জুলাই বিপ্লবের বর্ষপূর্তিঃ আজ থেকে নানা কর্মসূচি
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উদযাপন উপলক্ষে আজ ১ জুলাই থেকে শুরু হচ্ছে নানা কর্মসূচি। অন্তর্বর্তী সরকারের পাশাপাশি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক কমিটি (এনসিপি)-সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল পৃথকভাবে আজ থেকে কর্মসূচি পালন করবে।
এদিকে বর্ষপূর্তি উপলক্ষে জুলাই মাসে জুলাই সনদ ঘোষণা হওয়ার কথা থাকলেও তা নিয়ে শঙ্কার কথা জানিয়েছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। গত রবিবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমির দোয়েল হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় দফার সপ্তম দিনের আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি বলেছেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে চলমান আলোচনার অগ্রগতি এখনো আশাব্যঞ্জক নয়। ফলে আগামী জুলাই মাসে “জুলাই সনদ” বাস্তবায়ন নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। আমরা স্বপ্ন দেখেছিলাম, আবু সাঈদের শাহাদাতবার্ষিকীতে সবাই মিলে “জুলাই সনদে” স্বাক্ষর করব। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান ও অগ্রগতি আমাদের সে জায়গা পর্যন্ত পৌঁছাতে দিচ্ছে না। আমরা শঙ্কিত।’
একই দিন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আলোচনা শেষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ‘জুলাই সনদ নিয়ে সবচেয়ে বেশি আন্তরিকতা দেখিয়েছে বিএনপি। আমরা জাতীয় মূলনীতির ক্ষেত্রে আমাদের অবস্থান জানিয়েছি আমরা কোন বিষয়ে একমত। আমরা সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের বিষয়ে আমাদের মতামত জানিয়েছি।’
রাতে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘গত বছরের ৩ আগস্ট শহীদ মিনারে ফ্যাসিবাদবিরোধী এক দফা ঘোষণা হয়েছিল। চলতি বছর ওই দিনটিতে শহীদ মিনারে ছাত্র-জনতার জুলাই ঘোষণাপত্র ও ইশতেহার পাঠ কর্মসূচি হবে। জুলাই ঘোষণাপত্র সরকারের দেওয়ার প্রতিশ্রুতি থাকলেও তা করতে পারেনি। ইতিমধ্যে সরকারের দেওয়া ৩০ কার্যদিবস পার হয়ে গেছে। তাই অভ্যুত্থানকারী ছাত্র-জনতাকে সঙ্গে নিয়ে ৩ আগস্ট জুলাই ঘোষণাপত্র ও ইশতেহার পাঠ কর্মসূচি সম্পন্ন করা হবে।’ রাতে তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে আগামী ৫ আগস্টের মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র ও জুলাই সনদ তৈরির দাবি জানান নাহিদ ইসলাম।
গত ২৫ জুন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক বার্তায় জানানো হয়, জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে মাসব্যাপী নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে অন্তর্র্বর্তী সরকার। কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ মসজিদ, মন্দির, প্যাগোডা ও গির্জাসহ অন্যান্য উপাসনালয়ে শহীদদের স্মরণে দোয়া ও প্রার্থনা। জুলাই ক্যালেন্ডার দেওয়া হবে। জুলাই হত্যাযজ্ঞের খুনিদের বিচার দাবিতে গণস্বাক্ষর কর্মসূচির শুরু হবে; যা চলবে ১ আগস্ট পর্যন্ত। জুলাই শহীদ স্মরণে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাবৃত্তি চালু হবে।
জুলাই বিপ্লবের প্রথম বার্ষিকী উপলক্ষে ৩৬ দিনব্যাপী শোক ও বিজয়ের কর্মসূচি শুরু করছে বিএনপি। গতকাল সোমবার রাত থেকে শহীদ মিনারে ছাত্রদলের উদ্যোগে ‘আলোয় আলোয় স্মৃতি সমুজ্জ্বল’ কর্মসূচির মধ্য দিয়ে এ আয়োজন শুরু হয়। এ ছাড়া আজ ১ জুলাই রাজধানীর বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে ‘গণঅভ্যুত্থান ২০২৪ : জাতীয় ঐক্য ও গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা’ শীর্ষক আলোচনা সভা ও শহীদ পরিবারের সম্মাননা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখবেন। বিএনপি আশা করছে, এই কর্মসূচিগুলো জনমানুষের অংশগ্রহণে সফল ও স্মরণীয় হয়ে উঠবে এবং দেশে একটি গণতান্ত্রিক পরিবর্তনের পথে নতুন মাত্রা যোগ করবে। এ ছাড়া, শিশু অধিকারবিষয়ক অনুষ্ঠান, জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম ও ছাত্র সমাবেশসহ বেশ কিছু আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে বিএনপির।
গত শনিবার জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে থেকে গণঅভ্যুত্থান দিবস উপলক্ষে দলটি ৩৬ দিনব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে শহীদ, আহত ও পঙ্গুত্ববরণকারীদের জন্য দেশব্যাপী শাখায় শাখায় দোয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে।
দিবসটি উপলক্ষে এনসিপি মাসব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। কর্মসূচির সূচনা হবে শহীদ আবু সাঈদের কবর জিয়ারতের মাধ্যমে। গত রবিবার রাজধানীর বাংলা মোটরে দলের অস্থায়ী কার্যালয়ে আহ্বায়ক মো. নাহিদ ইসলাম সংবাদ সম্মেলনে জানান, ১ থেকে ৩০ জুলাই পর্যন্ত দেশের ৬৪টি জেলায় ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ কর্মসূচি পালিত হবে। ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান’ বর্ষপূর্তি উপলক্ষে মাসব্যাপী নানা কর্মসূচির মাধ্যমে জনমত সৃষ্টি ও আন্দোলনের চেতনা জাগরণের পরিকল্পনা নিয়েছে দলটি।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে মাসব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা করেছে গণ অধিকার পরিষদ। কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে রাষ্ট্র সংস্কার শীর্ষক আলোচনা সভার আয়োজন করবে দলটি।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়। তার আগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে পুরো জুলাই মাস ধরে আন্দোলন হয়। ছাত্র-জনতার এই অভ্যুত্থানকে জুলাই গণঅভ্যুত্থান বা জুলাই বিপ্লব বলা হয়।