ইরানের প্রেসিডেন্ট রাইসির হেলিকপ্টার দুর্ঘটনার কবলে
ইরানের প্রেসিডেন্ট এব্রাহিম রাইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টার দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে বলে দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম রিপোর্ট করছে।
ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম বলছে রোববার রাইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি বেশ বিপজ্জনকভাবে অবতরণ করেছে বলে জানা গিয়েছে।
দুর্ঘটনাকবলিত হেলিকপ্টারে মি. রাইসির সাথে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমিরাবদুল্লাহিয়ান ছিলেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তাদের সাথে ইরানের সর্বোচ্চ নেতার প্রতিনিধি আয়াতুল্লাহ মোহাম্মদ আলী আলে-হাশেম থাকতে পারেন বলে সংবাদ সংস্থা রয়টার্স ইরানের সরকারি বার্তা সংস্থা আইআরএনএ-র বরাতে জানিয়েছে।
ইরানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আমির ওয়াহিদি স্থানীয় গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন উদ্ধারকারী দল ঘটনা স্থলে পৌঁছানোর চেষ্টা করছে, তবে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে কিছুটা সময় লাগতে পারে।
দুর্ঘটনাকবলিত হেলিকপ্টারটির সাথে এখনং পর্যন্ত কোনং যোগাযোগ স্থাপন করা যায়নি। তাই সেখানে আরোহীদের কী অবস্থা তা জানা যায়নি।
স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট রাইসি আজারবাইজানের সীমান্তের কাছে কিজ কালাসি এবং খোদাফারিন বাঁধ দুটো উদ্বোধন করেন। সেখান থেকে ফিরে তিনি ইরানের উত্তর-পশ্চিমে তাবরিজ শহরের দিকে যাচ্ছিলেন।
ফার্স নিউজ এজেন্সির এক প্রতিবেদকের মতে, হেলিকপ্টারটি যেখানে অবতরণ করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে সেখানে ভারী কুয়াশা থাকায় অনুসন্ধান অভিযান চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে।
তিনি বলেন, পাহাড় ও জঙ্গলে ঘেরা ওই এলাকার দৃষ্টিসীমা মাত্র পাঁচ মিটারে নেমে এসেছে।
এলাকাটির অবস্থান তাবরিজের উত্তরে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে।
তাবরিজ শহরের ইরানি পার্লামেন্ট সদস্য আহমেদ আলিরেজবেগি তেহরানে সাংবাদিকদের বলেছেন, উদ্ধারকর্মীরা এখনও প্রেসিডেন্টকে বহনকারী হেলিকপ্টারটির অবস্থান খুঁজে পাননি।
তবে প্রেসিডেন্টের বহরের অন্য দুটি হেলিকপ্টার নিরাপদে অবতরণ করেছে।
পূর্ব আজারবাইজানের ডেপুটি গভর্নর ফর ডেভেলপমেন্ট আলি জাকারি স্থানীয় গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন যে, “ওই বহরে তিনটি হেলিকপ্টার ছিল এবং অন্য দুটি নিরাপদে অবতরণ করতে পেরেছে। একটি বিধ্বস্ত হয়েছে।”
নিরাপদে ফেরা হেলিকপ্টারে জ্বালানি মন্ত্রী আলী আকবর মেহরাবিয়ান এবং আবাসন ও পরিবহনমন্ত্রী মেহরদাদ বজরপাশ ছিলেন।
ইরানের আধা সরকারি তাসনিম নিউজ এজেন্সি বলছে, হেলিকপ্টারের ভেতরে প্রেসিডেন্টের সাথে থাকা লোকজন জরুরি কল করতে সক্ষম হয়েছিলেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী স্থানীয় গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন যে হেলিকপ্টারের সাথে রেডিও যোগাযোগ করা হয়েছিল, তবে তিনি এর বাইরে আর কোনও ব্যাখ্যা দেননি।
ইরানের রেড ক্রিসেন্ট ঘোষণা করেছে যে দুর্ঘটনাস্থলে উদ্ধারকারী দল পাঠানো হয়েছে।
রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের ফুটেজে উঠে এসেছে পবিত্র নগরী মাশহাদে মুসল্লিরা প্রেসিডেন্টের সুস্থতার জন্য প্রার্থনা করছেন।
আধা-সরকারি ফার্স বার্তা সংস্থা এই প্রতিবেদনের পর ইরানিদের প্রেসিডেন্ট রাইসির জন্য প্রার্থনা করার আহ্বান জানিয়েছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আহমেদ ওয়াহিদি রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনকে জানিয়েছেন যে কর্তৃপক্ষ আরও বিস্তারিত ব্যাখ্যার জন্য অপেক্ষা করছে।
প্রেসিডেন্ট ও তার দলকে কোন মডেলের কপ্টার বহন করছিল সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
এব্রাহিম রাইসি একদিন আগে প্রতিবেশী আজারবাইজানে ছিলেন। তিনি দেশটির প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভের সাথে একটি বাঁধ উদ্বোধন করতে গিয়েছিলেন।
৬৩ বছর বয়সী রাইসি ২০২১ সালে দ্বিতীয় প্রচেষ্টায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন এবং দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে দেশটির মরালিটি বা নৈতিকতা বিষয়ক আইন কঠোর করার নির্দেশ দেন।
তাকে একজন কট্টরপন্থী ধর্মীয় নেতা হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
এ কারণে তিনি সরকার বিরোধী ব্যাপক বিক্ষোভের মুখেও পড়েছেন।
বিশ্বের শক্তিধর দেশগুলোর সাথে পারমাণবিক আলোচনায় তিনি কঠোর চাপ সৃষ্টি করেছিলেন।
অনেকে মনে করেন তিনি ইরানের সর্বোচ্চ নেতা হিসেবে আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির উত্তরসূরি হওয়ার জন্য নিজেকে তৈরি করছেন।
২০১৯ সালে সর্বোচ্চ নেতা তাকে বিচার বিভাগের প্রধানের শক্তিশালী পদে নিযুক্ত করেন।
মি. রাইসি বিশেষজ্ঞদের অ্যাসেম্বলির ডেপুটি চেয়ারম্যান হিসেবেও নির্বাচিত হন। ইরানে ৮৮-সদস্যের এই বোর্ড দেশটির পরবর্তী সর্বোচ্চ নেতা নির্বাচন করে থাকে।