আদালত অবমাননায় দণ্ডিত দুই মন্ত্রী
বাংলা সংলাপ ডেস্ক:
আদালত অবমাননার অভিযোগ প্রমানিত হওয়ায় বাংলাদেশের দুই মন্ত্রীকে দণ্ড দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। দণ্ডিতরা হলেন, খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। প্রধান বিচারপতি ও বিচারাধীন বিষয় নিয়ে আদালত অবমাননাকর বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগে দুই মন্ত্রীকে দোষী সাব্যস্ত করে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
রোববার সকালে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের সাত সদস্যের বেঞ্চ এ আদেশ দেন। বেঞ্চের অন্য সদস্যরা হলেন—বিচারপতি আবদুল ওয়াহহাব মিয়া, বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম ও বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার। আগামী সাত দিনের মধ্যে এই টাকা ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতাল ও লিভার ফাউন্ডেশনকে দিতে বলা হয়েছে। অনাদায়ে তাদের সাত দিন করে জেল খাটতে হবে।
সকালে দুই মন্ত্রী সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে হাজির হন। পরে তাদের শুনানি শুরু হয়। শুনানিতে দুই মন্ত্রীকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। আদালতে দুই মন্ত্রীর পক্ষে অ্যাডভোকেট আব্দুল বাসেত মজুমদার ও ব্যারিস্টার রফিক-উল হক শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম আদালতের নির্দেশে জনকণ্ঠে প্রকাশিত দুই মন্ত্রীর বক্তব্য পাঠ করে শোনান। এ সময় খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
গত ২০ মার্চ খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার শুনানি আজ ২৭ মার্চ পর্যন্ত মুলতবি করেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। এর আগে দুই মন্ত্রী তাদের বক্তব্যের জন্য নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করে আদালতে আবেদন করেন। গত ১৫ মার্চ স্বশরীরে আদালতে হাজির হয়ে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। ওই দিন আদালতে হাজির না হয়ে সময় প্রার্থনা করেছিলেন খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম।
গত ৫ মার্চ ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে আপিল বিভাগে বিচারাধীন যুদ্ধাপরাধে দণ্ডপ্রাপ্ত মীর কাসেম আলীর আপিলের বিষয় নিয়ে প্রধান বিচারপতিকে উদ্দেশ্য করে তীর্যক মন্তব্য করেন সরকারের এই দুই মন্ত্রী। এ নিয়ে সব মহলে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়।
রায় দেয়ার সময় প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেছেন, সারা জাতিকে বার্তা দেয়ার জন্যই আদালত অবমাননা মামলায় সরকাররে দুই মন্ত্রীকে তলব করা হয়েছে, যাতে ভবিষ্যতে এ ধরণের অপরাধের পুনরাবৃত্তি না হয়। জাতি জানুক, সর্বোচ্চ আদালত কতো কঠোর হতে পারে। আদালত বলেন, সর্বোচ্চ আদালতের সকল বিচারক পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তাদের বক্তব্য পর্যালোচনা করেছি এবং এ বিষয়ে আমরা চিন্তা ভাবনা করেছি।
এদিকে, আদালত অবমাননার দায়ে অর্থদণ্ডে দণ্ডিত খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের মন্ত্রিত্ব থাকবে কিনা তা নৈতিকতার বিষয় উল্লেখ করে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, এ বিষয়ে মন্ত্রিসভা সিদ্ধান্ত নেবে।
আদালত অবমাননার দায়ে দুই মন্ত্রীকে অর্থদণ্ডের আদেশের পর এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি একথা বলেন। অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, সংবিধানে এ বিষয়ে কোনো কিছু উল্লেখ নেই, তবে তারা মন্ত্রিপরিষদে থাকবেন কিনা সে বিষয়ে মন্ত্রিসভা নিদ্ধান্ত নেবে। এ বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করেত চাই না।