ইরানে মুক্তি পাচ্ছে চলচ্চিত্র ‘মুহাম্মদ’ (স.)
বাংলা সংলাপ ডেস্কঃ এবার চলচ্চিত্রের পর্দায় ফুটে উঠবে ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের মহানবী হজরত মুহাম্মদ (স.)-এর অবয়ব। সেখানে দেখা যাবে তাঁর হাঁটাচলার দৃশ্য। এতদিন যা শুধু নিজেদের কল্পনায় এঁকেছেন বিশ্বের মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ, সেসব দৃশ্যই চলচ্চিত্রের মাধ্যমে এখন ঘরে বসে দেখতে পাবেন তাঁরা। তবে কেবলমাত্র মহানবীর ১২ বছর বয়স পর্যন্ত জীবনের কাহিনীই দেখা যাবে ‘মুহাম্মদ’ (স.) নামের চলচ্চিত্রটিতে।
চলচ্চিত্রটি যিনি নির্মাণ করেছেন তিনি হলেন ইরানের বিখ্যাত নির্মাতা মাজিদ মাজিদী। সাড়াজাগানো চলচ্চিত্র ‘চিলড্রেন অব হ্যাভেন’ আর ‘কালার অব প্যারাডাইস’ নির্মিত হয়েছে যাঁর হাত দিয়ে।
মুহাম্মদ (স.) নামে এই ধর্মীয় মহাকাব্যিক চলচ্চিত্রটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে মুক্তি দেওয়া হবে। ইরানের অষ্টম শিয়া ইমাম রেজা (আ.)-এর জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আগামী ২৬ আগস্ট দেশটিতে মুক্তি পাবে ছবিটি। পরদিন অর্থাৎ ২৭ আগস্ট থেকে কানাডায় শুরু হওয়া মন্ট্রিয়াল ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে হবে ছবিটির আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী।
এদিকে মুক্তির আগেই নানা বিতর্ক জন্ম দিয়েছে চলচ্চিত্র ‘মুহাম্মদ (স.)’। কারণ এর আগে এভাবে হজরত মুহাম্মদ (স.)-এর চরিত্র সরাসরি চিত্রায়ণ করে ছবির পর্দায় দেখানো হয়নি। যদিও পুরো ছবিজুড়ে শুধু মুহাম্মদ (স.)-এর চরিত্রটির শরীরের পেছনের অংশ দেখানো হয়েছে। তবু তা নিয়েই চলেছে নানা সমালোচনা।
উইকিপিডিয়ার তথ্যমতে, গত ফেব্রুয়ারি মাসে ইরানকে ছবিটি নিষিদ্ধ করতে আহ্বান জানায় মিসরের আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
তবে তুরস্কের সংবাদমাধ্যম ডেইলি সাবাহকে মাজিদ মাজিদী বলেন, ‘এই চলচ্চিত্র নির্মাণ শুরুর আগে প্রায় দুই বছর ধরে গবেষণা করা হয়েছে। পর্দায় মুহাম্মদ (স.)-কে চিত্রায়ণ করতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বেশ কয়েকজন শিয়া ও সুন্নি পণ্ডিতের সঙ্গে আলোচনা করেছি। যারা ইসলাম নিয়ে সহিংসতা করে তাদের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান নেওয়া উচিত। বর্তমান সময়ে এটা করার জন্য চলচ্চিত্রই সবচেয়ে বড় মাধ্যম বলে আমি বিশ্বাস করি। আমি মুসলিম বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। আমরা একসঙ্গে কাজ করতে পারি এবং চলচ্চিত্র খাতে আরো অবদান রাখতে পারি।’
ছবিটি মুক্তির আগেই এটি দেখেছেন তুরস্কের চার সদস্যের একটি দল। কান চলচ্চিত্র উৎসবের জন্য পাঠানো এই ছবিটি দেখে ওই চারজনের একজন লেখক ইহসান কাবিল পরিচালক মাজিদীকে সাহসী বলে আখ্যা দিয়েছেন। কাবিল বলেন, ‘পরিচালক পবিত্র কোরআনের আয়াতের ওপর ভিত্তি করে ছবিটি নির্মাণ করেছেন। পরবর্তীকালে যদি কেউ মুহাম্মদ (স.)-এর ওপর ছবি নির্মাণ করতে চান, তাহলে তা এই ছবিকে প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করে হতে পারে। পুরো ছবিতে মূল চরিত্রটির পেছনের অংশ ক্যামেরায় ধারণ করা হয়েছে।’
এ ছাড়া ছবির বেশকিছু দৃশ্য ধারণের ভূয়সী প্রশংসা করেন কাবিল। তিনি বলেন, ‘কিছু সন্ধ্যার দৃশ্য ধারণ করা হয়েছে যা এককথায় অসাধারণ। এ ছাড়া কাবাঘরকে মূল করে একটি দৃশ্য আছে, সেটিও দারুণ।’ তবে এসবের পরেও এই ছবিকে শিশুতোষ চলচ্চিত্র বলতে নারাজ কাবিল।
মাজিদীর কাছ থেকে ছবিটি কিনে নিয়ে নিজেদের দেশে প্রদর্শনের জন্য আগ্রহী হয়েছে বেশকিছু মুসলিম দেশ। ছবি মুক্তির ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি ছবিটির বিভিন্ন দৃশ্যের বেশকিছু স্থিরচিত্র প্রকাশ করেছে ছবিটির প্রযোজনা সংস্থা।
আজারবাইজান-ভিত্তিক অনলাইন নিউজ পোর্টাল নিউজ এজেড জানায়, ছবিটিতে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (স.) এর জীবনের প্রথমভাগের বিভিন্ন অংশ তুলে ধরা হয়েছে। ১৭১ মিনিট দৈর্ঘ্যের এই ছবিটি সম্পূর্ণ করতে মাজিদী ও তাঁর দলের সময় লেগেছে পাক্কা পাঁচ বছর। ছবির পেছনে খরচ করা হয়েছে ৫৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি অর্থ। আর বলা হচ্ছে এটি ইরানের ইতিহাসে সবচেয়ে ব্যয়বহুল ছবি।
মোহাম্মদ মেহেদি হেইদারিয়ান প্রযোজিত এই ছবির দৃশ্য ধারণ করা হয়েছে ইরান ও দক্ষিণ আফ্রিকার শহর বেলা-বেলাতে।
বিরাট বাজেটের এই ছবিতে কাজ করেছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কারিগরি বিষয়ে অভিজ্ঞ ব্যক্তিরা। যেমন– সিনেমাটোগ্রাফি করেছেন ইতালির ভিট্টোরিও স্টোরারো, এডিটিং করেছেন ইতালির রবার্টো পেরপিগনানি, স্পেশাল ইফেক্টের কাজ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের স্কট ই এন্ডারসন, মেকআপ করেছেন ইতালির গায়ানেট্টো ডি রোসি এবং সংগীত সংযোজনে কাজ করেছেন ভারতের এ আর রহমান।
ছবিতে অভিনয় করেছেন সারাহ বায়াত, মোহসেন তানাবানদেহ, মাহদি পাকদেল, রা’না আজাদিভার, আলি রেজা সুজা নুরি, মোহাম্মদ আজগারি, মিনা সাদাতিসহ ইরানের বিখ্যাত সব অভিনয়শিল্পীরা। ফার্সি, আরবি ও ইংরেজি এই তিন ভাষায় মুক্তি পাবে ছবিটি।
ইরানের পরিচালক, প্রযোজক এবং চিত্রনাট্যকার মাজিদ মাজিদীর ঝুলিতে রয়েছে বহু আন্তর্জাতিক পুরস্কার। ১৯৯৯ সালে অস্কার পুরস্কারের বিদেশি ভাষার চলচ্চিত্র হিসেবে প্রথম ইরানি ছবি হিসেবে মনোনয়ন পায় তাঁর ছবি ‘চিলড্রেন অব হেভেন’। এ ছাড়া ২০০০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সেরা ১০ ছবির তালিকায় ছিল মাজিদীর আরেক ছবি ‘কালার অব প্যারাডাইস’।