ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০১৯: নিউজিল্যান্ড ও বাংলাদেশের যত মিল-অমিল

Spread the love

বাংলা সাংলাপ ডেস্কঃবিশ্বকাপ নিজেদের ২য় ম্যাচে আজ মাঠে নামছে নিউজিল্যান্ড ও বাংলাদেশ। লন্ডনের ওভাল ক্রিকেট গ্রাউন্ডে বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় শুরু হবে খেলা। দুইদল সাম্প্রতিক সময়ে নিয়মিতই মুখোমুখি হচ্ছে।

চলুন গুরুত্বপূর্ণ এই ম্যাচের আগে দুইদলের কিছু মিল-অমিলে চোখ বুলানো যাক।

বিশ্বকাপ প্রস্তুতিতে অমিল

বিশ্বকাপ ঘিরে দুই দলের প্রস্তুতিটা হয়েছে দুই রকম।

বাংলাদেশ কন্ডিশনের সাথে মানিয়ে নিতে প্রায় মাস খানেক আগেই চলে আসে আয়োজক ইংল্যান্ড ও ওয়েলসের পাশের দেশ আয়ারল্যান্ডে। সেখানে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে মিলে একটা ত্রিদেশীয় সিরিজ খেলে বাংলাদেশ। যাতে অপরাজিত চ্যাম্পিয়নও হয় মাশরাফীর দল।

অন্যদিকে নিউজিল্যান্ড তাদের সর্বশেষ ওয়ানডে ম্যাচ খেলে বাংলাদেশের বিপক্ষে গত ফেব্রুয়ারিতে। এরপর প্রায় ৫ মাসের মাথায় বিশ্বকাপের প্রস্তুতি ম্যাচে তারা মাঠে নামে ভারতের বিপক্ষে। সে ম্যাচ সহজেই জিতলেও পরের ওয়ার্ম আপ ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে ৯১ রানে হেরে যায় কিউইরা।

বাংলাদেশও প্রস্তুতি ম্যাচে ভারতের মুখোমুখি হয়। আর সে ম্যাচটি ৯৫ রানে হারে টাইগাররা।

তবে পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রস্তুতি ম্যাচটি বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত হয়।

বিশ্বকাপ মিশনে মিল
বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড দু’দলই তাদের বিশ্বকাপ মিশন শুরু করে জয় দিয়ে।

আসরের ৩য় দিন কার্ডিফে নিউজিল্যান্ড শ্রীলঙ্কাকে হারায় ১০ উইকেটে। এরপরের দিনই ওভালে বাংলাদেশ দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে দেয় ২১ রানে।

ফলে দুদলেরই পয়েন্ট সমান – ২। এই ম্যাচে যে দলই জিতবে তার সামনেই সুযোগ থাকবে এককভাবে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে ওঠার।

উইনিং কম্বিনেশন ধরে রাখতে দুদলই তাই মাঠে নামতে যাচ্ছে অপরিবর্তিত একাদশ নিয়ে।

শক্তিমত্তার পার্থক্য
দুদলের ব্যাটিং গভীরতা অনেকটা একইরকম হলেও বোলিংয়ে বিস্তর ফারাক।

নিউজিল্যান্ডের মূল শক্তি তাদের পেস বোলিং। অন্যদিকে বাংলাদেশ বরাবরই স্পিন নির্ভর।

নিউজিল্যান্ডের পেসত্রয়ী ট্রেন্ট বোল্ট, ম্যাট হেনরি ও লোকি ফার্গুসনের জবাব হবে সাকিব-মিরাজ জুটির স্পিনের সাথে মোসাদ্দেক হোসেনের হাতের জাদু।

অবশ্য গত ৫ বছরে এ দুদলকেই বেশি সাফল্য এনে দিয়েছেন পেসাররা।

এসময়ের মধ্যে বোল্ট নিয়েছেন ৭২ ম্যাচে ১৪২ উইকেট। আর মাশরাফী নিয়েছেন ৭৭ ম্যাচে ঠিক ১০০ উইকেট।

হারজিতে মিল

এই দুদল মুখামুখি হয়েছে মোট ৩৪ বার। যাতে ২৪ বার জিতেছে নিউজিল্যান্ড ও ১০ বার বাংলাদেশ।

এরমধ্যে ১৯৯০ থেকে ২০০৭ পর্যন্ত টানা জিতেছে কিউইরা।

বাংলাদেশ তাতে ছেদ টানে ২০০৮ সালে। এরপর টানা ৫ ম্যাচ জেতে নিউজিল্যান্ড। বাংলাদেশ আবার জেতে টানা ৭ ম্যাচ।

এরপর নিউজিল্যান্ড আবার টানা ৫ জয়ের পর বাংলাদেশ জেতে দুটো, যার একটি গত চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ইংল্যান্ডের মাটিতেই। এরপর সর্বশেষ ৩ ম্যাচ – যেগুলো এবছরের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হয় – জিতেছে নিউজিল্যান্ড।

বিশ্বকাপ মঞ্চে এর আগে ৪ বার দেখা হয়েছে দুদলের। ১৯৯৯, ২০০৩, ২০০৭ ও ২০১৫ প্রতিবারই হেরেছে বাংলাদেশ।

তবে দুদলের নিজেদের সর্বশেষ ১০ ওয়ানডের ফলাফলে দারুণ মিল। এসময় দুদলেরই সমান ৬টি করে জয় ও ৪টি করে হার।

র‍্যাংকিংয়ের অমিল

ওয়ানডে র‍্যাংকিংয়ে বর্তমানে নিউজিল্যান্ডের অবস্থান ১১৩ রেটিং নিয়ে ৪ নম্বরে। বাংলাদেশের রেটিং ৯০, অবস্থান ব্ল্যাক ক্যাপদের ৩ ধাপ নিচে ৭ নম্বরে।

ব্যক্তিগত র‍্যাংকিং হিসেব করলে, ব্যাটিং র‍্যাংকিংয়ের শীর্ষ দশে আছেন নিউজিল্যান্ডের ২ জন। তিনে রস টেলর আর নয়ে মার্টিন গাপটিল। এছাড়া অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসনের অবস্থান ১৩ নম্বরে।

অন্যদিকে র‍্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের সেরা ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিম আছেন ২০ নম্বরে। আর তামিমের অবস্থান ২৩।

বোলিংয়ে ট্রেন্ট বোল্ট ওয়ানডে র‍্যাংকিংয়ের ২ নাম্বার জায়গাটা ধরে রেখেছেন অনেক দিন ধরেই। আরেক পেসার ম্যাট হেনরির অবস্থান ১০। ১১ নম্বর তার ঘাড়েই নিশ্বাস ফেলছেন বাংলাদেশের মুস্তাফিজুর রহমান। এছাড়া লোকি ফার্গুসন আছেন ১৩ নাম্বারে। সাকিব আল হাসানের বোলিংয়ে অবস্থান ১৯।

তবে অলরাউন্ডার র‍্যাংকিংয়ে যথারীতি সবার উপরে বাংলাদেশের সাকিব আল হাসান। এই র‍্যাংকিংয়ে ৫ নম্বরে আছেন নিউজিল্যান্ডের মিচেল স্যান্টনার।

কন্ডিশনের সুবিধা-অসুবিধা
বাংলাদেশ খানিকটা আগে এসেছে এদেশে। প্রথম ওয়ানডে খেলেছে এই ওভালেই। সেটা খানিকটা বাড়তি সুবিধা দেবে বৈকি টাইগারদের।

অন্যদিকে নিউজিল্যান্ড কার্ডিফ থেকে এখানে প্রথম পা রাখলেও এখানকার আবহাওয়া অনেকটা তাদের দেশের মতোই। তাইতো ১২-১৩ ডিগ্রি তাপমাত্রার ঠাণ্ডায় বাংলাদেশের মানিয়ে নেয়া খানিকটা অসুবিধা হলেও নিউজিল্যান্ডের তেমন বেগ পেতে হয়নি।

আর দুদলেরই আসরে প্রথম ডে-নাইট ম্যাচ এটি, খেলাও হবে নতুন উইকেটে। তাইতো সৌম্য সরকার বলছেন, “এ ম্যাচে হোম অ্যাডভান্টেজ পাবে না নিউজিল্যান্ড।”

আর কোচ স্টিভ রোডস বলছেন, “যদি বৃষ্টিও হয় আমাদের আয়ারল্যান্ড সফরের অভিজ্ঞতা কাজে দেবে।”

দু’দলের স্কোয়াড ও ইতিহাসের হাতছানি
গত বিশ্বকাপে ব্রেন্ডন ম্যাককালমের নেতৃত্বে নিজেদের সেরা সাফল্য পায় নিউজিল্যান্ড। সেবারের রানার্সআপ দলটির সাতজন সদস্যই আছেন এই বিশ্বকাপেও।

অন্যদিকে মাশরাফির নেতৃত্বে বাংলাদেশ খেলে কোয়ার্টার ফাইনাল। সেই দলটির ৮ সদস্য আছেন এই বিশ্বকাপে।

এদের মধ্যে ৪র্থ বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়া রস টেলরের এটি হতে যাচ্ছে ৪০০তম আন্তর্জাতিক ম্যাচ। গত বিশ্বকাপের পর থেকে ব্যাটিং গড়ে ভিরাট কোহলির পরই তার অবস্থান। আর বাংলাদেশের বিপক্ষে তাঁর ব্যাট বরাবরই চওড়া।

তবে ক্যারিয়ারের ২০০ তম ওয়ানডে রাঙাতে চাইবেন সাকিব আল হাসানও।

এছাড়া ৪৯ উইকেট নিয়ে উইকেটে ফিফটি ছোঁয়ার অপেক্ষায় কিউই পেসার ফার্গুসন।

আর আড়াইশো উইকেট স্পর্শ করতে বোল্টের চাই আর দুটি উইকেট।

নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে সন্ত্রাসী হামলা হলে সফর অসমাপ্ত রেখেই দেশে ফিরে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। আর গত মার্চের সেই ঘটনার পর এটাই দুদলের প্রথম দেখা। আর এ সময়টায় দলের ক্রিকেটাররা যেভাবে মনোযোগ ধরে রেখেছে তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ বাংলাদেশ কোচ।

“খেলোয়াড়রা ঐ ঘটনার পর যেভাবে নিজেদের সামলেছে, তা সত্যিই অসাধারণ, তাদের প্রশংসা করতেই হয়। এমনকি এখন এই ইদ উদযাপন চলছে, অনেকের জন্যই কঠিন সময় এটা। তবে ক্রাইস্টচার্চের ঘটনায় তাদের যে অভিজ্ঞতা হয়েছে তা তাদের বোঝাপড়া আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।”

অন্যদিকে নিউজিল্যান্ডের উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান টম লাথামও অপেক্ষায় বাংলাদেশকে মাঠে স্বাগত জানাতে।

“আমাদের দেশে বাংলাদেশের শেষ সফরটা ভালো হয়নি। তারা দ্রুত চলে যায় তাই ঠিকমতো দেখাও হয়নি তাদের সাথে। তবে আমি নিশ্চিত দুদলই আবারো ক্রিকেট মাঠে ফিরতে ও আমরা যেটা করতে আমরা ভালোবাসি অর্থাৎ খেলতে মুখিয়ে থাকবে।”


Spread the love

Leave a Reply