অখন্ড বাংলাদেশ আন্দোলনের প্রধান হাসনাত আরিয়ান খানকে লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ
মো: জয়নুল আবেদীন, লণ্ডন: অফিস থেকে বাসায় ফেরার পথে ‘অখন্ড বাংলাদেশ আন্দোলন’ এর আহবায়ক ‘হাসনাত আরিয়ান খান’কে লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করা হয়েছে। গুলি লক্ষভ্রষ্ট হওয়ার ফলে অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান তিনি। গত ১৭ ডিসেম্বর, মঙ্গলবার, রাত নয়টা তেরো মিনিটে নর্থ লণ্ডনের হাইবারি ইজলিংটন এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। ঘটনার পরেই পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে গোটা ঘটনার তদন্ত করছে পুলিশ।
সূত্রের খবর, পূর্ব লণ্ডনের হেকনি বারায় বসবাস করেন হাসনাত আরিয়ান খান। নর্থ লণ্ডনের হাইবারি ইজলিংটন এলাকায় তার হেড অফিস। ঘটনার দিন রাতে তিনি অফিসের কাজ শেষ করে প্রতিদিনের মতই বাসায় ফিরছিলেন। পথিমধ্যে একদল মুখোশধারী দুর্বৃত্ত তাঁকে লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করেন। কাকতালীয়ভাবে ঠিক একইসময়ে হাসনাত আরিয়ান খানের পায়ের জুতার ফিতা খুলে গেলে তিনি জুতার ফিতা বাঁধার জন্য হঠাৎ একটু নিচু হওয়ায় অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষা পান। পরে একজন প্রত্যক্ষদর্শীর চিৎকার শুনে দুস্কৃতিকারীরা দৌড়ে পালিয়ে যান। দুস্কৃতিকারীরা হুডি পরে থাকায় এবং মুখ মুখোশে ঢেকে রাখায় প্রত্যক্ষদর্শী ব্যাক্তি তাদের চিনতে পারেননি। দুর থেকে কয়েকজন পথচারীও গুলির শব্দ শুনেন এবং হুডি পরা দু‘জন মুখোশধারীকে দৌড়ে পালিয়ে যেতে দেখেন। রাস্তার সিসিটিভি ক্যামেরা নষ্ট থাকায় পুলিশ দুস্কৃতিকারীদের এখনো পর্যন্ত সনাক্ত করতে পারেনি। কাউকে আটক করতে পারেনি। তবে পুলিশ মাঠে রয়েছে। জড়িতদের আটক করতে পুলিশের একাধিক টিম অভিযান করছে। ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ক্যামেরা নষ্ট, এটা দুস্কৃতিকারীদের আগে থেকেই কেউ জানিয়েছিলো কিনা কিংবা সিসিটিভি ক্যামেরা নষ্ট হওয়ার পেছনে দুস্কৃতিকারীদের কোন ভূমিকা ছিলো কিনা- এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে মুখোশধারী দুস্কৃতিকারীদের সনাক্তকরণের চেষ্টা চলছে। ঘটনাস্থল থেকে গুলি ও গুলির খোসা উদ্ধার করা হয়েছে। দুর্বৃত্তদের গুলি ছোড়ার ঘটনায় এলাকাজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
প্রতিবেদকের কাছে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন হাসনাত আরিয়ান খান। তাঁর সাথে কারো ব্যাক্তিগত শত্রুতা নেই জানিয়ে তিনি এই ঘটনায় সরাসরি দিল্লি’র দিকে আঙুল তুলেছেন। সেইসাথে তাদের দেশীয় এজেন্টদেরও সন্দেহ করছেন। বিশেষ করে গত ১০ ডিসেম্বর বিশ্ব মানবাধিকার দিবসে লণ্ডনে ইন্ডিয়ান হাইকমিশনের সামনে ‘অখন্ড বাংলাদেশ আন্দোলন’ এর বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে ১০ দফা দাবি পেশ করার জেরে এমন ঘটনা ঘটানো হয়ে থাকতে পারে বলে তিনি মনে করছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দ্রুত অপরাধীদের সনাক্ত করে আটক করতে পারবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন। তবে চেষ্টা করেও ইন্ডিয়ান হাইকমিশনের তরফ থেকে এ নিয়ে এখনও পর্যন্ত কোনো প্রতিক্রিয়া মেলেনি। তদন্তের স্বার্থে মুখ খুলছে না পুলিশ।
এদিকে অখন্ড বাংলাদেশ আন্দোলনের প্রধান হাসনাত আরিয়ান খানকে লক্ষ্য করে দুস্কৃতিকারীদের গুলিবর্ষণের ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে তাঁকে অবিলম্বে উচ্চ নিরাপত্তা প্রদান ও মুখোশধারী অস্ত্রধারীদের গ্রেপ্তার এবং তদন্তপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছে ‘জিবিএএইচআর’, ‘ইআরআই’, ‘জিএইচআরইডিএফ’, ‘ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্টস ইউনিয়ন’, ‘স্ট্যান্ড ফর হিউম্যান রাইটস’, ‘ভয়েস ফর গ্লোবাল বাংলাদেশিজ’, ‘বেঙ্গল রিসার্চ সেন্টার’, ‘ভয়েস ফর রিফর্ম বাংলাদেশ’, ‘লণ্ডন বাংলা প্রেস ক্লাব’, ‘বাংলাদেশ জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন ইউকে’, ‘নিরাপদ বাংলাদেশ চাই’, ‘বিবিআই’, ‘শেরপুর ওয়েলফেয়ার অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট এসোসিয়েশন ইউরোপ’সহ যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন সামাজিক , সাংস্কৃতিক ও মানবাধিকার সংগঠন।
জানা যায়, একটি কাঙ্ক্ষিত মানচিত্র এবং বৈষম্যহীন সমাজ না পাওয়ার বেদনা থেকে নব্বইয়ের দশক থেকে ‘অখন্ড বাংলাদেশ আন্দোলন’ নবাবী বাংলা, শামসুদ্দিন ইলিয়াস শাহ’র বাংলা ফেরত পেতে আন্দোলন করছে। বাংলাদেশ, পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা, আন্দামান, আরাকান, মিজোরাম, মণিপুর, নাগাল্যান্ড, অরুণাচল, বিহার, ঝাড়খন্ড, সিকিম ও উড়িষ্যাসহ বাংলা বলয়ের সকল বাংলাভাষীর জন্য একটি বৈষম্যহীন অখন্ড বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় কাজ করছে। কাঙ্ক্ষিত সেই মানচিত্র অর্জনে তারা সহিংস হওয়ার কোনো আহবান জানাচ্ছে না, তারা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের আওতায় থেকে পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা, আন্দামান, মিজোরাম, মণিপুর, নাগাল্যান্ড, অরুণাচল, সিকিম, বিহার, ঝাড়খন্ড ও উড়িষ্যায় একটি অবাধ, সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ গণভোটের আয়োজন করে দিল্লির শাসকদের কাছে একটা শান্তিপূর্ণ সমাধান কামনা করছে। এ লক্ষ্যে তারা দেশ-বিদেশে জনমত সংগঠিত করছে। ‘অখন্ড বাংলাদেশ আন্দোলন’ গত ১৬ ডিসেম্বর যুক্তরাজ্যে ২১ বছর এবং বাংলাদেশে ২৬ বছর পূর্তি উৎসব পালন করেছে।