মৃত্যু সংবাদে জীবন্ত ছবি !

Spread the love

আহমেদ শামীম:
জন্মের পরে মৃত্যু অবধারিত।মৃত্যুর চেয়ে অমোঘ সত্য আর কিছু নেই। এর চেয়ে মর্ম বেদনার কিছু হতে পারেনা। একদিন সবার কাছেই আসবে মৃত্যুর পয়গাম।তারপরও মৃত্যু নামক চিরন্তন সত্যকে মেনে নিতে কার বা মন সায় দেয় ! কেউ আগে কেউ পরে নশ্বর পৃথিবী থেকে চির বিদায় নেন মৃত্যুর কাছে আত্মসমর্পণের মাধ্যমে ।
স্বাভাবিক-অস্বাভাবিক যে কোন মৃত্যু আমাদেরকে কাঁদায় ।হৃদয়ে ঘটায় রক্তক্ষরণ। দুঃখের সাগরে ভাসিয়ে দেয় । চরম দুঃখে শোকবিহবল করে তুলে।বিশেষ করে আপনজনের মৃত্যুশোক পীড়া দেয় সবচেয়ে বেশি ।কষ্ট বেদনায় হৃদয় ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যায়। কান্নার মাতম আর গগনবিদারী আর্তনাদে বাতাস ভারী হয়ে উঠে।স্বজন হারানোর বেদনায় কেউ অধিক শোকে পাথরও হয়ে যান।স্তব্ধ হয়ে যায় চোখের জল। মনে হয় দুনিয়ার সবকিছুই নিস্ফল। তবে এক সময় শোকের মাতম থেমে যায়। দু’চারদিন কিংবা সপ্তাহ- মাস যেতে না যেতে সবাই যার যার মতো জীবনের ধাবমান স্রোতের সাথে মিশে যান।ক্রমান্বয়ে স্বাভাবিক হয়ে যায় সবকিছু। কারণ সময় কারো জন্যে থেমে থাকেনা। সময়কে ধারণ করে সবাই যার যার মতো দৈনন্দিন কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে যান। বেঁচে থাকার অনুসঙ্গ নিয়ে গড্ডালিয়ায় গা ভাসিয়ে দিতে হয়।জীবনের গতিধারায় শামিল হওয়া ছাড়া গত্যন্তর থাকে না।

স্ক্রিনশটটি ফেসবুকের এক ফ্রেন্ডের স্ট্যাটাস থেকে নেয়া

পরিচিত- অপরিচিত কেউ মারা গেলে আমরা শোকে কাতর হই।পরলোকগতদের আত্মার শান্তি কামনার পাশাপাশি শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি জানাই সমবেদনা। কেউ মৃত্যুবরণ করলে প্রত্যেকেই স্ব স্ব ধর্মমতে শোক প্রকাশ করেন ।মুসলিমরা মারা গেলে আমরা ইন্নালিল্লাহি পড়ি। অন‍্য ধর্মের কেউ মারা গেলে বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করি। এটাই স্বাভাবিক ।
মৃত্যুর কাছে আত্মসমর্পণ করে যারা অনন্তলোকের পথে পাড়ি জমান তাদের আর করার কিছু থাকেনা। বরং তাদের চির বিদায়ের নানা আয়োজন নিয়ে সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়েন। স্ব-স্ব ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান আর রীতিনীতি পালনের মধ্য দিয়ে মৃতর‍্যক্তির শেষ বিদায়ের বন্দোবস্ত করা হয়।কিন্তু মৃত্যু নিয়েও মাঝেমধ্যে নানা ধরনের তুলকালাম অপকাণ্ডের খবর আসে মিডিয়ায়।দেনা পাওনা কিংবা সহায় সম্পত্তি ভাগাভাগির অজুহাতে মৃত ব্যক্তির মরদেহ আটকে দেয়ার মতো হৃদয় বিদারক ঘটনারও খবর শোনা যায়। এছাড়া মৃত‍্যুবরণকারী ব্যক্তির ছবি প্রকাশ নিয়েও নানান উদ্ভট চিত্র দেখা যায়।যেমন, কেউ মৃত্যুবরণ করলে মৃত ব্যক্তির বদলে জীবন্ত কারো ছবি প্রকাশ করা হয় সজ্ঞানে বা অজ্ঞানে ।আবার গ্রুপ ছবিতেও মৃত‍ব‍্যক্তির কথা তুলে ধরা হয়।যদিও অনেকাংশে এখানে মৃত কে, তা বুঝা মুশকিল হয়ে দাঁড়ায়।সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বিশেষ করে ফেসবুকে এমনটি প্রায়ই লক্ষ্য করা যায়। কারো মা বাবা ভাই বোন বা আত্মীয়স্বজন মারা গেলে সেই ব‍্যক্তির (যিনি স্বজন হারিয়েছেন) ছবি নিজে কিংবা অন‍্য কোন বন্ধু-শুভাকাঙ্খিরা আপলোড করেন । এর পরিপ্রেক্ষিতে শুরু হয়ে যায় শোক প্রকাশ। কিন্তু শোকপ্রকাশ করতে গিয়ে অনেকেই বিভ্রান্তিতে পড়েন। অনেকে স্ট্যাটাস না পড়ে প্রকাশিত ছবি দেখেই হাহাকার শুরু করে দেন। অন‍্যজনের সাথে শেয়ারও করে ফেলেন। এ নিয়ে পরে আফসোসও করতে হয়।
শোক সংবাদ অনেকটা ব‍্যক্তিগত প্রচারের পর্যায়ে চলে যাচ্ছে।এ নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলেন। মৃত্যুর ব্যাপারেও কেন এমন প্রচারণা ? লক্ষ‍্যণীয় বিষয় হলো, অনেকে নিজেই নিজের ছবি প্রকাশ করেন পরিবারের কারো মৃত‍্যুতে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অন‍্যরা এটা করেন। হয়তো অতি দরদ থেকেই এমনটি করে থাকেন। আবার এমনও হতে পারে নিজের বন্ধু কিংবা আত্মীয় পরিজনের পরিচয় তুলে ধরার মানসে অনেকেই এটা করেন। তবে এটা কতটুকু যৌক্তিক তা ভেবে দেখা প্রয়োজন। মৃত‍্যুবরণকারীদের ছবি প্রকাশ না করলে ক্ষতি কি ? শোক সংবাদের স্ট্যাটাসে উনার সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ পজেটিভ তথ‍্য (যদি থাকে) দেয়া যেতে পারে। অথবা উনার পুত্র কন‍্যা ভাই বোন বা মা বাবার পরিচয় দিলেও দোষের কিছু নেই । তবে উনার ছবি না পেলে কিংবা না দিতে চাইলে জীবন্ত কারো ছবি না দেয়াই বাঞ্ছনীয় নয় কি !
লেখকঃ বার্তা সম্পাদক, বাংলা সংলাপ।


Spread the love

Leave a Reply