বাংলাদেশে অক্ষয় হয়ে থাকবে পল্লীবন্ধুর কীর্তি

Spread the love

খন্দকার দেলোয়ার জালালী:

চলে গেলেন বাংলাদেশের উন্নয়নের কারিগর কিংবদন্তি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। আজ ১৪ জুলাই সকাল পৌনে ৮টায় ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ইন্তেকাল করেছেন তিনি। শেষ হলো বর্ণাঢ্য এক জীবনের। পল্লী জীবনের অভূতপূর্ব উন্নয়ন ঘটিয়ে ইতিহাসে স্থান করে নিলেন পল্লীবন্ধু। এখন হিসাব মেলানোর সময় এসেছে, এখন মূল্যায়ন হবে সাবেক রাষ্ট্রপতি পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের।

সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের কীর্তি অক্ষয় হয়ে থাকবে বাংলাদেশে। দীর্ঘ ৯ বছর বাংলাদেশের রাষ্ট্রপ্রধান থাকাকালে সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, ক্রীড়া এবং সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে উন্নয়নের অসংখ্য স্মৃতিচিহ্ন উজ্জ্বল হয়ে থাকবে। গণমানুষের জন্য হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের অনুরাগ দেশ ও জাতির জন্য তার সংস্কারমূলক কর্মকাণ্ড দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে বাংলাদেশের ইতিহাসে।

হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ‘আমার কর্ম আমার জীবন’ জীবনী গ্রন্থের তথ্যমতে ১৯৩০ সালের ২০ মার্চ কুড়িগ্রাম শহরের “লাল দালান” বাড়ি খ্যাত নানাবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন পেয়ারা নামের একটি শিশু। সেই শিশুই বড় হয়ে অনন্য ইতিহাস রচনা করেছেন বাংলাদেশে। শিশু পেয়ারা বড় হয়ে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ নামে সাফল্যের সঙ্গে সেনাবাহিনীপ্রধানের দায়িত্ব পালন করেছেন।

রাষ্ট্র পরিচালনা করেছেন দীর্ঘ ৯ বছর। রাষ্ট্রক্ষমতা ছেড়ে দেয়ার পর থেকে প্রতিটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত হয়েছেন। জীবনে কোনো নির্বাচনেই পরাজয়ের কালিমা স্পর্শ করতে পারেনি তাকে। পরপর দুবার ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালের জাতীয় নির্বাচনে কারাগারে থেকে নির্বাচনে অংশ নিয়ে পাঁচটি করে আসনে জয়ী হয়ে বিশ্বরেকর্ড সৃষ্টি করেছেন।

একাদশ জাতীয় নির্বাচনের পরম মন্ত্রীর পদমর্যাদায় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত এবং দ্বাদশ জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা নির্বাচিত হয়েছেন। সৈনিক থেকে রাজনীতিতে উঠে আসা এক জীবনে এমন গৌরব গাঁথা নেই বললেই চলে।

১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ থেকে ১৯৯০ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত রাষ্ট্রক্ষমতার শীর্ষে থেকে উন্নয়ন ও সংস্কারের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস রচনা করেছেন পল্লীবন্ধু। ১৯৮২ সালের ৭ নভেম্বর থেকে ১৯৮৩ সালের ৭ নভেম্বর-এর মধ্যে ৪৬০ উপজেলা পরিষদ সৃষ্টি করে ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণ করেছেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। ৪২টি মহকুমাকে জেলায় পরিণত করেন তিনি। এতে বাংলাদেশের জেলার সংখ্যা হয় ৬৪টি।

সব রাজনৈতিক দলের বিরোধিতা উপেক্ষা করে জাতিসংঘ শান্তি মিশনে সৈন্য পাঠিয়ে দূরদর্শিতার স্বাক্ষর রেখেছেন পল্লীবন্ধু এরশাদ। জুমার নামাজকে বলা হয় গরিবের হজ, তাই শুক্রবারকে সাপ্তাহিক ছুটির দিন ঘোষণা করেন পল্লীবন্ধু এরশাদ। সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের বাংলাদেশে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম ঘোষণা দেন তিনি। মসজিদ, মন্দির, গির্জা, প্যাগোডাসহ সব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের বিদ্যুৎ ও পানির বিল মওকুফ করেন।

সপ্তম শতাব্দীতে রাজা শশাঙ্ক ও পরবর্তী সময়ে সম্রাট আকবর খাজনা আদায়ের জন্য বাংলা বর্ষপঞ্জি শুরু করলেও পহেলা বৈশাখ এখন সব ধর্ম ও বর্ণের বাঙালির প্রাণের উৎসব। সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদই পহেলা বৈশাখকে সরকারি ছুটির দিন ঘোষণা করেন। বাঙালির সবচেয়ে বড় উৎসব পহেলা বৈশাখ। পৃথিবীর সব প্রান্তের বাঙালিরা দিনটিকে উৎসবমুখর করেন নানা আয়োজনে।

বিচারব্যবস্থা সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে রংপুর, যশোর, কুমিল্লা, বরিশাল, সিলেট এবং চট্টগ্রামে ৬টি হাইকোর্টের বেঞ্চ সম্প্রসারণ করেন। বিচারব্যবস্থা দ্রুত করতে ১৮৯৮ সালের ফৌজদারি দণ্ডবিধি এবং ১৯০৮ সালের দেওয়ানি কার্যবিধি সংশোধন করেন। একই উদ্দেশ্যে প্রতিটি উপজেলায় মুনসেফ কোর্ট স্থাপন করেন।

চট্টগ্রাম পৌরসভাকে সিটি কর্পোরেশনে উন্নীত করেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। আত্মসমর্পণকারী পার্বত্য বিপথগামী উপজাতিদের সাধারণ ক্ষমা এবং পুনর্বাসনে বিশেষ সুবিধার ব্যবস্থা করেছেন।

গণমাধ্যমের জন্য জাতীয় প্রেস কমিশন গঠন করেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। এ ছাড়া রেডিও ও টেলিভিশন একত্রীকরণের মাধ্যমে জাতীয় সম্প্রচার সেল গঠন করেন। সরকার নিয়ন্ত্রিত দি বাংলাদেশ অবজারভার ও চিত্রালীতে পূর্বতন মালিকানায় ফিরিয়ে দেন। দৈনিক বাংলা, বিচিত্রা এবং বাংলাদেশ টাইমসের স্বাধীন ব্যবস্থাপনার জন্য ‘দৈনিক বাংলা ট্রাস্ট’ ও ‘বাংলাদেশ টাইমস ট্রাস্ট’ নামে দুটি ট্রাস্ট গঠন করেন।

অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন কার্যক্রম, যৌথ দল-কষাকষির এজেন্ট নির্ধারণ এবং ট্রেড ইউনিয়নের নির্বাচনের অনুমতি দেন তিনি। অধিক হারে বিদেশে চাকরিপ্রাপ্তির সুযোগ বৃদ্ধি এবং রিক্রুটিং এজেন্টদের হয়রানি বন্ধে অধ্যাদেশ জারি করেন। এ ছাড়া বিদেশে চাকরির সুযোগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে বাংলাদেশ ওভারসিজ এমপ্লয়মেন্ট লিমিটেড (বোয়েলস) নামে একটি পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি গঠন করেন।

অধিকতর সুষ্ঠু ও ন্যায়সঙ্গত কর-কাঠামো প্রবর্তন করেছেন এরশাদ। স্টক এক্সচেঞ্জ পুনরুজ্জীবিত করেন। জাকাত তহবিল ও জাকাত বোর্ড গঠন করেন। দুই কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়ে হিন্দু ধর্মকল্যাণ ট্রাস্ট এবং বৌদ্ধ ও খ্রিস্টানধর্মের প্রত্যেকটির জন্য এক কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়ে দুটি পৃথক কল্যাণ ট্রাস্ট গঠন করেন। দেশের উপজেলা ও গ্রামাঞ্চলে স্বল্পসুদে গৃহ নির্মাণ ঋণের ব্যবস্থা করেন। উল্লেখযোগ্য হারে কৃষিঋণ বাড়িয়ে দেন তিনি।

বেসরকারি পর্যায়ে শিল্প স্থাপনে উৎসাহ দিতে ৩৩টি পাটকল এবং ২৫টি বস্ত্র মিল থেকে পুঁজি প্রত্যাহার করে সেগুলো বাংলাদেশি মালিকদের কাছে প্রত্যর্পণ করেন। বিদ্যমান দুটি কর্পোরেশনের পাশাপাশি জীবন ও সাধারণ বীমা ব্যবসা চালানোর অনুমতি দেন। চট্টগ্রামে রফতানি প্রক্রিয়াজাতকরণ জোনের কাজ শুরু করেন। নতুন শিল্পের মঞ্জুর দানে ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালু করেন। ক্ষুদ্র, কুটির ও হস্তচালিত তাঁতশিল্পের জন্য উৎসাহ প্রদান করেন।

ইটের ভাটায় কাঠের পরিবর্তে কয়লা ব্যবহারে উৎসাহ প্রদান করেন। কক্সবাজারকে আন্তর্জাতিক মানের পর্যটনকেন্দ্রে পরিণত করতে নানামুখী কর্মসূচি হাতে নেন। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর উদ্যোগ হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের আমলেই শুরু হয়েছিল।

উপজেলা পর্যায়ে ৩১ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে তিনজন বিশেষজ্ঞসহ ৯ জন ডাক্তার নিয়োগ দিয়েছিলেন। পল্লী এলাকার ৩৯৭ উপজেলার মধ্যে ৩৩৩টি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নির্মাণ করেন। প্রতিটি ইউনিয়নে পরিবার কল্যাণকেন্দ্র স্থাপন করে সেখানে ওষুধ ও কর্মচারী নিশ্চিত করেছিলেন। সরকারি হাসপাতালগুলোতে পথ্যের জন্য বরাদ্দ ৮ হাজার থেকে বাড়িয়ে ১২ হাজার টাকা করেন। সারা দেশে ২৫ হাজার দাইকে প্রশিক্ষণের আওতায় আনেন।

হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বাজেটে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেন কৃষিকে। সেচ প্রকল্পাধীন চাষাবাদ বাড়ানো হয়েছিল দ্বিগুণ। সেচের জন্য ১৯৮৪ সালেই ১৭ হাজার ৩০০ গভীর নলকূপ, এক লাখ ২৬০০ অগভীর নলকূপ, ৪২ হাজার লো-লিফট পাম্প বসান। সহজ শর্তে কৃষিঋণ বিতরণ করেন। গমের উৎপাদন বৃদ্ধি করেন ৫ গুণ বেশি।

সার্বজনীন বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা প্রবর্তনের পদক্ষেপ নেন। শিক্ষাকে বাস্তবমুখী, বিজ্ঞান ভিত্তিক এবং অর্থনৈতিক চাহিদার পূর্ণ উপযোগী হিসেবে ঢেলে সাজান। প্রতি ২ কিলোমিটার এলাকা বা ২ হাজার মানুষের বসবাস এলাকায় একটি করে প্রাথমিক বিদ্যালয় নির্মাণের কাজ শুরু করেন। পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত বিনামূল্যে পাঠ্যবই বিতরণ শুরুই করেন তিনি।

চারটি শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা একই দিনে নেয়া শুরু করেন। প্রতিটি উপজেলায় একটি বালক ও একটি বালিকা বিদ্যালয় এবং জেলা সদরে একটি কলেজকে আদর্শ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরিণত করেন। ২১ কলেজকে জাতীয়করণ করেন। ৯টি কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত করেন।

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাদ্রাসা ও কলেজশিক্ষকদের আর্থিক সুবিধা ৭০ শতাংশ বৃদ্ধি করেন। ছয়টি বিশ্ববিদ্যালয় হল এবং ১৭টি কলেজ হোস্টেল নির্মাণ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজের নামে কোনো হোস্টেল নির্মাণ না করলেও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং জিয়াউর রহমানের নামে দুটি হোস্টেল নির্মাণ করেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য দোতলা বাসসহ অতিরিক্ত বাসের ব্যবস্থা করেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত রেললাইন সম্প্রসারণ করেন। ‘পে অ্যাজ ইউ আর্ন’ প্রকল্পে স্কুটার বরাদ্দ দিয়ে ছাত্রদের সম্পূরক আয়ের ব্যবস্থা করেন। কারিগরি শিক্ষা উন্নয়নে নানা কর্মসূচি নেন। প্রথম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত ইংরেজি শিক্ষা বাধ্যতামূলক করেন।

সড়কপথে যোগাযোগব্যবস্থায় বৈপ্লবিক উন্নয়ন করেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। দুই বছরে ২০৬ উপজেলা সড়ক যোগাযোগের আওতায় আসে। ঢাকা-মাওয়া বিকল্প সড়ক দ্রুততার সঙ্গে এগিয়ে নেন। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নিম্নাঞ্চলীয় রাস্তা নির্মাণ করেন। চীনের সহায়তায় বুড়িগঙ্গা নদীর ওপর সেতু নির্মাণ করেন।

জাপানের সহায়তায় মেঘনা ও মেঘনা-গোমতী সেতু নির্মাণের সম্ভাব্যতা চূড়ান্ত করেন। খুলনা-মোংলা ও কুমিল্লা-চান্দিনা বাইপাস সড়ক নির্মাণ করেন। সিলেট থেকে ভৈরব হয়ে ঢাকা সড়ক নির্মাণ করেন। কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচির আওতায় গ্রামাঞ্চলের রাস্তাঘাটের ব্যাপক উন্নয়ন করেন।

রেলওয়ে বোর্ড বিলুপ্ত করে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল এবং রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চল নামে দুটি সংস্থা গঠন করেন। রেলওয়ের ৩০টি ইঞ্জিন, ১২৫৫টি মালবাহী বগি সংগ্রহ করেন এবং ১০৬টি যাত্রীবাহী বগি সংগ্রহের উদ্যোগ নেন।

বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। রাজশাহী বিমানবন্দরের কাজ সমাপ্ত করেন। সিলেট ওসমানী বিমানবন্দর সম্প্রসারণ করেন। চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে বোয়িং ওঠানামার জন্য রানওয়ে সম্প্রসারণ করেন। ৪টি আধুনিক ডিসি ১০-৩০ বিমান ক্রয় করেন।

২১২ কোটি টাকা ব্যয়ে ২১২ উপজেলায় উন্নত ডাকব্যবস্থা নিশ্চিত করেন। ১৯৮৩ সালের ডিসেম্বর থেকে বাংলাদেশ টেলিফোনে সরাসরি আন্তর্জাতিক ডায়ালিং করতে সমর্থ হয়। ১৯৮৩ সালে ৭৮ উপজেলায় ৩০ লাইনের মেগনেটো এক্সচেঞ্জ স্থাপন করেন।

আশুগঞ্জে ৬০ মেগাওয়াট শক্তিসম্পন্ন একটি বিদ্যুৎ উৎপাদন প্লান্ট চালু করেন। চট্টগ্রাম, কাপ্তাই, বরিশাল, ঘোড়াশাল ও আশুগঞ্জে বিদ্যুৎ উৎপাদন স্টেশন নির্মাণ সমাপ্ত করেন। ১২৬ উপজেলায় বিদ্যুতায়নের কাজ শুরু করেন। দুই বছরে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের মাধ্যমে পাঁচ হাজার মাইল বিতরণ লাইন নির্মাণ করেন।

বাখরাবাদ গ্যাস ক্ষেত্রের সঙ্গে তিতাস গ্যাসের সংযোগের জন্য ৩২ মাইলব্যাপী ২০ ইঞ্চি লাইন স্থাপনের কাজ শুরু করেন। জয়পুরহাট কঠিন শিলাখনি এবং সিমেন্ট উৎপাদন প্রকল্পের অনুমতি দেন। তিতাস গ্যাসের ৬ নম্বর কূপ চালু এবং ৭ ও ৮ নম্বর কূপের সারফেজ গ্যাদারিং ফ্যাসিলিটিজ সংক্রান্ত দরপত্র আহ্বান করেন। সীতাকুণ্ডে কূপের খননকাজ দ্রুততার সঙ্গে শুরু করেন।

ন্যাশনাল ওয়াটার মাস্টার প্ল্যান প্রণয়ন করেন। ১৯৮৫ সালের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে তিস্তা বাঁধ প্রকল্প নির্মাণ এগিয়ে নেন। মুহুরি ও মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্প নির্মাণকাজ শেষ করেন। মুজিবনগরে জাতীয় স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করেন। পুরনো গণভবনকে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবনে রূপান্তর করেন। মেগাপ্রকল্পের মাধ্যমে উপজেলা ও জেলা সদর দফতর নির্মাণ করেন।

রাজধানী ঢাকাতে এরশাদের কীর্তির অসংখ্য স্মৃতি অক্ষয় হয়ে আছে। স্বল্প সময়ে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধ নির্মাণসম্পন্ন করেন। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বর সম্প্রসারণ করেন। বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের ভবন সম্প্রসারণ এবং সৌন্দর্যবর্ধন করেন। সংসদ ভবন এলাকার উন্নয়ন ও রমনায় জাতীয় তিন নেতার মাজার নির্মাণ সম্পন্ন করেন। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ভিআইপি টার্মিনাল নির্মাণ করেন।

জাতীয় ঈদগাহ ও সচিবালয়ের সামনে নাগরিক সংবর্ধনা কেন্দ্র নির্মাণ করেন। নর্থ সাউথ ও ওয়ারী খাল রোড নির্মাণ করেন। মিরপুর-আগারগাঁও রোড প্রকল্প শুরু করেন। মিরপুর ও গুলশান পৌরসভাকে সিটি কর্পোরেশনে অন্তর্ভুক্ত করেন। উত্তরা ও বারিধারায় নতুন প্লট বরাদ্দ দেন। পুরান ঢাকার তিনটি খেলার মাঠ এবং ২৮০টি বিপনিবিশিষ্ট ধুপখোলা কমপ্লেক্স তৈরি করেন।

রাজধানীর কাঁচাবাজারগুলো ভেঙে আধুনিক ও বহুতলবিশিষ্ট ভবন তৈরি করেন। ফুলবাড়িয়া কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের ভিড় কমাতে তেজগাঁও, গাবতলী ও যাত্রাবাড়ীতে তিনটি বাস টার্মিনাল নির্মাণ করেন। ঢাকায় এক ডজনের বেশি শিশু পার্ক নির্মাণ করেন। যানজট নিরসনে ট্রাফিক সিগন্যাল চালু করেন। ঐতিহাসিক আহসান মঞ্জিল সংস্কার করেন। নগরীর পানি ও বিদ্যুৎ লাইনের উন্নয়ন করেন। প্রতিটি সড়ক ও অলিগলিতে বৈদ্যুতিক বাতির ব্যবস্থা করেন। নগরীতে গ্যাস সরবরাহের ব্যবস্থা করেন। নগর ভবন ও পুলিশ সদর দফতর নির্মাণ করেন।

পান্থপথ ও রোকেয়া সরণি সড়ক নির্মাণ করেন। মিরপুরে দ্বিতীয় জাতীয় স্টেডিয়াম এবং ইনডোর স্টেডিয়াম নির্মাণ করেন। দেশের একমাত্র ক্রীড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিকেএসপি প্রতিষ্ঠা করেন। বনানীতে আর্মি স্টেডিয়াম নির্মাণ করেন। ঢাকা বন্যা নিরোধ বাঁধ নির্মাণ করেন। পথ শিশুদের জন্য পথকলি ট্রাস্ট গঠন করেন।

এ ছাড়া উপজেলাভিত্তিক তিন স্তরের প্রশাসনব্যবস্থা চালু করেন। যৌতুক নিরোধ আইন, নারী নির্যাতন প্রতিরোধ আইন, মুসলিম পারিবারিক আইন, বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন জারি করেন। বিসিএস একাডেমি ও লোক প্রশাসন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন। জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে বন্ধ থাকা পদোন্নতি চালু করেন।

গেজেটেড পদে মহিলাদের জন্য ২০ শতাংশ পদ সংরক্ষণ করেন। প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে ৫০ শতাংশ নারীদের জন্য সংরক্ষণ করেন। মেয়েদের জন্য পৃথক ক্যাডেট কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৮৮ থেকে ‘৯০ সালে সারা দেশে ৫৬৮টি গুচ্ছগ্রাম স্থাপন করে ২১ হাজার ছিন্নমূল ভূমিহীন পরিবারকে পুনর্বাসিত করেন। চট্টগ্রামে ইউরিয়া ও যমুনা (তারাকান্দি) সার কারখানা স্থাপন করেন।

৮ হাজার কিলোমিটার পাকা সড়ক এবং ১৭ হাজার কিলোমিটারের বেশি কাঁচারাস্তা নির্মাণ করেন। ছোট-বড় ৫৮০টি সেতু নির্মাণ করেন। ২৮৭টি উপজেলায় হেলিপ্যাড নির্মাণ করেন। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের পরিবারের জন্য রাজধানীর বনানীতে বাড়ি বরাদ্দ দেন। ৯ বছর রাষ্ট্র পরিচালনাকালে পল্লীবন্ধু অজস্র কল্যাণময় উদ্যোগ গ্রহণ করেন। যার সুফল দেশ ও জাতি সম্মানের সঙ্গে আজীবন উপভোগ করবে।

লেখক: খন্দকার দেলোয়ার জালালী, সাংবাদিক এবং জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি।


Spread the love

Leave a Reply