ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ছে করোনাভাইরাস, ইটালির কয়েকটি শহর অবরুদ্ধ
বাংলা সংলাপ ডেস্ক: ব্যাপক আকারে করোনাভাইরাস সংক্রমণ এতদিন চীনসহ প্রধানতঃ এশিয়াতেই সীমিত ছিল। কিন্তু এখন তা ছড়িয়ে পড়েছে ইউরোপে।
গত মাত্র কয়েকদিনের ভেতরে এই করোনাভাইরাস বা কোভিড নাইনটিন চীনের বাইরে দক্ষিণ কোরিয়ার দেগু, ইরানের কোম এবং ইটালির মিলান ও ভেনিস সংলগ্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে।
ফলে এই ভাইরাস সংক্রমণ একটা আন্তর্জাতিক চেহারা নিচ্ছে – যা নিয়ে গতকালই উদ্বেগ প্রকাশ করে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা।
সংস্থাটি বলছে, চীনের সাথে কোন স্পষ্ট যোগাযোগ নেই এমন সব জায়গায় কিভাবে করোনাভাইরাস ছড়াচ্ছে – তা নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন।
করোনাভাইরাস সংক্রমণ ইউরোপে
এক নজিরবিহীন অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে ইটালিতে। ইটালিতে এ পর্যন্ত একশ’ জনেরও বেশি লোক করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হবার খবর নিশ্চিত করা হয়েছে এবং দুজন মারা গেছেন।
মিলান এবং ভেনিস শহরের কাছে দুটি উত্তরাঞ্চলীয় এলাকাকে করোনাভাইরাস সংক্রমণের হটস্পট বলে চিহ্নিত করা হয়েছে।
ভেনেতো এবং লোম্বার্ডি অঞ্চলের একাধিক শহরে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, আগামী দু’সপ্তাহ কর্তৃপক্ষের বিশেষ অনুমতি ছাড়া কেউ সেখানে ঢুকতে বা বেরুতে পারবে না। এর আওতায় পড়বে অন্তত ৫০ হাজার লোক।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের জন্য এই প্রথম একটি ইউরোপীয় দেশে গোটা শহর অবরুদ্ধ করার ঘটনা ঘটলো।
ইটালির প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এই চলাচলের ওপর এই নিষেধাজ্ঞা অন্তত ১৪ দিন বহাল থাকবে এবং তা কার্যকর করতে পুলিশ এবং প্রয়োজনে সেনাবাহিনীকেও ব্যবহার করা হবে।
বন্ধ করে দেয়া এলাকার বাইরেও বহু স্কুল ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয়েছে, শীর্ষস্থানীয় ফুটবল লিগ সিরি-আ’র কয়েকটি ম্যাচ সহ বেশ কিছু খেলা বাতিল করা হয়েছে।
মিলান শহরের দক্ষিণ-পশ্চিমে একটি অঞ্চলে ভাইরাস সংক্রমণের কারণে লোকজনকে ঘরে থাকতে বলা হয়েছে।
দক্ষিণ কোরিয়া
দক্ষিণ কোরিয়ায় ইতিমধ্যে আক্রান্ত হয়েছে ৫ শতাধিক লোক – মারা গেছেন ৫ জন।
কর্তৃপক্ষ বলছে শনিবার পর্যন্ত নিশ্চিতভাবে যারা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন তাদের অধিকাংশই শিনচিওঞ্জি নামে একটি খ্রিষ্টান গোষ্ঠীর সদস্য।
বলা হচ্ছে দেগু এবং চোংডোতে এই ধর্মীয় গোষ্ঠীর কয়েকশ সদস্য ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার উপসর্গের কথা জানানোর পরই তাদের অনেকের শরীরেই প্রথম করোনাভাইরাস পাওয়া যায়।
জানা গেছে, চোংডোতে দিন পনের আগে শিনচিওঞ্জি সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতার ভাইয়ের মৃত্যুর শেষকৃত্যে কয়েক হাজার মানুষ অংশ নেন।
তারপরই ঐ সম্প্রদায়ের পাঁচশরও বেশি অনুসারী ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার নানা উপসর্গের কথা জানায়।
সরকার এই গোষ্ঠীর নয় হাজারেরও বেশি সদস্যকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ঘরের মধ্যে থাকার নির্দেশ দিয়েছে।
ইরান
অন্যদিকে ইরানে এ পর্যন্ত প্রায় ৩০ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন, তার মধ্যে মারা গেছেন ৭ জন।
সংক্রমণের কেন্দ্রে আছে পবিত্র নগরী কোম এবং সেখানে তীর্থযাত্রা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
ইরানের ১৪টি প্রদেশে স্কুল, বিশ্ববিদ্যালয় এবং সাংস্কৃতিক কেন্দ্র বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
চীন
অন্যদিকে যেখান থেকে করোনাভাইরাস সংক্রমণের সূচনা, সেই চীনে প্রতিদিনই আক্রান্ত এবং মৃতের সংখ্যা বাড়ছে।
সবশেষ হিসেবে আক্রান্তের সংখ্যা এখন প্রায় ৭৭ হাজার এবং এতে মৃত্যু হয়েছে ২ হাজার ৪শ’ জনেরও বেশি।
বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার হিসেব অনুযায়ী এ পর্যন্ত চীনের বাইরে ২৬টি দেশে ১২শ-রও বেশি করোনাভাইরাস সংক্রমণ চিহ্নিত হয়েছে ।
তবে চীনের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ শনিবার বলেছিল, নতুন আক্রান্তের সংখ্যা এবং মৃত্যুর তুলনামূলক হার কমে এসেছে।
জাপান উপকুলে কোয়ারেন্টিন থাকা ডায়মন্ড প্রিন্স নামে প্রমোদতরীতে আছে ৬০০ আক্রান্ত ব্যক্তি।