কাশ্মীরে সেনা ছাউনিতে জঙ্গি হামলায় ৭ ভারতীয় সেনা নিহত
বাংলা সংলাপ ডেস্কঃভারত-শাসিত কাশ্মীরে জম্মু শহরের কাছে নাগরোটায় মঙ্গলবার ভোরে একটি সেনা ছাউনিতে জঙ্গি হামলায় অন্তত সাতজন ভারতীয় সেনা নিহত হয়েছে। এই সাতজনের দুজন কর্মকর্তা, অন্যরা জওয়ান। সংঘর্ষে অন্তত তিন থেকে চারজন জঙ্গিও প্রাণ হারিয়েছে – তবে সেনা-শিবিরের ভেতর লুকিয়ে থাকা জঙ্গীদের সবাইকে নির্মূল করা সম্ভব হয়েছে কি না, এদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত ভারতীয় সেনা নিশ্চিতভাবে তা কিছু জানাতে পারেনি। বিকেল পাঁচটাতেও সেনা ছাউনির ভেতর থেকে গোলাগুলির শব্দ পাওয়া গেছে। পাঠানকোট ও উরির পর চলতি বছরে এটি ভারতের কোনও সেনা শিবিরে আবার একটি বড় মাপের হামলা – আর নাগরোটার ঘটনা ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে চলমান সংঘাতকে আরও তীব্র করে তুলবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।
নাগরোটায় আজকের হামলার সঙ্গে জানুয়ারিতে পাঠানকোট বিমানঘাঁটি বা সেপ্টেম্বরে উরির সেনা-শিবিরে হামলার ছিল প্রচুর মিল। ভারত-শাসিত কাশ্মীরে সেনাবাহিনীর চারটি কমান্ড সেন্টারের অন্যতম এই নাগরোটা – আর্মির সিক্সটিন কোরের সদর দফতর এখানেই, এবং বিশাল ছাউনিতে অন্তত এক হাজার সেনা কর্মকর্তার বাস।
এদিন ভোররাতে ভালো করে আলো ফোটার আগেই একদল আত্মঘাতী হামলাকারী বন্দুক ও গ্রেনেড নিয়ে সেই ছাউনির ভেতর ঢুকে পড়ে – এবং অফিসার্স মেসের দিকে নির্বিচারে গুলি ভারত-শাসিত কাশ্মীরে জম্মু শহরের কাছে নাগরোটায় মঙ্গলবার ভোরে একটি সেনা ছাউনিতে জঙ্গি হামলা চালানো হলে অন্তত সাতজন ভারতীয় সেনা নিহত হয়েছে। চালাতে চালাতে ভেতরের একটি ভবনে অবস্থান নেয়।
প্রায় সারাদিন ধরে দুপক্ষের মধ্যে বন্দুকযুদ্ধের পরও অপারেশন শেষ হয়েছে, ভারতীয় সেনা তা নিশ্চিতভাবে বলতে পারেনি। বিকেল নাগাদ সেনা মুখপাত্র মনীষ মেহতা জানান, “সন্ত্রাসবাদীরা আমাদের একটি সেনা-শিবিরে ঢুকে পড়ার পরই এনকাউন্টার শুরু হয়। এখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এসেছে, তবে অভিযান পুরোপুরি শেষ হওয়ার পরই আমি বিশদে সব কিছু বলতে পারব।
” “জঙ্গিরা সংখ্যায় ঠিক কতজন ছিল, তা নিয়েও আমি কোনও অনুমান করতে চাই না। আপনারা এখনও গোলাগুলির শব্দ শুনতে পাচ্ছেন, কাজেই বুঝতেই পারছেন তারা বেশ ভারী অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত ছিল”, বলেন ওই সেনা মুখপাত্র।
জঙ্গি হামলা চলাকালে নাগরোটা সেনা ছাউনি সেনাবাহিনীর তরফে কত ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, সরকারিভাবে তা কিছু জানানো না-হলেও বিভিন্ন সূত্রে অন্তত তিনজন সেনা সদস্যর মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করা গেছে। নাগরোটা সেনা-ছাউনির ভেতর বহু কর্মকর্তাই সপরিবারে থাকতেন, তাদের পরিবারের আটকে-পড়া সদস্যদের নিরাপদে বের করে আনতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে বলেও জানা গেছে।
হামলাকারীরা গ্রেনেড ছুঁড়তে ছুঁড়তে শিবিরের ভেতর ঢুকে পড়ে, আর তারপর দিনভর চলতে থাকে তীব্র গোলাগুলি। নাগরোটা সেনা এলাকার ঠিক বাইরে স্থানীয় একজন বাসিন্দা বলছিলেন, “ভোর পাঁচটা নাগাদ প্রথম আওয়াজ শুরু হয়। শুরুতে ছোট ছোট শব্দ হচ্ছিল, মানুষজন খুব একটা ভয় পায়নি – কিন্তু তার পর ক্রমেই সেই শব্দের তীব্রতা বাড়তে থাকে।” তিনি আরও জানান, “এরপরই এলাকার লোকজন সবাই আতঙ্কে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসে।” পাশ থেকে আর এক জানান, “গোলাগুলির এমন শব্দ হচ্ছিল যে মনে হচ্ছিল বজ্র-বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে”।
নাগরোটা সেনা-ছাউনির ভেতর যখন এনকাউন্টার চলছে, তখন আশেপাশে সব দোকানপাট, স্কুল-কলেজ বন্ধ রাখা হয়। শিবিরের খুব পাশ দিয়ে গেছে শ্রীনগরগামী ভারতের ১ নম্বর জাতীয় সড়ক, যান-চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয় সেই রাস্তাতেও। এসপি (ট্র্যাফিক) রোহিত কুমার জানান, “নিরাপত্তার স্বার্থেই এই জাতীয় সড়কে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।
তবে যে সব যাত্রী শ্রীনগর, ডোডা, কিশতওয়ার বা কাটরার পথে যাবেন, তাদের বাইপাস দিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেনা কর্তৃপক্ষের সবুজ সংকেত মিললেই আমরা এই রাস্তা খুলে দেব।” সেপ্টেম্বরে উরির হামলার ঠিক দশদিন পর ভারত পাকিস্তানের ভেতরে ঢুকে সুনির্দিষ্ট নিশানায় হামলা চালানো বা ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ করার কথা জানিয়েছিল, তার ঠিক দুমাসের মাথায় নাগরোটাতে এই হামলার ঘটনা ঘটল। ঘটনাচক্রে এদিনই অবসরে গেলেন পাকিস্তানের সেনাপ্রধান রাহিল শরিফ, বিদায়ের দিনে যিনি ভারতের উদ্দেশে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ‘পাকিস্তানের ধৈর্যকে ভারত যেন তাদের দুর্বলতা বলে না-ভাবে’।