করোনা ভ্যাকসিন : শিশু ও আপনার করণীয়
ডাঃ জাকি রিজওয়ানা আনোয়ার:
অক্সফোর্ড-এস্ট্রাজেনেকার অনুমোদন লাভের সাথে সাথে বৃটিশ সরকার ভ্যাকসিন দেওয়ার ব্যাপারে strategy বদলিয়েছে, এটি শুধু Oxford-AstraZeneca – এর ব্যাপারে নয়, এটি Pfizer-Biontech -এর ক্ষেত্রেও।
Pfizer-Biontech এর সরবরাহ জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে মার্চ পর্যন্ত থেমে থাকবে। এখন প্রাপ্ত বয়স্ক প্রায় সবাইকে এপ্রিল মাসের মধ্যে অক্সফোর্ড-এস্ট্রাজেনেকার প্রথম ডোজ দেওয়া হবে। প্রথম ডোজের চার সপ্তাহ পরে দ্বিতীয় ডোজ দেওয়ার কথা। কিন্তু ১০০ মিলিয়ন ডোজ আগামী দু’এক মাসের মধ্যে পাওয়া যাবে না বলেই বেশী সংখ্যক লোককে নিদেনপক্ষে প্রথম ডোজ দিয়ে রাখা হবে এবং দ্বিতীয় ডোজ তিন মাস পরে দেওয়ার চেষ্টা করা হবে।
এখন বাস্তবে এর মানে হচ্ছে, প্রথম ডোজ নেওয়ার ১০/১৫ দিন পরে আপনার সামান্য কিছুটা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হবে তা দিয়ে হয়তো আপনি কোভিডে গুরুতরভাবে অসুস্থ হবেন না ঠিকই কিন্তু আপনি কোভিডে আক্রান্ত হতে পারেন। সরকার এই স্ট্র্যাটেজি পরিবর্তন করেছে যাতে ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের উপর চাপ কম পড়ে। কাজেই আমাদের এখন থেকে কমপক্ষে আরো ৪/৫ মাস মাস্ক ব্যবহার, হাত ধোয়া, বদ্ধ পরিবেশে ভীড়ের মধ্যে না যাওয়া – এসব মেনে চলতে হবে।
মিডিয়াতে হয়তো শুনে আসছেন বৃটেনের নতুন ভ্যারিয়েন্টটির সংক্রমণের হার বেশী হলেও মৃত্যুহার কম। কথাটার খুব সহজ ব্যাখা করলে চলবে না। মৃতহার কম হলেও যখন অনেক সংখ্যক লোক আক্রান্ত হয় তখন কম মৃত্যুহারেও মৃতের সংখ্যা কিন্তু বেড়ে যায়। ভেবে দেখুন তো একশো জনের এক পারসেন্ট আর এক লাখ লোকের এক পারসেন্ট কি এক সংখ্যা?
আপনাকে আরো মনে রাখতে হবে যে আপনার শিশু সন্তানের জন্যে কিন্তু ভ্যাকসিন নেই। কারণ শিশুদেরকে ট্রায়ালের অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি । শিশুদের উপরে কোনো ড্যাটা আমাদের কাছে নেই। শিশুদের রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বড়দের চাইতে আলাদা। দুটো কোম্পানি অবশ্য গত অক্টোবর থেকে শিশুদের উপর ট্রায়াল শুরু কোরেছে মাত্র। কাজেই শিশুদের স্বার্থেই বাবা মায়েদের ভ্যাকসিন নেওয়া উচিত। এখন কথা হচ্ছে যতদিন শিশুদের ভ্যাকসিন না আসছে ততদিন বাবা মা হিসেবে আপনি কি কি করতে পারেন।
প্রথমত শিশুরা যাতে হাত ধোয়া, মাস্ক পরা শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা – এসব মেনে চলে সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। বৃটেনের নতুন ভ্যারিয়ন্টটির চাইতে দক্ষিণ আফ্রিকার ভ্যারিয়েন্টটি শিশুদের ক্ষেত্রে বেশী মারত্মক। সব শিশুরা আক্রান্ত হবে এমন নয় তবে Multisystem Inflammatory Syndrome in children (MISC) নামে একটি গুরুতর অসুখ আছে, শিশুদের ক্ষেত্রে এই অসুখটির Covid-19 – এর সাথে সম্পর্ক রয়েছে। এটি সরাসরি কোভিড থেকে হতে পারে অথবা কোভিডের সাথে সাথে হতে পারে।
কি কি লক্ষণ দেখে আপনি তা বুঝতে পারবেন? যদি আপনার শিশুর জ্বর, পেটে ব্যাথা, বমি, পাতলা পায়খানা, ঘাড়ে ব্যাথা, চোখ লাল হয় তাহলে সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন। আর যদি আপনার শিশুর শ্বাসকষ্ট হয় বা কোনোভাবেই থামছে না এমন বুকে ব্যাথা হয় বা খুব বেশী পেটে ব্যাথা হয় বা ঠোঁট বা মুখ হালকা নীল হয়ে যায় বা আপনার কথায় সাড়া না দেয় তাহলে emergencyতে নিয়ে যেতে হবে।
সব শেষে আরেকটি কথা মনে রাখবেন যদি কারো কাছে আপনার contact list-এ নেই এমন কারো কাছ থেকে ভ্যাকসিন সংক্রান্ত মেইল আসে এবং তাতে একটি ফাইল সংযুক্ত করা হয় তাহলে চট কোরে ঐ ফাইল খুলবেন না। এটি হ্যাকারদের কাজ হতে পারে।
সকলে সুস্থ, নিরাপদ থাকুন এবং ভুল তথ্য থেকে দুরে থাকুন।
লেখক : ডাঃ জাকি রিজওয়ানা আনোয়ার, মা ও শিশু বিশেজ্ঞ।