অবিশ্বাস্য মেসি জাদুকরী রোহো
বাংলা সাংলাপ ডেস্কঃ মেসি হাসলে হাসে আর্জেন্টিনা, হাসে আর্জেন্টিনার কোটি সমর্থক। গতরাতেও মেসি ম্যাজিকে হেসেছেন তারা। ‘ডি’ গ্রুপের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে নাইজেরিয়াকে ২-১ গোলে হারিয়ে নকআউট পর্ব নিশ্চিত করে আর্জেন্টিনা। ম্যাচের শেষ বাঁশির সঙ্গে সঙ্গে উল্লাসে ফেটে পরে পুরো স্টেডিয়াম। সেন্ট পিটার্সবার্গে যার রেস থেকে যায় ম্যাচ শেষেও। রাতভর নেচে গেয়ে আর্জেন্টিনার জয় উপভোগ করেন তারা।
ম্যাচের শুরুতেই আর্জেন্টাইন শিবিরে প্রাণের সঞ্চার করেন সেই লিওনেল মেসি। ১৪তম মিনিটে দারুণ দক্ষতায় গোল নিয়ে ভক্তদের মুখে হাসি ফোটান আর্জেন্টিনার অধিনায়ক। শূন্যের বল আলতোভাবে উরুতে নামিয়ে তা পড়তে দেন পায়ের পাতায়। পরে কোনাকোনি শটে বল জড়ান নাইজেরিয়ার জালে। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে পেনাল্টি গোলে আর্জেন্টাইনদের থমকে দেয় নাইজেরিয়া। কর্নার থেকে বল আর্জেন্টিনার ডি বক্সে এলে ধাক্কাধাক্কিতে নাইজেরিয়ার এক খেলোয়াড়কে মাটিতে ফেলে দেন হাভিয়ের মাসচেরানো। পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি। ঠা-া মাথায় স্পট কিকে গোল আদায় করেন ইংলিশ ক্লাব চেলসির সাবেক তারকা ভিক্টর মোজেস। তবে ম্যাচের ৮৬তম মিনিটে আজেন্টিনার জয়সূচক গোলটি আদায় করেন ডিফেন্ডার মার্কোস রোহো। তার পায়ের জাদুতেই জয় মিলে আর্জেন্টিনার।
ডি বক্সে দারুণ শটে গোল আদায় করেন অপর ইংলিশ ক্লাব ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সাবেক এ ডিফেন্ডার। গ্রুপের অপর ম্যাচে আইসল্যান্ডকে ২-১ গোলে হারায় ক্রোয়েশিয়া। এতে ৪ পয়েন্টে গ্রুপের দ্বিতীয় স্থান নিয়ে শেষ ষোলো রাউন্ডের টিকিট কাটে আর্জেন্টিনা। টানা তিন জয়ে গ্রুপ সেরার মর্যাদাটা ক্রোয়েশিয়ার। আগামী ৩০শে জুন কাজানে প্রি-কোয়ার্টার ফাইনালে ‘সি’ গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সের মুখোমুখি হবে ‘ডি’ গ্রুপ রানার্সআপ আর্জেন্টিনা। এই গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন ক্রোয়েশিয়ার নকআউট পর্বে প্রতিপক্ষ ‘সি’ গ্রুপ রানার্সআপ ডেনমার্ক।
মস্কোর স্পার্তাক, নিজনি নভগোরদ ঘুরে সেন্ট পিটার্সবার্গ স্টেডিয়ামে গ্রুপের শেষ ম্যাচে নাইজেরিয়ার মুখোমুখি হয় আর্জেন্টিনা। বাল্টিক সাগরের এক পাশে ৬৮ হাজার দর্শকধারণ ক্ষমতার সেন্ট পিটার্সবার্গ স্টেডিয়ামটি রাশিয়ার অন্যতম সেরা স্টেডিয়াম। ম্যাচ শুরুর ঘন্টা দু’য়েক আগেই স্টেডিয়ামে প্রবেশ করতে থাকে দর্শকরা। দশ তলা স্টেডিয়ামে পশ্চিম পাশে বানানো হয়েছে প্রেসবক্স। যার একেবারে উপরিভাগে বসার স্থান বাংলাদেশি সাংবাদিকদের। এতো উপর থেকে মেসিদের ভালোভাবে চেনা যাচ্ছিল না। বাধ্য হয়েই সামনে বসানো মনিটরের সাহায্য নিতে হচ্ছিলো। মেসির অসাধারণ গোলটিও দেখতে হয়েছে মনিটরে। মনিটরের পর্দায় বার বার ভেসে উঠেছে দিয়াগো ম্যারাডোনার ছবি। মেসির গোলের পরতো এক প্রকার বাকরুদ্ব হয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে ছিলেন এই ফুটবল ঈশ্বর।
ক্রোয়েশিয়ার কাছে ৩-০ গোলে হারের পর বড় ঝড়ই গেছে আর্জেন্টিনা দলে। এই ঝড়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছেন কোচ হোর্হে সাম্পাওলি। গুঞ্জন উঠেছিলো ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে সাম্পাওলির অদ্ভূত কৌশলের সঙ্গে মেসি বা আগুয়েরোদের কেউই খাপ খাওয়াতে পারেননি, তার কৌশল পছন্দ করতে পারেননি খেলোয়াড়েরা। এখানেই শেষ নয়, এমনও শোনা গেছে, খেলোয়াড়েরা নাকি সাম্পাওলির বিদায় চেয়েছেন আর নাইজেরিয়ার বিপক্ষে দলের কোচ হিসেবে চেয়েছেন বিশ্বকাপজয়ী সাবেক তারকা হোর্হে বুরুচাগাকে। এই যে এত কিছু হয়েছে চারদিকে, সবকিছু দেখে সাম্পাওলির মনে হয়েছে, তিনি অনেক বড় ‘অপরাধ’ করেছেন। মাঠে ও মাঠের বাইরের নানা ঘটনায় আর্জেন্টিনা দলকে মনে হতে পারে ‘অসুখী এক পরিবার’। কিন্তু নাইজেরিয়া ম্যাচে তা কিন্তু একটুও মনে হয়নি। সেন্ট পিটার্সবার্গে মেসিদের খেলা দেখে একটি বারও মনে হয়নি আইসল্যান্ডের সঙ্গে ড্র আর ক্রোয়েশিয়ার সঙ্গে হারে খাদের কিনারায় দাঁড়িয়ে দলটি। কোচও এদিন পাঁচটি পরিবর্তন আনেন একাদশে। ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে বালকসুলভ ভুল করা কাবায়েরোর পরিবর্তে এই ম্যাচে আর্জেন্টিনার গোলবারে দেখা যায় ফ্রাঙ্কো আরমানিকে। একাদশে ফেরেন মার্কোস রোহো, ডি মারিয়া এবং হিগুয়াইনও। মিডফিল্ডের দায়িত্বে এ ম্যাচে মাসচেরানোর সঙ্গী ছিলেন এভার বানেগা। সবকিছু মিলিয়ে এদিন নতুন এক আর্জেন্টিনাকে দেখে ফুটবল বিশ্ব। মাঝমাঠে দারুণ খেলেন বানেগা। তার একটি লম্বা পাসে মেসির অসাধারন ফিনিশিংয়ে ম্যাচের ১৪তম মিনিটে প্রথম গোলের দেখা পায় আর্জেন্টিনা। এক গোলে হবে না । নকআউট পর্ব নিশ্চিত করতে হলে আরো গোল চাই আলবিসেলেস্তাদের। তাইতো নিজে গোল করার পর হিগুয়াইন কে দিয়ে গোল করাতে চেয়েছিলেন মেসি। ম্যাচের ২৮তম মিনিটে মেসির বাড়ানো বলে আগুয়ান গোলরক্ষককে পরাস্ত করতে পারেননি এই আর্জেন্টাইন তারকা। ম্যাচের ৩২ মিনিটে মেসির থ্রু ধরে ডি মারিয়া প্রায়ে বক্সেই ডুকে যাচ্ছিলেন, ঠিক ওই মুহূর্তে তাকে ফেলে দেন এই বালোগুন। ফ্রিকিক পায় হোসে সাম্পাওলির দল। ডি বক্সের বাইরে থেকে মেসির নেয়া বাঁকানো ফ্রি কক ক্রস পিসে লেগে প্রতিহত না হলে তখনই ব্যবধান দ্বিগুণ হতো আর্জেন্টিনার।
ক্রোয়েশিয়া-আইসল্যান্ড ম্যাচটি ড্র হলে এবং নিজেরা এক পয়েন্ট পেলে নকআউট পর্বের টিকেট পেয়ে যেতো নাইজেরিয়া। এ কারনেই হয়তো ম্যাচের শুরু থেকেই কিছুটা রক্ষণাত্মক কৌশলে খেলতে থাকে আফ্রিকার সুপার ঈগলরা। এক গোলে পিছিয়ে পরার পর ঘুম ভাঙে নাইজেরিয়ানদের। অবি মিকেল, মুসারা চেষ্টা করেছেন। তবে এদিন প্রথমার্ধে আর্জেন্টিনার রক্ষণে ফাটল ধরাতে পারেননি তারা। পারেননি মেসিকে দমিয়ে রাখতে। তবে দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই মাসচেরানোর এক ভুলে পেনাল্টি পায় নাইজেরিয়া। তা থেকে গোল করে পুরো স্টেডিয়ামটি স্তদ্ধ করে দেন ভিক্টর মোজেস। এরপর আর্জেন্টিার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে খেলতে থাকে নাইজেরিয়া। ধীরে ধীরে আর্জেন্টিনার যখন বিদায় ঘন্টা বাজছিলো ঠিক তখনই ত্রানকর্তা হিসেবে হাজির সেই রোহে। ম্যাচের ৮৬ মিনিটে তার দেয়া গোলে প্রাণ ফেরে আর্জেন্টিনা শিবিরে। ব্রাজিলে ২০১৪’র বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে নাইজেরিয়ার বিপক্ষে ৩-২ গোলে জয় দেখে আর্জেন্টিনা। ২-২ সমতা শেষে ওই ম্যাচের শেষ দিকে এই মার্কোস রোহোর গোলেই জয় পেয়েছিল আর্জেন্টাইনরা।
আর্জেন্টিনা একাদশ : আরমানি, ওটামেন্ডি, মার্কাদো, তালিয়াফিকো, রোহো, বানেগা, মাচেরানো, এনজো পেরেজ, হিগুয়াইন, মেসি, ডি মারিয়া।
নাইজেরিয়া একাদশ : ফ্রান্সিস উঝো (গোলরক্ষক), উইলিয়াম, কেনেথ ওমেরো, ব্রায়ান ইদোউ বালাগুন, ওঘেনেকারো ইতেবো, উইলফ্রেড এনদিদি, জন অবি মিকেল (অধিনায়ক), বালাঘুন, ভিক্টর মোসেস, কেলেচি ইহেনাচো, আহমেদ মুসা ।
ক্রোয়েশিয়া ২-১ আইসল্যান্ড
আর্জেন্টিার বিপক্ষে ৩-০ গোলে জয় পাওয়া একাদশের ৯ জনকে বেঞ্চে রেখে গতকাল খেলতে নামে ক্রোয়েশিয়া। শুরুতে কিছুটা জড়তা দেখালেও ক্রমে ছন্দে ফেরে আইসল্যান্ড। এতে প্রথমার্ধে দু’বার গোলের সুযোগ হয় তাদের। তবে ক্রোয়েশিয়ার গোলরক্ষক কালিনিচ রুখে দেন আইসল্যান্ডের প্রচেষ্টা। প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ের দ্বিতীয় মিনিটে ডি বক্সের মাথা থেকে অ্যারন গুনারসনের জোরালো বাঁকানো শট দারুণ দক্ষতায় ফিরিয়ে দেন ক্রোয়েশিয়ার পরিবর্তিত গোলরক্ষক। ৫৩তম মিনিটে মিলান বাদেলির গেলে এগিয়ে যায় ক্রোয়েশিয়া। তবে ৭৬তম মিনিটে পেনাল্টি গোলে আইসল্যান্ডকে সমতায় ফেরান শীর্ষ তারকা গিলফি সিগার্ডসন। তবে ৯০তম মিনিটে ইভার পেরসিচের গোলে জয় নিয়েই মাঠ ছাড়ে ক্রোয়াটরা।