সমাপনী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শেষ হল টোকিও অলিম্পিক ২০২০ , গ্রেট ব্রিটেনের অর্জন ২২ টি স্বর্ণ

Spread the love

বাংলা সংলাপ রিপোর্টঃ কোভিড মহামারীর এই দুঃসময়ে প্রায় দর্শকশূন্য স্টেডিয়ামে ‘আশার মশাল’ জ্বেলে শুরু হয়েছিল টোকিও অলিম্পিকস। সারা বিশ্বের ক্রীড়াপ্রেমীরা কিছুটা হলেও আচ্ছন্ন ছিল খেলাধুলার আনন্দে। অবশেষে ১৭ দিনে ৩৩৯টি পদকের লড়াই শেষে পর্দা নামল ‘দা গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’ খ্যাত আসরের। ভাঙল মিলনমেলা। অপেক্ষা শুরু হলো ২০২৪ প্যারিস অলিম্পিকসের।

টোকিও অলিম্পিক স্টেডিয়ামে রোববার বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা সোয়া সাতটায় ঢাউস মশাল নিভিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে শেষ হলো আধুনিক অলিম্পিকসের ৩২তম আসরের। উদ্বোধনীতে মশাল জ্বেলেছিলেন প্রথম জাপানি হিসেবে টেনিসের গ্র্যান্ড স্ল্যাম জেতা তারকা নাওমি ওসাকা। উদ্বোধন করেছিলেন জাপানের সম্রাট নারুহিতো।

সমাপনী অনুষ্ঠানে টোকিওর মেয়র ইউরিকো কোইকে পতাকা তুলে দেন আইওসি প্রেসিডেন্ট টমাস বাখের হাতে। তিনি সেটা তুলে দেন আগামী আসরের আয়োজক শহর প্যারিসের মেয়র আন হিদালগুর হাতে।

বিদায়ী ভাষণে আইওসি প্রেসিডেন্ট বাখ টোকিওর আয়োজকদের কাছ থেকে অনুপ্রেরণা পাওয়ার কথা জানান, “খেলাধুলার ঐক্যবদ্ধ শক্তি দিয়ে আপনারা আমাদেরকে অনু্প্রাণিত করেছেন। মহামারীর কারণে আপনাদেরকে (টোকিওর আয়োজক) যে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়েছিল, এ কারণে এটি আরও বেশি অসাধারণ। আপনাদেরকে ধন্যবাদ।”

করোনাভাইরাসের এই কঠিন সময়ে ‘কঠিন চ্যালেঞ্জ’ মোকাবিলার তৃপ্তি জানান টোকিও অলিম্পিকসের আয়োজক কমিটির প্রধান সেইকো হাশিমোতো। কৃতজ্ঞতা জানান অ্যাথলেট, কোচ ও ভলান্টিয়ারদের।
এর আগে অনুষ্ঠানের শুরুতে টিভি পর্দায় তুলে ধরা হয় এবারের আসরের নানা ইভেন্টের খণ্ড খণ্ড চিত্র; অ্যাথলেটদের অর্জনের উল্লাস, আনন্দাশ্রু, আলিঙ্গন, বিচিত্র উদযাপনের দৃশ্যগুলো। ভার্চুয়ালি বিশ্বের নানাপ্রান্ত থেকে যোগ দেন ক্রীড়া অনুরাগীরা। বাজতে থাকে বিদায়ের রাগিণী।

জাপানি সংস্কৃতিতে আত্মীক প্রশান্তির চর্চা বহুল প্রচলিত। সেই প্রশান্তির বার্তা সারাবিশ্বে ছড়িয়ে দিতে আয়োজকদের কমতি ছিল না মোটেও। স্টেডিয়ামের মাঝখানে করা বৃত্তে প্রতিটি দেশের পতাকাবাহকদের প্রবেশ দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান। যেসব দেশের প্রতিনিধিরা ছিলেন না, সেসব দেশের পতাকা বহন করেছেন ভলান্টিয়াররা।

একে একে মাঠে প্রবেশ করেন বিভিন্ন দেশের অ্যাথলেটরা। নেচে-গেয়ে, ছবি তুলে মুহূর্তগুলো ফ্রেমবন্দী করতেই ব্যস্ত ছিলেন তারা। আলো-আধারি আবহে প্রতিটি দেশের পতাকার রং ফুটিয়ে তোলা হয় ভার্চুয়ালি। এরপর সুর-গানের তালে বিভিন্ন খেলা, কসরত তুলে ধরে জাপনিরা। সমাপনী অনুষ্ঠানে পদক তুলে দেওয়া হয় ম্যারাথনের বিজয়ীদের হাতে।

মহাশূন্যে বিউগল বাজানোর দৃশ্য দেখানো হয়। এরপর ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ভিডিও বার্তায় দেন। এসময় প্যারিসে বিমানে তিন রঙের ধোঁয়া উড়িয়ে আঁকা হয় ফ্রান্সের পতাকা।
এবারের আসর হওয়ার কথা ছিল গত বছর, কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে তা পিছিয়ে দেওয়া হয়। তারপরও প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের থাবায় যখন জেরবার পৃথিবী, তখন টোকিওতে এই আয়োজন নিয়ে ছিল নানা প্রশ্ন। খোদ জাপানিদের অনেকেই করেছিলেন বিরোধিতা। কিন্তু জাপান শেষ পর্যন্ত দেখিয়েছে এই দুঃসময়েও আশার আলো জ্বেলে ঘুরে দাঁড়ানোর পথ।

এবারের আসরে সোনার নিষ্পত্তি হওয়ার কথা ছিল ৩৩৯টি। কিন্তু হাই জাম্পে জম্পেস লড়াইয়ের পর কাতারের মুতাজ ইসা বারশিম ও ইতালির জিয়ানমার্কো তামবেরি পদক ভাগাভাগি করায় পদকসংখ্যা বাড়ে একটি। অলিম্পিকসের ১১৩ বছরের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ঘটল পদক ভাগাভাগির ঘটনা।
৩৯টি সোনা, ৪১টি রুপা ও ৩৩টি ব্রোঞ্জসহ ১১৩টি পদক নিয়ে শীর্ষে যুক্তরাষ্ট্র। রিও দে জেনেইরোর মতো টোকিওতেও দাপট দেখাল দেশটির অ্যাথলেটরা। কম যায়নি চীনও। রিওতে তৃতীয় স্থানে থাকা চীনা অ্যাথলেটরা এবার সমানে সমান লড়েছে; ৩৮টি সোনা ৩২টি রুপা ও ১৮টি ব্রোঞ্জসহ ৮৮টি পদক নিয়ে দ্বিতীয় হয়েছে তারা।


Spread the love

Leave a Reply