মন্তব্য প্রতিবেদনঃ প্রধানমন্ত্রীর লন্ডন সফর,আক্রান্ত সাংবাদিকতা এবং সরকারদলীয় সাংবাদিকতা

Spread the love

suheb bhaiরেজা আহমদ ফয়সল চৌধুরী সোয়েব:
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লন্ডনে এসেছিলেন। শ্রদ্বেয় প্রধানমন্ত্রীর ব্যাক্তিগত এ সফর ঘিরে এ সময়ে বেশ কিছু অনাকাংখিত ঘটনা ঘটেছে,যেসব অনাংখিত ঘটনায় আমাকে এবং আমার প্রতিষ্টানকেও আক্রান্ত করার চেষ্টা করা হয়েছে।
আমি বেশ কয়েক বছর থেকে লক্ষ্য করছি, লন্ডনে প্রেসিডেন্ট অথবা প্রধানমন্ত্রী আসলে তাদের সফরের অনেক কিছুই জানতে পারেন না সাংবাদিকরা। যাঁরা বাংলাদেশের প্রধান প্রধান টিভি চ্যানেলগুলো বা প্রচার সংখ্যার শীর্ষে থাকা সংবাদপত্রের যুক্তরাজ্য প্রতিনিধি, তারা প্রধানমন্ত্রীর সভায় প্রবেশের আমন্ত্রনপত্র,অনুমতি আর পাস পান না। প্রধানমন্ত্রীর সাথে লন্ডনের বাংলা মিডিয়ার সাংবাদিকদের সৌজন্য সাক্ষাতের নামে ডাকা হয় তারা প্রধানত সাপ্তাহিক পত্রিকার সম্পাদক নয়তো প্রধান সম্পাদক,মহা-সম্পাদক ইত্যাদি পদবির ভারাক্রান্ত সাংবাদিক। প্রশ্নের পিঠে প্রশ্ন দাড়ায়, পুরো সপ্তাহের খবর নিয়ে ১ সপ্তাহ পরে বের হওয়া সাপ্তাহিক পত্রিকা কী দেশের প্রধান টিভি চ্যানেলগুলো বা জাতীয় দৈনিকগুলোর চেয়ে বেশি গুরুত্বপুর্ন, খবর দ্রত পাঠকের বা দর্শকের কাছে পৌছানোর ক্ষেত্রে ? আর এই আমন্ত্রনের দায়িত্বে যারাঁ থাকেন,তাদের উদ্দেশ্য কী প্রধানমন্ত্রীর সফরের খবরের যথাযথ কাভারেজ নাকি ব্যাক্তিগত-সম্পর্ক-অসম্পর্কের অস্পষ্ট ব্যাবসা সেটি আল্লাহ-মালুম!
দোষ কার? গুন কার? এ বিতর্কে যেতে চাইনা। কারন সাবেক মরহুম প্রেসিডেন্ট জিল্লুর রহমান বছর পাচেক আগে লন্ডনে এসেছিলেন সেখানে ও বেশ কিছু সমস্যা হয়েছিল। সেসময়কার হাইকমিশনার ড: সাইদুর রহমান সাহেবকে জিজ্ঞাস করেছিলাম, প্রেসিডেন্টের সাথে সাংবাদিকদের বৈঠকে কারা যাবেন, কে বা কারা নির্ধারন করেছিল; কোনো সদুত্তর পাইনি।
প্রিয় পাঠক,৯০ সালে সিলেট থেকে শুরু করেছিলাম সাংবাদিকতা। লন্ডনে আছি গত ২৫ বছর, এ ২৫ বছরে জীবন এবং জীবিকার তাগিদে সাংবাদিকতা থেকে কখনো দুরে থাকিনি। পেশার তারে জড়ানো জীবনে অর্জিত অর্থে সিংহভাগই ব্যায় করেছি,সাংবাদিকতায়। সাংবাদিকতার জন্য বাবার গালিও কম শুনিনি, বাবার একটি কথা এখনো আমাকে ভাবায়। বাবা বলেছিলেন নিউজ পেপার থেকে অনেক শক্ত হচ্ছে টাকার কাগজটা, ২০ পাউন্ডের একটি নোট হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলেছিলেন- দেখতো এ কাগজটি শক্ত কিনা? ছেঁড়া যায়া কিনা? বলেছিলাম ছিড়তে কষ্ট হয়, তার পর নিউজ পেপার হাতে দিয়ে বলেছিলেন এটি ছেঁড়ার চেষ্টা করো, খুবই সহজে ছিঁেড় ফেলেছিলাম, বাবা বলেছিলেন টাকা উপার্জন কর, এ সাংবাদিকতা তোমাকে ভাত দিবেনা। বাবার কথা শুনিনি। যে সাংবাদিকতার নেশায়,সমাজকে আলোকিত করার সপ্নে পথচলা শুরু করেছিলাম, সে যাত্রায় কতদুর পৌছুতে পেরেছি জানি না।
আমি সাংবাদিকতা ছেড়ে দিতে চাইলেও সাংবাদিকতা আমার পিছু ছাড়েনি। প্রিন্ট মিডিয়া থেকে ইলেকট্রনিক্স মিডিয়া। লেখালেখি থেকে আজ আমি চ্যানেল আই ইউরোপের ম্যানেজিং ডিরেক্টর হিসেবে কাজ করছি বেশ কয়েক বছর ধরে। আগে প্রায়ই প্রেস কনফারেন্সে যাওয়া হতো এখন আর পারিনা। এখন ক্যামেরাম্যান এবং রিপোর্টাররা নিউজ সংগ্রহ করে ফেলে। সে হিসেবে প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সবার নিউজ তারাই কাভার করে।
লন্ডনে একধরনের সাংবাদিক আছেন যাদের প্রেস কনফারেন্সে আয়োজককে প্রশ্নবাণে জর্জরিত করে সাংবাদিকতা জাহির করে,হাইকমিশনার সহ কত-শত কমিশনার আর কমিশনের খোজে স্যুটেড-বুটেড হয়ে ধর্না দেন। এইসব সন্মানিত সাংবাদিকদের বেশিরভাগই সাংবাদিকতা শুরু করেছেন লন্ডনে এসে। অনেকে বাই চান্স জার্নালিষ্ট,আর বাই প্রফেশন ভিন্ন পেশাজীবি। প্রিয় পাঠক তাদের সাংবাদিকতা নিয়ে আমার কোন প্রশ্ন নেই। কথা হল প্রধানমন্ত্রীর সফরে শীর্ষ টিভি চ্যানেল আর জাতীয় দৈনিকের চেয়ে কেন তারা গুরুত্বপুর্ন,সেটি অনেকের-ই বোধগম্য নয়।
সব সরকারের আমলেই সরকারদলের এখানকার তৃতীয়-চতুর্থস্থরের চাটুকারদের মনোনীতদের পিএম এর সফরের সময় সাজানো হয় মহা গুরুত্বপুর্ন সাংবাদিক। দলকানা-দলবাজ-চাটুকাররা সাংবাদিকতার বেশে ইনিয়ে বিনিয়ে বিচিত্র ভঙ্গিমায় প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাত পান,ছবি তুলেন সন্মানিত প্রধানমন্ত্রীর পাশে দাড়িয়ে,অতপর: সেই ছবি দেশে-প্রবাসে বেচেঁ খান।
তারা প্রধানমন্ত্রীকে বোঝাতে চান তারা ছাড়া লন্ডনে আর সাংবাদিক নেই। আমার জানতে ইচ্ছে করে তারা কারা? এসব সাংবাদিকদের যন্ত্রনায় লন্ডনের প্রকৃত সাংবাদিকরা অতিষ্ট। প্রেস কনফারেন্সে ,কমিউনিটির অনুষ্টানে খামের বিনিময়ে ছবি আর ভিডিওগ্রাফির যন্ত্রনায় ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা হলেও দেশের পত্রিকায় টিভিতে খবর খুজে পান না খাম দাতা দর্শক-পাঠকরা। অথচ সব অনুষ্টানের সামনে সারি থাকে তাদেরই দখলে।
প্রধানমন্ত্রীর লন্ডনের সভায় যেভাবে মিডিয়ায় দাওয়াত দেয়া হয়েছিল সেটি কোন ধরনের দাওয়াত? এ রকম দাওয়াতের কি দরকার আছে? প্রধানমন্ত্রী দেশে সম্পাদকদের সাথে বসেন, সিনিয়র সাংবাদিকদের সাথে বসেন। কিন্তু লন্ডনে সে সুযোগ কি নেই? লন্ডনে প্রধানমন্ত্রীর সফরে মিডিয়ার বিষয়টি কে দেখা শুনা করেন? আওয়ামীলীগ না হাইকমিশন? হাইকমিশনে নতুন একজন প্রেসমিনিষ্টার এসেছেন, আমি শুনেছি সত্য মিথ্যা জানি না-লন্ডনে তিনি নাকি কেবল এক প্রেসক্লাবের কর্তাদের-ই চেনেন।
লন্ডনে বাংলা মিডিয়ায় একদল বিশিষ্ট সাংবাদিক আছেন যারা ৭ দিন পর পর একটি কাগজ রের করেন। কারো বাক স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা উচিত না। কিন্তু তাদেরতো বোঝা উচিত যে তাদের নাম স্বর্বস্ব পত্রিকা থেকে আরো বড় বড় পত্রিকা রয়েছে রয়েছে টেলিভিশন। আমার কোনো অহংকার বা অহমিকা বোধ নেই। সহজ সরলভাবে জীবন চালাতে চাই,আদর্শ ধরে রেখে পাড়ি দিতে চাই জীবনের বাকীটা বেলা।
২.
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী লন্ডনে আসলেন, তাকে সংম্বর্ধনা দেয়া হলো, চ্যানেল আই ইউরোপের রিপোর্টার এবং ক্যমারোম্যান গেলেন নিউজ কাভার করতে, তাদেরকে প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তারক্ষী এসএসএফ বের করে দিলো, এসএসএফ বের করতেই পারে, তাদের কাছে প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তাই মুখ্য। আমার রিাপোর্টারকে বের করে দেয়ার পর ওরা যোগাযোগ করে আমার সাথে। আমি আওয়ামীলীগের দায়িত্বশীল এক নেতার সাথে ফোনে কথা বলি, নেতা বললেন হাইকমান্ডের নির্দেশে বের করে দেয়া হয়েছে। আমার খুবই জানতে ইচ্ছে করে কে সেই হাইকমান্ড ? যারা প্রকাশ্যে বিএনপি-জামায়াতের কর্মীদের কাছে ক্ষমা ভিক্ষা চান,প্রধানমন্ত্রীর লন্ডন সফরকালীন সময়ে তারাই কী সেই হাইকমান্ড? নাকি যারা বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ রেহানার নাম ভাঙ্গান কথায় কথায়,তারাই সেই নীতিনির্ধারক ?
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে একটি কথা আজ জানাতে চাই, লন্ডনে অনেকেই অনেক ধরনের সুযোগ সুবিধা নিয়েছেন সাংবাদিকতার নাম ভাঙ্গিয়ে , আওয়ামীলীগের নাম ভাঙিয়ে আখের গুছিয়েছেন, অনেকে এখনো ব্যস্ত রয়েছেন আখের গুছাতে। কিন্তু চ্যানেল আই ইউরোপ কি কোনো সুযোগ সুবিধে নিয়েছে? দু:খের সাথে বলতে হচ্ছে স্বাধীনতার বিরোধীরা ২০১৩ সালে লন্ডনে চ্যানেল আই ইউরোপের কার্যালয়ে আক্রমন করেছে। লন্ডনে আর কি কোনো পত্রিকার অফিসে বা টেলিভিশনের অফিসে হামলা করেছে?
সাংবাদিকতার নামে সব সরকারের সময় সরকারীদলের দালালি আর দলাদলি করার বিষয়টিই যদি হয় যোগ্যতার মাপকাঠি তাহলে আর বলবার কিছু নেই।
shoaibchanneli@yahoo.co.uk
রেজা আহমদ ফয়সল চৌধুরী,ব্যাবস্থাপনা পরিচালক-চ্যানেল আই ইউরোপ ও আহবায়ক ইউকে-বাংলা প্রেসক্লাব।


Spread the love

Leave a Reply