ব্রিটেনে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সংখ্যালঘু এশিয়ান মানুষ বেশি

Spread the love

বাংলা সংলাপ ডেস্কঃব্রিটেনে করোনাভাইরাসে সংখ্যালঘু এশীয়, আফ্রিকান ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের মানুষ যে অতিরিক্তি সংখ্যায় সংক্রমিত হচ্ছে সে সম্পর্কে “নতুন তথ্যপ্রমাণ” পাওয়া যাচ্ছে।

গবেষণায় দেখা যাচ্ছে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে যারা ভর্তি আছেন তাদের এক তৃতীয়াংশের বেশি জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ।

সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের এই ভাইরাসে আক্রান্ত হবার ঝুঁকি আনুপাতিক হারে বেশি কিনা তা নিয়ে জরুরি ভিত্তিতে অনুসন্ধান চালানোর আহ্বান জানিয়েছে বিরোধী লেবার পার্টি।

সরকার বলেছে স্বাস্থ্য খাতে কোনরকম অসমতা দূর করতে তারা বদ্ধপরিকর।

ইংল্যান্ড ও ওয়েলসে ২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী এথনিক মাইনরিটি বা জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের সংখ্যা মাত্র ১৪%।

কিন্তু ব্রিটেনে নিবিড় পরিচর্যায় চিকিৎসাধীনদের ওপর গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইনটেনসিভ কেয়ার ন্যাশানাল অডিট অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টারের তথ্যে দেখা যাচ্ছে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সঙ্কটজনক অবস্থায় তিন হাজারের ওপর যেসব রোগী নিবিড় পরিচর্যায় আছে তাদের ৩৪% সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের।

“আমারই ওয়ার্ডেই আমার বাবা মারা গেলেন”

ড. জন চাইনগুয়নডো দক্ষিণ পশ্চিম লন্ডনের কিংসটন হাসপাতালে শ্বাসতন্ত্র বিষয়ক সিনিয়র ডাক্তার। সম্প্রতি তার বাবা এবং কয়েকজন সহকর্মী করোনাভাইরাসে মারা গেছেন। তার বড় ভাইয়েরও ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে কয়েকদিন আগে।

“আমার বাবার চিকিৎসা হচ্ছিল আমার হাসপাতালে, আমারই ওয়ার্ডে,” তিনি বলছিলেন। “আমি মৃত্যুর সময় তার পাশে থাকতে পেরেছি, তার হাত ধরতে পেরেছি এটা বিরাট সান্ত্বনা, তাকে সব কিছু ব্যাখ্যা করতে পেরেছি।”

ড. জন চাইনগুয়নডোর পরিবার
ড. জন চাইনগুয়নডোর বাবা মারা গেছেন করোনা সংক্রমণে, ভাই আক্রান্ত

নাইজিরিয়ান বংশোদ্ভুত ড. চাইনগুয়নডো বলছেন সরকারের উচিত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যে করোনাভাইরাসের বিস্তার সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা এবং এই সংক্রমণের হারের আনুপাতিক বিশ্লেষণ করে দেখা।

“আমরা যদি রোগের ধরণ এবং কেন সংখ্যালঘুরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে সেটা বুঝতে পারি, তাহলে তার থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরা ভবিষ্যতে এই সম্প্রদায়ের মানুষকে যথাযথ পরামর্শ ও সহায়তা দিতে পারব।”

লেবার পার্টি বলেছে আনুপাতিক হিসাবে এত বেশি সংখ্যক সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের চিকিৎসকেরও করোনাভাইরাসে মৃত্যু “গভীরভাবে উদ্বেগজনক”।

সরকারের স্বাস্থ্য ও সামাজিক কল্যাণ মন্ত্রণালয় বলেছে এই ভাইরাসের সংক্রমণে যারা মারা গেছেন তাদের প্রত্যেকের মৃত্যুই দু:খজনক।

“কোভিড নাইনটিনে আক্রান্তদের মধ্যে আনুপাতিক হিসাবে জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের সংখ্যা যে অনেক বেশি, তা নিয়ে নতুন তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে।

“সরকার এ বিষয়ে আরও অনুসন্ধান চালাতে ইংল্যান্ডের জনস্বাস্থ্য বিভাগ পাবলিক হেল্থ ইংল্যান্ডের সঙ্গে কাজ করছে এবং এ বিষয়ে আমরা কিছু দিনের মধ্যে আরও বিস্তারিত তথ্য জানাবো।”

সরকার বলছে তারা স্বাস্থ্য খাতে কোনরকম অসমতা দূর করার লক্ষ্যে কাজ করছে।

লেস্টার ইউনিভার্সিটির একজন অধ্যাপক ড. কমলেশ খুন্তি বলছেন, “সম্প্রতি যেসব তথ্য দেখা গেছে তাতে অনেকেই উদ্বিগ্ন। নিবিড় পরিচর্যা ইউনিটে যাদের আশংকাজনক অবস্থায় ভর্তি হতে হচ্ছে তাদের মধ্যে এত বেশি সংখ্যক মানুষ এথনিক মাইনরিটি জনগোষ্ঠির হওয়ায় উদ্বেগ আরও বাড়ছে।”

তিনি বলছেন এই তথ্য আসলে কী বার্তা দিচ্ছে তা বুঝতে আরও গবেষণা ও তথ্য বিশ্লেষণ প্রয়োজন।

করোনাভাইরাস যে কাউকেই সংক্রমিত করতে পারে। কিন্তু সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বেশি আক্রান্ত হবার পরিসংখ্যান শুধু যে ব্রিটেনেই দেখা যাচ্ছে তা নয়, আমেরিকাতেও একইধরনের তথ্য পাওয়া গেছে।

আমেরিকার শিকাগো শহরে জনসংখ্যার এক তৃতীয়াংশ কৃষ্ণাঙ্গ বংশোদ্ভুত হলেও আক্রান্তদের মধ্যে ৭০% আফ্রিকান বংশোদ্ভুত বলে শহরের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।

আমেরিকার অন্যান্য কৃষ্ণাঙ্গ ও সংখ্যালঘু অধ্যুষিত শহর যেমন নিউইয়র্ক, নিউ অরলিয়েন্স, ডেট্রয়ট এবং মিলওয়াকি দেশটিতে করোনাভাইরাসের হটস্পট হয়ে উঠেছে।- ( তথ্য বিবিসি )


Spread the love

Leave a Reply