আরাকানে বর্মী সেনাবাহিনীর উপর রোহিঙ্গা জঙ্গিদের আবারও হামলা:পরিস্থিতি কি ফের অশান্ত হয়ে উঠছে?
বাংলা সংলাপ ডেস্কঃমিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলিম জঙ্গিরা বলছে, দু’দিন আগে গত শুক্রবার তারা দেশটির সামরিক বাহিনীর উপর আরো একটি হামলা চালিয়েছে।
উত্তর রাখাইনের মংডু এলাকার একটি গ্রামে চালানো চোরাগোপ্তা এই হামলায় মোট তিনজন আহত হয়েছে বলে তারা দাবি করছে। জঙ্গিরা এই হামলার কৃতিত্ব দাবি করলেও এই আক্রমণের ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করে নি।
আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভ্যাশন আর্মি বা আরসা বলছে, বর্মী সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রাখায় সামরিক বাহিনীর উপর তারা সবশেষ এই আক্রমণটি চালিয়েছে।
কেন এই হামলা
আরসা বলছে, দেশটির নেত্রী অং সান সু চি রাখাইনে সামরিক অভিযান বন্ধের আশ্বাস দেওয়া সত্ত্বেও রোহিঙ্গাদের উপর সেনাবাহিনীর নিপীড়ন নির্যাতন অব্যাহত রয়েছে।
আজ রবিবার আরসার এক বিবৃতিতে এই হামলার দাবি করে জঙ্গি দলটি সেনাবাহিনীর উপর আরো হামলা চালানোরও ঘোষণা দিয়েছে।
রোহিঙ্গা বিদ্রোহীরা বলছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে এধরনের হামলা চালানো ছাড়া তাদের কাছে আর কোন বিকল্প নেই।
রোহিঙ্গা বিদ্রোহীরা বলছে, রাষ্ট্রীয় সমর্থনে রোহিঙ্গাদের উপর যে সন্ত্রাস চলছে তার বিরুদ্ধে তাদের যুদ্ধ অব্যাহত থাকবে।
আরসা বলছে, বর্মী সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের উপর গণহত্যা চালাচ্ছে। এই অভিযোগ অস্বীকার করছে সেনাবাহিনী। বর্মী সামরিক বাহিনীর মতে আরসা একটি ইসলামপন্থী সন্ত্রাসী সংগঠন।
আরসার তৎপরতা
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে এই জঙ্গি বাহিনীর তৎপরতা সম্পর্কে খুব কমই শোনা যাচ্ছিলো। অগাস্ট মাসে নিরাপত্তার বাহিনীর উপর বেশ কয়েকটি হামলার পর এই বিদ্রোহীরা খুব একটা তৎপর ছিলো না। তাদের চালানো হামলার কথাও খুব একটা শোনা যায় নি। শুধু তাই নয় কয়েক সপ্তাহ আগে আরসার পক্ষ থেকে একতরফাভাবে অস্ত্র-বিরতির কথাও ঘোষণা করা হয়েছিলো, যার মেয়াদ শেষ হয়েছে গত অক্টোবর মাসে।
বিবিসির দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া বিষয়ক সংবাদদাতা জনাথন হেড বলছেন, অগাস্টের পর রাখাইন রাজ্যের অধিকাংশ রোহিঙ্গা মুসলিম বাংলাদেশে পালিয়ে যাওয়ার কারণে আরসা কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়ে। এবং তখনই তাদের পক্ষ থেকে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেওয়া হয়।
তবে গত শুক্রবার সৈন্যদের বহনকারী গাড়িতে হামলা চালানোর ঘটনা প্রমাণ করছে যে এখনও কিছু রোহিঙ্গা জঙ্গি সেখানে রয়ে গেছে।
কিভাবে হামলা
আরসার পক্ষ থেকে এব্যাপারে কিছু বলা হয়নি। রাখাইনে সংবাদ মাধ্যমের কর্মীরা স্বাধীনভাবে কাজ করতে না পারার কারণে ঘটনার নিরপেক্ষ কোন বর্ণনাও পাওয়া যাচ্ছে না।
তবে মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যমে বলা হচ্ছে, একদল সশস্ত্র জঙ্গি অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে রোগীদের বহনকারী সেনাবাহিনীর একটি গাড়িতে হামলা চালায়। এতে দু’জন সৈন্য এবং একজন বেসামরিক ব্যক্তি আহত হয়।
মিয়ানমার সরকারের তরফ থেকে এদেরকে সন্ত্রাসী হিসেবে উল্লেখ করা হলেও দেশটির সেনাবাহিনী তাদেরকে আরসা বলে উল্লেখ করেছে।
কোন কোন সংবাদ মাধ্যমে বলা হচ্ছে, সেখানে বোমা হামলাও হয়েছে। আবার কোথাও বলা হয়েছে সেনাবাহিনীর গাড়িটি ল্যান্ড মাইনের উপর পড়ে গেলে বোমাটি বিস্ফোরিত হয় এবং তখন একদল সশস্ত্র জঙ্গি তাদের উপর হামলা চালায়।
গত অগাস্ট মাসে বর্মী নিরাপত্তা বাহিনীর উপর এ ধরনের হামলার জেরেই রাখাইনে সেনাবাহিনীর অভিযান শুরু হয় এবং তারপর সেখান থেকে সাড়ে ছ’লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা প্রতিবেশী বাংলাদেশে পালিয়ে যায়।
আরসার শক্তি
আরসার গঠন, এর সদস্য কারা, কিভাবে ও কোথা থেকে পরিচালিত হচ্ছে, নেতৃত্বে কারা এবং সর্বোপরি তাদের শক্তিমত্তা সম্পর্কে খুব কমই ধারণা পাওয়া যায়। তাদের দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য কি সেটাও খুব একটা পরিষ্কার নয়।
এক বছরেরও কিছু সময় আগে থেকে এই বাহিনীর বিদ্রোহীরা নিরাপত্তা বাহিনীর উপর ছোট ছোট হামলা চালাতে শুরু করে। এবং তারপর সবচেয়ে বড়ো হামলাটি চালায় গত অগাস্ট মাসে।
আরসার নেতা পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত রোহিঙ্গা, যিনি নিজেকে আতা উল্লাহ বলে পরিচয় দিচ্ছেন, গত অগাস্ট মাসে তিনি কতোগুলো ভিডিও পোস্ট করেছেন, যেখানে দাবী করা হয়েছে যে রোহিঙ্গাদের আত্মরক্ষায় এসব হামলা চালানো হয়েছে।
আরসার নেতা বলেছেন, সামরিক বাহিনীর নিপীড়নের হাত থেকে রোহিঙ্গা মুসলিমদের রক্ষা করতেই তাদের এই যুদ্ধ। এবং তাদের এই লড়াই বৈধ।
আরো হামলা?
আরসার এই বিবৃতি থেকে এটা স্পষ্ট যে ভবিষ্যতে এধরনের আরো হামলা হতে পারে।
এর ফলে রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনীর তৎপরতা আরো বাড়বে এবং মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ এই পরিস্থিতিতে চেষ্টা করবে আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থা ও সংবাদ মাধ্যমগুলো যেন সেখানে যেতে না পারে।
পরিণতিতে বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের স্বদেশে ফিরে যাওয়ার সম্ভাবনা আরো কঠিন হয়ে উঠলো।