ইউকের ৭৫ ভাগ বারায় কাউন্সিল ট্যাক্স ৫% বৃদ্ধি পাচ্ছে, বাড়বে না টাওয়ার হ্যামলেটসে
কাউন্সিল ট্যাক্স ফ্রিজ রাখাসহ ৮ মাসে ১৬টি বড় অর্জন মেয়র লুতফুর রহমানের
ডেস্ক রিপোর্টঃ টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিল হচ্ছে লন্ডনের মাত্র তিনটি বারার একটি, যে বারায় কাউন্সিলে ট্যাক্স ফ্রিজ রাখা হচ্ছে। আর জীবন যাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির এই কঠিন সময়ে টাওয়ার হ্যামলেটসসহ দুটি বারার কাউন্সিল ট্যাক্সের হার হবে সবচেয়ে কম।
টাওয়ার হ্যামলেটস-এর নির্বাহী মেয়র লুতফুর রহমান এ প্রসঙ্গে বলেন, “প্রস্তাবিত বাজেট এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যেখানে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পাচ্ছেন বারার সাধারণ মানুষ। অগ্রাধিকার থাকছে পরিবর্তন ও উন্নয়নমূলক প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়্ন। কাউন্সিল ট্যাক্স-এর ক্ষেত্রে আমরা সহনীয় থাকার পাশাপাশি হাউজিং, শিক্ষা, সোসাল কেয়ার, ইয়ুথ সার্ভিস, পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা ও ক্রাইম নিয়ন্ত্রনের মত জনগুরুত্বপূর্ন খাতেও বিশেষ বাজেট বরাদ্দ রেখেছি। অর্থনৈতিকভাবে স্মরণকালের সবচে কঠিন এই সময়ে সাধারণ মানুষের নিত্যদিনের জরুরী সেবা বন্ধ বা কর্তন না করে কীভাবে সামগ্রিক পরিস্থিতিকে সমাল দেয়া যায় সেদিকে গুরুত্ব দিচ্ছি।”
সবচেয়ে বড় ইকোনমি এবং দামী ঘর-বাড়ীতে সমৃদ্ধ বারার মধ্যে অন্যতম ওয়েস্ট মিনিষ্টার এবং টাওয়ার হ্যামলেটসে প্রস্তাবিত বাজেট অনুযায়ী কাউন্সিলে ট্যাক্স হবে সবচেয়ে কম। আগামী মার্চে অনুষ্ঠিতব্য ফুল কাউন্সিল মিটিংয়ে বাজেট চূড়ান্ত হবে। ইতিমধ্যে বেশ কিছু মেইনস্ট্রিম মিডিয়ায় বাজেট প্রস্তাবনা নিয়ে পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণ হয়েছে। বিবিসিরি এক প্রতিবেদনের শিরোনাম হচ্ছে, “কাউন্সিল ট্যাক্স: মোস্ট লন্ডন বারা টু রেইজ ৫%”, বিবিসি এশিয়ান নেটওয়ার্কে বলা হয়েছে, পুরো ইউকের ৭৫ ভাগ বারায় কাউন্সিল ট্যাক্স ৫ পার্সেন্ট বৃদ্ধি পাবে, কিন্তু বাড়বে না টাওয়ার হ্যামলেটসে। ইভিনিং স্ট্যান্ডার্ড এর শিরোনাম হয়েছে, ‘লন্ডন সিইজ হাইয়েস্ট এন্ড লয়েস্ট কাউন্সিল ট্যাক্স রেইজ ইন ইংল্যান্ড।’
লন্ডনের হেই বেরিং, সাটন, ওলথাম ফরেস্ট, ক্রয়ডন এবং ব্যাক্সলি এই পাঁচ বারায় কাউন্সিলে ট্যাক্স বৃদ্ধির হার সবচেয়ে বেশী। এইসব বারার বাসিন্দাদের কাউন্সিল ট্যাক্স বাবদ বছরে গুনতে হবে ২ হাজার পাউন্ড-এরও বেশী। আর গত বছর থেকেই এই অংকে পৌছে গেছে হারো, রিচমন্ড এবং ক্যানসিংস্টন বারা। বেশীরভাগ কাউন্সিল কমপক্ষে ৫ % ট্যাক্স বৃদ্ধি করছে, তবে দেউলিয়া ঘোষিত ক্রয়ডন কাউন্সিলকে সরকার ১৫ % পর্যন্ত বৃদ্ধির সুযোগ অনুমোদন করেছে। এই কাউন্সিলের আরো ২২৫ মিলিয়ন পাউন্ডের ঋণ দরকার এবং সরকার তাদের ঋণ থেকে ৫৪০ মিলিয়ন পাউন্ড রাইট অফ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে ওয়েস্ট মিনিষ্টার সবচেয়ে কম পরিমান ( ২ পার্সেন্ট) কাউন্সিল ট্যাক্স বাড়াচ্ছে। আর টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিল ট্যাক্স ফ্রিজ রাখার সিদ্ধান্তে অটল থেকে শুধুমাত্র সোশ্যাল কেয়ার এলাউন্সে মাত্র ২ পার্সেন্ট বৃদ্ধি করছে। একইভাবে কাউন্সিল ট্যাক্স ফ্রিজ রাখছে ক্যানসিংস্টন এন্ড চেলিসি।
টাওয়ার হ্যামলেটসের নির্বাহী মেয়র লুতফুর রহমান বলেন, জরুরী সার্ভিসগুলোর বাজেট কর্তনটি হচ্ছে কারো কারো রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, এটিকে রক্ষা করেও আর্থিক ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব। তিনি বলেন, কোনো কোনো মহলে আর্থিক অবস্থা নিয়ে বিভ্রান্তির চেষ্টা করা হচ্ছে, আমরা যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে নির্বাচিত হয়েছি, জনগন সেই প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন চান। কাউন্সিলের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি আর অভ্যন্তরিন কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞদের দায়িত্ব হচ্ছে সেই এজেন্ডা বাস্তবায়নের পাশাপাশি বাজেটবুক ব্যালেন্স করা। আমরা সবসময় এ ক্ষেত্রে যথার্থতার পরিচয় দিয়েছি।
কাউন্সিলের কস্ট অব লিভিং এবং রিসোর্স বিষয়ক ক্যাবিনেট মেম্বার কাউন্সিলার সাইদ আহমদ বলেন, জীবনযাত্রার ব্যয় নির্বাহের ক্ষেত্রে মানুষজন খুবই কস্ট করছেন। সেখানে কাউন্সিল ট্যাক্স না বাড়িয়ে বা ফ্রিজ রেখে আমরা কিছুটা হলেও সহযোগিতার হাত বাড়ালাম।নির্বাহী মেয়রের প্রশাসন আগেও এসব বিষয়ে আলাদা গুরুত্ব দিয়ে বিপুল জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। এবারও সবাই আমাদের এজেন্ডাগুলোকে স্বাগত জানাচ্ছেন।
মেয়রের মুখপাত্র বলেন, জীবনযাত্রার ব্যয় নির্বাহে জন্য সহযোগিতামূলক প্রজেক্ট না করে শুধুমাত্র কস্ট অব লিভিং, কস্ট অব লিভিং নিয়ে বুলি আউড়িয়ে তো কোনো ফায়দা নেই। এ কারনে আমরা প্রায় ৫ মিলিয়ন পাউন্ড খচর করেছি কস্ট অব লিভিং রিলিফ প্যাকেজে, প্রাইমারীর পাশপাপাশি সেকেন্ডারী স্কুলেও ফ্রি মিল, এ লেভেলে এডুক্যাশন মেইনটেন্সে এলাউন্স এবং ইউনির্ভাসিটি গ্রান্ট প্রজেক্ট বাস্তবায়নকারী ইংল্যান্ডের একমাত্র বারা হিসেবেই শুধু আমরা বিবেচিত হচ্ছিনা, সাথে সাথে মানুষের নিত্যদিনের আর্থিক চাপ কিছুটা কমাতে সামান্যতম হলেও ভূমিকা রাখছি। আর মেয়রের প্রশাসন এক্ষেত্রে খুবই সাবধানতা ও দায়িত্বশীলতা অবলম্বন করছে, যার ফলে একটি ভারসাম্যপূর্ণ বাজেট তৈরী করছে সফলতা ও দক্ষতার সাথে। জনমুখি এজেন্ডা বাস্তবায়নে কাউন্সিলের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের পাশাপাশি নির্বাহী মেয়রের অফিসের একটি শক্তিশালী টিম কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছে।
মুখপাত্র আরো বলেন, জরুরী সেবা নিশ্চিতে রিজার্ভ থেকে অর্থ নেয়ার সাংবিধানিক নির্দেশনা রয়েছে। এখনো কাউন্সিলের ১১৫ মিলিয়ন পাউন্ড ফান্ড যথার্থভাবে বহাল আছে, এর সাথে থাকবে প্রায় ৫৬ মিলিয়ন পাউন্ড আনরেসটিকড ফান্ডও সংরক্ষিত রয়েছে। এছাড়া এতোসবের মধ্যেও সরকারের ফান্ডিং কাট অৰ্থাৎ আর্থিক সংকোচন পরিকল্পনার অংশ হিসেবে কাউন্সিলকে তিন বছরে সাশ্রয় করতে হবে প্রায় ৪৭ মিলিয়ন পাউন্ড। সুচিন্তিত পরিকল্পনার মাধ্যমে এরই মধ্যে প্রায় ১০ মিলিয়ন পাউন্ড সেইভিং নিশ্চিত হয়েছে। উল্লেখ্য মেয়র লুতফুর অতীতে প্রায় ১২৩ মিলিয়ন পাউন্ড সেইভিং করা সত্বেও জনগুরুত্বপূর্ন ও সকল জরুরি সেবা বহাল রাখেন এবার সবকিছু ঠিক থাকবে, আরো কিছু নতুন ও সময়োপযোগী কর্মসৃচীও বাস্তবায়ন হবে।
৮ মাসে ১৬ অর্জন:
মেয়র লুতফুর রহমান ও তার টিম-এর গত ৮ মাসে অর্জিত ১৬টি কার্যক্রম নিয়ে একটি ভিডিও প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো:
১) স্কুল হলিডে থাকাকালে নিম্ন আয়ের পরিবারের স্কুল স্টুডেন্টকে ১০০ পাউন্ড করে অনুদান প্রদান
২) রিস্ক অব প্রোভাটি লেভেলে আছেন সেইসব শিশুদেরও ১০০ পাউন্ড করে প্রদান
৩) ৭ হাজার পেশশনারকে ১০০ পাউন্ড করে প্রদান
৪) এ লেভেলে এডুক্যাশন মেইনটেন্সে এলাউন্স চালু
৫) ইউনির্ভাসিটি গ্রান্ট (প্রতি স্টুডেন্ট ১৫শ পাউন্ড) চালু
৬) প্রাইমারীর পাশপাপাশি সেকেন্ডারীতে ফ্রি স্কুল মিল চালু হবে
৭) হুইটনি মার্কেট আইডিয়া স্টোর আবারো চালু
৮) হাউজিং ম্যানেজম্যান্ট সার্ভিস ইন-হাউসে নিয়ে আসা
৯) সোস্যাল হাউজ নির্মানে সক্রিয়তা
১০) বিভিন্ন এলাকায় ফোড স্টোর চালু
১১) ৮শ ব্যবসার জন্য ২ মি পাউন্ডের রেইট রিলিফ
১২) ওয়ার্ম হাব চালুর মাধ্যমে অতি ঠান্ডায় মানুষজনকে কিছু সময়ের জন্য আশ্রয় দেয়া
১৩) এনার্জি ফান্ড-এর মাধ্যমে বিপন্ন পরিবারকে সহযোগিতা
১৪) সিসিটিভি-তে ২শ ২৫ হাজার পাউন্ড অতিরিক্ত বিনিয়োগ
১৫) মার্কেট এলাকায় ১ ঘন্টা ফ্রি পার্কিং সুবিধা এবং ছোট ছোট জোন বাতিল করে বড় ৪টি জোন এ গাড়ি পার্কিং সুবিধা
১৬) রাবিশ কালেকশনে জরুরী ব্যবস্থাপনা।
এছাড়াও মেয়র সপ্তাহে দুদিন সার্জারী পরিচালনা করছেন, বাজেট বরাদ্দ দিয়েছেন কমিউনিটি লেংগুয়েজ সার্ভিস আবারো চালু করার জন্য, বন্ধ হওয়া ওয়ান স্টপ শপ গুলো আবারো চালু হচ্ছে, চালু হবে ফ্যামেলি হাব।