ইতালিতে মাফিয়াদের বিরুদ্ধে লড়েছিলেন যে বাঙালীরা

Spread the love

বাংলা সংলাপ ডেস্কঃ অভিবাসীরা যে দেশে যায়, তারা সে দেশের ওপর বোঝা হয়ে দাঁড়ায় বলেই একটা ধারণা প্রচলিত।

কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অভিবাসীরাও সে দেশের সমাজ জীবনে নানা ধরনের ইতিবাচক ভূমিকা রাখেন, যা নিয়ে প্রচার খুব হয় কমই।

তেমনি একটি ঘটনা ঘটিয়েছেন ইতালির সিসিলি দ্বীপের শহর পালেরমোতে বাংলাদেশি এবং অন্যান্য অভিবাসীরা।

সেখানে তারা ইতালির কুখ্যাত অপরাধী চক্র মাফিয়ার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দাঁড়িয়েছিলে। এর জেরে বহু মাফিয়া সদস্যকে আটক করে বিচার করা হয়।

আজ বিশ্ব অভিবাসী দিবসে সেই গল্পই বলছিলেন ইতালির পালেরমো ব্যবসায়ী আশরাফ উদ্দিন।

শুরুর দিকে যেভাবে নির্যাতিত হয়েছেন

তিনি বলছেন, “প্রথম যখন এখানে আমরা আসছিলাম, তখন আমরা সংখ্যায় কম ছিলাম। তখন বাঙালিরা এখানে খুব একটা প্রতিষ্ঠিত ছিল না। ওরা বিভিন্ন সময় আমাদের ছিনতাই করতো, রাস্তাঘাটে মারত, এরকম ঘটনাগুলো ঘটতো।”

যখন নির্যাতনের শিকার হতেন তখন তারা বিদেশের মাটিতে সংখ্যায় কম ছিলেন বলে কিছু বলতে পারতেন না। বিশেষ করে মাফিয়াদের বিরুদ্ধে লড়াই করার সাহস তাদের ছিল না।

স্থানীয়রা অপেক্ষাকৃত শক্তিশালী ছিল তাই তাদের বদলে বিদেশের মাটিতে দুর্বল অবস্থায় থাকা মানুষদের মাফিয়ারা টার্গেট করতো। তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে মাফিয়ারা চাঁদাবাজি করতো।

আশরাফ উদ্দিন বলছেন, “২০০০ সালের পর থেকে আমরা বাঙালিরা যখন একটু সামনে এগুতে থাকলাম, তখন ওরা আমাদের পিছু নিলো। তারা দোকান এসে বলতো একটা অনুষ্ঠান করবো বা গির্জার জন্য টাকা তুলছি। এইরকম সমস্যাগুলো করতো ওরা।”

ইতালি জুড়েই অনেক বাংলাদেশিদের বাস।
ইতালি জুড়েই অনেক বাংলাদেশিদের বাস।

লড়াইটা কীভাবে শুরু হয়েছিল?

মাফিয়া শব্দটির সাথে হয়ত অনেকেই পরিচিত। ইতালির সংঘবদ্ধ অপরাধী এই চক্র তাদের অপরাধী কর্মকাণ্ডের জন্য বিশ্বব্যাপী কুখ্যাত।

কোন বিবাদকে কেন্দ্র করে পুরো পরিবার বা বিপক্ষ গোষ্ঠীকে খুন করে ফেলা যেন তাদের সংস্কৃতির একটা অংশ ছিল।

অনেক চলচ্চিত্র বা টিভি সিরিজের চরিত্র করা হয়েছে এই মাফিয়াদের। যাদের জন্মই ইতালির সিসিলিতে।

মাফিয়াদের মতো এত শক্তিশালী অপরাধী চক্রের বিরুদ্ধে তাদের প্রতিষ্ঠাস্থল এবং অপরাধী কর্মকাণ্ডের একদম কেন্দ্র সিসিলির মতো যায়গায় কিভাবে এই অভিবাসী বাঙালীরা জোট বেধেছিলেন?

মি. উদ্দিন বলছেন, “সেটা একদিনে হয়েছে বিষয়টি তেমন নয়। ওখানে স্থানীয় কিছু সংগঠন আছে যারা মাঝে মাঝে আমাদের খোঁজ খবর নিতো। জানতে চাইতে কেউ আমাদের সমস্যা করে কিনা। তখন আমরা বিষয়টা ওদের বললাম। ওরা আমাদের মামলা করতে বলেছিল। তারা বলেছিল মামলা করলে আমরা তোমাদের সাথে থাকবো।”

মি. উদ্দিন বলছেন, ঠিক এরকম সময় একদিন একজন আফ্রিকান লোককে মাফিয়ারা প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করেছিলো। সেসময় সেখানে বেশ বিক্ষোভ হয়েছিলো এবং গণমাধ্যমের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলো বিষয়টি।

অনেক চলচ্চিত্র বা টিভি সিরিজের চরিত্র করা হয়েছে এই মাফিয়াদের।
অনেক চলচ্চিত্র বা টিভি সিরিজের চরিত্র করা হয়েছে এই মাফিয়াদের।

এই প্রেক্ষাপটে পুলিশ তাদের উপর ধরপাকড় শুরু করেছিলো এবং মাফিয়ারাও কোণঠাসা হয়ে পড়েছিলো।

সেটাই ছিল অভিবাসীদের সামনে এগুনোর সময়। তখন সেখানকার ব্যবসায়ীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে চাঁদাবাজির মামলা করেছিলেন।

মাফিয়াবিরোধী সংগঠন ও অভিবাসীদের সহায়তা করে এমন সংগঠনের সহায়তায় এই মামলা হয়েছিলো।

মামলার সময় তাদের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিলো যে তাদের নাম পরিচয় গোপন রাখা হবে।

আদালতেও যখন শুনানি হয়েছে তখন দু পক্ষকে মুখোমুখি করা হয়নি। সেজন্যেই কারোর বিরুদ্ধে কোন প্রতিশোধমূলক কিছু করতে পারেনি তখন মাফিয়ারা।

এখন কী পরিস্থিতি

ইতালি বাংলাদেশিদের জন্য খুব জনপ্রিয় গন্তব্য। দেশের অনেক জেলা আছে যেখানে আগে যাওয়া আত্মীয়দের হাত ধরে পরে আরও অনেকেই ইতালি গেছেন। পালেরমোতে ১৫ হাজারের মতো বাংলাদেশির বাস।

মি. আশরাফ বলছেন, “মাফিয়া বিষয়টি সেরকম আর নেই। তার কারণ বয়স্করা বেশিরভাগ মারা গেছে। আর অন্যদের মধ্যে বেশিরভাগই জেলে আছে। মাফিয়াদের উৎপাত নেই। আমরা অনেক শান্তিতে আছি।”


Spread the love

Leave a Reply