আরও তিন রোমহর্ষক হত্যাকান্ড, দেশজুড়ে আতঙ্ক
বাংলা সংলাপ ডেস্ক:
আরও তিনটি রোমহর্ষক হত্যাকান্ডের সাক্ষী হলো বাংলাদেশ। সোমবার সকালের দিকে দেশের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্বলিত কাশিমপুর কারাগারের সামনে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে এর প্রধান কারারক্ষী রুস্তম আলীকে। এরপর বিকালে খোদ রাজধানীতেই বাসায় ঢুকে কুপিয়ে হত্যা করা হয় মার্কিন দূতাবাসের সাবেক এক কর্মকর্তাসহ দুজনকে। রাজশাহীতে বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক হত্যাকাণ্ডের দুদিনের মাথায় একের পর এক হত্যাকান্ডে দেশজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
একই হামলায় আহত হয়েছেন এক পুলিশকর্মকর্তাসহ দুজন। সোমবার বিকালে রাজধানীর কলাবাগানের লেক সার্কাসে ঘরে ঢুকে কুপিয়ে খুন করা হয় জুলহাজ মান্নান ও তার বন্ধু মাহবুব রাব্বী তনয়কে।
ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের সাবেক প্রটোকল অ্যাসিস্টেন্ট জুলহাজ বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক উন্নয়ন সংস্থা ইউএসএআইডির কর্মকর্তা হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন। পাশাপাশি তিনি বাংলাদেশে প্রকাশিত প্রথম সমকামীদের পত্রিকা ‘রূপবান’ এর সম্পাদক ছিলেন বলেও জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
নিহত জুলহাজের আরেকটি পরিচয় হলো, তিনি সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক দীপু মনির খালাত ভাই। তার সঙ্গে নিহত ব্যক্তির নাম মাহবুব রাব্বী তনয় (২৬)। লোকনাট্য দলের কর্মী তনয় অধিকারকর্মী জুলহাজের বন্ধু ছিলেন। হামলায় দুজনে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান।
তনয়ের টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে জানা যায়, পিটিএ নামে একটি প্রতিষ্ঠানে ‘শিশু নাট্য প্রশিক্ষক’ হিসাবে কাজ করতেন তিনি। এ ঘটনায় ওই বাড়ির নিরাপত্তাকর্মী পারভেজ মোল্লা ও মমতাজ নামে পুলিশের এক এএসআই আহত হয়েছেন।
ঘটনার প্রতক্ষ্যদর্শী আহত নিরাপত্তাকর্মী পারভেজ মোল্লা জানান, সোমবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে জুলহাজ মান্নানের নামে কুরিয়ারের পার্সেল এসেছে বলে ৬/৭ জন লোক বাসায় ঢুকতে চান। তাদের গায়ে নেভি-ব্লু টিশার্ট ও প্রত্যেকের কাঁধে ব্যাগ ছিল। তিনি নিচ তলায় তাদেরকে দাঁড় করিয়ে দ্বিতীয় তলায় জুলহাজ মান্নানের বাসায় যান। কিন্তু দুর্বৃত্তরাও তার পেছনে পেছনে দ্বিতীয় তলায় উঠে পড়ে। দরজায় নক করার পর জুলহাজ মান্নান বের হয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে তারা। এ সময় তার বন্ধু তনয় ও নিরাপত্তাকর্মী এগিয়ে গেলে তাদেরও কুপিয়ে আহত করে।
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ধারণা, উগ্রপন্থি কোনো দল এই হামলায় জড়িত। অতীতে একাধিক ব্লগার ও লেখক হত্যার সঙ্গে কলাবাগানের জোড়া খুনের অনেক মিল রয়েছে।
এর আগে সোমবার বেলা সাড়ে এগারোটার দিকে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারের সামনে দুই মোটরসাইকেল আরোহীর অতর্কিতে ছোড়া গুলিতে সাবেক প্রধান কারারক্ষী রুস্তম আলী নিহত হয়েছেন। ঘটনার পর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য একজনকে আটক করা হয়েছে।
বাংলাদেশের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা সমৃদ্ধ কারাগারগুলোর মধ্যে কাশিমপুর কারাগার অন্যতম। দণ্ডপ্রাপ্ত শীর্ষ অপরাধী, রাজনৈতিক বন্দি এবং জঙ্গি কার্যক্রমরে সাথে সংশ্লিষ্ট অনেককেই এ কারাগারে রাখা হয়।
জানা গেছে, নিহত রুস্তম আলী (৬০) কাশিমপুর মহিলা কারাগারের সার্জেন্ট ইনস্ট্রাকক্টর ছিলেন। গতবছরের নভেম্বর থেকে তিনি অবসরোত্তর ছুটিতে ছিলেন। প্রতক্ষদর্শীরা জানান, কারাগারের প্রধান ফটকের ২০০ গজ উত্তরে একটি ওষুধের দোকান থেকে রুস্তম আহমেদ ওষুধ কিনছিলেন। এ সময় একটি মোটরসাইকেলে করে তিনজন ওই দোকানের সামনে আসে এবং গতি কমার পর তাদের মধ্যে একজন গুলি ছোড়ে। গুলি করেই তারা দ্রুত পালিয়ে যায়।