করোনাভাইরাসের সাথে পায়ের আঙুলে বিশেষ লক্ষণ ও র্যাশঃ চিকিৎসকদের উদ্বেগ
বাংলা সংলাপ রিপোর্টঃস্পেনের চিকিৎসকদের করা ছোট একটি গবেষণায় পাওয়া গেছে যে, কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়া রোগীদের মধ্যে ‘কোভিড টো’ বা পায়ের আঙুলে বিশেষ লক্ষণসহ ৫ ধরণের র্যাশ বা ফুসকুড়ি দেখা দেয়।
এই র্যাশগুলো সাধারণত কম বয়সীদের মধ্যে দেখা দেয় এবং বেশ কিছু দিন স্থায়ী হয়।
র্যাশ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার নতুন কোন উপসর্গ নয়, যেমন দাগ দেখলে বোঝা যায় যে তার জলবসন্ত হয়েছিল।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, কোভিড-১৯ এর এতো বেশি ধরনের র্যাশ দেখে বিস্মিত তারা।
তবে র্যাশকে এখনো কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার উপসর্গ হিসেবে তালিকাভূক্ত করা হয়নি।
এখনো পর্যন্ত ‘কোভিড টো’ বা কোভিড আক্রান্তদের পায়ের আঙুলে বিশেষ ধরনের লক্ষণ দেখতে পাওয়ার কথা জানা যাচ্ছে। কোভিড রোগীদের মধ্যে অন্য কোন উপসর্গ না থাকলেও পায়ে র্যাশ বা ফুসকুড়ি দেখা দেয়। কিন্তু প্রধান গবেষক ডা. ইগনাসিও গার্সিয়া-ডোভাল বলেন, সবচেয়ে বেশি দেখা দেয় মাকুলোপাপুলস- বা ছোট ছোট, মসৃন বা কিছুটা ফুলে ওঠা লাল রঙের ফুসকুড়ি। এগুলো সাধারণত শরীরের বিভিন্ন জায়গায় হয়।
ডা গার্সিয়া ডোভাল বিবিসি-কে বলেন, “বিভিন্ন ধরণের ফুসকুড়ি বা র্যাশ দেখা দেয়াটা কিছুটা বিস্ময়কর-এদের মধ্যে কোন কোনটি আবার বেশ সুনির্দিষ্ট।”
“এটা সাধারণত রোগটিতে আক্রান্ত হওয়ার পর শ্বাস-প্রশ্বাসের অসুবিধা উপসর্গের পর দেখা দেয়- আর এ কারণেই এটা চিকিৎসাধীন রোগীদের জন্য ভাল নয়,” তিনি বলেন।
যেসব রোগীদের উপর গবেষণাটি করা হয়েছে তারা সবাই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন এবং সবারই শ্বাসকষ্টের উপসর্গ ছিল। গবেষণাটি চলতি সপ্তাহে ব্রিটিশ জানার্ল অব ডার্মাটোলজিতে প্রকাশিত হয়েছে।
এর আগে স্পেনে সব চিকিৎসকদের আহ্বান জানানো হয় যে, তারা যাতে কোভিড আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে যাদের র্যাশ বা ফুসকুড়ি দেখা দিয়েছে তাদের বিস্তারিত তথ্য দেয়। সব মিলিয়ে ৩৭৫ জনের তথ্য পাওয়া যায়।
যে পাঁচ ধরণের র্যাশ বা ফুসকুড়ি দেখা গেছে সেগুলো হলো:
•হাতে কিংবা পায়ে অসমান, শীত থেকে সৃষ্ট ক্ষতের মতো অসংখ্য ফুসকুড়ি, এগুলো চুলকায় কিংবা ব্যাথা হতে পারে। সাধারণত কম বয়সী রোগী যাদের মৃদু উপসর্গ রয়েছে তাদের দেহে দেখা যায়। গড়ে প্রায় ১২ দিন স্থায়ী হয়। রোগের অন্যান্য উপসর্গের পরে হয়। সাধারণত ১৯ ভাগ রোগীর মধ্যে দেখা যায়।
•ছোট ছোট দানার মত দেখতে, প্রায়ই চুলকায়, শরীরের মধ্য অংশ এবং হাত-পায়ে দেখা দেয়। মধ্য-বয়সী রোগীদের মধ্যে দেখা দেয়, ১০ দিনের মতো স্থায়ী হয়। অন্যান্য উপসর্গের আগেই হয়। ৯ ভাগ রোগীর মধ্যে থাকে।
•গোলাপি কিংবা সাদা হয়ে ফুলে ওঠে এবং খুবই অস্বস্তিকর। চুলকায়। সাধারণত দেহে দেখা দেয়। কিন্তু অনেক সময় হাতের তালুতেও ওঠে।
•ম্যাকুলোপাপুলস- ছোট, মসৃন কিংবা ফুলে ওঠা ফুসকুড়ি। প্রায় ৪৭ ভাগ রোগীর মধ্যে দেখা দেয়। সাধারণত সাত দিন স্থায়ী হয় এবং অন্যান্য উপসর্গের সাথেই দেখা দেয়। তীব্র উপসর্গের রোগীদের মধ্যে দেখা দেয়।
•লিভেইডু (এটি নেক্রোসিস নামেও পরিচিত) যা প্রায় ৬ ভাগ রোগীদের মধ্যে দেখা যায়। এক্ষেত্রে ত্বক কালচে লাল বা নীল হয়ে যায়, সাথে জালের মতো চিহ্ন বা দাগ থাকে। এটি আসলে কম রক্ত সঞ্চালনের ইঙ্গিত। বয়স্ক রোগী যাদের মধ্যে মারাত্মক সংক্রমণ রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে দেখা দেয়।
যাই হোক, গবেষকরা বলছেন যে, র্যাশ বা ফুসকুড়ির অনেক কারণে হতে পারে এবং অভিজ্ঞতা না থাকলে এগুলোর মধ্যে পার্থক্য বোঝাটাও কঠিন।
“এই গবেষণাটি আসলে মানুষের নিজে নিজে চিকিৎসা নেয়ার ক্ষেত্রে সহায়তা করার জন্য নয় বরং রোগটি দেহে কিভাবে প্রভাব বিস্তার করে সেটি ভাল ভাবে বুঝতে সাহায্য করবে এটি,” বলেন ব্রিটিশ অ্যাসোসিয়েশন অব ডার্মাটোলজিস্টের প্রেসিডেন্ট ডা. রুথ মারফি।
ইউনিভার্সিটি অব সাউথ হ্যাম্পটন এর ডা. মাইকেল হেড বলেন, নিউমোনিয়ার মতো অনেক ভাইরাস সংক্রমণের পরিচিত একটি পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হচ্ছে র্যাশ বা ফুসকুড়ি।
“কোভিড-১৯ এর ক্ষেত্রে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীদের মধ্যে অল্প কিছু জনের মধ্যে র্যাশ এবং ত্বকের আলসারের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। আমরা এখনো জানি না যে, কেন কিছু রোগীর মধ্যে এই উপসর্গ দেখা দেয় এবং অন্যদের মধ্যে দেখা যায় না।”
যুক্তরাষ্ট্রের ডিটারমাটোলজি অ্যাকাডিমও ত্বকের এসব উপসর্গের তথ্য লিপিবদ্ধ করছে।