ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধ: দখলকৃত শহগুলোতে নাগরিকদের রুশ পাসপোর্ট দেয়া হচ্ছে
বাংলা সংলাপ ডেস্কঃ দখলকৃত ইউক্রেনিয়ান দুটি শহরে স্থানীয় বাসিন্দাদের রুশ পাসপোর্ট দেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে রাশিয়ার কর্তৃপক্ষ।
সর্বপ্রথম দখলে নেয়া শহর দক্ষিণ ইউক্রেনের খেরসন এবং মেলিতোপোলে রাশিয়ান নাগরিক তৈরির চেষ্টাকে ‘রাশিফিকেশন’ হিসেবে উল্লেখ করে তার কঠোর নিন্দা জানিয়েছে ইউক্রেন।
পাসপোর্ট হস্তান্তর কার্যক্রম প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন খুব দ্রুততার সাথে করছেন।
রুশ সংবাদ সংস্থা তাস বলছে, শনিবার এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ২৩ জন খেরসনের অধিবাসীকে প্রথম রাশিয়ান পাসপোর্ট দেয়া হয়।
সংবাদ সংস্থাটি বলছে, রাশিয়ান পাসপোর্ট পাওয়ার জন্য হাজার হাজার ইউক্রেনিয়ান নাগরিক আবেদন করেছে।
তবে নিরপেক্ষ কোন সূত্র থেকে তাদের এই দাবি যাচাই করা সম্ভব হয়নি।
ইউক্রেনে রাশিয়া নিযুক্ত সামরিক গভর্নর ভলোদোমির সালদো বলেছেন, “খেরসনে আমাদের সকল কমরেড যত দ্রুত সম্ভব (রাশিয়ান) পাসপোর্ট এবং নাগরিকত্ব পেতে চান।”
রাশিয়ান কার্যক্রমকে নিজেদের আঞ্চলিক অখণ্ডতার “স্পষ্ট লঙ্ঘন” উল্লেখ করে ইউক্রেন তার কঠোর সমালোচনা করেছে।
ইউক্রেন বলছে, পুতিনের এই আদেশ আইনত অবৈধ।
এর আগে রাশিয়া ইউক্রেন থেকে ক্রাইমিয়াকে বিচ্ছিন্ন করেছে। দোনেৎস্ক এবং লুহানস্ক অঞ্চলকে পছন্দমতো ‘গন প্রজাতন্ত্রে’ পরিণত করেছে। রাশিয়ার এসব পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক সমালোচনার মুখে পড়েছে।
ইউক্রেনের কর্তৃপক্ষ এখন আশঙ্কা করছে যে এবারের হামলার পর দখল করে নেয়া অঞ্চলগুলোতেও একই প্রক্রিয়া চলছে।
স্থানীয়রা একবার রাশিয়ান নাগরিক হয়ে গেলে, তাদের ‘নিরাপত্তা’ দিতে হবে ক্রেমলিন এমন দাবি করতে পারবে।
অন্যদিকে খেরসনে ইউক্রেনের মুদ্রা হারিভনিয়ার বদলে রাশিয়ান রুবল ব্যাবহারের আদেশ অমান্য করছে ইউক্রেনিয়ান নাগরিকেরা।
ইউরোপের সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র সহ মেলিতোপোলের বেশিরভাগ অঞ্চল এখন রাশিয়ান সেনাদের দখলে।
ক্রাইমিয়া এবং দখলীকৃত ডনবাসে অঞ্চলে রুবল ব্যবহারে বাধ্য করেছে রাশিয়া।
স্থানীয় স্কুলগুলোতে রাশিয়ান শিক্ষাক্রম চালু করা হয়েছে।
এছাড়া সেখানে কিয়েভের নিয়োগ দেয়া কর্মকর্তাদের সরিয়ে দিয়েছে রাশিয়া।
নতুন করে দখল করা এলাকাতেও একই কাজ করেছে রাশিয়া।
ওদিকে ডনবাস ও সেভেরোদোনেৎস্ক অঞ্চলে ভয়াবহ লড়াই অব্যাহত রয়েছে।
লুহানস্ক অঞ্চলে কিয়েভের নিয়োগ দেয়া কর্মকর্তারা বলছেন, ইউক্রেনের সেনারা এখনো আযট রাসায়নিক প্ল্যান্টসহ সেখানকার শিল্পাঞ্চলের নিয়ন্ত্রণে রেখেছে।
তবে ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলের গভর্নর বলছেন, রাশিয়ার ক্রমাগত বোমা হামলার জবাব দিতে গিয়ে ইউক্রেনের সেনাদের সামরিক রশদ ফুরিয়ে আসছে।
মাইকোলাইভ অঞ্চলের ভিতালি কিম বলেছেন, রাশিয়ান সেনাবাহিনী অনেক বেশি শক্তিশালী।
তিনি পশ্চিমা মিত্রদের কাছে যত দ্রুত সম্ভব দূরপাল্লার কামান এবং গোলাবারুদ সরবরাহ করার আহবান জানিয়েছেন।
অন্যদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নে ইউক্রেনের সদস্যপদ বিষয়ে কথা বলতে প্রেসিডেন্ট ভলোদোমির জেলেনস্কির সাথে দ্বিতীয়বারের মতো সাক্ষাৎ করেছেন ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডার লিন।
তিনি বলেছেন, “আপনারা আইনের শাসনকে শক্তিশালী করার জন্য অনেক কিছু করেছেন কিন্তু এখনও বেশ কিছু সংস্কারের প্রয়োজন আছে। বিশেষ করে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করা।”
তিনি বলেন, ইউক্রেনকে প্রার্থীর মর্যাদা দেওয়া হবে কিনা সেনিয়ে ইইউ আগামী সপ্তাহে সিদ্ধান্ত নেবে। যা ইইউ সদস্য হওয়ার দীর্ঘ প্রক্রিয়ার পরবর্তী ধাপ।
যুক্তরাজ্যের সামরিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ইউক্রেনের বিরুদ্ধে স্থল হামলায় রাশিয়া ভারী জাহাজ বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র ব্যাবহার করছে, যা অত্যন্ত ভুল।
তারা মনে করছেন যে রাশিয়ার ক্রুজ মিসাইল এবং অন্যান্য উচ্চ প্রযুক্ত সম্পন্ন অস্ত্রের ঘাটতি দেখা দিয়েছে।