একটি যুগসন্ধির পত্রিকা বাংলা সংলাপ
রায়হান আহমেদ তপাদার
বাংলা সংলাপ সাত পেরিয়ে আট বছরে পদার্পণ করছে আজ। উল্কার মতো হঠাৎ করেই সাত বছর আগে আবির্ভূত হয়েছিল নতুন প্রজন্মের এই সাপ্তাহিক পত্রিকাটি। পূর্বপ্রস্তুতি ছাড়া যাত্রা শুরু করলেও প্রবাসীদের ভরসার স্থল হিসেবে বেছে নিয়েছিল বাংলা সংলাপ। গত সাত বছরে প্রতি সপ্তাহে সম্প্রসারিত হয়েছে। প্রতিদিন আরও বেশি পাঠক জড়ো হয়েছেন বাংলা সংলাপের কাফেলায়। বাংলা সংলাপ পথচলার ক্ষেত্রে সত্যকে মিথ্যার সঙ্গে মিশ্রিত না করার ঐশী নির্দেশনাকে সর্বক্ষেত্রে অনুসরণ করেছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, গণতন্ত্র এবং সমৃদ্ধ দেশ গড়ার প্রত্যয়কে পাথেয় হিসেবে নিয়েছে। নেতিবাচক ধ্যান-ধারণাকে হটিয়ে সর্বক্ষেত্রে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় দেওয়ার চেষ্টা করেছে বাংলা সংলাপ।
অষ্টম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে বাংলা সংলাপ সম্পর্কে ব্যক্তিগত মূল্যায়ন: এতে কোন সন্দেহ নেই বাংলা সংলাপ প্রবাসের একটি সুনামধন্য পত্রিকা। বাংলা সংলাপের বিরুদ্ধে অভিযোগে যাওয়ার আগে,একটু প্রসংসা না করলেই নয়। বাংলা সংলাপ পত্রিকাকে এক কথায় স্বয়ং সম্পূর্ণ পত্রিকা বলা যায়। যাদের খেলার খবর পছন্দ, তারা নিশ্চিত বাংলা সংলাপকে এক নাম্বার পছন্দ হিসেবে নিবে। যারা বিজ্ঞাপনের জন্য পত্রিকা কিনেন, তাদেরও প্রথম পছন্দ বাংলা সংলাপই হবে। যারা কলাম পড়তে পত্রিকা কিনেন, তাদের বেশীর ভাগেরই বাংলা সংলাপই হবে প্রথম পছন্দ। সপ্তাহিক পত্রিকা হিসেবে বিনোদনেও বাংলা সংলাপ ফেলনা নয়। যারা তৈরী করা খবর পড়তে পছন্দ করেন, তাদেরও প্রথম পছন্দ বাংলা সংলাপ। সব মিলিয়ে বাংলা সংলাপ সেরার কাতারেই আছে। বাংলা সংলাপের সাংবাদিকরাও খুব বেশী খারাপ হওয়ার সুযোগ কম।কেননা, তিনির চেক এন্ড ব্যালেন্স বেশ শক্ত।
যেখানে, অন্য সব পত্রিকার সাংবাদিকরাই প্রকাশ্যে অনৈতিকতায় জড়িয়ে পরে, সেখানে বাংলা সংলাপের সাংবাদিকের মাঝে এটা বেশ সীমিত। কিন্তু, কর্পোরেট এই পত্রিকা সত্যি কি প্রবাস সেরা? তিনির নৈতিক অবস্থান কি সরল?তিনি কি সত্যি দেশ প্রেমিক?তিনি কি সত্যি নীতিতে অটল?বেশী দূরে যেতে হবে না, নিকট অতীত এবং বর্তমানের দিকে যদি নজর দেই,বাংলা সংলাপ বেশ রক্ষনশীর ভূমিকায় রয়েছে। এর পিছনে রয়েছে, টেলিকম বিজ্ঞাপন বন্ধ এবং সরকারী রোষানলে পরে, বিজ্ঞাপনের বাজার হারানোর হুমকীর প্রেক্ষিতে বাংলা সংলাপ,বেশ সরকারী পত্রিকা সূলভ আচরণ করছে। অর্থাৎ কড়া সরকার বিরোধী যেসব সংবাদ তিনি প্রকাশ করতেন,তার উপর সেলফ সেন্সরশীপ আরোপ করেছে।এটা শুধু বর্তমান বলে নয়,বাংলা সংলাপ যখনই বিপদে পড়েছে,১৮০ ডিগ্রি ঘুরে যেতে এক মিনিটও সময় নেয়নি। নীতিগতভাবে বাংলা সংলাপ যে কোন সরকার বিরোধী সংবাদই প্রকাশ করে। সে যে সরকারই ক্ষমতায় থাকুক না কেন। বাংলা সংলাপ নিজের স্বার্থে যে কোন কিছু করতে পারে, তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ তিনি নিজেই।
বাংলা সংলাপ এখনও বিদেশ সেরা পত্রিকা। এর পিছনে কিছু কারণের মাঝে অন্যতম, অন্য কোন পত্রিকা বাংলা সংলাপের মতো পেশাদারিত্ব এবং সংবাদপত্রের মান বজায় রাখেনি। বাংলা সংলাপ ছাড়া প্রথম সারীর প্রত্যেকটি পত্রিকা,কোন না কোন শিল্প গোষ্টির স্বার্থ উদ্যারের হাতিয়ার হিসেবে কাজ করছে। কিন্তু, বাংলা সংলাপ অন্য পত্রিকার মতো ট্রন্সকমের স্বার্থ দেখতে দেখা যায়নি। তাই, বস্তুনিষ্ট সংবাদ বাংলা সংলাপের কাছ থেকে আশা করা না গেলেও, অন্য পত্রিকার মতো ব্যক্তি স্বার্থ উদ্যোরে তৎপর হতেও দেখা যায়নি। তাই,এখনও বাংলা সংলাপই প্রবাসে তথা লন্ডনের সেরা পত্রিকা।
উল্লেখ্য শত বাধাবিপত্তি সত্ত্বেও বাংলা সংলাপ পত্রিকা
এগোচ্ছে, এগিয়ে যাবেই। এই যে মধ্যপ্রাচ্যে বা ইউরোপে, উত্তর আমেরিকায় বা আফ্রিকায় বাংলাদেশের মানুষটি কাজ করে চলেছেন, তিনি কিন্তু তাঁর দেশকে ভোলেননি, ভাষাকে ভোলেননি, তিনি তাই নিয়ম করে সময় বের করে নেন বাংলাদেশের কাগজ পড়তে, বাংলাদেশের টিভি চ্যানেল দেখতে। সেখানেই বাংলা সংলাপ তাঁর প্রথম পছন্দ। বাংলা ভাষাভাষী মানুষ পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাকুন না কেন, তাঁরা ভালোর সঙ্গে আছেন, পরিবর্তনের জন্য কাজ করে চলেছেন। এই প্রেক্ষাপটে বাংলা সংলাপের এবারের স্লোগান: বিশ্বজুড়ে বাংলা, বিশ্বজুড়ে বাংলা সংলাপ।
বাংলা পৃথিবীর ষষ্ঠ বৃহত্তম ভাষা, আর বাংলা সংলাপ সারা পৃথিবীর আকাশে অনেক উঁচুতে তুলে ধরতে চায় বাংলার পতাকা। যেখানেই বাংলা, সেখানেই
বাংলা সংলাপ। বাংলা আর বাংলাদেশের গৌরব ছড়িয়ে পড়ুক পৃথিবীজুড়ে। বাংলার ইতিবাচক খবর আমরা ছড়িয়ে দিতে চাই বিশ্বব্যাপী। আর এ কাজে আমাদের অনুপ্রেরণা দেশে-বিদেশে ছড়িয়ে থাকা অনেক বাংলাদেশি, যাঁরা নিজেরা নানা রকমের ভালো কাজ করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করে চলেছেন। আমরা যাঁরা দেশে আছি, যাঁরা বিদেশে আছেন,আসুন-সবাই মিলে বাংলা সংলাপকে এগিয়ে নিয়ে যাই।
আজ বাংলা সংলাপের ৮ তম প্রতিষ্ঠা দিবস। এ দীর্ঘ সময়ে বাংলা সংলাপ তার আদর্শ থেকে কখনো বিচ্যুত হয়নি।যদিবা কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি থেকে থাকে, তারপরও অকপটে বলা যায় যে, বাংলা সংলাপ তার অভীষ্ট লক্ষ্যপথে চলার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। এ চেষ্টা আগামী দিনেও অব্যাহত থাকবে, এ প্রত্যাশা ব্যক্ত করে নিজের একটা কথা বলেই ইতি টানছি। কথা কিছুই নয়, এক সময় লেখা ছিলো আমার নেশা ও পেশা। কিন্তু পরিণত বয়সে হাল-অবস্থা কী দাঁড়ায় এটুকু মনে রাখলেই বাংলা সংলাপের প্রতি সুবিচার করা হবে। ( লেখক ও কলামিস্ট ইউরোপ ও বাংলাদেশ )