনিট ছিল ৩-৩ গোলের ড্র।

এরপর অতিরিক্ত সময়ে দুটো গোল করে ৫-৩ গোলের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে বার্সেলোনার সাবেক কোচ লুই এনরিকে।

স্পেনের দল গত দশকে যেমন তারকাবহুল ছিলো, এবার ঠিক তেমনটি নয়, এবারে রেয়াল মাদ্রিদ বা বার্সেলোনার মতো ক্লাবগুলোর বড় নামগুলো তেমন নেই।

তবু বার্সেলোনার ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার সার্জিও বুসকেটস নেতৃত্ব দিচ্ছেন, এছাড়া সারাবিয়া, আলভারো মোরাতারাও বল পায়ে জাল খুঁজে পাচ্ছেন। যদিও গ্রুপ পর্বের প্রথম দুই ম্যাচ বেশ ম্যাড়ম্যাড়ে ড্র হয় স্পেনের, কিন্তু পঞ্চম ম্যাচে স্লোভাকিয়াকে ৫-০ গোলে হারিয়ে দেয় স্পেন। শেষ দুই ম্যাচে স্পেন দলটি ১০টি গোল করেছে।

গোল ও বল ধরে রাখার দিক থেকে এখন পর্যন্ত ইউরো ২০২িএ সবার ওপরে স্পেন, ১১টি গোল, ৬৭.৫% বল পায়ে।

কোয়ার্টার ফাইনালে দলের নামের ভার ও শক্তিমত্তার বিচারে সবচেয়ে বড় ম্যাচের খেতাব বেলজিয়াম বনাম ইতালির ম্যাচে।

বিশ্লেষকদের অনুমান এই ম্যাচে জয়ীরা কাপও হাতে নিতে পারে।

বেলজিয়াম যেই রূপ নিয়ে টুর্নামেন্ট শুরু করেছে, শেষ ষোলো পার করার পর আর আগের অবস্থানে নেই দলটি।

দলের বড় নাম, ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের বর্ষসেরা ফুটবলার কেভিন ডি ব্রুইনা পর্তুগালের সাথে চোট পেয়ে মাঠ ছেড়েছেন। ইডেন হ্যাজার্ডও মাঠে নামতে পারবেন না বলে শোনা যাচ্ছে নানা রিপোর্টে।

যদিও রোমেলু লুকাকু তিনটি গোল করেছেন এখন পর্যন্ত, তবে পর্তুগালের বিপক্ষে ১-০ গোলের জয়ের পরে বেলজিয়ামের কোচ রবার্তো মার্টিনেজ পুরো কৃতিত্ব দিয়েছেন দলটির রক্ষণভাগকে।

তাই এখন ইতালির বিপক্ষে জয় পেতে রক্ষণভাগকে আবারও দারুণ কিছু করে দেখাতে হবে।

আবার রবার্তো মানচিনির অধীনে ইতালি কোন নির্দিষ্ট ফুটবলারের ওপর নির্ভরশীল নয়।

তিনজন ফুটবলার দুটি করে গোল করেছেন- সিরো ইমমোবিল, ম্যানুয়েল লোকাটেলি, মাতেও পেসিনা।

ফুটবল ভক্তরা এবারের ইউরোতে সবচেয়ে বেশি প্রশংসায় ভাসিয়েছে ডেনমার্ককে, প্রথম ম্যাচে ক্রিশ্চিয়ান এরিকসেন মাঠেই লুটিয়ে পড়ে যাওয়ার পর ফিনল্যান্ডের বিপক্ষে সেই ম্যাচটি হেরে যায় দলটি।

কিন্তু এরপরই ঘুরে দাঁড়ায় দারুণভাবে, গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে রাশিয়াকে দিয়েছে চার গোল এবং শেষ ষোলোতে ওয়েলসকে দিয়েছে চার গোল। শেষ দুই ম্যাচে আট গোল দলটির।

আক্রমণে ওঠার ভঙ্গি ও দ্রুত পাসিং ফুটবল দলটিকে দৃষ্টিনন্দন করে তুলেছে।

ইতালির মতো ডেনমার্কও নির্দিষ্ট ফুটবলারের নৈপূন্যের ওপর নির্ভরশীল নয়। তিনজন ফুটবলার দুটো করে গোল করেছেন।

ডেনমার্কের কোয়ার্টার ফাইনাল প্রতিপক্ষ চেক রিপাবলিক এখন পর্যন্ত পুরো টুর্নামেন্টে নিখুঁত ফুটবল খেলেছে।

একমাত্র ইংল্যান্ডের সাথে একটি ম্যাচে ১-০ গোলে হারে দলটি, শেষ ষোলোতে নেদারল্যান্ডসকে ২-০ গোলে হারিয়ে দেয়।

প্যাট্রিক শিক- দলটির প্রধান স্ট্রাইকার এখন পর্যন্ত চারটি গোল দিয়েছেন। ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর পরে তিনি এবারের আসরে সর্বোচ্চ গোলদাতার তালিকায় দুই নম্বরে।

ইউক্রেন ও ইংল্যান্ডের ম্যাচটি নিয়েও ফুটবল ভক্তদের মধ্যে তুমুল আগ্রহ আছে, ইংল্যান্ড ২০১৮ সালের বিশ্বকাপে সেমিফাইনাল পর্যন্ত গিয়েছিল।

এবারও বেশ নিখুঁত ফুটবল খেলেই উঠেছে কোয়ার্টার ফাইনালে। এখনও পর্যন্ত কোন গোল হজম করেনি দলটি।

রক্ষণে হ্যারি ম্যাগুয়ার, লুক শ, ট্রিপিয়ার মাঝমাঠে কেলভিন ফিলিপস, ম্যাসন মাউন্ট পার্থক্য গড়ে দিচ্ছেন।

আর দলে জায়গা পাওয়ার জন্য তুমুল সমালোচিত রাহিম স্টারলিং এবারের ইউরোতে ইংল্যান্ডের করা চারটি গোলের মধ্যে তিনটি গোলই করেছে। ম্যানচেস্টার সিটির এই ফরোয়ার্ড সময়মতো সুবিধাজনক জায়গায় থেকে গোল করার যে কার্যকরিতা সেটা প্রমাণ করেছেন।

এদিকে ইউক্রেন সুইডেনের বিপক্ষে ১২১তম মিনিটে গোল করে কোয়ার্টার ফাইনালে জায়গা করে নিয়েছে।

এই টুর্নামেন্টে ইউক্রেনের সবচেয়ে বড় তারকা তাদের কোচ, সাবেক কিংবদন্তী ফুটবলার আন্দ্রেই শেভচেঙ্কো।

তার ভরসার দাম রাখছেন ইয়ারমোলেঙ্কো ও জিনচেঙ্কোর মতো ফুটবলাররা।

রোমান ইয়ারেমশাক ও আন্দ্রেই ইয়ারমোলেঙ্কো ২টি করে গোল করেছেন। ইয়ারমোলেঙ্কো দুটি গোলে সহায়তাও করেছেন প্রত্যক্ষভাবে। এই প্রথম ইউরোর নকআউট পর্বে জায়গা করে নিয়েছে ইউক্রেন।


Spread the love

Leave a Reply