২৭ তলা থেকে সেলফি তুলতে গিয়ে…

Spread the love

বাংলা সংলাপ ডেস্কঃ‘সেলফি’ তোলার চল সবকিছুতেই। পুরো দুনিয়া এতে মাতাল। এ জন্য জীবনের ঝুঁকি পর্যন্ত নেন অনেকেই। উড়োজাহাজে, পিচ্ছিল উঁচু পাহাড়ে, জলপ্রপাতের উৎস স্থান, উঁচু ভবনসহ বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে সেলফি তোলার খবর প্রায়ই সংবাদমাধ্যমে আসে। এই ঢলে শামিল হতে গিয়ে অসাবধানতায় প্রাণ যায় অসংখ্য মানুষের। তেমনি উঁচু ভবনের ২৭ তলায় সেলফি তুলতে গিয়ে প্রাণ হারালেন ২৭ বছর বয়সী এক নারী।

ডেইলি মেইলের খবরে বলা হয়েছে, এই নারীর নাম সান্দ্রা ম্যানূয়েলা দা কোস্টা ম্যাকোডো পেশায় একজন শিক্ষক। তিনি পানামার রাজধানী পানামা সিটির লুক্সার টাওয়ার নামের একটি বহুতল ভবনের ২৭ তলায় থাকেন। গত শুক্রবার বারান্দায় রেলিংয়ের পাশে দাঁড়িয়ে সেলফি তুলতে গিয়ে নিচে পড়ে যান। পরে মৃত্যু হয় দুই সন্তানের জননীর। আর এ ঘটনার একটি ভিডিও টুইটারে ছড়িয়ে পড়েছে।

সান্দ্রা ম্যানূয়েলা দা কোস্টা ম্যাকোডো সম্প্রতি পানামার ভিলা দা আবে থেকে পানামা সিটিতে আসেন।

স্থানীয় পুলিশ জানান, সেলফি তোলার সময়ে প্রবল বাতাস ছিল। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে নিজেকে সামলাতে না পেরে ওই শিক্ষিকা পড়ে যান। দুর্ঘটনার বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।

এই ঘটনার পরই পানামার ফায়ার সার্ভিস তাদের টুইটারে অ্যাকাউন্টে এক বার্তায় বলেছে, ‘সেলফি তুলতে গিয়ে জীবনকে ঝুঁকির মুখে ফেলবেন না।’

এই নারীর একজন বন্ধু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন, ‘ওই নারী আমার একজন ভালো বন্ধু। তার দুটি সন্তান আছে। তিনি শিক্ষক। পানামা সিটিতে গেছেন ভালো চাকরির আশায়। তিনি পর্তুগিজ। তাকে আমরা সান্দ্রা নামে ডাকতাম। তার জন্য দোয়া করবেন।’ এই বার্তার নিচে একজন লিখেছেন, এ ঘটনায় তিনি কষ্ট পেয়েছেন। তিনি জীবনকে সাজাতে ওই শহরে গেছেন। কিন্তু ছবি তোলার সময়ে বাতাসের কারণে সব ভেস্তে গেল।

ফ্যামিলি মেডিসিন অ্যান্ড প্রাইমারি কেয়ারের এক জার্নালে প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্য অনুসারে, ২০১১ সালের অক্টোবর থেকে ২০১৭ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ছয় বছরে সারা বিশ্বে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রায় ২৫৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। ভারতের নয়াদিল্লির পাবলিক মেডিকেল কলেজের একটি গ্রুপ ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্সের গবেষকেরা প্রতিবেদনটি তৈরি করেছেন।6ae903fe70fc0f520825937047c14828-5bc4d30f09653

গবেষকেরা বলছেন, সেলফি তোলার সময় মৃত্যুর ঘটনা সবচেয়ে বেশি ভারতে। এর পরের অবস্থানে রয়েছে রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তান। মৃত্যুর শিকার বেশির ভাগ হচ্ছেন পুরুষেরা (৭২ শতাংশ)। যাঁদের বয়স ৩০ বছরের নিচে। মোট মৃত্যুর অর্ধেকের বেশি হয়েছে ভারতে। এখানে ২০১১ সাল থেকে অন্তত ১৫৯ জন সেলফি তুলতে গিয়ে মারা গেছেন, যা বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সেলফিজনিত প্রাণহানির ঘটনা।

গবেষণায় বলা হয়, যদিও পুরুষের চেয়ে নারীরা সাধারণত বেশি সেলফি তোলেন। তবে এই কাজে সম্ভবত বেশি ঝুঁকি নেন পুরুষেরা। খাদের কিনারায় দাঁড়িয়ে ভয়ংকর মুহূর্ত ধারণ করতে পুরুষেরা পটু। ফলে এই ঘটনায় পুরুষের মৃত্যুর সংখ্যাও বেশি। এ ছাড়া উঁচু ভবনের ছাদের সীমানা দেয়ালে, সানসেটে, কুমিরের মুখের সামনে সেলফি তুলতে দেখা যায়।

সেলফি তোলার সময় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মৃত্যুর ঘটনা পরিবহনে। এ ক্ষেত্রে চলন্ত ট্রেনের সামনে তড়িঘড়ি করে ছবি তোলার সময় মৃত্যুর ঘটনা রয়েছে। সুউচ্চ স্থান থেকে আগুন ও পানির দৃশ্য নিয়ে সেলফি তোলার সময় মৃত্যুর ঘটনা তৃতীয় স্থানে। আটজন মারা গেছেন ভয়ংকর জন্তুর সঙ্গে ছবি তোলার সময়। প্রতিবেদনে সন্নিবেশিত ছয় বছরের তথ্য অনুযায়ী, সেলফিতে মৃত্যুর ঘটনা ক্রমবর্ধমান ছিল।

প্রতিবেদনে বলা হয়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছবি পোস্ট করে বেশি প্রশংসা, লাইক ও কমেন্ট পাওয়ার জন্য তরুণ ও পর্যটকেরা বরাবর এই ঘটনার শিকার হচ্ছেন। সেলফি বা নিজেদের ছবি তোলা ক্ষতিকর নয়, তবে মানুষের আচরণ সেলফিকে ভয়ংকর করে তুলেছে।

যে স্থান ঝুঁকিপূর্ণ বা যে ছবি তুলতে ঝুঁকি রয়েছে, সেসব ছবি বা সেলফি তোলা উচিত নয় বলেও সতর্ক করে দিয়েছেন ওই গবেষকেরা।


Spread the love

Leave a Reply