ইডেনে শুধুই ক্যারিবিয় উৎসব
বাংলা সংলাপ ডেস্ক:
অবিশ্বস্য নাটকীয়তার ম্যাচে ৪ উইকেটে ইংলিশদের হারিয়ে দ্বিতীয়বারেরমত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শিরোপা জিতে নিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এছাড়া টানা তিনবারের চ্যম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়াকে হটিয়ে টি২০ নারী বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ণ হয়েছেন ক্যারিবিয় নারী দল। কলকাতার ইডেন গার্ডেনে আজ শুধুই ক্যারিবিয় উৎসব!
ফাইনলের মতই হলো ফাইনাল। শেষ ওভারের আগ পর্যন্তও বলা যায়নি আসলে কে জিতবে। নিঃসন্দেহে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের সেরা দুটি দল মুখোমুখি হয়েছিল ফাইনালে। টান টান উত্তেজনা। কে জিতবে কেউ বলতে পারে না। এ
জয়ের জন্য শেষ ওভারে প্রয়োজন ছিল ১৯ রান। বোলার বেন স্টোকস। ব্যাটসম্যান কার্লোস ব্র্যাথওয়েট এবং মারলন স্যামুয়েলস। স্ট্রাইবে ব্র্যাথওয়েট। ওয়েস্ট ইন্ডিজের জয়ের আশা ছেড়েই দিয়েছিলেন অনেকে। কিন্তু প্রথম চার বলে চারটি ছয় মেরে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে দারুণ এক জয় এনে দিলেন কার্লোস ব্রেথওয়েট।
কলকাতার ইডেন গার্ডেন্স যেন তখন ছক্কাময়। কার্লোসের শেষ ছক্কা গ্যালারিতে আছড়ে পড়ার আগেই ভোঁ দৌড় স্যামি-গেইলদের। মাঠের মধ্যেই উল্লাসে ফেটে পড়লেন ক্যরিবীয়রা। ওয়েস্ট ইন্ডিজের পুরুষ ক্রিকেটারদের সঙ্গে তখন নারী ক্রিকেটাররাও মেতে উঠলেন আনন্দ আর উল্লাসে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্যালিপসো সুরে মাতোয়ারা তখন পুরো ইডেন গার্ডেন্স।
বিকেলেই অস্ট্রেলিয়ারে রাজত্ব ভেঙে নারী ক্রিকেটের শিরোপা জিতেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের নারী ক্রিকেট দল। এ বছরই বাংলাদেশ থেকে অনুর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের শিরোপা জিতে নিয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের যুবারা। বছরটা যেন ক্যারিবিয়ান বিপ্লবের বছরই। তিনটি বিশ্বকাপ উঠলো তাদের ঘরে।
কলকাতার ইডেন গার্ডেনের উইকেট যে সত্যি সত্যি প্রথম থেকে রহস্যময় আচরণ করছিল তার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটিংয়ের শুরু থেকে। ১৫৫ রান যে ক্যারিবীয়দের জন্য বেশ কঠিন হবে তা বোঝাই যাচ্ছিল। কিন্তু মারলন স্যমুয়েলসের অতি মানবীয় ৬৬ বলে ৮২ এবং কার্লোস ব্র্যাথওয়েটের ১০ বলে ৩৪ রানের ওপর ভর করে ২ বল হাতে রেখেই শ্বাসরূদ্ধকর জয়টি পেয়ে গেলো ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
সুপার টেনে এই ইংল্যান্ডের বিপক্ষেই ১৮৩ রান তাড়া করতে নেমে গেইলের ঝোড়ো সেঞ্চুরিতে ১১ বল আগেই জিতে গিয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সেক্ষেত্রে ফাইনালে ১৫৬ রানের লক্ষ্য ক্যারিবীয়দের জন্য খুব বড় হওয়ার কথা নয়। কিন্তু ফাইনাল বলে কথা। তাই তো ১৫৬ রান তাড়া করতে নেমে ১১ রান তুলতেই নেই ৩ উইকেট! চতুর্থ উইকেটে ৭৫ রানের জুটি গড়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছিলেন মারলন স্যামুয়েলস ও ডোয়াইন ব্রাভো।
ব্যাট হাতে ৫৪ রানের লড়াকু ইনিংস খেলার পর বল হাতেও দারুণভাবে জ্বলে উঠেছেন জো রুট। দ্বিতীয় ওভারে বল করতে এসে আউট করেছেন দুই ওপেনার চার্লস ও গেইলকে। ১ রান করে ফিরেছেন চার্লস। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে শতক হাঁকানো গেইল ফাইনালে করতে পেরেছেন মাত্র ৪ রান। সেমিফাইনালের নায়ক সিমন্সও বেশিক্ষণ থাকতে পারেননি উইকেটে। তৃতীয় ওভারে ডেভিড উইলির শিকার হয়ে সাজঘরে ফিরেছেন রানের খাতা না খুলেই।
এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে শুরুতে ইংল্যান্ডও পড়েছিল চাপের মুখে। ২৩ রান সংগ্রহ করতেই হারিয়েছিল তিনটি উইকেট। তবে জো রুট, জস বাটলার ও ডেভিড উইলির ব্যাটে ভর করে স্কোরবোর্ডে জমা করেছে ১৫৫ রান। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৫৪ রান করেছেন দারুণ ফর্মে থাকা রুট। ৩৬ রান এসেছে বাটলারের ব্যাট থেকে। আর ১১১ রানে ৭ উইকেট হারানোর পর ডেভিড উইলি খেলেছেন ২১ রানের গুরুত্বপূর্ণ একটি ইনিংস। ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে তিনটি করে উইকেট নিয়েছেন ডোয়াইন ব্রাভো ও কার্লোস ব্রেথওয়েট।
এর কয়েক ঘন্টা আগেই মেয়েদের টি২০ বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার নারী ক্রিকেটারদের হারিয়ে বিজয় উৎসবে মেতেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মেয়েরা। তিন বারের চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়ার দেয়া ১৪৮ রানের জবাবে ৩ বল ও ৮ উইকেট হাতে রেখেই জয়ের স্বাদ নেয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ নারী দল।