অনাবাসী বাংলাদেশিদের জন্য বিশেষ গৃহঋণ সুবিধা

Spread the love

Bangladesh_Bank_Logo.svgপ্রবাসীদের জন্য সুখবর দিল বাংলাদেশ ব্যাংক। একই সঙ্গে ভালো সংবাদ পেল দেশের আবাসন খাত। এখন থেকে প্রবাসীরাও দেশের ব্যাংক থেকে গৃহঋণ পাবেন। টাকার অঙ্কেই এই ঋণ দেওয়া হবে। ঋণের অনুপাত হবে ৫০: ৫০। অর্থাৎ মোট ক্রয়মূল্যের ৫০ শতাংশ প্রবাসী দিলে ব্যাংকও সমপরিমাণ টাকা ঋণ হিসেবে দেবে। গতকাল রোববার দেশের সব বাণিজ্যিক ব্যাংকের জন্য এ সম্পর্কিত একটি নির্দেশনা জারি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় নীতি বিভাগ থেকে জারি করা এ নির্দেশনায় বলা হয়েছে, বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে প্রবাসী বাংলাদেশিরা সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ অনুপাতে ঋণ পাবেন। এ ঋণ যাতে তাঁরা সহজে শোধ করতে পারেন, সে জন্য রেমিট্যান্স হিসেবে যে অর্থ তাঁরা দেশে পাঠান, সেখান থেকেই তা সমন্বয় করার সুযোগ থাকবে। একই সঙ্গে প্রবাসী বাংলাদেশিদের দেশের ব্যাংকে গচ্ছিত (অনাবাসী ব্যাংক হিসাব) অর্থ থেকেও ঋণের কিস্তির অর্থ শোধ করা যাবে। যে ফ্ল্যাট বা বাড়ি তৈরির জন্য ঋণ দেওয়া হবে, সেটার ভাড়া বাবদ পাওয়া অর্থও ঋণের কিস্তি হিসেবে শোধ করা যাবে।
বাণিজ্যিক ব্যাংকের যেসব শাখা সরাসরি বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেন করে না, তাদের মাধ্যমে দেওয়া ঋণের অর্থ একই ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনকারী শাখার মাধ্যমে পরিশোধ করা যাবে। কেনা বাড়ি বা ফ্ল্যাট বন্ধক রাখা ছাড়াও ব্যাংক প্রবাসীর কেনা সিকিউরিটিজ বা সঞ্চয়পত্রও বন্ধক হিসেবে রাখতে পারবে।
এর আগে গত শনিবার এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর আতিউর রহমান এ সংক্রান্ত একটি ঘোষণা দিয়েছিলেন। ওই অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘ভোগান্তি ছাড়া সময়মতো ক্রেতাকে ফ্ল্যাট বুঝিয়ে দেবেন—এমন নিশ্চয়তা পেলে ব্যাংকের মাধ্যমে এ খাতে প্রবাসীদের বিনিয়োগের একটি সুযোগ তৈরি করে দিতে চাই। এ ক্ষেত্রে নন-রেসিডেন্ট টাকা অ্যাকাউন্ট বা নিটা হিসাব নামে প্রবাসীদের যে ব্যাংক হিসাব রয়েছে, তার মাধ্যমে যাতে প্রবাসীরা ফ্ল্যাট কিনতে পারেন, সেই সুযোগ দেওয়া হবে। নিটা হিসাব থেকে ২০ হাজার টাকার বেশি অর্থ উত্তোলন করা যায় না। সেটি তুলে দেওয়া হবে। খুব শিগগির এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। বিদেশে বসে যাতে প্রবাসীরা এ দেশে ব্যাংক হিসাব খুলতে পারেন, সে জন্যও বাংলাদেশ ব্যাংক কাজ করছে।’
তবে অনুষ্ঠানে অভিযোগ জানানো হয়েছিল যে বাংলাদেশে আবাসন খাতে বিনিয়োগ করে প্রবাসীরা সবচেয়ে বেশি প্রতারিত হয়েছেন। তাই প্রবাসীদের বিনিয়োগে আহ্বান জানানোর আগে তাঁদের বিনিয়োগের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। সরকারের বরাদ্দ করা জমি কিনেও অনেক প্রবাসী প্রতারিত হচ্ছেন। এমন চলতে থাকলে প্রবাসীরা এ দেশে বিনিয়োগে আগ্রহী হবেন না।
সামগ্রিক বিষয়ে রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের এই উদ্যোগকে রিহ্যাব সাধুবাদ জানায়। একই সঙ্গে তিনি স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য স্বল্প সুদে গৃহনির্মাণ ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা করারও আহ্বান জানান।
রিহ্যাব সম্বন্ধে প্রবাসীদের অভিযোগ নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি এই অভিযোগ সাদরে গ্রহণ করি। বলব না যে অভিযোগ নেই। এ ব্যাপারে রিহ্যাব যথাযথ ব্যবস্থাও নিচ্ছে। এ ছাড়া রিহ্যাবের পক্ষ থেকে আরও বেশি জবাবদিহি করার জন্য পদক্ষেপও নেওয়া হচ্ছে। এ জন্য একটি অভিযোগ কেন্দ্র চালু আছে। এর মাধ্যমে অনেক অভিযোগেরই সমাধান করা হয়েছে ও হচ্ছে। তবে এ কথা কথা মনে রাখতে হবে, অভিযোগের সংখ্যার তুলনায় সদস্যদের প্রকল্প হস্তান্তরের পরিমাণ অনেক অনেক বেশি। গড়ে বছরে আমরা ১০ হাজার ফ্ল্যাট হস্তান্তর করে থাকি। সেই তুলনায় আমাদের কাছে পাঁচ শ-সাড়ে পাঁচ শ অভিযোগ আছে। তবে এটা নয় যে আমরা এসব অভিযোগ ছোট করে দেখছি।
সবশেষে রিহ্যাব সভাপতি জানান, প্রবাসীদের আকৃষ্ট করতে রিহ্যাব জানুয়ারিতে আবাসন মেলা করবে। আর বাজার খোঁজার জন্য সৌদি আরব, দুবাই, আবুধাবি, মাসকাটেও মেলা করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।


Spread the love

Leave a Reply