ব্রিটেনে অবৈধ বাংলাদেশিদের দ্রুত ফেরত নিতে সম্মত ঢাকা

Spread the love

imagesবাংলা সংলাপ ডেস্কঃ বৃটেনে অবৈধ হয়ে পড়া বাংলাদেশিদের দ্রুত দেশে ফেরত আনার বিষয়ে বাংলাদেশ সম্মত হয়েছে । একই সাথে বাংলাদেশি ভিসা আবেদনকারীদের জন্য ৩-৫ দিনে ভিসা দেয়ার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা সংক্রান্ত প্রায়োরিটি ভিসা সার্ভিস প্রদানে সম্মত হয়েছে বৃটেন। তবে ভিসা সেন্টার বাংলাদেশে স্থানান্তর করা হবে না । মঙ্গলবার বাংলাদেশ ও বৃটেনের মধ্যকার প্রথম স্ট্র্যাটেজিক ডায়ালগ বা কৌশলগত সংলাপে এ সিদ্ধান্ত হয়। রাজধানীর রমনাস্থ রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন মেঘনা’য় অনুষ্ঠিত সংলাপে এভিয়েশন সিকিউরিটি, সন্ত্রাসবাদের অভিন্ন চ্যালেঞ্জ, বৃটেনের ভিসা নিয়ে ভোগান্তি-জটিলতা, বৃটেনে ইইউ’র আদলে বাংলাদেশি পণ্যের বিশেষ বাজার সুবিধা, দেশে বৃটিশ বিনিয়োগ বাড়ানো, বাংলাদেশের ওপর বড় বোঝা মিয়ানমারের রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী সমাধান এবং বৃটেনে অবৈধ হয়ে পড়া  বাংলাদেশিদের দ্রুত ফিরিয়ে আনাসহ দ্বিপক্ষীয় স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা হয়। সংলাপে বৃটেনের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন সফররত বৃটিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী আন্ডার সেক্রেটারি স্যার সাইমন ম্যাকডোনাল্ড। আর বাংলাদেশ দলের নেতৃত্বে ছিলেন পররাষ্ট্র সচিব এম শহিদুল হক। বৈঠক শেষে গণমাধ্যমে পাঠানো যৌথ ঘোষণায় সংলাপের বিস্তারিত তুলে ধরা হয়। এভিয়েশন সিকিউরিটির গুরুত্বের বিষয়টি আমলে নিয়ে যৌথ ঘোষণায় বলা হয়- হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তা জোরদারে বাংলাদেশ ও বৃটেন আগামী দিনে আরো ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করবে। এ ক্ষেত্রে বৃটেন বাংলাদেশকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেয়ার আগ্রহ পুনর্ব্যক্ত করে। এ বিষয়ে আরো কি কি পদক্ষেপ নেয়া জরুরি তা চিহ্নিত করতে এবং এ নিয়ে অ্যাকশন প্ল্যান তৈরিতে জয়েন্ট অ্যাসেসমেন্ট বা যৌথ সমীক্ষার বিষয়ে সংলাপে দুই পক্ষ সম্মত হয়। ঘোষণায় স্পষ্ট করেই বলা হয়, দুই পক্ষের গৃহীত উদ্যোগ এবং প্রয়োজনীয় অগ্রগতি যখন আসবে তখনই ঢাকা থেকে সরাসরি লন্ডনগামী ফ্লাইটে কার্গো পরিবহনে বিদ্যমান নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে পদক্ষেপ নেবে বৃটেন। সংলাপে  সন্ত্রাসবাদের উৎস চিহ্নিত করতে বৈশ্বিক সহযোগিতা জরুরি বলে মনে করে দুই পক্ষই এ ক্ষেত্রে আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধা এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের প্রতি অঙ্গীকার সমুন্নত রাখার ওপর জোর দেয়। সংলাপে বাংলাদেশ ও  বৃটেনে সংঘটিত সব সন্ত্রাসী আক্রমণের নিন্দা জানানো হয়।

London Big Ben and traffic on Westminster Bridge
London Big Ben and traffic on Westminster Bridge

একই সঙ্গে দুই দেশের সব ভিকটিমের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করা হয়। সংলাপে রোহিঙ্গা ইস্যুকে বাংলাদেশের ওপর দীর্ঘ দিনের বোঝা উল্লেখ করে বলা হয়, মিয়ানমারে এ সংকটের একটি স্থায়ী সমাধান খুঁজতে বৃটেনের তরফে সব ধরনের সহযোগিতা দেয়া হবে। বাংলাদেশি নাগরিকদের বৃটেনের ভিসা পেতে হাই কোয়ালিটি ভিসা সার্ভিস চালুর বিষয়ে অবহিত করে বলা হয়, বাংলাদেশি ভিসা আবেদনকারীদের জন্য ৩-৫ দিনে ভিসা দেয়ার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা সংক্রান্ত প্রায়োরিটি ভিসা সার্ভিস প্রদানে সম্মত হয়েছে বৃটেন। বৃটেনে অবৈধ হয়ে পড়া বাংলাদেশিদের দ্রুত দেশে ফেরত আনার বিষয়ে বাংলাদেশ সম্মত হয়েছে বলে যৌথ ঘোষণায় উল্লেখ করা হয়। এর আগে সকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন বৃটিশ ফরেন অ্যান্ড কমনওয়েলথ অফিসের ডিপ্লোমেটিক সার্ভিসের প্রধান, পার্মানেন্ট আন্ডার সেক্রেটারি স্যার সাইমন ম্যাকডোনাল্ড। সেগুনবাগিচায় মন্ত্রীর দপ্তরে অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে লেখা বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে’র একটি চিঠি হস্তান্তর করেন তিনি। ওই বৈঠক শেষে এবং স্ট্র্যাটেজিক ডায়ালগের আগে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবনে দুই দেশের ডিপ্লোমেটিক সার্ভিসের প্রধানদ্বয়ের মধ্যে প্রতি বছর এমন ডায়ালগ আয়োজনের বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়। সেখানে যৌথ ব্রিফিংয়ে বৃটেনের কর্মকর্তা ম্যাকডোনাল্ড বলেন, ‘অল্প আগে আমি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে প্রধানমন্ত্রীর লেখা চিঠিটি হস্তান্তর করেছি। ওই চিঠিতে বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী বৃটেন ও বাংলাদেশের মধ্যে ক্রমবর্ধমান এবং শক্তিশালী সম্পর্কের বিষয়টি ব্যক্ত করেছেন। দুই দেশের এ সম্পর্ক আগামী দিনে আরো ঘনিষ্ঠ করার বিষয়ে তিনি জোর দিয়েছেন। বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের অপেক্ষায় রয়েছেন জানিয়ে ম্যাকডোনাল্ড বলেন, আমরা কমনওয়েলথ সম্মেলনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। আশা করি ওই সম্মেলনের (সাইড লাইনে) দুই প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকটি হবে। বাংলাদেশ ও বৃটেন- কমনওয়েলথের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। ব্রেক্সিটের প্রভাব বাংলাদেশে পড়বে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে বৃটেনের কর্মকর্তা বলেন, ২৯শে মার্চ আমরা ইউরোপীয় ইউনিয়ন কর্তৃপক্ষকে আনুষ্ঠানিকভাবে ইইউ ত্যাগের বিষয়টি জানাবো। এর পরবর্তী দুই বছরের মধ্যে আমরা ইইউ ত্যাগ করবো। এটা কোনো আকস্মিক ঘটনা নয়। আমরা জানি বাংলাদেশ বৃটেনে শুল্কমুক্ত ও  কোটামুক্ত বাজার সুবিধা চায়। এ বিষয় নিয়ে আমাদের মধ্যে আলোচনা চলছে। আমি নিশ্চিত করতে চাই আগের থেকে আরো গভীর ও ভালো সম্পর্ক আমরা করতে পারবো। উল্লেখ্য বাংলাদেশে আরো বেশি বৃটিশ বিনিয়োগ কামনা করে ঢাকা। জবাবে বৃটিশ আন্ডার সেক্রেটারি এ  নিয়ে তার দপ্তরের তরফে আরো সহযোগিতা দেয়ার অঙ্গীকার করেন। বাংলাদেশে এককভাবে বৃটেন সবচেয়ে বেশি উন্নয়ন সহযোগিতা দিয়ে থাকে। আগামী দিনেও এটি অব্যাহত থাকবে বলে আশা প্রকাশ করা হয়। সংলাপে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ৪৫ বছর পূর্তি উদযাপন করা হয়।


Spread the love

Leave a Reply