কয়েকটি চিত্রে করোনাভাইরাসের উপসর্গ, পরীক্ষা, চিকিৎসা ও পরামর্শ
বাংলা সংলাপ ডেস্কঃ শ্বাসপ্রশ্বাস সংক্রান্ত এই সংক্রমণটি শুরু হয়েছিল চীনের উহান শহরে, এবছরের শুরুর দিকে, যা আরেকটি নতুন করোনাভাইরাস হিসেবে পরিচিত। এই ভাইরাসটি এখন আরো বেশি দ্রুত গতিতে ছড়িয়ে পড়ছে চীনের বাইরে অন্যান্য দেশে।
এখনও পর্যন্ত ৬০টি দেশের লোকজনের মধ্যে করোনাভাইরাস সংক্রমণের খবর নিশ্চিত করা হয়েছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে যে, এতে হয়তো আরো অনেকেই আক্রান্ত হতে পারেন।
এত দ্রুত গতিতে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ার কারণে একে ঘিরে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে।
এই প্রেক্ষিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যের উপর ভিত্তি করে পাবলিক হেলথ ইংল্যান্ড ও ব্রিটেনের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস বা এনএইচএস লোকজনকে কিছু পরামর্শ দিয়েছে যে কী হলে কী করতে হবে।
কীভাবে রক্ষা পাওয়া যায়?
করোনাভাইরাস মানুষ থেকে মানুষে ঠিক কীভাবে ছড়ায় সেটি এখনও নিশ্চিত করে জানা যায়নি। তবে এই একই রকমের ভাইরাস সাধারণত আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি ও কাশির সময় তার নাক ও মুখ দিয়ে যা নির্গত হয় (জলীয় পদার্থের কণা বা ড্রপলেট) তার মাধ্যমে ছড়িয়ে থাকে।
তাই হাঁচি ও কাশির সময় আপনি এমন কিছু করতে পারেন – যার ফলে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমে যাবে।
এনএইচএসের পরামর্শ হচ্ছে, আপনাকে নিয়মিত ও বারবার হাত ধুতে হবে। আপনি যখন হাঁচি ও কাশি দেবেন তখন টিস্যু দিয়ে মুখ ঢেকে রাখতে হবে। একই সঙ্গে আপনার হাত পরিষ্কার না হলে চোখ, নাক ও মুখ স্পর্শ করা যাবে না।
ডাক্তাররা যদি আপনাকে প্রচুর লোক সমাগম হয় এরকম জায়গা এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেন, তাহলে আপনাকে সেটা অনুসরণ করতে হবে।
পার্সেল, প্যাকেট, চিঠি অথবা খাদ্যের মাধ্যমে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার বিষয়ে এখনও কোন প্রমাণ পাওয়া যায় নি।
মনে রাখতে হবে, করোনাভাইরাসের মতো ভাইরাস শরীরের বাইরে দীর্ঘ সময় ধরে বেঁচে থাকতে পারে না।
আমি কি আক্রান্ত হতে পারি?
যুক্তরাজ্যে মেডিকেল কর্মকর্তারা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকির মাত্রা বৃদ্ধি করেছেন। তবে এনএইচএস বলছে, এই ঝুঁকি এখনও কম।
তবে কিছু কিছু দেশ আছে যেখানে আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসার মাধ্যমে এই ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি বেশি।
একারণে সেসব দেশে ভ্রমণ করার বিষয়ে একদিকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে, অন্যদিকে সেসব দেশ থেকে যারা এসেছেন তাদের ওপরেও সতর্ক নজর রাখতে বলা হয়েছে।
এসব দেশের মধ্যে রয়েছে চীন, ইটালি ও ইরান।
তার পরেও যদি আপনি এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে থাকেন, তাহলে আপনার শরীরে সামান্য কিছু উপসর্গ দেখা দেবে এবং আপনি হয়তো একসময় সেরেও উঠবেন।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, করোনাভাইরাসে মৃত্যুর হার খুব কম। আক্রান্তদের এক থেকে দুই শতাংশের মৃত্যু হচ্ছে। এছাড়াও যারা মারা গেছে তাদের বেশিরভাগই বয়স্ক, অথবা তারা আগে থেকেই অন্য কোনো অসুখে ভুগছিলো।
তবে ভাইরাসটি যেহেতু এখনও তার প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে তাই নিশ্চিত করে এর পরিণতি সম্পর্কে বলা যাচ্ছে না। অনেক ক্ষেত্রে হয়তো সংক্রমণ ধরাই পড়ে না। সেকারণে এসব পরিসংখ্যান এখনও পুরোপুরি নির্ভরযোগ্য নয়।
আক্রান্ত হলে কীভাবে জানতে পারবো?
নতুন এই করোনাভাইরাসে, যার নামকরণ করা হয়েছে কোভিড-১৯, আক্রান্ত হলে প্রথমে জ্বর আসে, তার পর দেখা দেয় শুষ্ক কাশি এবং সপ্তাহখানেক পর শ্বাস কষ্ট দেখা দেয়।
তবে এসব উপসর্গ দেখা দিলেই নিশ্চিত করে বলা যাবে না যে আপনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।
কারণ এসব উপসর্গের সাথে অন্যান্য ভাইরাসের উপসর্গেরও মিল রয়েছে। যেমন ঠাণ্ডা ও সর্দি-কাশির মতো ফ্লু।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ তীব্র হলে নিউমোনিয়া হতে পারে, দেখা দিতে পারে শ্বাসপ্রশ্বাসজনিত সমস্যা, কিডনি অচল হয়ে যেতে পারে, এমনকি হতে পারে মৃত্যুও।
এই ভাইরাসে আক্রান্ত হলে সাধারণত বয়স্ক লোকজন এবং আগে থেকেই যাদের বিশেষ কিছু স্বাস্থ্য সমস্যা রয়েছে ( যেমন অ্যাজমা, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ) তারা গুরুতর অসুস্থ হয়ে যেতে পারেন।
আক্রান্ত মনে হলে কী করতে হবে?
ব্রিটেনে স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলছেন, যদি মনে হয় যে আপনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন, বা এতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি বলে মনে হচ্ছে, তাহলে কিন্তু আপনি সাথে সাথেই ক্লিনিক বা হাসপাতালের ডাক্তারের কাছে চলে যাবেন না।
বরং আপনি টেলিফোনে একটি বিশেষ নম্বরে ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। আপনার কথা শুনে তারা আপনাকে বলে দিতে পারবেন যে এর পর আপনাকে কী করতে হবে।
- আপনাকে ঠিক তখনই যোগাযোগ করতে বলা হবে যখন আপনার মনে হবে যে আপনি হয়তো এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।
- গত ১৪ দিনে আপনি যদি কম্বোডিয়া, চীন , হংকং, ইটালির উত্তরাঞ্চল, ইরান, জাপান, লাওস, ম্যাকাও, মালয়েশিয়া, মিয়ানমার, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান, থাইল্যান্ড অথবা ভিয়েতনাম সফর করে থাকেন।
- যদি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কোনো ব্যক্তির ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে এসে থাকেন।
এর ফলে আপনাকে হয়তো নিজের উদ্যোগেই অন্যদের থেকে আলাদা থাকতে বলা হতে পারে।
আমাকে কীভাবে পরীক্ষা করা হবে?
আপনি যদি কোন নির্দিষ্ট এলাকায় নির্দিষ্ট সময়ে থেকে থাকেন অথবা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কোনো ব্যক্তির ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে এসে থাকেন, তাহলেই আপনার স্বাস্থ্য পরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারে।
তবে চিকিৎসকরা যদি মনে করেন যে আপনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারেন, তখন তারা আপনার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে দেখতে পারেন।
তখন আপনার কাছে থেকে কিছু নমুনা সংগ্রহ করা হতে পারে:
- নাক, গলা ও ফুসফুস থেকে নির্গত শ্লেষ্মা
- রক্ত
- মল বা বিষ্ঠা
তার পর এসব নমুনা পাঠানো হবে পরীক্ষাগারে। কতোদিনে এর ফল পাওয়া যাবে সেটা একেক দেশে একেক রকমের হতে পারে। তবে ব্রিটেনে সেটা একদিনেই পাওয়া যাবে।
পরীক্ষার ফল না পাওয়া পর্যন্ত আপনাকে বাড়িতে নিজেকে একটু বিচ্ছিন্ন করে অবস্থান করার পরামর্শ দেওয়া হতে পারে।
স্বেচ্ছায় কীভাবে বিচ্ছিন্ন হতে হবে?
অনেক ক্ষেত্রে আপনাকে হয়তো বাড়িতে অবস্থান করতে বলা হতে পারে। বলা হতে পারে অন্যদের সংস্পর্শে না যেতে।
তখন আপনাকে যা করতে হবে:
- বাড়িতে অবস্থান করুন
- অফিসে, কাজে, স্কুলে এবং যেসব জায়গায় জনসমাগম ঘটে সেখানে যাবেন না
- বাস, ট্রেন, ট্যাক্সির মতো গণ-পরিবহন ব্যবহার করবেন না
বাড়িতে লোকজনের আসা এড়িয়ে চলুন
আপনি আপনার বন্ধু বান্ধব, আত্মীয় স্বজনকে অনুরোধ করতে পারেন আপনার জন্যে কিছু বাজার-সদাই করে দিতে।
এমনকি ওষুধের প্রয়োজন হলে নিজে ফার্মেসিতে না গিয়ে সেটাও এনে দিতে বলতে পারেন।
বাড়িতে আপনার সঙ্গে আরো যারা বসবাস করেন, তারা যাতে আক্রান্ত না হন সেজন্য আপনাকে অতিরিক্ত কিছু ব্যবস্থা নিতে হবে।
যেমন, আপনাকে থাকতে হবে আলাদা একটি ঘরে। বাথরুমে ও রান্না ঘরে যাবেন সবার পরে এবং সাথে সাথেই ওই ঘরগুলো পরিষ্কার করে ফেলতে হবে।
আর এটা আপনাকে করতে হবে ১৪ দিন ধরে।
পরীক্ষায় যদি দেখা যায় আমি আক্রান্ত, তারপর কী হবে?
এখনও করোনাভাইরাসের কোন চিকিৎসা বের হয়নি। তবে আপনার দেহ যখন এই ভাইরাসটির সাথে যুদ্ধ করছে – তখন যেসব উপসর্গ দেখা যাবে সেগুলো কমিয়ে আনতে চিকিৎসা নিতে পারেন।
তখন অন্যদের থেকে আপনাকে আলাদা থাকতে হবে। পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ওঠার আগ পর্যন্ত বিচ্ছিন্ন রাখতে হবে নিজেকে।
এই ভাইরাসের প্রতিষেধক তৈরিতে গবেষণা চলছে। আশা করা হচ্ছে এবছরের শেষ নাগাদ মানব দেহে এর পরীক্ষামূলক ব্যবহার হতে পারে।
কোথাও কোথাও এন্টি-ভাইরাল ওষুধ দিয়েও দেখা হচ্ছে সেটি করোনাভাইরাসকে প্রতিরোধ করতে পারে কীনা!