ইতালিতে জানালায়, বারান্দায় ভয় জয়ের গান

Spread the love

বাংলা সংলাপ ডেস্কঃ করোনাভাইরাসের কারণে অবরুদ্ধ ইতালির বিভিন্ন শহরের বাসিন্দারা নিজেদের বাড়ির জানালা ও বারান্দা থেকে একসঙ্গে গেয়ে, গিটারে সুর তুলে নিজেদের মধ্যে সাহস সঞ্চারিত করার পাশাপাশি কভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে লড়াই করা চিকিৎসক ও নার্সদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন।

শনিবার দুপুরে ও বিকালে রাজধানী রোমসহ বিভিন্ন অঞ্চলে বাসিন্দাদের একযোগে গানে গলা মেলাতে ও গিটার বাজাতে দেখা গেছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

ডিসেম্বরের শেষদিকে চীনের উহান থেকে ছড়িয়ে পড়া ভাইরাসটি এখন ইউরোপ দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা মিলিয়ে মহাদেশটির অন্য যে কোনো দেশের তুলনায় ইতালিই এখন সবচেয়ে বাজে সময় পার করছে।

এরই মধ্যে দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা ২১ হাজার ছাড়িয়ে গেছে; মৃতের সংখ্যা পৌঁছেছে এক হাজার ৪৪১ জনে। চীনের বাইরে আর কোনো দেশে এখন পর্যন্ত এত আক্রান্ত ও মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি।

রয়টার্স বলছে, ফেব্রুয়ারিতে ইতালির উত্তরাঞ্চলে ভাইরাসটির আবির্ভাবের পর থেকেই দেশটির সরকার সংক্রমণ রুখতে একের পর এক পদক্ষেপ নিয়েছে। জনসমাগম ও ভ্রমণে দেওয়া হয়েছে বিধিনিষেধ। জনসাধারণকে প্রয়োজন না হলে ঘর থেকে বের হতেও নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে।  

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, রেস্তোরাঁর পাশাপাশি বেশিরভাগ দোকানও বন্ধ রাখা হয়েছে। সরকার অবশ্য কিছু কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে কাজ চালিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেয়ার পাশাপাশি কর ছাড় এবং অন্যান্য সহযোগিতারও আশ্বাস দিয়েছে।

এমনই এক দুর্বিষহ পরিস্থিতিতে শনিবার দুপুরে বিভিন্ন শহরের বাসিন্দারা নিজেদের বারান্দায় দাঁড়িয়ে করতালি দিয়ে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সামনের কাতারে থাকা চিকিৎসক ও নার্সদের প্রতি সম্মান জানান। সন্ধ্যায় ওই একই জায়গায় দাঁড়িয়ে তারা একসঙ্গে গলা মেলান আদ্রিয়ানো কালেন্তানের ‘আজুরো’ গানে।

বিভিন্ন শহরের বাসিন্দারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ কর্মসূচি ও দিনক্ষণ ঠিক করেন বলে স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে।

গানের তালে, সুরের মূর্চ্ছনায় এদিন তারা করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নিজেদের ঊজ্জীবিতও করেছেন। এসময় কারও কারও জানালা ও ব্যালকনিতে হাতে লেখা ‘সব ঠিক হয়ে যাবে’ ও ‘বাসায় থাকছি’ ব্যানারও দেখা গেছে।

কর্মকর্তারা বলছেন, ভাইরাসের সংক্রমণ রুখতে ও আক্রান্তদের চিকিৎসায় তারা সাধ্য অনুযায়ী করলেও মাস্ক ও ভেন্টিলেটরসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের ঘাটতি এবং দক্ষ লোকবলের অভাবে পরিস্থিতির অবনতি রোধ করা যাচ্ছে না। 

উত্তরাঞ্চলীয় লম্বার্দি এলাকার ফিয়েরা মিলেনা এক্সিবিশন সেন্টারে কর্তৃপক্ষ জরুরিভিত্তিতে একটি অস্থায়ী হাসপাতাল নির্মাণের চেষ্টা চালিয়ে গেলেও এখনও পর্যাপ্ত কর্মী ও ভেন্টিলেটর মেলেনি।

“প্রতিদিনই পরিস্থিতি আরও জটিল হচ্ছে, যদিও আমরা আমাদের সর্বোচ্চ সক্ষমতা অনুযায়ী কাজ করে যাচ্ছি,” বলেছেন লম্বার্দি শীর্ষ স্বাস্থ্য কর্মকর্তা গিউলিও গ্যালেরা। সংকট মোকাবেলায় কয়েকদিনের মধ্যে আরও ১৩০টি নিবিড় পর্যবেক্ষণ বেড মিলবে বলেও আশা তার।

চীনা বিশেষজ্ঞদের একটি দলও এরই মধ্যে ৪০টি ভেন্টিলেটর ও ৩১ টন চিকিৎসা উপকরণ নিয়ে ইতালিতে পৌঁছেছেন বলে জানিয়েছেন দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রী লুইজি দি মারিও।

কয়েক সপ্তাহ আগেও নভেল করোনাভাইরাসের আক্রমণে সবচেয়ে বেশি বিপর্যস্ত ছিল চীন; সাম্প্রতিক দিনগুলোতে দেশটিতে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা কমে এসেছে।

চীনে এ পর্যন্ত ভাইরাসটিতে আক্রান্ত ৮১ হাজার ব্যক্তি শনাক্ত হয়েছে; মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে তিন হাজার ১০০।

কভিড-১৯ ইতালির অর্থনীতিতেও বড় ধরনের বিপর্যয় নিয়ে এসেছে। সংকট মোকাবেলায় সরকার বিভিন্ন কোম্পানি ও শ্রমিকদের সহযোগিতার নানান পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে; রোববার এ সংক্রান্ত ঘোষণা আসতে পারে বলে জানিয়েছে রয়টার্স।  

“দেশের ভালোর জন্য, শ্রমিকদের সুরক্ষায়, ইতালি থেমে থাকবে না,” টুইটারে এমনটাই বলেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী গুইসেপ্পে কন্তে।


Spread the love

Leave a Reply