করোনাভাইরাসের কারনে সৌদি আরবে স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ
বাংলা সংলাপ ডেস্কঃ করোনাভাইরাসের বিস্তারে ঠেকাতে দেশজুড়ে স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস বন্ধ ঘোষণা করেছে সৌদি আরব।
রবিবার দেশটির তেলসমৃদ্ধ কাতিফ প্রদেশে অচলাবস্থা ঘোষণা করা হয়। দেশটিতে শনাক্ত হওয়া ১৫ জন করোনাভাইরাস আক্রান্তের বেশিরভাগই রয়েছেন এই প্রদেশে।
মোট ১৫ জন করোনাভাইরাস আক্রান্তের মধ্যে একজন মার্কিন নাগরিক রয়েছেন, যিনি ইতালি এবং ফিলিপিন্স ভ্রমণ করেছেন। এছাড়া সোমবার ৯টি দেশে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সৌদি আরব যার মধ্যে রয়েছে প্রতিবেশী দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন, কুয়েত এবং মিশর।
শিয়া মুসলিম অধ্যুষিত কাতিফ প্রদেশে চার জনের মধ্যে করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার কারণে সেখানে সকল কর্মকাণ্ড বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। দেশটির দুটি মন্ত্রণালয় নিশ্চিত করেছে যে, এতে তেল উৎপাদনের উপর কোন প্রভাব পড়বে না।
কিন্তু এই সিদ্ধান্ত কাতিফে এক ধরণের অসন্তোষ তৈরি করতে পারে। সুন্নি নিয়ন্ত্রিত সৌদি সরকারের সাথে শিয়া সংখ্যালঘুদের বিবাদের অন্যতম অংশ কাতিফ, যেখানে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন যে, তারা বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে সরকার।
“ভাইরাসটির বিস্তার ছড়াতে সব সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে,” এক বিবৃতিতে এ খবর জানিয়েছে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তবে শুধু নিরাপত্তা ও প্রাদেশিক কর্মকাণ্ড চলবে বলেও জানানো হয়।
মন্ত্রণালয় জানিয়েছে যে, কাতিফে চলাচল সীমিত করা হলেও বাসিন্দারা ঘরে ফেরার এবং বাণিজ্যিক সরবরাহ চালাতে পারবে।
স্থানীয় এক বাসিন্দা জানিয়েছেন যে, কাতিফে সিমেন্টের তৈরি ব্লক দিয়ে রাস্তা বন্ধ করা হয়েছে এবং কর্মকাণ্ড স্থগিত ঘোষণার পর মুদি দোকানে ব্যাপকহারে কেনাকাটা করেছে বাসিন্দারা।
সৌদি কর্তৃপক্ষ এর আগে জানিয়েছিল যে, আক্রান্তরা হয় ইরান কিংবা ইরাক ভ্রমণ করেছে কিংবা যারা ওই দেশগুলো ভ্রমণের পর আক্রান্ত হয়েছে তাদের সংস্পর্শে এসেছে।
এদিকে কাতিফে অচলাবস্থা তৈরির জের ধরে সৌদি আরবের সাথে ইরানের উত্তেজনা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের সময় সৌদির নাগরিকদের প্রবেশ করতে দেয়ার কারণে তেহরানের নিন্দা জানিয়েছে রিয়াদ।
সোমবার আক্রান্তদের মধ্যে মার্কিন পর্যটককে রিয়াদের একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আক্রান্ত অন্যদের মধ্যে রয়েছেন এক সৌদি নাগরিক যিনি কাতিফে অন্য এক আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে এসে আক্রান্ত হন এবং বাহরাইনের দুই নারী যারা সম্প্রতি ইরাক থেকে ফিরেছেন।
দেশটির বিনোদন কর্তৃপক্ষ বলেছে, ভাইরাসের কারণে সোমবার উইন্টার ওয়ান্ডারল্যান্ড বন্ধ থাকবে।
এরইমধ্যে ইরানের সাথে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সৌদি আরব। ইরানের করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ১৯৪ জন মারা গেছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, নতুন আক্রান্তদের মধ্যে তিন জন নারী সম্প্রতি সংযুক্ত আরব আমিরাত হয়ে ইরান থেকে ফেরা এক ব্যক্তির সংস্পর্শে আসার কারণে আক্রান্ত হয়েছে। ওই ব্যক্তি ইরান ভ্রমণের তথ্য গোপন করেছিল বলে জানানো হয়।
রবিবার নেয়া সতর্কতার অংশ হিসেবে মসজিদে সব ধরণের কোরান ও শিক্ষামূলক কর্মকাণ্ড বন্ধ করা হয়েছে।
রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যম জানায়, পরবর্তী নোটিশ না দেয়া পর্যন্ত সব সরকারি ও বেসরকারি স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকাণ্ড সোমবার থেকে বন্ধ থাকবে। তবে দূর শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া হবে।
আল আরাবিয়া টিভি জানায়, ২৩শে মার্চ দেশটির সবচেয়ে বড় খেলাধুলার অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার কথা থাকলেও সেটি পিছিয়ে দেয়া হয়েছে।
রবিবার, বাহরাইন, কুয়েত এবং আরব আমিরাতের সাথে স্থল সীমান্ত পারাপারও বন্ধ করা হয়েছে। তিনটি বিমানবন্দরে যাত্রী পরিবহনও সীমিত করা হয়েছে।
১৪টি দেশের পর্যটকদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে কাতার।
কুয়েতে রবিবার আরো দুই ব্যক্তি নতুন করে আক্রান্ত হয়েছে। সব মিলিয়ে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ালো ৬৪ জনে। ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ১০ মিলিয়ন দিনার তহবিল ঘোষণা করেছে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক।