বৃহস্পতিবার থেকে রোজা শুরুঃ ইস্ট লন্ডন মসজিদের ব্যাপক প্রস্তুতি

Spread the love

Four-Imamবাংলা সংলাপ ডেস্কঃ প্রতি বছরের মতো এবারও রামাদ্বানে ইস্ট লন্ডন মসজিদে থাকছে নানা আয়োজন। মুসল্লিদেরকে ইবাদতের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি সুযোগ-সুবিধা দিতে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। ইস্ট লন্ডন মসজিদের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট হচ্ছে, তারাবিহের নামাজ পড়ানোর জন্য বিশ্বের খ্যাতনামা হাফিজগণকে আমন্ত্রণ জানানো। এ বছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি। আসছেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন হাফিজগণ।
মাসজুড়ে মুসল্লীদের জন্য থাকছে বিষয়ভিত্তিক আলোচনা, ইফতারী, ই’তেকাফের সুব্যবস্থা, ঈদুল ফেতরের জামাত ও ফিতরা ব্যবস্থাপনাসহ নানা আয়োজন।

তারাবিহ’র ইমামঃ

শায়খ সাউদ নাফি আল-আনাজি: এবারের প্রধান আকর্ষণ হচ্ছেন শায়খ সাউদ নাফি আল আনাজি। তিনি ছোটকালেই পবিত্র কুরআনের হিফজ সম্পন্ন করেন। বর্তমানে তিনি সৌদি আরবের মসজিদে নববীর হিফজ শিক্ষক। শায়খ নাফি মদীনায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি শারীয়াহ শাস্ত্রে রিয়াদের ইমাম মুহাম্মদ বিন সাউদ ইসলামিক ইউনিভার্সিটি থেকে উচ্চতর ডিগ্রী লাভ করেন এবং চার ক্বেরাতে কুরআন পড়ার ইজাযাহ বা সনদ গ্রহণ করেন। সম্প্রতি তিনি মদীনার একটি উচ্চ আদালতের বিচারক নিযুক্ত হয়েছেন।

শায়খ আহমদ আসিম নববী: মিশর থেকে আসছেন শায়খ আহমদ আসিম নববী। তিনি একজন খ্যাতনামা আলিম ও হাফিজ। তিনি দীর্ঘদিন রিয়াদের দিরায়া অলড মসজিদে তারাবিহের নামাজে ইমামতি করেন। এছাড়াও মিশর ও নাইজেরিয়াসহ বিভিন্ন মসজিদে তারাবিহের নামাজে ইমামতি করেন। তিনি ১৯৯৬ সালে সৌদি আরবের ইমাম মুহাম্মদ বিন সউদ ইউনিভার্সিটি থেকে কৃতীত্বের সাথে গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করেন এবং ২০০১ সালে কায়রো ইউনিভার্সিটিতে ডিপ্লোমা সম্পন্ন করেন। মাতৃভাষা আরবী হলেও ইংরেজি ভাষায় কথা বলা, লেখা ও অনুবাদে তাঁর বেশ দক্ষতা রয়েছে। তিনি মিশরে বিভিন্ন চ্যারিটি সংস্থা, শিক্ষামূলক প্রজেক্ট ও মেডিকেল সোসাইটির সাথে সম্পৃক্ত।

শায়খ তাওফিক বিন শাবান: শায়খ তাওফিক ১৯৮৪ সালে আলজেরিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি আল-হিসরাস এর ওমর আল আরবায়ী মসজিদে ইমামতি করেন। হাফস এবং ক্বালুনসহ বিভিন্ন ক্বেরাতে কুরআন তেলাওয়াতের ইজাযাহ রয়েছে তাঁর। তিনি লন্ডন ও জেদ্দাসহ বিভিন্ন মসজিদে ইমামতি করেছেন।

শায়েখ আব্দুল গাফফার ওয়ার্দারে: শায়েখ আব্দুল গাফফার ওয়ার্দারে হচ্ছেন এমন একজন মেধাবী হাফিজ যিনি মাত্র ৭ বছর বয়সে সম্পুর্ণ কুরআন শরীফের হিফজ সম্পন্ন করেন। তিনি সোমালিয়ায় উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন। ১৯৯০ ও ৯৫ সালে তিনি দুই দুইবার সোমালিয়া কুরআন প্রতিযোগিতায় প্রথম হন। বর্তমানে তিনি ১০ ক্বেরাতে কুরআন তেলাওয়াত শিখছেন। ইতোমধ্যে তিনি কয়েকটি স্টাইল রপ্ত করে ইজাযাহ গ্রহণ করেছেন।

ইফতার মাহফিল:
রামাদ্বানে মাগরিবের নামাজে আগত মুসল্লিদের জন্য ইফতারের আয়োজন করা ইস্ট লন্ডন মসজিদের একটি অন্যতম রেওয়াজ। প্রতি বছরের মতো এবারও রামাদ্বানে প্রতিদিন প্রায় ৫০০ মানুষের ইফতারের ব্যবস্থা থাকবে। অনেকেই এই ইফতারি স্পনসর করে থাকেন। জনপ্রতি দুই পাউন্ড করে দান করে যেকেউ ইফতারি আয়োজনে সহযোগিতা করে অশেষ পূণ্যের অংশীদার হতে পারেন। কেউ চাইলে ১ হাজার পাউন্ড প্রদান করে একবেলা ইফতার খাওয়াতে পারেন।

ই’তেকাফ:
ইস্ট লন্ডন মসজিদে রামাদ্বানের শেষ ১০ দিন ই’তেকাফ করার জন্য মানুষের আগ্রহের শেষ নেই। যেহেতু প্রতি বছর ১০০ জনের বেশি জায়গা সংকুলান সম্ভব হয়না, তাই লটারির মাধ্যমে আসন বরাদ্দ দেওয়া হয়ে থাকে। ইস্ট লন্ডন মসজিদের রিসেপশনে ই’তেকাফ আবেদন ফরম পাওয়া যাচ্ছে। আগ্রহীদেরকে আগামী ১৯ মে’র মধ্যে তা পুরণ করে জমা দিতে অনুরোধ জানানো হয়েছে। আগামী ২৫ মে তারাবিহ নামাজের পর লটারির মাধ্যমে আসন বরাদ্দ দেয়া হবে।

ঈদুল ফিতর:
এক মাস সিয়াম সাধনার পর আমাদের মধ্যে অনাবিল আনন্দের বার্তা নিয়ে আসে পবিত্র ঈদুল ফিতর। স্থানীয় বাসিন্দারা ছাড়াও দূর দুরান্ত থেকে মানুষ ছুটে আসেন ইস্ট লন্ডন মসজিদের ঈদ জামাতে। প্রতি বছরের মতো এবারো ৫টি ঈদ জামাতের ব্যবস্থা থাকবে। জামাতগুলো হচ্ছেঃ প্রথম জামাত- ৭:৩০ মিনিট, দ্বিতীয় জামাত- ৮:৩০ মিনিট, তৃতীয় জামাত- ৯:৩০ মিনিট, চতুর্থ জামাত- ১০:৩০ মিনিট ও পঞ্চম জামাত- ১১:৩০ মিনিট।

ফিতরা:
ইস্ট লন্ডন মসজিদ ফিতরার অর্থ সংগ্রহ করে যথাযথভাবে গরীব মানষের মধ্যে বন্টন করে থাকে। এ বছর ফিতরার পরিমাণ ধার্য করা হয়েছে জনপ্রতি ৫ পাঁচ পাউন্ড। শিশুসহ পরিবারের সকল সদস্যের ফিতরা আদায় অপরিহার্য। ফিতরা রামাদ্বানের শুরুতেই প্রদান করা উত্তম। এতে করে গরীব মানুষ ঈদের আনন্দে শরীক হওয়ার সুযোগ পায়। ২০ রমাদ্বানের আগে গরীব মানুষের মধ্যে ফিতরা পৌঁছে দেয়া উত্তম। তবে কেউ সময় মতো দিতে না পারলে ঈদের দিন নামাজের আগে অবশ্যই আদায় করতে হবে। ইস্ট লন্ডন মসজিদে ঈদের পাঁচটি জামাতেই ফিতরার অর্থ সংগ্রহ করা হয় এবং পরবর্তীতে তা গরীব মানুষের মধ্যে বণ্টন করে দেয়া হয়ে থাকে।

তাহাজ্জুদ জামাত নেই:
রামাদ্বানে রাত একেবারে ছোট হওয়ায় তারাবিহ ও ফজরের নামাজের মধ্যখানে সামান্য সময় পাওয়া যায়। এতো কম সময়ে তাহাজ্জুদের জামাত পড়া সম্ভব নয়। তাই ইস্ট লন্ডন মসজিদে এবারও তাহাজ্জুদ জামাতের কোনো ব্যবস্থা থাকবে না। ব্যক্তিগতভাবে নিজেদের ঘরে তাহাজ্জুদ পড়তে হবে।

উল্লেখ্য, ইস্ট লন্ডন মসজিদ কমিটির পক্ষ থেকে রামাদ্বানে তারাবিহ নামাজের সময় ফিলডগেইট স্ট্রিটসহ আশপাশের অন্যান্য রাস্তায় অহেতুক জটলা পাকানো থেকে বিরত থাকতে সকলের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে। কারণ এতে পথচারী ও স্থানীয় বাসিন্দারা দুর্ভোগের শিকার হন।


Spread the love

Leave a Reply