এবার ‘নো ডিল ব্রেক্সিট’ প্রশ্নে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে ভোটাভুটি

Spread the love

বাংলা সংলাপ ডেস্কঃচুক্তি ছাড়াই (নো ডিল ব্রেক্সিট) যুক্তরাজ্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বের হয়ে আসবে কিনা এবার সে প্রশ্নে ভোটাভুটি করবে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট। মঙ্গলবার (১২ মার্চ) হাউস অব কমন্সে দ্বিতীয় দফায় থেরেসা মে’র ব্রেক্সিট চুক্তি প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পর বুধবার এ ভোটাভুটি হতে যাচ্ছে। মঙ্গলবার ১৪৯ ভোটে থেরেসার প্রস্তাবটি প্রত্যাখ্যাত হয়।

আনুষ্ঠানিকভাবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাজ্যের বের হয়ে আসতে (ব্রেক্সিট) আর মাত্র দুই সপ্তাহ বাকি। এক গণভোটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ২০১৯ সালের ২৯ মার্চের মধ্যে যুক্তরাজ্যের ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছেড়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বের হয়ে যাওয়ার কথা। বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের সম্পর্ক কেমন হবে তা নিয়ে গত নভেম্বরে জোটটির সঙ্গে একটি চুক্তিতে পৌঁছেছিলেন থেরেসা। সে ব্রেক্সিট চুক্তি ব্রিটিশ পার্লামেন্টে অনুমোদন করানোর বাধ্যবাধকতা থাকলেও গত জানুয়ারির ভোটাভুটিতে তা প্রত্যাখ্যাত হয়। পরে ব্রিটিশ এমপিরা থেরেসা মে’কে ইইউ’র সঙ্গে নতুন করে আলোচনার সুযোগ দেন। সোমবার (১১ মার্চ) ইউরোপীয় ইউনিয়ন নেতাদের সঙ্গে আলোচনার পর থেরেসা দাবি করেন, পরিকল্পনায় ‘আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক’ পরিবর্তন আনতে সমর্থ হয়েছেন তিনি। মঙ্গলবার হাউস অব কমন্সে থেরেসার সে সংশোধিত পরিকল্পনাটি নিয়ে আবারও ভোটাভুটি হলেও তা প্রত্যাখ্যাত হয়।

থেরেসা মে’র পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পর এখন চুক্তিবিহীন ব্রেক্সিট পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। কোনও চুক্তি ছাড়াই যুক্তরাজ্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বের হয়ে আসবে কিনা সে প্রশ্নে বুধবার (১৩ মার্চ) ভোটাভুটি করবে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট। ভোটাভুটির জন্য উত্থাপিত প্রস্তাবে বলা হবে: ‘২৯ মার্চের পর সম্পর্ক কেমন হবে তা নিয়ে রূপরেখা তৈরি না করে এবং কোনও চুক্তি ছাড়াই যুক্তরাজ্যের ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বের হয়ে আসার অনুমোদন দিতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছে হাউস।’

বিবিসির প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, চুক্তিবিহীন ব্রেক্সিটের ক্ষেত্রে শুল্ক সংক্রান্ত বিষয় এবং আইরিশ সীমান্ত সংক্রান্ত প্রস্তাবগুলো নিয়ে নির্দেশিকা প্রকাশ করবে যুক্তরাজ্য সরকার। আন্তর্জাতিক মান সময় রাত ৮টার দিকে মন্ত্রিপরিষদের বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। মঙ্গলবার থেরেসার সংশোধিত প্রস্তাবও পার্লামেন্টে প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পর ইউরোপীয় ইউনিয়ন বলেছে, চুক্তিবিহীন ব্রেক্সিট পরিকল্পনা ‘এখন আগের চেয়ে আরও বেশি জরুরি’। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, তার দল কনজারভেটিভ পার্টির এমপিরা বুধবার মুক্তভাবে ভোট দিতে পারবেন। তার মানে হলো এদিন টোরি এমপিদেরকে ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে দলীয় ম্যানেজারদের আদেশ মানতে হবে না। তারা তাদের ইচ্ছেমতোই ভোট দেবেন।

বুধবার যদি চুক্তিবিহীন ব্রেক্সিট পরিকল্পনাও প্রত্যাখ্যাত হয়, তবে আর্টিক্যাল ফিফটি এর সময়সীমা বাড়িয়ে ব্রেক্সিট বিলম্বিত করার ব্যাপারে ভোটাভুটি হবে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাজ্যের বের হয়ে আসার আইনি প্রক্রিয়াই হলো আর্টিক্যাল ফিফটি। তবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন বলছে, আর্টিক্যাল ফিফটির মেয়াদ বাড়ানোর আগে তাদেরকে ‘একটি নির্ভরযোগ্য পর্যালোচনা’য় যেতে হবে।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় লেবার পার্টি নেতা জেরেমি করবিন বলেছেন, এখন থেরেসা মে’র উচিত সাধারণ নির্বাচনের ডাক দেওয়া। চুক্তিবিহীন ব্রেক্সিটকে আলোচনার টেবিল থেকে সরিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। করবিন জানিয়েছেন, বিকল্প ব্রেক্সিট পরিকল্পনা উপস্থাপন করে যাবে তার দল। তবে লেবার পার্টি ব্রেক্সিট প্রশ্নে আরেকটি গণভোটকে সমর্থন জানাবে কিনা সে ব্যাপারে কিছু উল্লেখ করেননি তিনি।

থেরেসার প্রথম খসড়া প্রস্তাবে থাকা আইরিশ ব্যাকস্টপ পরিকল্পনা নিয়ে অনেকের মধ্যে আপত্তি রয়েছে। নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড ও আইরিশ রিপাবলিকের মধ্যে দৃশ্যমান সীমান্ত ও কাস্টমস চেক না রাখতে আইরিশ ব্যাকস্টপ পরিকল্পনা করা হয়েছে। এর মানে হলো ইইউ-এর একক বাজারের কিছু নীতিমালা মেনে চলবে নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড। পাশাপাশি,যুক্তরাজ্য ও ইইউ-এর মধ্যে টেকসই কোনও বাণিজ্য চুক্তি না হওয়া পর্যন্ত কার্যকরভাবে যুক্তরাজ্য শুল্ক সংঘে থাকবে। কনজারভেটিভ পার্টির অনেক আইনপ্রণেতা ও ডেমোক্র্যাটিক ইউনিয়নিস্ট পার্টি ব্যাকস্টপের বিরোধিতা করছে। কারণ,তাদের আশঙ্কা এ নীতি স্থায়ী রূপ লাভ করতে পারে এবং যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন অংশের জন্য আলাদা আলাদা নিয়ম জারি হতে পারে।

মঙ্গলবার সংশোধিত প্রস্তাব উপস্থাপন করতে গিয়ে থেরেসা দাবি করেন, আইরিশ ব্যাকস্টপ নিয়ে ‘আইনি বাধ্যবাধকতা’ নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়েছেন। সোমবার ইইউ’র নেতাদের সঙ্গে আলোচনার পর থেরেসা মে বলেন, ‘ব্যাকস্টপের ক্ষেত্রে আইনগত পরিবর্তন জরুরি বলে মনে করেন এমপিরা। আজ আমরা সে আইনগত পরিবর্তনগুলো আনতে সক্ষম হয়েছি। এবার এ সংশোধিত ব্রেক্সিট চুক্তিকে সমর্থন দিতে একত্রিত হওয়ার সময় হয়েছে।’

তবে থেরেসা নতুন করে নিজ দল কনজারভেটিভ পার্টির ৪০ জন এমপিকে সংশোধিত প্রস্তাবের ব্যাপারে রাজি করাতে পারলেও ওই প্রস্তাব পাস করাতে পারেননি তিনি। এদিন প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দিয়েছে ৩৯১ জন আর পক্ষে ভোট দিয়েছে ২৪২ জন। ব্রেক্সিট পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পর থেরেসা বলেন, ‘এমপিদেরকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে তারা কি ব্রেক্সিট বিলম্বিত করতে চান, নাকি আরেকটি গণভোট চান, নাকি তারা এ চুক্তি বাদে অন্য কোনও চুক্তি করে ব্রেক্সিট চান।’

থেরেসা মে’র মুকপাত্র বলেছেন, ব্রেক্সিট পরিকল্পনা নতুন করে প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পর পদত্যাগ প্রসঙ্গে কোনও আলোচনা করেননি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। কারণ, তার নেতৃত্বাধীন সরকার সম্প্রতি হাউস অব কমন্সে আস্থা ভোটে জয় পেয়েছে। ইইউ এর কাছ থেকে আর কোনও ছাড় পাওয়ার জন্য থেরেসার ব্রাসেলসে যাওয়ার পরিকল্পনা নেই বলেও জানানো হয়েছে।


Spread the love

Leave a Reply