বাংলাদেশ উপকূলে ‘রোয়ানু’র আঘাত, ২৪ প্রানহাণী

Spread the love

নিজস্ব প্রতিবেদক:

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া ঘূর্ণিঝড় ‘রোয়ানু’ শনিবার বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার উপকূলে আঘাত হানার পর উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে বাংলাদেশ অতিক্রম করেছে। এসময় প্রচণ্ড দমকা ও প্রবল বৃষ্টিপাতে এ পর্যন্ত অন্তত ২৪ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

এদের মধ্যে চট্টগ্রাম নগরীতে তিনজন, বাশঁখালীতে জলোচ্ছ্বাসে শিশুসহ সাতজন ও সীতাকুণ্ডে  দুই জন মারা গেছেন। এছাড়া, কক্সবাজারের কুতুবদিয়া তিনজন, ভোলায় গাছ ও ঘর চাপা পড়ে তিন জন, লক্ষ্মীপুরে গাছ চাপায় একজন, নোয়াখালীর হাতিয়ায় জোয়ারে ভেসে মা-মেয়েসহ তিনজন, ফেনীর সোনাগাজী উপজেলায় একজন এবং পটুয়াখালীতে ঘর ভেঙে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে।

আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, বৃষ্টি ঝরিয়ে দুর্বল হয়ে স্থল নিম্নচাপে পরিণত হয়ছে এই ঘূর্ণিঝড়। এ ঝড়ের প্রভাবে খুলনা, চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগের উপকূলীয় জেলাগুলোর বেশিরভাগ গ্রাম চার থেকে পাঁচ ফুট জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হয়েছে। কুতুবদিয়া উপজেলার বেশিরভাগ অঞ্চল এ মুহুর্তে পানির নিচে তলিয়ে গেছে। ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর প্রভাবে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ঝড়ো হাওয়ায় ঘরের ওপর গাছ ভেঙে পড়ে ও ঘর ধসে গেছে। ঘরবাড়ি ও সম্পদের বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলায় দুই শিশুসহ সাতজন ভেসে যায়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামসুজ্জামান জানান, বিকেলে জলোচ্ছ্বাসের পানি বেড়িবাঁধ ভেঙে বাঁশখালীর বিভিন্ন এলাকায় ঢুকে পড়ে। এতে সাতজন ভেসে যায়। পরে তাদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তারা হলেন, খানাবাদ ইউনিয়নের আবু সিদ্দিক (৫৫), বুলবুল আকতার (৫৭), জালাল আহমদ (৩৮) ও হোসেন আহমদ (৭)। এছাড়া চরোয়া ইউনিয়নে মারা গেছে তিন বছরের শিশু তাহেরা বেগম। অন্য দুইজনের পরিচয় এখনো জানা যায়নি।

এছাড়া প্রবল বৃষ্টির কারণে সীতাকুণ্ড উপজেলার জঙ্গল ছলিমপুর পাহাড়ি এলাকায় পাহাড় ধসে মা ও ছেলের মৃত্যু হয়েছে। তারা হলেন— জঙ্গল ছলিমপুর এলাকার রফিকুল ইসলামের স্ত্রী কাজল বেগম (৫০) ও তার ছেলে বেলাল হোসেন (১২)। এদিকে চট্টগ্রাম নগরীতে শনিবার দুপুরে আম কুড়াতে গিয়ে নগরীর পাঁচলাইশে মো. রাকিব (১১) নামে এক শিশু নিহত হয়েছে। আর নগরীর হালিশহরে মারা গেছেন আরো দু’জন।

ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর আঘাতে কক্সবাজারের কুতুবদিয়ায় দুইজন নিহত ও ২০ জন আহত হয়েছেন। কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। দুপুর ১টার দিকে কুতুবদিয়ায় মাটির দেয়াল ধসে যাওয়ায় চাপা পড়ে মোহাম্মদ ইকবাল (২৫) নামে এক ব্যক্তি নিহত ও উত্তাল সাগরে নৌকা উল্টে ফজলুল হক (৫০) নামে আরেক ব্যক্তি ভেসে গেছেন। এছাড়াও জলোচ্ছ্বাসে ২০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

এর আগে, ভোলার তজুমদ্দিন উপজেলায় দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। তারা হলেন— উপজেলার চাঁদপুর ইউনিয়নের শশিগঞ্জ গ্রামের নয়নের স্ত্রী রেখা বেগম (৩৫) ও একই এলাকার মো. মফিজের ছেলে আকরাম (১৪)। শুক্রবার শেষরাতের দিকে ভোলায় প্রবল ঝড়ো হাওয়া শুরু হয়। ভোর ৪টার দিকে ঝড়ের তীব্রতা বেড়ে গেলে ঘর চাপা পড়ে আকরাম আহত হন। তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সকাল ৬টায় সে মারা যান। এছাড়া ঝড়ে গাছ ভেঙে ঘরের ওপর পড়লে চাপা পড়ে মারা যান রেখা বেগম। অপরদিকে দৌলতখান উপজেলার দক্ষিণ জয়নগর গ্রামের জাহাঙ্গীরের স্ত্রী রেনু বিবি ঘরচাপায় মারা যান।

এদিকে, প্রবল ঝড়ো হাওয়ার মধ্যে শনিবার সকালে ঘর ভেঙে পড়লে পটুয়াখালী দশমিনা উপজেলায় এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। শনিবার সকালে উপজেলার সদর ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর গ্রামে ঘর ভেঙে পড়লে চাপা পড়ে নয়া বিবি (৫২) নামে ওই নারীর মৃত্যু হয়।

ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর ছোবল থেকে রক্ষা পায়নি লক্ষীপুর, ফেনী আর হাতিয়া। ঘূর্ণিঝড়ে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার উত্তর তেওয়ারীগঞ্জ এলাকায় গাছ পড়ে আনার উল্যাহ নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। প্রবল জোয়ারে হাতিয়া উপজেলায় মা ও মেয়েসহ তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। তারা হলেন, ২নং চানন্দী ইউনিয়নে নলের চর আদর্শ গ্রামের বাসিন্দা আবুল কাশেমের স্ত্রী মিনারা বেগম (৩৫) এবং তার মেয়ে মরিয়ম নেছা (১০)  এবং জাহাজমারা ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডে চরহেয়ার গ্রামের সালাউদ্দিন ব্যাপারীর স্ত্রী মাহফুজা বেগম (৪৭)। শনিবার বিকেলে এ ঘটনা ঘটে।

এর আগে শনিবার দুপুরে ফেনীর সমুদ্র উপকূলীয় এলাকায় রোয়নু আঘাত হানলে সোনাগাজী উপজেলার চরচান্দিয়ার জেলেপাড়া এলাকায় জোয়ারের পানিতে ভেসে নূর আলম নামে এক রাখালের মৃত্যু হয়।

সর্বশেষ খবরে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের উপকূল অতিক্রম করার পর বৃষ্টি ঝরিয়ে ক্রমশ দুর্বল হয়ে স্থল নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে । সন্ধ্যায় সেটি অবস্থান করছিল ভারতের ত্রিপুরা-মিজোরাম এলাকায়। এটি স্থলভাগের ওপর দিয়ে আরো উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে বৃষ্টি ঝরিয়ে ক্রমান্বয়ে দুর্বল হয়ে যাবে।

ঝড় কেটে যাওয়ায় চট্টগ্রাম, মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে সাত নম্বর বিপদ সংকেত নামিয়ে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর বিপদ কাটলেও এর প্রভাবে আরো দুই দিন বরিশাল-চট্টগ্রাম উপকূলসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত হতে পারে।


Spread the love

Leave a Reply