এতিম বাচ্চাদের আকুতিঃ আপু আমরাতো খুব অসহায়,তাইনা ?
নাজমিন রিয়া খান: জীবনে চলার পথে ঝিনাইদহ জেলার শৈলকূপার মীনগ্রামে কিছুদিন থাকার সুযোগ হয়েছিল। যদিও আমার নিজের বাড়ি ছিলনা ওটা তারপরও আশেপাশের লোকৃজনের গভীর ভালোবাসায় একটা সময় নিজের বাড়ির মতই হয়ে গিয়েছিল। বাড়িটি ছিল গ্রামের রাস্তার একপ্রান্তে। আর তার অপর প্রান্তেই ছিল একটি মাদ্রাসা। যাকে আমরা মাদ্রাসা ও এতিমখানা নামে চিনতাম। যেখানে যেসকল বাচ্চাদের বাবা-মা নেই তাদের কাউকে বিনামূল্যে আবার কাউকে স্বল্পমূল্যে থাকা খাওয়া ও পড়াশুনার ব্যবস্থা করা হতো।মাঝে মাঝে ওই মাদ্রাসা ও এতিমখানার কিছু ছোট ছোট বাচ্চারা আমার কাছে আসতো তাদের নানারকম বাইনা নিয়ে। কেউবা খাবার জিনিষ চাইতো আবার কারো ছিল নানারকমের পোশাকের চাহিদা। আমার সামর্থ্যনুযায়ী আমি তাদের এসব ইচ্ছাগুলো পূরণ করতাম। কিন্তু আমি সবসময় তাদের সকলের সব চাহিদা পূরণ করতে পারতাম না।কচিকচি বাচ্চাদের নিস্পাপ মুখগুলো মনে পড়লে খুব কষ্ট হয় ওদের জন্য। ওদের মধ্যে যারা একটু বড় ছিল তারাতো প্রায় খুব কেঁদে কেঁদেই বলতো আপু আমরাতো খুব অসহায় তাইনা ? আমাদেরতো কেউ নেই। আমরা কেউ আমাদের বাবা-মায়ের ভালোবাসা পাইনি। তারা তাদের সন্তানদের কিভাবে আদর করে? ওই বাচ্চাদের মধ্যে একজন এসে বললো জানেন আপু আমি একবার স্কুলে ভর্তি হতে গিয়েছিলাম কিন্তু টিচাররা আমাকে ভর্তি না নিয়ে বললো তুইতো এতিম, কে তোর পড়াশুনার খরচ চালাবে ? যা তুই কোনো ফ্রি পয়সার এতিমখানায় ভর্তি হ। এসব বাচ্চাগুলোর কথাশুনে ওদেরকে আড়াল করে নীরবে চোখের পানি ফেলতাম।আর এ সকল বাচ্চাদের এতিম বলে আমরা বারবারই তাদের
মনে করিয়ে দি যে তাদের বাবা-মা নেই। তাই এই এতিম শব্দটা পরিহার করে আর ১০টা স্কুল, কলেজ বা মাদ্রাসায় যেমন নাম তেমন নাম রাখা উচিত। যাতে তাদের বারবার মনে না পড়ে তাদের বাবা-মা নেই।আমার একার পক্ষে ওদের সকলের জন্য কিছু করা হয়তো সম্ভব হবে না। কিন্তু সমাজের বিত্তশালীরা যদি ওদেরকে নিজের সন্তান ভেবে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয় তাহলে কিছুটা হলেও ওরা ভালো থাকবে। বিত্তশালীদের প্রতি একটায় অনুরোধ ওরা নামিদামী খাবার খেতে চায়না দুবেলা সামান্য অন্ন পেলেই ওরা খুশি। আর ওরা কোনো ব্যয়বহুল বিশ্ববিদ্যালয়েও পড়তে চায় না, ভালোমানুষ হয়ে বেঁচে থাকার জন্য শিক্ষা চায়। তাই প্রত্যেকেই এসকল বাচ্চাদের পাশে এসে দাঁড়ান ওদের বেঁচে থাকার সুযোগ করে দিন।ভবিষ্যতে এ সকল বাচ্চাদের জন্য নিজের সামর্থ্যনুযায়ী একটা প্রতিষ্ঠান দেয়ার ইচ্ছা আছে, যার নাম অন্তত………এতিমখানা হবেনা।(লেখকঃ নাজমিন রিয়া খান , মাস্টার্স- ব্যবস্থাপনা বিভাগ , ইডেন মহিলা কলেজ ,ঢাকা )