আপাতত দিল্লিতেই থাকবে হাসিনা

Spread the love

ডেস্ক রিপোর্টঃ জনরোষ থেকে বাঁচতে নিজ দেশত্যাগী শেখ হাসিনা আপাতত কোথায় থাকবেন তা নিয়ে অন্তহীন জল্পনা-কল্পনা।  দিল্লি থেকে তিনি কোথায় কীভাবে
যাবেন তা নিয়ে কোনো মহলেরই স্বচ্ছ ধারণা নেই। তবে একটি সূত্র বলছে বৃটেন তাকে পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করলে তিনি বেলারুশ যেতে পারেন। ফিনল্যান্ড যাওয়ারও সুযোগ রয়েছে। কোনো কিছুই এখনো স্পষ্ট হয়নি। তবে ৭৫ বছরের পুরনো দল আওয়ামী লীগের সভানেত্রী যে কিছুদিন দিল্লিতে কাটাবেন তা অনুমেয়। কারণ যুদ্ধবন্ধু ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতৃত্বের সম্পর্কের বিশেষত আওয়ামী লীগের বন্ধুত্বের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট রয়েছে। যদিও দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত শেখ হাসিনার কথা হয়েছে কিনা? নিশ্চিত করা যায়নি। ভারতীয় গণমাধ্যম জানায়, বাংলাদেশের সামপ্রতিক পরিস্থিতিতে সীমান্তে বিশেষ নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। সব ধরনের রেল ও বিমান যোগাযোগ সোম ও মঙ্গলবারের জন্য বন্ধ থাকছে।ভারতের বেসরকারি বিমান সংস্থা ইন্ডিগোর মঙ্গলবারের ঢাকা ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা বাতিল: এদিকে স্টেট ডিপার্টমেন্টের একটি ঘনিষ্ঠ সূত্র নিশ্চিত করেছে যে, বাংলাদেশে বিক্ষোভের বিরুদ্ধে দমন-পীড়নের পর দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনার ভিসা বাতিল করেছে যুক্তরাষ্ট্র। বৃটিশ সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যান টুইটে একথা জানান। শেখ হাসিনা সোমবার বিকালে বাংলাদেশ ছেড়েছেন এবং ভারতে বসেই তার পরবর্তী পদক্ষেপের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানা গেছে। হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ভার্জিনিয়ায় থাকেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে হাসিনার ভ্রমণের কোনো পরিকল্পনা ছিল কিনা তা স্পষ্ট নয়। বার্গম্যান সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, হাসিনা যুক্তরাজ্যে আশ্রয় চাওয়ার কথা বিবেচনা করছেন, সেখানে তার বোন (শেখ রেহানা) এবং ভাগ্নি (এমপি টিউলিপ সিদ্দিক) থাকেন। হাসিনা যে পদ্ধতিতে বৃটেনের কাছে আশ্রয় চেয়েছেন, অভিবাসন আইন অনুযায়ী তা সম্ভব নয়। ওই পদ্ধতিতে কাউকে আশ্রয় দিতে পারে না বৃটেন। নিয়ম অনুযায়ী যাদের আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা প্রয়োজন তারা দেশ ছাড়ার পর প্রথম যে নিকটবর্তী নিরাপদ দেশে পা রাখছেন, সেখানেই আশ্রয় চাওয়ার কথা। সেটাই তার নিরাপত্তা পাওয়ার দ্রুততম রাস্তা। এক্ষেত্রে ভারতের নাম উঠে আসছে। তবে হাসিনার কাছে একটি ভিসা থাকতে পারে যা তাকে যুক্তরাজ্যে ভ্রমণের অনুমতি দেবে।

দেখা করলেন ভারতের নিরাপত্তা উপদেষ্টা: ওদিকে শত শত লাশ, হাজারে হাজারে গুলি, অহেতুক মামলা আর পথে পথে হেলমেট বাহিনীর বর্বোরোচিত হামলার পরও ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে টিকতে না পেরে কোনো মতে জীবন নিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়া প্রধানমন্ত্রী (সদ্য সাবেক) শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেছেন ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল। ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রচারিত অসমর্থিত খবরে প্রকাশ, সোমবার সন্ধ্যায় শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি পরিবহন বিমান দিল্লি-উত্তর প্রদেশ সীমান্তে গাজিয়াবাদের কাছে হিন্দন বিমানঘাঁটিতে অবতরণ করে। সেখানে দোভাল তার সঙ্গে দেখা করেন। গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, হাসিনা ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয় চাননি। চেয়েছেন বৃটেনে। তিনি অপেক্ষায় রয়েছেন এটি গ্রাহ্য হলেই লন্ডনের উদ্দেশ্য দিল্লি ছাড়বেন। ততক্ষণ ভারত তাকে সাময়িক আশ্রয় দেবে। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত বৃটিশ নাগরিকদের অব্যাহত মেইল-যোগাযোগের প্রেক্ষিতে বৃটিশ সরকার পদত্যাগী হাসিনার রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন প্রত্যাখ্যান করেছে মর্মে খবর বেরিয়েছে। তবে লন্ডনের তরফে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু বলা হয়নি। শেখ হাসিনা যে সময় দিল্লির অদূরে পৌঁছান, প্রায় সেই সময়েই ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর দেখা করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে। বাংলাদেশের সার্বিক পরিস্থিতি, শেখ হাসিনার দেশত্যাগ, সেনা প্রধানের ভূমিকা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের উদ্যোগ ও বাংলাদেশে বসবাসকারী ভারতীয়দের নিরাপত্তা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে তিনি অবহিত করেন। বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলন কেন্দ্র করে এযাবৎ যত কিছু ঘটেছে, তা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা সত্ত্বেও ভারত সরকারিভাবে কোনো মন্তব্য করেনি। দুই সপ্তাহ আগে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে প্রশ্নের জবাবে শুধু বলা হয়েছিল, বাংলাদেশে যা চলছে, তা সে দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। সঙ্গত কারণেই এই আন্দোলন ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে ভারত মন্তব্য করতে অনাগ্রহী। দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের গভীরতা ও আন্দোলনের স্পর্শকাতরতার জন্য ভারত শুরু থেকেই সংযত থাকতে চেয়েছে। জনমতকে উপেক্ষা করে পরপর ৩টি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শেখ হাসিনার প্রতি অন্ধ ভালোবাসা দেখিয়েছে ভারত। যা নিয়ে নেটিজেনরা দিল্লির ওপর চরমভাবে  ত্যক্ত-বিরক্ত। তরুণ ছাত্র-জনতার ওই আন্দোলনে সেই বিরক্তি প্রকাশ পেয়েছে ভারতবিরোধী স্লোগানে। ভারত চায়নি এমন কোনো মন্তব্য করতে, যাতে সেটি সেই বিরোধিতা উস্কে যায় বা হিতে বিপরীত হয়। সরকারি সূত্র ভারতীয় গণমাধ্যম জানায়, বিরোধীরা দাবি তোলার আগেই মোদি সরকার নিজে থেকে বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে সংসদকে অবহিত করতে চাইছে। বিশেষ করে বাংলাদেশে যখন বহু ভারতীয়ের বসবাস। শেখ হাসিনার দেশত্যাগ নিয়েও ভারত অত্যন্ত গোপনীয়তা রক্ষা করে চলেছে। তা সত্ত্বেও গণমাধ্যমে বেশকিছু খবর প্রকাশিত হচ্ছে, যেগুলো অসমর্থিত। যেমন হেলিকপ্টারে চেপে ভারতে আসার পর শেখ হাসিনা বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর এক পণ্য পরিবহন বিমানে চাপেন। ভারতের আকাশে সেই বিমানকে পর্যবেক্ষণে রাখে ভারতীয় বিমানবাহিনী। সি-১৩০ সামরিক পরিবহন বিমানটি শেখ হাসিনাকে নিয়ে হিন্দন বিমানঘাঁটিতে নামে সোমবার সন্ধ্যায়।


Spread the love

Leave a Reply