ডিভিশন দেয়া হয়নি খালেদাকে

Spread the love

104519_f1বাংলা সংলাপ ডেস্কঃ দুদিনেও কারাগারে ডিভিশন সুবিধা পাননি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তাকে সাধারণ বন্দি হিসেবেই  রাখা হয়েছে। এছাড়া তার গৃহপরিচারিকা ফাতেমাকে সঙ্গে রাখার আবেদন করা হলেও তাকে সঙ্গে দেয়া হয়নি। গতকাল বিকালে খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এসে এসব তথ্য জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ। পাঁচ সদস্যের আইনজীবী দল খালেদা জিয়ার সঙ্গে এক ঘণ্টার বেশি সময় কথা বলেন। সাক্ষাৎ শেষে ব্যারিস্টার মওদুদ জানান, বাইরে প্রপাগান্ডা চালানো হচ্ছে খালেদা জিয়াকে ডিভিশন দেয়া হয়েছে, তার সঙ্গে কাজের মেয়ে ফাতেমাকে দেয়া হয়েছে।

এর সবই অসত্য। একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে পরিত্যক্ত নির্জন কারাগারে সাধারণ বন্দির মতো রাখা হয়েছে। একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী দলের নেতা হিসেবে খালেদা জিয়া আবেদন ছাড়াই ডিভিশন পাওয়ার যোগ্য, তাকে এ সুবিধা না দেয়ায় আইনের আশ্রয় নেয়ার কথা জানিয়ে মওদুদ বলেন, কারাগারে খালেদা জিয়ার মনোবল অটুট রয়েছে।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় বৃহস্পতিবার ৫ বছরের দণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে খালেদা জিয়াকে পুরান ঢাকার নাজিম উদ্দিন রোডের পরিত্যক্ত কারাগারে নেয়ার পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টরা বলেছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে খালেদা জিয়াকে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেয়া হবে। প্রথম দিন পুরনো কারাগারের একটি অফিস কক্ষে খালেদা জিয়াকে রাখা হয়। তাকে সেখান থেকে অন্য কোনো কক্ষে স্থানান্তর করা হয়েছে কি না গতকাল পর্যন্ত কারাকর্তৃপক্ষ কিছু জানায়নি। সাক্ষাৎ করে এসে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরাও সুনির্দিষ্টভাবে বলতে পারেননি তিনি ঠিক কোথায় আছেন। তবে তারা জানিয়েছে, তিনি যে কক্ষে আছেন সেটি একেবারেই একটি সাধারণ কক্ষ। এদিকে খালেদা জিয়ার ডিভিশন সুবিধা পাওয়ার জন্য আইনজীবীদের একটি প্রতিনিধিদল আবেদন নিয়ে গতকাল কারাগারে গেলেও ছুটির দিন হওয়ায় তারা কারা কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিতে পারেননি। বিকালে খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যান পাঁচ আইনজীবী। তারা হলেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ, জমির উদ্দিন সরকার, মাহবুব হোসেন, এ জে মোহাম্মদ আলী ও আবদুর রেজাক খান। তারা দীর্ঘক্ষণ নাজিম উদ্দিন রোডে পুলিশ ব্যারিকেডে অবস্থান নেয়ার পর বিকাল ৪টা ২৫ মিনিটের দিকে সাক্ষাতের অনুমতি পান। এরপর যান কারাগারের ভেতরে। পরে সাক্ষাৎ শেষে বের হয়ে আসেন বিকাল পৌনে ছটার দিকে। সাক্ষাৎ শেষে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, খালেদা জিয়াকে কষ্ট দেয়ার জন্যই জেলকোড অনুযায়ী ডিভিশন দেয়া হচ্ছে না। অথচ তিনি ডিভিশন পাওয়ার যোগ্য। তিন যোগ্যতায় তার ডিভিশন পাওয়ার অনুমোদন তো কারাকোডেই রয়েছে। প্রথমত, তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী। দ্বিতীয়ত, সাবেক সংসদ সদস্য এবং তৃতীয়ত, তিনি একটি রাজনৈতিক দলের প্রধান। এ অবস্থায় তাকে ডিভিশন দেয়ার জন্য তো কোনো দরখাস্ত করারও প্রয়োজন নেই। আজ আমরা দেখলাম জেলকোড অমান্য করে তাকে সাধারণ বন্দির মতো রাখা হয়েছে। অথচ তাকে ডিভিশন দেয়া হয়েছে ও গৃহপরিচারিকা ফাতেমাকে তার সঙ্গে দেয়া হয়েছে বলে বাইরে প্রপাগান্ডা চালানো হচ্ছে। কাজের মেয়েকে দেয়ার জন্য আবেদন করা হয়েছিল। কোর্ট আদেশও দিয়েছেন। খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন এই গৃহপরিচারিকার সহযোগিতা নিয়ে চলছেন। তার ওষুধপত্র সেবনসহ নিত্য-নৈমিত্যিক সমস্যা ও দৈনন্দিন কাজগুলো এই ফাতেমাকে ছাড়া চলে না। অন্য দিকে তিনি অসুস্থ। অথচ তাকে ডিভিশন না দিয়ে নির্জন কারাগারে রাখা হয়েছে। ভাঙা পরিত্যক্ত বাড়িতে সুযোগ-সুবিধা ছাড়া জনমানবহীন অবস্থায় রাখা হয়েছে। যা একেবারে সংবিধান পরিপন্থি। আমরা এ নিয়ে আদালতে যাবো। এ ক্ষেত্রে সরকারেরও ভূমিকা আছে। আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েও যাবো।
তিনি আরো বলেন, এমনিতে তার শারীরিক অবস্থা ভালো না। তিনি একধরনের খাবারে অভ্যস্ত। অথচ বাসা থেকে খাবারও আনতে দেয়া হয়নি। সাধারণ বন্দির যা খাবার তাই তাকে খেতে দেয়া হচ্ছে। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, তাকে সাধারণ একটি কক্ষে রাখা হয়েছে। তার পরিবেশও ভালো নয়। আমরা কথা বলার সময় সেখানে ছিলেন জেলার ও গোয়েন্দা সংস্থার বেশ কিছু লোকজন। তাদের সামনেই কথা বলতে হয়েছে। ব্যারিস্টার মওদুদ বলেন, আগামীকাল রোববার রায়ের সত্যায়িত কপি পাওয়ার চেষ্টা করব। সোম অথবা মঙ্গলবার আপিল আবেদন নিয়ে আদালতে যাবো।
কারাগার সূত্রে জানা গেছে, কারাগারে সাধারণ বন্দির মতোই তাকে গতকাল সকালে আটার রুটি, ডাল-সবজি ও জুস দেয়া হয়েছে। কারাগারে যাওয়ার পর থেকেই পানি ও বাথরুম সংক্রান্ত দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে খালেদা জিয়াকে। বাইরে থেকে খাবার জাতীয় তেমন কিছু আনতে দেয়া হচ্ছে না। এমনকি সার্বক্ষণিক কোনো চিকিৎসকের ব্যবস্থা করা হয়নি। তবে গতকাল সকালে একজন কারা চিকিৎসককে ডেকে নিয়ে খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যপরীক্ষা করানো হয়েছে। প্রয়োজনীয় ওষুধ সেবন করানোর জন্য একজন নারী কারাবন্দিকে সহযোগিতা করতে বলা হয়েছে। ওই নারী কারাবন্দি আপাতত খালেদা জিয়ার দেখাশোনা করছেন। কারা সূত্র জানায়, গতকাল সকালে ঘুম থেকে উঠে ফজরের নামাজ আদায় করেন।  নাস্তা করার পর কারাবন্দি সেবিকা নারীর সঙ্গে কথা বলেছেন। প্রথম দিনই ওই নারীর পরিবারের খোঁজখবর নিয়েছেন খালেদা জিয়া। মাঝে-মধ্যে কারারক্ষী নারীদেরও খোঁজখবর নেন তিনি। কারাসূত্র জানায়, সেখানে সবসময়ই ধীর, শান্ত থাকেন তিনি।
খালেদা জিয়ার ডিভিশন পাওয়ার বিষয়ে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ মানবজমিনকে বলেন, আইন অনুসারে ১৮ ক্যাটাগরির বন্দি স্বাভাবিকভাবেই ডিভিশন পাবেন। এজন্য কোনো আবেদন-নিবেদনের প্রয়োজন নেই। এটাই আইন। কিন্তু সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ্যমূলক ডিভিশন দেয়া হচ্ছে না। তাকে পরিত্যক্ত একটা একটা বাড়িতে বন্দি রাখা হয়েছে।
সিনিয়র আইনজীবীরা কারাফটকে যাওয়ার আগে সেখানে গিয়েছিলেন চার তরুণ আইনজীবী। তারা খালেদা জিয়ার আইনজীবী, সুপ্রিমকোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি মাহবুব উদ্দিন খোকনের লেখা একটি আবেদনপত্র নিয়ে আইজি প্রিজনের কাছে পৌঁছে দিতে যান। প্রথমে তারা আইজি প্রিজনের অফিসে গেলেও তাকে পাননি। পরে কারাগারে গিয়ে দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের খোঁজ করার চেষ্টা করেন। এসময় নাজিমউদ্দিন রোডে শাহী মসজিদ মোড়ে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যরা তাদের ভেতরে যেতে দেননি। সিনিয়র এএসপি বজলু জানান, কারা কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা পেলেই তাদের ভেতরে যেতে দেয়া হবে। তরুণ আইনজীবীদের মধ্যে ছিলেন, ব্যারিস্টার এহসানুর রহমান, আইনজীবী জুলফিকার আলী, মাহবুবুর রহমান ও তাহেরুল ইসলাম তৌহিদ। এ বিষয়ে তাহেরুল ইসলাম তৌহিদ বলেন, আমরা আইজি প্রিজনের অফিসেও গিয়েও তার সাক্ষাৎ পাইনি। দায়িত্বশীল কারও কাছে আবেদন পৌঁছানোর চেষ্টা করেছি। এজন্য কারাফটকে যাওয়ার চেষ্টা করলেও শাহী মসজিদ মোড়ে পুলিশ আমাদের আটকে দিয়েছে। দায়িত্বশীল কাউকে পাইনি। একইভাবে তার আগের দিন শুক্রবার প্রায় দুই ঘণ্টা শাহী মসজিদ এলাকায় অপেক্ষা করে ফিরে গেছেন ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন। ব্যারিস্টার এহসানুর রহমান জানান, তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও একজন বয়োজ্যেষ্ঠ হিসেবে তার সামাজিক এবং শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে দ্রুত ডিভিশন দেয়া ও চিকিৎসার ব্যবস্থা নিতে আবেদন করা হয়েছে। এই আবেদনটি পৌঁছে দিতে এসেছিলাম। কিন্তু কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সাক্ষাতেরই সুযোগ পাইনি। এছাড়া বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কারাবন্দি হওয়ার পর নাজিমউদ্দিন রোডের পরিত্যক্ত ওই কারাগারের আশপাশে ভিড় করছেন নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ। প্রথম দিন থেকেই বন্ধ করে রাখা হয়েছে শাহী মসজিদ সংলগ্ন চৌরাস্তা মোড়। সার্বক্ষণিক সেখানে ব্যারিকেড নিয়ে অবস্থান করছে পুলিশ। সেসঙ্গে সাদা পোশাকে গোয়েন্দারাও রয়েছেন সেখানে। গতকাল দুপুরে সেখানে ঢালাভরা আপেল ও মাল্টা নিয়ে উপস্থিত হন ভেড়ামারা মহিলা কলেজের শিক্ষিকা ফারিয়া মুন্নি ও ঢাকার উত্তরার স্কলাশটিকার শিক্ষিকা কাওসার জাহান ফরিদা। তারা দুজনেই নিজেদের বিএনপি কর্মী পরিচয় দিয়ে খালেদা জিয়ার কাছে ফলগুলো পৌঁছে দিতে চেষ্টা করেন। তারা কারাগারের প্রধান ফটকে যাওয়ার জন্য পুলিশ সদস্যদের অনুরোধ করেন। কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যরা তাদের বাধা দিলেও বেশ কিছু সময় অপেক্ষা করে ফিরে যান। পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, কারা কর্তৃপক্ষের কোনো নির্দেশনা না থাকায় তাদের ভেতরে যেতে দেয়া হয়নি।


Spread the love

Leave a Reply