উপসাগরে ব্রিটিশ পতাকাবাহী ট্যাংকার আটক করলো ইরান
বাংলা সংলাপ ডেস্কঃপারস্য উপসাগরে ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনী একটি ব্রিটিশ পতাকাবাহী তেল ট্যাংকার আটক করার ঘটনায় ব্যাপক কূটনৈতিক তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।
এ মাসের প্রথম দিকে সিরিয়ায় ইরানি তেল নিয়ে যাচ্ছে এই সন্দেহে একটি ট্যাঙ্কারকে জিব্রাল্টার উপকূলে আটক করেছিল ব্রিটেন, এবং সেসময় এর প্রতিশোধ নেওয়ার হুমকি দিয়েছিল তেহরান। তখন থেকেই বিশ্লেষকরা আশংকা করছিলেন যে এরকম কিছু ঘটতে পারে।
ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভিদ জারিফ এক টুইটে বলেছেন, ব্রিটেনকে আমেরিকার ‘অর্থনৈতিক সন্ত্রাসবাদের’ সঙ্গী হবার পথ ছাড়তে হবে। তিনি ব্রিটেন জিব্রাল্টারে যা করেছে তাকে ‘জলদস্যুতা’ বলেও আখ্যায়িত করেন।
ইরানি রাষ্ট্রীয় বার্তা বলছে, বিপ্লবী গার্ডদের আটক করা জাহাজটির বিরুদ্ধে ‘আন্তর্জাতিক সমুদ্র আইন ভঙ্গের অভিযোগ আনা হয়েছে।’
ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেরেমি হান্ট এর তীব্র নিন্দা জানিয়ে সতর্ক করে দিয়েছেন, ইরান ‘বিপজ্জনক পথ নিয়েছে’ এবং ব্যাপারটা দ্রুত নিষ্পত্তি না হলে ইরানের জন্য তা গুরুতর পরিণতি নিয়ে আসবে।
তবে তিনি বলেছেন, ব্রিটেন ইরানের বিরুদ্ধে কোন সামরিক পদক্ষেপ নেবে না, কূটনৈতিক পথেই সমাধানের চেষ্টা করা হবে।
ব্রিটেন ছাড়াও জার্মানি ও ফ্রান্স জাহাজটি ছেড়ে দেবার দাবি করেছে। ব্রিটিশ সরকার তাদের জাহাজগুলোকে হরমুজ প্রণালী এড়িয়ে চলাচল করতে পরামর্শ দিয়েছে।
স্টেনা ইম্পেরো নামের ট্যাঙ্কারটির মালিক জানায়, শুক্রবার পারস্য উপসাগরের হরমুজ প্রণালী দিয়ে যাওয়ার সময় ইরানের রেভুলিউশনারি গার্ড তাদের জাহাজটিকে আটক করে নিয়ে গেছে ।
তার পর থেকে তারা ওই জাহাজের সাথে আর যোগাযোগ করতে পারছেন না। তবে জাহাজের ২৩ জন ক্রু সদস্য অক্ষত আছেন বলেই তারা খবর পেয়েছেন।
ব্রিটিশ সরকার বলছে, ইরানি জলসীমায় প্রবেশের আগেই তাদের তেল ট্যাঙ্কারটিকে চারটি জলযান ও একটি হেলিকপ্টার ঘিরে ফেলে ও আটক করে বন্দর আব্বাসে নিয়ে যায়।
ইরানি রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা বলছে, জাহাজটির সাথে মাছ ধরার একটি নৌকার সংঘর্ষ হয়েছিল, এর পর তাদের থামতে বলা হলেও ট্যাংকারটি সাড়া দেয় নি।
ইরনা বলছে, এর বিরুদ্ধে অন্তর্জাতিক সমুদ্র আইন ভঙ্গেরও অভিযোগ আনা হয়েছে।
জাহাজটিকে পরিচালনা করে যে সুইডিশ কোম্পানি তারা ইরানের এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলছে, ট্যাঙ্কারটিকে যখন নিয়ে যাওয়া হয় তখন সেটি আন্তর্জাতিক জলসীমার ভেতরেই ছিল।
এই ঘটনা এমন সময়ে ঘটলো যখন ইরানের সাথে যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের সম্পর্ক ক্রমশই খারাপ হচ্ছে।
হোয়াইট হাউজে জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের একজন মুখপাত্র বলছেন, এক সপ্তাহেরও বেশি সময়ের মধ্যে এরকম ঘটনা দ্বিতীয়বারের মতো ঘটলো। আর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, বিষয়টি নিয়ে তিনি ব্রিটেনের সঙ্গে কথা বলবেন।
বিপ্লবী গার্ড বাহিনী ব্রিটিশ পতাকাবাহী একটি তেলের ট্যাঙ্কার আটক করার পর ব্রিটিশ সরকার তাদের জাহাজগুলোকে হরমুজ প্রণালী এড়িয়ে চলাচল করতে পরামর্শ দিয়েছে।
আগে থেকেই আশংকা ছিল এরকম কিছু ঘটতে পারে
এর আগে ‘ইইউ নিষেধাজ্ঞা ভঙ্গ করে সিরিয়ায় ইরানি তেল নিয়ে যাচ্ছে’ এই সন্দেহে একটি ট্যাঙ্কার জিব্রাল্টার উপকূলে আটক করেছিল ব্রিটেন।
সেসময়ই এর প্রতিশোধ নেওয়ারও হুমকি দিয়েছিল তেহরান।
বিবিসির বিশ্লেষক জোনাথন মার্কাস বলছেন, এমন এক সময় এ ঘটনা ঘটলো যখন পারস্য উপসাগর এলাকায় পরিস্থিতি খুবই উত্তেজনাপূর্ণ।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যখন ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি বন্ধ করার লক্ষ্যে করা আন্তর্জাতিক চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাবার সিদ্ধান্ত নেন – তার পর থেকেই তার প্রশাসন আরো কিছু নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে।
ইরান এখন রুখে দাঁড়াবার চেষ্টা করছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্ররা মনে করে উপসাগরে বেশ কিছু নৌযানে লিম্পেট মাইন আক্রমণের পেছনে ইরানই আছে, যদিও ইরান তা অস্বীকার করে। তারা একটি মার্কিন চালকবিহীন বিমানও ভূপাতিত করেছে।
কয়েকদিন আগে যুক্তরাষ্ট্রও দাবি করে যে তারা একটি ইরানি ড্রোন গুলি করে ভূপাতিত করেছে, যা আবার ইরান অস্বীকার করেছে।
‘বেকায়দা অবস্থা’
বিবিসির বিশ্লেষক ফ্রাংক গার্ডনার বলছেন, পারস্য উপসাগরে যথেষ্ট ব্রিটিশ যুদ্ধজাহাজ নেই – যা তাদের পতাকাবাহী জাহাজকে সুরক্ষা দিতে পারে।
তবে সেখানে আমেরিকান যুদ্ধজাহাজ যথেষ্ট মোতায়েন আছে। কিন্তু সেখানেই সমস্যা। কারণ ইরানের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র, এবং ব্রিটেন ও ইউরোপ একই রকম অবস্থানে নেই।
যুক্তরাষ্ট্রকে ইরানের পরমাণু কর্মসূচির ব্যাপারে সম্পাদিত আন্তর্জাতিক চুক্তি থেকে বের করে এনেছে ট্রাম্প প্রশাসন। কিন্তু ইউরোপ চায় ওই চুক্তিটি যেন টিকে থাকে। তাই ইরানকে কিভাবে মোকাবিলা করা হবে, সে ব্যাপারে একটা বেকায়দা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
পরিস্থিতি কি শান্ত থাকবে?
বিশ্লেষক মার্কাস বলছেন, পরিস্থিতি শান্ত রাখা, সংঘাত এড়ানোই এখন সব চেয়ে বড় কাজ।
ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেরেমি হান্ট মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে কথা বললেও ইরানি প্রতিপক্ষের সাথে এখনো কথা বলতে পারেন নি। মনে করা হচ্ছে স্টেনা ইমপেরো জাহাজটি ছাড়িয়ে আনতে এরকম অনেক বৈঠক দরকার হবে।
তা ছাড়া গ্রেস ওয়ান নামে যে জাহাজটিকে ব্রিটেন জিব্রাল্টারের উপকুলে সিরিয়ায় ইরানি তেল নিয়ে যাবার অভিযোগে আটক করেছিল – সেটিও নিশ্চয়ই এ দরকষাকষিতে একটা বিষয় হয়ে উঠবে।
যেহেতু এটা জানা কথা যে ব্রিটিশ পতাকাবাহী জাহাজ ইরানি হুমকির মুখে আছে – তাই ব্যাপারটা যুক্তরাজ্যের জন্য লজ্জাজনক – বলছেন জোনাথন মার্কাস।
কারণ এ প্রশ্ন উঠবে যে ইরানি তেলবাহী জাহাজটি আটক করা উচিত হয়েছিল কিনা, এবং পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে উপসাগরে ব্রিটিশ জাহাজগুলোকে যথেষ্ট সুরক্ষা দেয়া হচ্ছিল কিনা।