এবারও হেডিংলি ইংল্যান্ডের, নায়ক এবার ব্রুক
ডেস্ক রিপোর্টঃ বেন স্টোকসের ম্যাচ। চার বছর আগে অ্যাশেজের হেডিংলি টেস্টটাকে হয়তো এর চেয়ে ভালোভাবে আর বর্ণনা করা যায় না! ১৩৫ রানের মহাকাব্যিক এক ইনিংস খেলেই যে ৩৫৯ রানের লক্ষ্য ছুঁয়ে ইংল্যান্ডকে জিতিয়েছিলেন স্টোকস।
চার বছর আগের সেই ম্যাচের প্রেক্ষাপট অবশ্য এবারের মতো অতটা কঠিন ছিল না ইংল্যান্ডের জন্য। সিরিজের তৃতীয় সেই ম্যাচটি জিতে সমতা ফিরিয়েছিল ইংল্যান্ড। এবার যে দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া অবস্থাতেই হেডিংলিতে তৃতীয় টেস্ট খেলতে গেছে ইংলিশরা। ম্যাচ হারলেই অ্যাশেজ আবারও অস্ট্রেলিয়ার, এমন সমীকরণ নিয়েই খেলতে নামতে হয়েছে স্টোকসদের।
সেই পরীক্ষায় পাস করেছে ইংল্যান্ড। এবারও চতুর্থ ইনিংসে রান তাড়ায় জিতল স্বাগতিকেরা। এবারের জয়টিও সহজে আসেনি। চার বছর আগে ১ উইকেটে জেতা দলটি এবার হেডিংলি জয় করেছে ৩ উইকেটে।
২৫১ রানের লক্ষ্যে ছুটতে গিয়ে আজ ম্যাচের চতুর্থ দিনে ১৬১ রানেই ষষ্ঠ উইকেট হারায় ইংল্যান্ড। এরপর সেখান থেকেই নায়ক হলেন ইংলিশ ‘বাজবল’ বিপ্লবের অন্যতম সারথি হ্যারি ব্রুক। তবে চার বছর আগের স্টোকসের মতো দলকে জিতিয়ে ফিরতে পারেনি। ৯৩ বলে ৯ চারে ৭৫ রান করা ব্রুক ফিরেছেন জয় থেকে ২১ রানের দূরত্বে মিচেল স্টার্কের শর্ট বলে মিড অফে প্যাট কামিন্সকে ক্যাচ দিয়ে। ইনিংসে এটি ছিল স্টার্কের পঞ্চম উইকেট।
সহজ হয়ে ওঠা ম্যাচটিই যেন আবার কঠিন হয়ে গেল ইংল্যান্ডের জন্য। হাতে যে উইকেট মাত্র ৩টি। নতুন ব্যাটসম্যান মার্ক উড অবশ্য ঘাবড়ালেন না। প্রথম ইনিংসের মতোই এবারও মেরে খেলতে শুরু করে ৮ বলে করে ফেললেন ১৬ রান। তাতে চাপটাপ সব উড়ে গেল।
তুলির শেষ আঁচড়টা অবশ্য দিলেন ক্রিস ওকস। স্টার্কের বলে দারুণ এক চার মেরেই দলকে জেতালেন। তাতে সিরিজের উত্তেজনা টিকে রইল। টিকে রইল বেন স্টোকসের ভবিষ্দবাণী সত্যি হওয়ার সম্ভাবনাও। ০-২ থেকে ১-২, ইংল্যান্ড তো ৩-২ এর স্বপ্ন দেখতেই পারে।
ইংলিশরা সেই স্বপ্ন পূরণ করতে পেয়েছিল ২৫১ রানের লক্ষ্য। সেই লক্ষ্যের সঙ্গে দূরত্বটা গতকালই ২২৪ রানে নামিয়ে এনেছিলেন ইংল্যান্ডের দুই ওপেনার জ্যাক ক্রলি ও বেন ডাকেট। ৫ ওভারেই ২৭ রান তুলে ফেলছিলেন তাঁরা। আজ সকালে আরও ১৫ রান যোগ করার পরই বিচ্ছিন্ন হন ক্রলি ও ডাকেট। অস্ট্রেলিয়া পেসার মিচেল স্টার্কের করা ফুল লেংথ বলের লাইন মিস করেন ডাকেট। বলটা প্যাডে লাগতেই স্টার্কের আবেদন, আর তাতে সাড়া দিতে দেরি করেননি আম্পায়ার। তবে ৩১ বলে ২৩ রান করা ডাকেটও দেরি করেননি রিভিউ নিতে। তাতে একটি রিভিউ খোয়ানো ছাড়া আর কিছুই পাননি ইংলিশ ওপেনার।
ইংলিশরা এরপর নামিয়ে দেয় অলরাউন্ডার মঈন আলীকে। ৫ রানের বেশি অবশ্য করতে পারেননি ২০১৮ সালের পর টেস্ট প্রথমবার ব্যাটিংক্রমের শীর্ষ পাঁচে নামা মঈন। স্টার্কের আরেকটি সোজা বলে বোল্ড হয়ে যান স্টোকসের অনুরোধে এবারের অ্যাশেজেই আবার টেস্ট দলে ফেরা মঈন।
জোড়া উইকেট হারালেও জো রুটকে নিয়ে জ্যাক ক্রলি ভালোই এগোচ্ছিলেন। ২০তম ওভারের চতুর্থ বলে মিচেল স্টার্ককে দারুণ এক কাভার ড্রাইভে চার মেরে ৪৪-এ পৌঁছে যাওয়া ক্রলি পরের বলেও কাভার ড্রাইভ করতে যান। এবার টাইমিংয়ের গড়বড়ে উইকেটকিপার অ্যালেক্স ক্যারির হাতে ক্যাচটাই শুধু দিতে পারেন ক্রলি।
এরপর রুটও ড্রেসিংরুমে ফেরেন বাজে শট খেলে অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক প্যাট কামিন্সকে উইকেট উপহার দিয়ে। পুল করতে গিয়ে উইকেটকিপারকে ক্যাচ দেন সাবেক ইংল্যান্ড অধিনায়ক। টেস্টে এ নিয়ে ১১ বার কামিন্সের শিকার হলেন রুট। ১৩৩ ম্যাচের ক্যারিয়ারে অন্য কোনো বোলারের হাতে আটবারের বেশি ‘জীবন’ দেননি রুট। চার বছর আগে হেডিংলিতে লোকগাথার অংশ হওয়া সেই রান তাড়ায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৭৭ রান করা রুট আজ করেছেন ২১ রান।
টেস্ট ইতিহাসের অন্যতম সফল সেই রান তাড়ার নায়ক বেন স্টোকসও বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। স্টার্কের নিরীহ এক বলে উইকেটকিপারকে ক্যাচ দিয়ে যখন ফিরলেন স্টোকস ইংল্যান্ডের রান ১৬১, ইংলিশ অধিনায়কের ১৩। আর ১০ রান পর জনি বেয়ারস্টো যখন স্টার্কের বলেই বোল্ড হলেন, মনে হচ্ছিল আজ আর ফিরছে না ২০১৯।
কিন্তু হ্যারি ব্রুক যে ছিলেন। চাপে পিষ্ট না হয়ে পাল্টা আক্রমণকে বেছে নিয়েই দলকে জয়ের পথ দেখালেন। আর তাতে সিরিজে টিকে রইল তাঁর দল।
চতুর্থ ম্যাচটিও জিতে ইংল্যান্ড সমতা ফেরাতে পারবে কি না সেই লড়াই দেখতে অপেক্ষা করতে হবে আরও ১০ দিন। ওল্ড ট্রাফোর্ডে ম্যাচটা যে শুরু হবে ১৯ জুলাই।