কে হচ্ছেন মেয়র ? জনমত জরিফে অহিদ আহমেদ এগিয়ে

Spread the love

ohid ahmedবাংলা সংলাপ রিপোর্টঃ
বৃহস্পতিবার বহুল প্রত্যাশিত টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিল নির্বাচন ।এই বারায় মোট ৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন মেয়র পদে । তারা হলেন কনজারভেটিব দলের ডাঃ আনোয়ারা আলী, লেবার পার্টির জন বিগস, সাবেক মেয়র লুৎফুর সমর্থিত এস্পায়ার পার্টি থেকে অহিদ আহমেদ, লিবারাল ডেমোক্রেট থেকে ব্যাগসহাও শিলা, ট্রেড ইউনিয়নিস্ট  থেকে হোগো কার্টিস পেরি, পিপুলস এলায়েন্স থেকে রাবিনা খান ও গ্রীন পার্টি থেকে কিরান জেব ।

বারার ভোটারদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এবারের নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দিতা হতে পারে দু’জনের মধ্যে ।এরা হচ্ছেন লেবার পার্টির বর্তমান মেয়র জন বিগস এবং এস্পায়ার পার্টির কাউন্সিলর অহিদ আহমেদ । জনমত যাচাই ও বিশ্লেষনে লুৎফুর রহমানের রিজার্ভ ভোর্টে অহিদ আহমেদ অনেকটা এগিয়ে রয়েছেন । কনজারভেটিভ দলের ডাঃ আনোয়ারাও কিছুটা বাংগালী ভোট পেতে পারেন, তবে পিপুল এলায়েন্সের রাবিনা বিগত নির্বাচনে প্রাপ্ত লুৎফুরের সবকটি রিজার্ভ ভোট হারাবেন ।

এবারে টাওয়ারহ্যামলেটস নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কয়েকটি অনাকাংখিত ঘটনা ঘটে যায় । যেমনটি ঘটেছিল প্রথম মেয়র নির্বাচনে । সে সময় অনেক বিতর্কের জন্ম দেয়া নির্বাচনে লুৎফুর রহমান বিপুল ভোটে নির্বাচিত হন। ঠিক এবারের নির্বাচনেও লুতফুর রহমান সমর্থিত প্রার্থির উপর কতিপয় কিছু লোক অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে বলে অহিদ আহমেদ সমর্থকরা অভিযোগ করেছেন । তাদের দাবী লুতফুর রহমানের মতো অহিদ আহমদের বিজয় ঠেকানোর জন্য কতিপয় দুস্কৃতিকারিরা অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। অতীতের ন্যায় সকল ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে এবারও বারার অধিবাসীরা লুৎফুর সমর্থিত প্রার্থী অহিদ আহমেদকে বিপুল ভোটে বিজয়ী করবেন । তারা মনে করেন মানুষ এখন যতেষ্ট সচেতন ।তাই ব্যালেটর মাধ্যমে সকল অন্যায় অবিচারের জবাব দিবে ভোটাররা ।

বিশ্লেষকরা মনে করেন, অহিদ আহমেদের বিজয় ঠেকানোর জন্য কাউন্সিলর রাবিনা খানকে লুৎফুর বিরোধী কিছু লোক  নির্বাচনে দাঁড় করিয়েছেন। এর উদ্দেশ্য অহিদ আহমেদকে আটকানো ।যার ফলশ্রুতিতে অহিদ আহমদ গ্রুপের  কাউন্সিলর প্রার্থী আব্দুল্লাহ আল মামুনের উপর হামলা ,কাউন্সিলর মায়ুম মিয়াকে হুমকি, প্রতিপক্ষ প্রার্থী কর্তৃক অহিদ আহমদের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করে বিস্তর অভিযোগ উত্তাপন এসবই ছিল পরিকল্পিত রাজনৈতিক প্রতিহিংসার ফল । তাই এসকল কারনে ভোটাররা নীতিগত ভাবে অহিদ আহমদের পক্ষে তাদের সহানুভূতি দেখাতে পারেন। তাই এই সুযোগটি কাজে লাগাতে পারেন অহিদ আহমেদ।

এদিকে নির্বাচনের প্রচারনা শুরুর দিকে লেবার পার্টির জন বিগস কিছুটা সুবিধা জনক অবস্থানে ছিলেন । বিগত নির্বাচনে ৩২৭৫৪ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি ।  কিন্তু জন বিগস এখন  নানা কারনে বিতর্কিত হয়ে পড়েছেন । সম্প্রতি তাঁর বিরুদ্ধে ৫শ মিলিয়ন পাউন্ড প্রজেক্টের দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। ৬৫ তলা টাওয়ার নির্মাণে ২ মিলিয়ন পাউন্ড ঘুষ ক্যালেংকারির ঘটনায় বেশ সমালোচিত হয়েছেন মেয়র । যদিও বিগস ক্যালেংকারির সাথে তার যোগসুত্র নেই বলে দাবী করেছেন। এছাড়াও বারার অপরাধ দমনে জন বিগসের বিরুদ্ধে ব্যার্থতার অভিযোগ উঠেছে।একের পর এক নাইফ ক্রাইম বৃদ্ধি, কাউন্সিল পুলিশের সংখ্যা ৪০ জন থেকে কমিয়ে ৩৪ জনে নামিয়ে আনা, ইয়ুথ ফান্ড , ফ্রি স্কুল মিল কর্তন সহ তাঁর বিরুদ্ধে নানান ব্যর্থতার অভিযোগ  । এদিকে লেবার দলের মধ্যে অন্তদ্বন্ধ জন বিগসকে  অনেকটা হুমকির মুখে ঠেলে  দিয়েছে। নিজ দলের সহযোগীরা সংবাদ সম্মেলন করে অভিযোগ তুলেছিলেন দলীয় নীতি ভঙ্গ করে জন বিগস লেবার পার্টির  মনোনয়ন নিয়েছেন। যদিও তারা এ বিষয়টিকে চ্যালেঞ্জ করে আদালতের আশ্রয় নিবেন বলে জানিয়েছিলেন  । লেবার দলের কাউন্সিলর খালিস উদ্দিনের বিরুদ্ধে ছিল নানান অভিযোগ । যেকারনে তাকে দল থেকে বহিস্কার করা হয় । কাউন্সিলর খালিস উদ্দিন কনজারভেটির দলের পিটারকে নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে কাউন্সিলর রাবিনা খানের দলে যোগ দেন । এসব কারনে কাউন্সিলর খালিস উদ্দিন ও তার সমর্থকরা লেবারের বিপক্ষে কাজ করবেন এমনটা মনে করেন বিশ্লেষকরা। জন বিগসের মনোয়ন বিরোধিরাও লেবার পার্টির বিপক্ষে কাজ করতে পারেন এমনটা ধারনা করছেন বিশ্লেষকরা । যে কারনে লেবার প্রার্থী জন বিগসের ভোট বিগত নির্বাচনে প্রাপ্ত ভোট থেকে অনেকাংশ কমে যাবে ।এদিকে অহিদ আহমদের লুতফুর রহমান সমর্থিত ৩৭৩৯৫  ভোটার রয়ে যাচ্ছে রিজার্ভে । এছাড়াও  ভোটারদের সহানুভূতি তো আছেই ।তাই সাভাবিক কারনে অহিদ আহমদের ভোট লুৎফুর রহমানের রিজার্ভ ভোট থেকে অনেকটা বেড়ে যাবে । বিশ্লেষকরা মনে করেন সাবেক মেয়র লুতফুর রহমান অহিদ আহমদের পক্ষে সরাসরি ভোট চাচ্ছেন ।অহিদ আহমদের প্রতি তার পূর্নাজ্ঞ সমর্থন জানিয়ে দিয়েছেন ভোটারদের ।তাই লুৎফুর রহমানের রিজার্ভ ভোটে কেউ ভাগ বসাতে পারবেনা । এছাড়া প্রার্থী হিসেবে অহিদ আহমেদ যতেষ্ট অমায়িক স্বভাবের ,অন্য যেকোন প্রার্থীর চেয়ে তিনি জনগনের মাঝে মিশে যাচ্ছেন সহজেই । তাছাড়া সাবেক ডেপুটি মেয়র ও কাউন্সিলর হিসেবে তাঁর আলাদা একটা ইমেজতো আছেই ।

friরাবিনা খান লুতফুরের রিজার্ভ ভোটে কিছুটা প্রভাব পেলতে পারেন এই সন্দেহ উড়িয়ে দেয়া যায়না ।তবে বিশ্লেষকরা মনে করেন যেহেতু রাবিনা খান লুতফুর বিরোধী প্রার্থী হয়েছেন সেহেতু অহিদ আহমেদের রিজার্ভ ভোটে তিনি প্রভাব পেলতে পারবেন না। কেননা অতীতে লুতফুর রহমান পতন ষড়যন্ত্রে যারা সক্রিয় ছিল তাদের সাথে হাত মিলিয়েছেন রাবিনা খান । যে কারনে লুতফুরের রিজার্ভ ভোটারদের কাছে গ্রহনযোগ্যতা হারিয়ে পেলেছেন তিনি ।তারা মনে করেন লুতফুর বিরোধী যারা রাবিনা খানকে নির্বাচনে দাঁড় করিয়েছেন শেষ পর্যন্ত তারাও তাঁকে ভোট দিবে কি না যতেষ্ট সন্দিহান রয়েছে ।

এদিকে কনজারভেটিভ প্রার্থী ডাঃ আনয়ারা আলীও একজন বাংগালী বংশদ্ভোত।তিনির দলীয় রিজার্ভ ভোট ৫৯৪০,যা বিগত নির্বাচনে কনজারভেটিব প্রার্থী পিটার গোল্ড পেয়েছিলেন।তবে এবারে কি তার সেই রিজার্ভ ভোট থাকবে এমনটা নিয়ে প্রশ্ন । কারন পিটারগুল এবারের নির্বাচনে কাউন্সিলর রাবিনা খানের হয়ে কাজ করছেন। তবে পিটার দলীয় ভোটে তেমন একটা প্রভাব পেলতে পারবেন না বলে তারা আশাবাদী। বাংগালী হিসেবে ডাঃ আনোয়ারা আলীর ভাগে দলীয় ভোটের বাহিরে কিছুটা ভোট যোগ হতে পারে । এছাড়া সাদা ভোটারদের সেকেন্ড ভোট গুলো আনোয়ারা আলীর ভাগ্যে পড়তে পারে ।আবার কনজারভেটি সাদা ভোটারদের সেকেন্ড ভোট গুলো পড়তে পারে জন বিগসের ভাগ্যে, আর লেবারের বাংগালী সেকেন্ড ভোট গুলো পড়তে পারে অহিদ আহমদের ভাগ্যে । যদি সেকেন্ড ভোট হিসেবে নেয়া হয় তাহলে প্রার্থীদের মোট ভোটের হিসেবে কিছুটা রদবদল হতে পারে ।

টাওয়ার হ্যামলেটস্ কাউন্সিলে মেয়ের পদে নির্বাচিনী ব্যাবস্থা চালু হওয়ার পর থেকে বর্তমান বিরোধী দল এস্পায়ার পার্টি যারা সাবেক মেয়র লুৎফুর রাহমাদের অনুসারী হিসেবে পরিচিত,এই অংশটি দুইবার জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয় (২০১০ সালে এবং ২০১৪ সালে)। বর্তমানে ২৩ জন কাউন্সিলরের সমন্বয়ে এই গ্রূপটি বিগত দিনেও একটি শক্তিশালী বিরোধীদল হিসেবে টাওয়ার হ্যামলেটস্ কাউন্সিলে গঠনমূলক ভূমিকা রেখে গেছে এবং কমিউনিটি স্বার্থ বিরোধী সকল কর্মকান্ডের বিরোধিতা করে এসেছে। তাই ২০১৮ সালের নির্বাচনে এই গ্রূপ থেকে মনোনীত মেয়র প্রার্থী প্রতিবারের মতো আবারো মানুষের আলোচনার কেন্দ্র বিন্দুতে রয়েছেন। ধারণা করা হয় যে টাওয়ার হামলেসে ৩৭ হাজারের মতো সমর্থক বা ভোটার রয়েছেন লুৎফুর রহমানের তারা যে কোন পরিস্তিতিতে লুৎফুর রহমানের পাশে এসে দাঁড়ান।যদিও ২০১৫ সালের নির্বাচনে লুৎফুরের বিরুদ্ধে রায় এবং তাৎক্ষণিক নির্বাচনের কারণে কিছু মানুষ বিভ্রান্তিতে ছিলেন নবাগত প্রার্থীর ব্যাপারে যার ফলে লেবার সমর্থিত জন বিগস সুযোগ পেয়ে যান। বিগস প্রথম বারের মতো নির্বাচিত হন মেয়র হিসেবে।কিন্তু পরবর্তী সময়ে স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড কর্তৃক লুৎফুরের বিরুদ্ধে অভিযোগ সমূহ প্রমাণিত না হওয়ায় সকলের কাছে পরিষ্কার হয়ে যায় যে থাকে ফাঁসানো হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে লুৎফুরকে যারা ভালোবাসেন তার অপেক্ষায় আছেন ব্যালটের মাধ্যমে জবাব দেবার জন্য ।  তাই অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় ভোটাররা এবার অনেক বেশি ঐক্যবদ্ধ ।
লুৎফুর রহমান ২০১০ থেকে ২০১৪ সালে টাওয়ার হ্যামলেটস এলাকায় বৈপ্লবিক উন্নয়ন সাধন করেন। এই সময়ে তার  উন্নয়ন প্রচেষ্টায় যিনি সার্বক্ষনিক ভাবে সহযোগিতা করে ছিলেন যাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল শক্তিশালী উন্নয়ন কর্মরেখা তিনি হচ্ছেন লুৎফর রহমান প্রশাসনের সাবেক ডেপুটি মেয়র অহিদ আহমেদ। ডেপুটি মেয়র হিসেবে অহিদ আহমেদের পরে অনেকেই এই দায়িত্ব পালন করেছিলেন বা করছেন কিন্তু অহিদ আহমেদের মতো এত গ্রহণ যোগ্যতা বা জনপ্রিয়তা কেউ অর্জন করতে পারেননি । তাই টাওয়ার হ্যামলেটসের নির্বাচনে আবারো বিজয়ী হতে এই গ্রূপের সকল কাউন্সিলর পরোক্ষ ভোটে মেয়র প্রার্থী নির্বাচিত করেন অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ অহিদ আহমেদকে।
মেয়র প্রার্থী নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে অহিদ আহমেদ তার চারিত্রিক মাধুর্যে জয় করতে থাকেন মানুষের মন দীর্ঘ প্রায় ১ বছরের বেশি সময় তিনি ছুটে গিয়েছেন মানুষের সুখে দুঃখে , দাঁড়িয়েছেন মানবধিকার লঙ্গিত মানুষের পাশে টাওয়ার হ্যামলেটসে নিষিদ্ধ করেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পে কে। তার এই সকল কর্মকান্ডের ফলে তিনি মানুষের মনে জায়গা করে নিয়েছেন । তার দেয়া নির্বাচিনী ইস্তেহার কমিউনিটিতে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে মেয়র বেতনের ১৫% তিনি বলেছেন গৃহহীনদের জন্য ব্যায় করবেন। শুধু তাই নয় অহিদ আহমেদ জন বিগস কর্তৃক সকল কাউন্সিলরদের এবং মেয়ররের জন্য বরাদ্ধ বেতন কাঠামো বৃদ্ধিতে বি্রোধীতা করেন এবং টাওয়ার হ্যামলেটস্ কাউন্সিল থেকে প্রাপ্ত তথ্য থেকে এ নিশ্চিত হয় যায় যে অহিদ অতিরিক্ত বেতন গ্রহণে অস্বীকৃতি জানান।  তার অতিরিক্ত বেতন গ্রহণে অস্বীকৃতি রাজনীতিতে একটি যুগান্তকারী ঘটনা যা রাজনীতিবিদদের সম্মান বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে বলে বিশ্লেষকদের ধারণা। এছাড়াও তার নির্বাচনী ইস্তেহারে ১০ হাজার নতুন ঘর নির্মাণ সহ রয়েছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যা একটি সমৃদ্ধ বারা গড়তে কার্যকরী ভূমিকা পালন করবে অনেকে মনে করেন।


Spread the love

Leave a Reply