কোটাব্যবস্থা অযৌক্তিক; লন্ডনে বিক্ষোভ ও সংঘর্ষ

Spread the love

বৈষম্য নয়- মেধাবীদের মূল্যায়ন করুণ
ছাত্রদের যৌক্তিক আন্দোলনে পুলিশ – ছাত্রলীগের গুলি
স্বাধীনতার ৫৩ বছর পর মুক্তিযোদ্ধা কোটা বৈষম্য নয় কি ?
রাজাকার তোকমা দিয়ে সাধারণ ছাত্রদের উপর হামলা

ডেস্ক রিপোর্টঃ সরকারি চাকরিতে কোটা নিয়ে বিক্ষোভে এপর্যন্ত ১৩ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। কোটা সংস্কারের দাবি জানিয়ে সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা আন্দোলন করলে সরকারের পুলিশ এবং ছাত্রলীগ কর্মীরা তাদের উপর গুলি চালায়। সরকারের ছাত্রলীগ নামক এই সংগঠনটিকে হেমলেট বাহিনী বলা হয়ে থাকে, কারন যেকোন আন্দোলন কর্মসূচীতে তারা সরকারের হয়ে পুলিশের সাথে হেমলেট পরে নির্বিচারে গুলি চালায়। ছাত্রদের আন্দোলন যৌক্তিক, তাদের আন্দোলন বৈষম্যবিরোধী কোটা সংস্কারের জন্য, কিন্তু শান্ত সৃষ্ট এই আন্দোলনে রাজাকারের তোকমা দিয়ে উসকে দেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার মতে আন্দোলনকারী ছাত্ররা রাজাকারদের সন্তান। একই বক্তব্য প্রধান করে তার দলের অন্যান্য মন্ত্রিরাও। ওবায়দুল কাদের ছাত্রদের বিরুদ্ধে আন্দোলনে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে দলীয় নেতাকর্মীদের প্রস্তুতির আহবান জানান, অন্য মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক মুক্তিযোদ্ধাদের ছাত্রদের প্রতিপক্ষ করে আন্দোলনে নামার ঘোষণা করেন। বুধবার অপর এক ভাষণে শেখ হাসিনা ছাত্রদের দাবী আদালতে সমাধান হবে বলে জানান।

কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে লন্ডনে ছড়িয়ে পড়ছে আন্দোলন। বৃহস্পতিবার পূর্ব লন্ডনের আলতাব আলী পার্কে বিএনপি ও আওয়ামীলীগ সমর্থকদের মধ্যে সঙ্ঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এঘটনায়  হোয়াইটচ্যাপেল এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এর আগে প্রবাসীরা লন্ডনস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশন ঘেরাও করে। হোয়াইটচ্যাপেল আলতাব আলী পার্কে বাংলাদেশি শিক্ষার্থী এবং প্রবাসীদের উদ্যোগে একটি বিক্ষোভ চলছিল। এমন সময় বাংলাদেশ সরকার দলীয় সংগঠন ছাত্রলীগ এবং আওয়ামীলীগ কর্মীরা তাদের বিক্ষোভ সমাবেশে উসকানি প্রদান করে তাদের নিজস্ব আশ্রয়স্থল মাইক্রো বিজনেস সেন্টারে অবস্থান নেয়। প্রতিবাদে বিক্ষোভরত শিক্ষার্থী এবং প্রবাসীরা মাইক্রো বিজনেস সেন্টারে ছাত্রলীগ এবং আওয়ামীলীগ কর্মীদের দাওয়া করলে তারাও সেখান থেকে ইট পাটকেল ছুড়ে শিক্ষার্থীদের উপর। বাংলাদেশ কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা চাকরিতে তাদের মেধা মূল্যায়ন এবং বিশেষ কোটা পদ্ধতি বাতিলের দাবিতে আন্দোলন করছিল। বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি বক্তব্যে ছাত্র ছাত্রীদেরকে রাজাকার তকমা দিয়ে গালি প্রদান করেন। যার প্রেক্ষিতে দেশ জুড়ে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে।

বাংলাদেশে সরকারি চাকরি অত্যন্ত লোভনীয় কারণ তারা ভাল বেতন দেয়। মোট, অর্ধেকেরও বেশি পদ – কয়েক হাজার চাকরির পরিমাণ – নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর জন্য সংরক্ষিত। সমালোচকরা বলছেন যে এই ব্যবস্থা অন্যায়ভাবে সরকার সমর্থক গোষ্ঠীর পরিবারগুলিকে উপকৃত করে যারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সমর্থন করে, যিনি জানুয়ারিতে জোরপূর্বক টানা চতুর্থ নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন।

১৯৭১ সালে পাকিস্তানের কাছ থেকে দেশের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করা যুদ্ধ বীরদের আত্মীয়দের জন্য সরকারি খাতের কিছু চাকরি সংরক্ষণের ব্যবস্থার বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কয়েকদিন ধরে সমাবেশ করে আসছে।কিছু চাকরি নারী, জাতিগত সংখ্যালঘু এবং প্রতিবন্ধীদের জন্যও সংরক্ষিত। পোস্টের এক তৃতীয়াংশ যুদ্ধ বীরদের শ্রেণীভুক্ত পরিবারের সদস্যদের জন্য রাখা হয়। শিক্ষার্থীরা যুক্তি দেয় যে সিস্টেমটি বৈষম্যমূলক, এবং তারা মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ চায়।

সরকারি চাকরিতে সকল গ্রেডে কোটা বাতিল করে কেবল ‘অনগ্রসর গোষ্ঠীর জন্য সর্বোচ্চ পাঁচ শতাংশ বরাদ্দ’ রেখে কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবি জানিয়েছে আন্দোলনকারীরা। ২০১৮ সালে কোটা বাতিলের পরিপত্র জারির আগ পর্যন্ত সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা, জেলা, নারী, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী এবং প্রতিবন্ধী– এই পাঁচ ক্যাটাগরিতে মোট ৫৬ শতাংশ কোটা ছিল। তবে স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে চালু হওয়া প্রথম কোটা ব্যবস্থায় এই পরিমাণ ছিল আরও বেশি।

May be an image of text that says "বাংলা Bangla সংলাপ Sanglap Landon: Friday 19Jul 2024 Issue: 33 『비 A প্রবাসে আপনার কথা Fnglivh Seivina 22-23 Omeo โเนื কোটাব্যবস্থা অযৌক্তিক বৈর্যনয় বৈষম্য নয়- মেধাবীদের মূল্যায়ন হোক ছাত্রদের আদ্দেলনে পুলশ ছাত্রলীগের গুলি স্বাধনতার ០ বছর পরও মুক্িযোদ্বা কোটা কেন? Star রোটা প্র্থা নিপাত ছাত্র আন্দোলনের অতীত ইতিহাস ১৯৫২ ১৯৯০ মেসাবীর যাক ভাষা আন্দোলন সৈৈেরাচারবিরোধী ১৯৬২ আন্দোলন মুকি পাব শিক্ষা আন্দোলন ২০০৭ ১৯৬৯ শিক্ষক মুক্তি আন্দোলন গণঅভৃখান ২০২৪ ১৯৭১ ১৯ 'কোটা সংস্কার' মুক্তিযুদ্ধ আন্দোলন (রিপোর্ট (রিলোর্ট১ণৃণ্া) ১৯ পৃণ্ঠা)"

কোটা কী?
কোটা বলতে কোনো কিছুর নির্দিষ্ট একটি অংশকে বোঝায় যা সাধারণত একটি গোষ্ঠীর জন্য বরাদ্দ থাকে। মূলত সমাজের পিছিয়ে পড়া বা অনগ্রসর মানুষগুলোকে মূলধারায় অন্তর্ভুক্ত করতে পড়াশোনা, চাকরিসহ নানা ক্ষেত্রে কোটার ব্যবস্থা থাকে। ব্রিটিশ শাসনামলে সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে ভারতীয়দের জন্য কোটা ব্যবস্থা চালু ছিল।
পরবর্তী সময়ে পিছিয়ে পড়া মুসলিম জনগোষ্ঠীর জন্যও কোটা বরাদ্দ করা হয়। দেশভাগের পর পাকিস্তান আমলেও প্রদেশভিত্তিক কোটা বরাদ্দ ছিল।

সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও আধা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান এবং বিভিন্ন কর্পোরেশন ও দপ্তরে নিয়োগ এবং কোটা বণ্টনের বিষয়ে ১৯৭২ সালের পাঁচই সেপ্টেম্বর তৎকালীন সরকার একটি নির্বাহী আদেশ জারি করে।
এতে এসব প্রতিষ্ঠানে প্রথম শ্রেণির চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে ২০ শতাংশ মেধা এবং বাকি ৮০ শতাংশ জেলা কোটা রাখা হয়। এই ৮০ শতাংশ জেলা কোটার মধ্য থেকেই ৩০ শতাংশ কোটা মুক্তিযোদ্ধা এবং ১০ শতাংশ কোটা যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত নারীদের জন্য বরাদ্দের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
অর্থাৎ কোটার বড় একটি অংশই বরাদ্দ করা হয় মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য।
“সত্যিকার মুক্তিযোদ্ধাদের বেশিরভাগই ছিল– কৃষক, শ্রমিক, মজুর, তাঁতি। এরা কিন্তু সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষ ছিল। সেই কারণেই যখন দেশ স্বাধীন হলো তখন মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা করার চিন্তা থেকেই বলা হলো যে তারা কোটা পেতে পারে এবং সেই কোটা ব্যবহার করে তাদের পরিবারের উন্নতি হতে পারে। সে কারণেই মুক্তিযোদ্ধা কোটা আসছে,” বলেন সাবেক সচিব আবু আলম মো. শহীদ খান।
এর চার বছর পর অর্থাৎ ১৯৭৬ সালে প্রথমবারের মতো কোটা বণ্টনে পরিবর্তন আনা হয়। এসময় মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের পরিমাণ বাড়ানো হয় এবং শুধু নারীদের জন্য আলাদা করে কোটার ব্যবস্থা করা হয়।
অর্থাৎ মোট কোটার ৪০ শতাংশ মেধা, ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা, ১০ শতাংশ নারী, ১০ শতাংশ যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত নারী এবং বাকি ১০ শতাংশ কেবলই জেলার ভিত্তিতে নির্ধারণ করা হয়।
ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষদের কোটায় অন্তর্ভুক্ত করে এবং মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের পরিমাণ আরও বাড়িয়ে ১৯৮৫ সালে কোটা পদ্ধতির সংশোধন আনে তৎকালীন সংস্থাপন (বর্তমান জনপ্রশাসন) মন্ত্রণালয়।
এতে বলা হয়, “১ম ও ২য় শ্রেণির পদসমূহের জন্য মেধাভিত্তিক কোটা হইবে ৪৫ শতাংশ এবং জেলাভিত্তিক কোটা হইবে ৫৫ শতাংশ। এই জেলাভিত্তিক কোটার মধ্য হইতে মুক্তিযোদ্ধাদের ৩০ শতাংশ, মহিলাদের ১০ শতাংশ এবং উপ-জাতীয়দের জন্য ৫ শতাংশ পদ সমন্বয় করিতে হইবে।”
১৯৯০ সালে নন-গেজেটেড পদগুলোর নিয়োগে কোটা পদ্ধতিতে আংশিক পরিবর্তন আনা হলেও প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে তা অপরিবর্তিত থাকে।

কোটায় মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও নাতি-নাতনিঃ
সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের অন্তর্ভুক্ত করা হয় ১৯৯৭ সালে। ১৯৮৫ সালের কোটা বণ্টন অপরিবর্তিত রেখে কেবল ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটায় “উপযুক্ত মুক্তিযোদ্ধা প্রার্থী পাওয়া না গেলে মুক্তিযোদ্ধা/শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের পুত্র-কন্যা”র জন্য তা বরাদ্দের আদেশ জারি করা হয়।
এর কিছুদিন পর মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা কোটার পরিমাণ অনুযায়ী চাকরিতে নিয়োগ পাচ্ছেন না মর্মেও বেশ কয়েকটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
এসময় নির্দেশনা না মানলে “সংশ্লিষ্ট নিয়োগকারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে” বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়।
বিভিন্ন সময় কোটা ব্যবস্থায় এসেছে পরিবর্তন। তবে ২০০২ সালে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের সময়ে আরেকটি পরিপত্র জারি করে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বরাদ্দ কোটা বণ্টনের বিষয়ে আগের জারি করা পরিপত্রগুলো বাতিল করা হয়।
এতে বলা হয়, “মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য নির্ধারিত ৩০% কোটা অন্য প্রার্থী দ্বারা পূরণ না করে সংরক্ষণ করার যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল, তা সংশোধনক্রমে সরকার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন যে, ২১ তম বিসিএস পরীক্ষা থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য নির্ধারিত ৩০% কোটায় উপযুক্ত প্রার্থী পাওয়া না গেলে উক্ত কোটার শূন্যপদগুলো (ক্যাডার ও নন-ক্যাডার) মেধাভিত্তিক তালিকায় শীর্ষে অবস্থানকারী প্রার্থীদেরকে দিয়ে পূরণ করা যেতে পারে।”
অর্থাৎ মুক্তিযোদ্ধা কোটার ৩০ শতাংশে যোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে মেধা তালিকার প্রার্থী থেকে নিয়োগের নির্দেশ দেয়া হয়।
২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার গঠন করলে এই নির্দেশনাও বাতিল করা হয়।
একইসঙ্গে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য নির্ধারিত কোটা পূরণ করা সম্ভব না হলে পদ খালি রাখার নির্দেশ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে সংস্থাপন মন্ত্রণালয়।
কোটায় পরবর্তী পরিবর্তন আসে ২০১১ সালে। এসময় মুক্তিযোদ্ধার নাতি-নাতনিদেরও ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটায়
সবশেষ ২০১২ সালে এক শতাংশ প্রতিবন্ধী কোটা যুক্ত করে প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার।

যেভাবে শুরু কোটা আন্দোলন:
সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও আধা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধার চেয়ে কোটার পরিমাণ বেশি থাকায় এটি নিয়ে বরাবরই অসন্তোষ ছিল।
এমন প্রেক্ষাপটে বেশ কয়েকবারই কোটা আন্দোলন হয়। তবে তা ছিল খুবই সীমিত আকারে।
কোটা আন্দোলন প্রথমবারের মতো বড় আকারে রূপ নেয় ২০১৮ সালে।
ওই বছরের জানুয়ারি মাসের শেষের দিকে সরকারি চাকরিতে কোটা প্রথা বাতিল এবং এর পুর্নমূল্যায়ন চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র ও দুই সাংবাদিক।
এতে কোটা পদ্ধতিকে সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলেও উল্লেখ করা হয়।
কিন্তু মার্চ মাসে এসে ওই রিটটি খারিজ করে দেন সর্বোচ্চ আদালত।
এদিকে আদালতে রিট করার পরপরই ফেব্রুয়ারি মাসে সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে ‘কোটা সংস্কার চাই’ নামে একটি পেইজ খোলা হয় এবং শাহবাগকে কেন্দ্র করে পেইজটি থেকে মানবন্ধনসহ নানা কর্মসূচির ঘোষণা দেয়া শুরু হয়।
এর মাধ্যমেই মূলত কোটা সংস্কার আন্দোলন দানা বাঁধতে থাকে।
এসময় কোটা সংস্কারের উদ্দেশ্যে ‘বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’ নামে একটি প্ল্যাটফর্মও গঠন করা হয়।
রিট খারিজ হবার পর কোটা পদ্ধতিতে কোনো পরিবর্তন করা হবে না মর্মে আদেশ জারি করা হয়। তবে কোটা কার্যকর করার ক্ষেত্রে কিছুটা শিথিলতা আনে সরকার।
জনপ্রশাসন থেকে জারি করা ওই আদেশে বলা হয়, “সব ধরনের সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটায় যোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে মেধা তালিকার শীর্ষে অবস্থানকারী প্রার্থীদের দিয়ে সেসব পদ পূরণ করা হবে।”
অর্থাৎ আগের একটি আদেশের মাধ্যমে যেখানে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পূরণ না হলে কোটা খালি রাখার কথা বলা হয়েছিল, সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে সরকার এবং মেধা তালিকা থেকে নিয়োগের কথা জানায়।
তবে দাবি আদায়ে অনড় থাকে শিক্ষার্থীরা।

কোটা নিয়ে বিতর্ক থামছে না কেন?
বাংলাদেশে উচ্চ আদালতের একটি রায়ের পর সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা নিয়ে বিতর্ক ও বিক্ষোভ নতুন করে ডালপালা মেলেছে।
বুধবার সরকারি নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা ব্যবস্থা পুনর্বহাল করার রায় দিয়েছে দেশটির হাইকোর্ট।
এরপর থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তুমুল আলোচনা চলছে কোটা পুনর্বহাল ইস্যুকে কেন্দ্র করে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ একাধিক স্থানে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন সাধারণ শিক্ষার্থীদের অনেকে।
কোটা আন্দোলনের একজন সংগঠক রাশেদ খান বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন, তারা ভেবেছিলেন কোটা ব্যবস্থা ইতোমধ্যেই একটি “মীমাংসিত” বিষয়ে পরিণত হয়েছে। কিন্তু, আদালতের রায়ে তাদের সেই ভুল ভেঙেছে।
তবে কোটা বাতিল করে হাইকোর্টের রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের বিভিন্ন সংগঠন।
বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের সাংগঠনিক সম্পাদক রহিমুল ফারুক বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, ‘’এটা আমাদের প্রাপ্য অধিকার বলে মনে করি। সেদিক থেকে এই রায় আমাদের জন্য একটি বিশাল অর্জন, আমাদের অধিকার রক্ষা করা হয়েছে। এমনকি ৩০ শতাংশের বদলে ২০ শতাংশ হলেও কোটা ব্যবস্থা থাকা উচিত। হাইকোর্টের রায়ের দ্রুত বাস্তবায়ন হোক, এটাই প্রত্যাশা করি।‘’
তবে, কোটা ব্যবস্থার পক্ষে ও বিপক্ষে নানারকম মন্তব্য করেছেন সামাজিক মাধ্যমের ব্যবহারকারীদের কেউ কেউ।
কোটা ব্যবস্থা নিয়ে এই বিতর্কের পেছনে এটির প্রচলন এবং বাতিলের প্রক্রিয়ার মধ্যেই গলদ দেখছেন কোনো কোনো বিশ্লেষক।
“আবেগতাড়িত, সুবিবেচনাপ্রসূত নয়”
২০১৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ কোটা প্রচলিত ছিল। তবে, ওইবছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ব্যাপক কোটা বিরোধী আন্দোলন হয়।
তার পরিপ্রেক্ষিতে নবম থেকে ত্রয়োদশ গ্রেড পর্যন্ত চাকরির ক্ষেত্রে কোটা ব্যবস্থা পুরোপুরি বাতিল করে দেয় সরকার।
তার আগে এসব পদে চালু থাকা কোটার ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধার সন্তান এবং তাদের নাতি-নাতনিদের জন্য সংরক্ষিত ছিল।
এর বাইরে নারীদের জন্য ১০ শতাংশ, অনগ্রসর জেলার বাসিন্দাদের জন্য ১০ শতাংশ, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জন্য ৫ শতাংশ আর প্রতিবন্ধীদের জন্য এক শতাংশ আসন থাকতো।
কোটা আন্দোলনের শুরু থেকেই কোটার সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে যারা কথা বলে আসছিলেন তাদের একজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল।
পত্র-পত্রিকায় এ বিষয়ে বিভিন্ন সময় লেখালেখিও করেছেন তিনি।
কোটার হার বাড়ানো এবং বাতিলের সিদ্ধান্তগ্রহণের প্রক্রিয়াকেই এ সংক্রান্ত বিতর্কের জন্য দায়ী মনে করেন অধ্যাপক নজরুল।
বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন, “প্রথম যখন সরকারি চাকরিতে কোটা ক্রমবর্ধমান হারে বাড়িয়ে, ৫৬ শতাংশে নিয়ে যাওয়া হলো, সেটি ছিল আতবেগতাড়িত এবং একতরফা সিদ্ধান্ত”।
বাতিলের ক্ষেত্রেও একই প্রবণতা দেখেন এই অধ্যাপক।
“সংস্কার না করে পুরোটা বাতিল, জেদের বশে, আবেগের বশে করা হয়েছে। সেটিও সুবিবেচনাপ্রসূত হয়নি।”

লন্ডনে বিক্ষোভ

কোটা সংস্কার কেন জরুরি?
প্রথমত কোটার বড় অংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা দাবী করার জন্য কোনো মুক্তিযোদ্ধা অবশিষ্ট নেই। তাদের নাতিপুতিদের জন্য এই কোটা বরাদ্দ রেখে সারাদেশের ছাত্রদের বঞ্চিত করা হয়েছে। সর্বশেষ প্রস্তুতকৃত তালিকা অনুযায়ী নিবন্ধিত মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা দুই-আড়াই লাখ, অর্থাৎ এক হাজার মানুষের মাঝে মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ১.২ জন বা ১.৫ জন। যা সমগ্র জনসংখ্যার ০.১২/০.১৫ শতাংশ। ০.১২ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধার জন্য কোটার পরিমাণ ৩০ শতাংশ। যা হাজারে রূপান্তর করলে দেখা যায়, এক হাজার জনতার মাঝে ১ থেকে ১.৫ (দেড়) জন মুক্তিযোদ্ধার জন্য কোটার পরিমাণ ৩০০। এর মতো বড় বৈষম্য আর কী হতে পারে!
বর্তমানে বাংলাদেশের বিভিন্ন সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে ৫৫ শতাংশের বেশি কোটা রয়েছে যার মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৩০ শতাংশ, জেলাভিত্তিক কোটা ১০ শতাংশ, নারীদের জন্য ১০ শতাংশ এবং ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জন্য ৫ শতাংশ। তবে নিয়ম অনুসারে এসব কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে ১ শতাংশ প্রতিবন্ধীদের জন্য বরাদ্দ রয়েছে। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সংবিধানের ১৯ (১), ২৯ (১) ও ২৯ (২) অনুচ্ছেদ সমূহে চাকুরির ক্ষেত্রে সকল নাগরিকের সমান সুযোগের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৩০% বরাদ্দ রেখে সকল নাগরিকের সমান সুযোগের অধিকার ক্ষুন্ন করা হয়েছে।
আর সবচেয়ে বড় কথা হলো, কোটা রাখতে হয় পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীদের জন্য। অথচ জন্ম থেকেই মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান ও নাতিপুতিরা সুবিধা পেয়ে যাচ্ছে। একজন ব্যক্তি হাসপাতাল, ট্রেন, বাস, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি ইত্যাদি সকল ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পেয়ে আসছে। সে কীভাবে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী হয়!

২০১৮ সালের আন্দোলন:
সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও আধা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধার চেয়ে কোটার পরিমাণ বেশি থাকায় এটি নিয়ে বরাবরই অসন্তোষ ছিল। এমন প্রেক্ষাপটে ছাত্রদের দাবীকে সামনে রেখে ছাত্রশিবির বেশ কয়েকবারই কোটা সংস্কার আন্দোলন করে। তবে তা ছিল সীমিত আকারে। কোটা আন্দোলন প্রথমবারের মতো বড় আকারে রূপ নেয় ২০১৮ সালে। ওই বছরের জানুয়ারি মাসের শেষের দিকে সরকারি চাকরিতে কোটা প্রথা বাতিল এবং এর পুর্নমূল্যায়ন চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র ও দুই সাংবাদিক।
এতে কোটা পদ্ধতিকে সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক বলেও উল্লেখ করা হয়। কিন্তু মার্চ মাসে এসে ওই রিটটি খারিজ করে দেন সর্বোচ্চ আদালত। এদিকে আদালতে রিট করার পরপরই ফেব্রুয়ারি মাসে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ‘কোটা সংস্কার চাই’ নামে একটি পেইজ খোলা হয় এবং শাহবাগকে কেন্দ্র করে তাতে মানবন্ধনসহ নানা কর্মসূচির ঘোষণা দেয়া শুরু হয়। এর মাধ্যমেই মূলত কোটা সংস্কার আন্দোলন দানা বাঁধতে থাকে।
এ সময় কোটা সংস্কারের উদ্দেশ্যে ‘বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’ নামে একটি প্ল্যাটফর্মও গঠন করা হয়। রিট খারিজ হওয়ার পর কোটা পদ্ধতিতে কোনো পরিবর্তন করা হবে না মর্মে আদেশ জারি করা হয়। তবে কোটা কার্যকর করার ক্ষেত্রে কিছুটা শিথিলতা আনে সরকার। জনপ্রশাসন থেকে জারি করা ওই আদেশে বলা হয়, ‘সব ধরনের সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটায় যোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে মেধা তালিকার শীর্ষে অবস্থানকারী প্রার্থীদের দিয়ে সেসব পদ পূরণ করা হবে।’ এটা ছিল ২০০২ সালে ছাত্রশিবিরের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে জোট সরকারের সময়কার সিদ্ধান্ত। অর্থাৎ ২০০২ সালে আদেশের মাধ্যমে যেখানে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পূরণ না হলে কোটা খালি রাখার কথা বলা হয়েছিল, সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে সরকার এবং মেধা তালিকা থেকে নিয়োগের কথা জানায়।

তবে দাবি আদায়ে অনড় থাকে শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবি ছিল ৫ টি।
১. সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে বর্তমান কোটা ৫৬ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশ করা।
২. কোটায় যোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে মেধাতালিকা থেকে শূন্য পদে নিয়োগ দেওয়া।
৩. সরকারি চাকরিতে সবার জন্য অভিন্ন বয়সসীমা নির্ধারণ।
৪. কোটায় কোনও ধরনের বিশেষ পরীক্ষা না রাখা।
৫. চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় একাধিকবার কোটার সুবিধা ব্যবহারের সুযোগ বন্ধ করা।

এ সময় আন্দোলনকারীদের কর্মসূচিতে টিয়ারগ্যাস ও ফাঁকা গুলি চালানোসহ কয়েকজনকে আটক করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ওই বছর এপ্রিলে এই আন্দোলন সর্বব্যাপী রূপ লাভ করে। শাহবাগ থেকে ডাকা আন্দোলনে অংশ নিয়ে সারাদেশেই ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন শুরু করে শিক্ষার্থীরা। টানা আন্দোলন কর্মসূচির মুখে ১১ এপ্রিল সংসদে দাঁড়িয়ে সব ধরনের কোটা বাতিলের ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয় আরো পরে- অক্টোবর মাসে।

এ সময় নবম থেকে ১৩তম গ্রেড পর্যন্ত অর্থাৎ প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটা বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার। ১৪তম থেকে ২০তম অর্থাৎ তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর পদগুলোতে কোটায় প্রার্থী পাওয়া না গেলে মেধা থেকেই নিয়োগের কথাও জানানো হয়। তবে প্রধানমন্ত্রীর কোটা বাতিলের ঘোষণার পর থেকে পরিপত্র জারি করা পর্যন্ত সময়ের মধ্যে আন্দোলনের সমন্বয়কারীদের ওপর হামলা ও গ্রেফতারের বেশ কিছু ঘটনা গণমাধ্যমে আসে।

লন্ডনে বিক্ষোভ

কোটা নিয়ে যা বলছেন বিশ্লেষকরা:
১৯৭২ সালে কোটা ব্যবস্থা চালুর পর থেকেই মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ৩০ শতাংশ কোটা ছিল। পরবর্তী সময়ে একই কোটায় মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান ও নাতি-নাতনিদের জন্য সেই কোটা বরাদ্দ করা হয়। ২০১৮ সালের কোটা আন্দোলনে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় ছিল মুক্তিযোদ্ধা কোটার পরিমাণ। এবারের আন্দোলনেও বারবারই উঠে এসেছে মুক্তিযোদ্ধা কোটার বিষয়টিই।
“কোটার উদ্দেশ্য হচ্ছে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বা সমতল ক্ষেত্র তৈরির চেষ্টা করা। মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা অসম আছে কি না এটা একটা বিষয়,” বলেন সাবেক সচিব ও অর্থনীতিবিদ মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। এছাড়াও প্রতিবন্ধী বাদে অন্য কারো জন্য প্রয়োজন আছে কি না- এমন প্রশ্নও তোলেন তিনি। এসময় কোটার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষেত্রে নির্বাহী ক্ষমতার প্রসঙ্গও টানেন মি. খান। তিনি বলেন, “এটা কি সরকারের নির্বাহী ক্ষমতার বিষয় না আদালতের বিষয়? ব্যক্তির অধিকার যদি ক্ষুণ্ণ হয় কিংবা সংবিধানের ব্যত্যয় ঘটলে সেটা আদালতের বিষয়। কিন্তু এক্ষেত্রে তেমনটা হয়েছে বলে মনে হয় না। আগেতো নির্বাহী আদেশেই (কোটা) দেয়া হয়ছিল, আর নির্বাহী আদেশেই তা তুলে নেয়া হয়েছে।”
মোটাদাগে কোটা ব্যবস্থাকে সরলভাবে দেখার সুযোগ নেই বলেই মত বিশ্লেষকদের।
যেই পিছিয়ে পড়া মানুষদের জন্য কোটা রাখা হচ্ছে তা কীভাবে ব্যবহার হচ্ছে এবং কতটা কাজে লাগছে– সে বিষয়টাতেও নজর দেয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন সাবেক সচিব আবু আলম মো. শহীদ খান।“কোটা একটা পরিবার কয়বার ব্যবহার করতে পারবে? পশ্চাৎপদ কোনো পরিবারের একজন একবার চাকরি পেয়ে গেলে সে আর পশ্চাৎপদ থাকছে না। এছাড়াও পশ্চাৎপদতার আয়ের সিলিং থাকতে হবে। সব মিলিয়ে কোটা থাকবে কিন্তু কীভাবে পরিচালিত হবে ওটা নিয়ে অনেক ভাবনার বিষয় আছে,” বলেন তিনি।

ইতিহাসে ঘটে যাওয়া ছাত্র আন্দোলন
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক ইতিহাসে ছাত্র সমাজের ভূমিকা সবচেয়ে অগ্রগন্য। সম্ভাবনাময় বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের অভ্যূদয়ের ইতিহাসের দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে সকল শৃঙ্খল, অন্যায়-অবিচার ও স্বৈরাচারী শাসন থেকে মুক্তির সুতিকাগার হয়ে উঠেছে ছাত্র আন্দোলন। এই লেখাটিতে চলমান আন্দোলনসহ বাংলাদেশের ইতিহাসের কয়েকটি সফল ছাত্র আন্দোলনের সংক্ষিপ্ত বিবরণ তুলে ধরা হলো—

১৯৫২ ভাষা আন্দোলনঃ
১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা ভঙ্গের প্রস্তুতি নিচ্ছে শিক্ষার্থীরা । ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শক্তির হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার পর এই অঞ্চলের ছাত্রসমাজই প্রথম অনুধাবন করেছিলো আমাদের প্রকৃত মুক্তি হয়নি। শোষনের জাল বিস্তার করে আছে চতুর্দিকে। দেশভাগের মাত্র সাত মাসের মাথায় ১৯৪৮ সালের ১১ই মার্চ বাংলার ছাত্রসমাজকে রাষ্ট্রভাষার দাবিতে মাঠে নামতে হয়। ওই সময় মূখ্যমন্ত্রী খাজা নাজিমউদ্দিনের পুলিশ বাহিনীকে উপেক্ষা করে মিছিল করেছিলো ছাত্ররা। এই প্রতিবাদের ধারাবাহিকতায় ১৯৫১ সালে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা গড়ে তোলে ‘রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ’। ১৯৫২ সালের ২৭ জানুয়ারি খাজা নাজিমুদ্দিন ঘোষণা দেন- উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা। যে নাজিমুদ্দিন ১৯৪৮ সালে রাষ্ট্রভাষার দাবি মেনে চুক্তি স্বাক্ষর করেন সেই নাজিমুদ্দিন বাঙালি জাতির সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে বসেন। আর তাতেই গর্জে ওঠে ছাত্রসমাজ। ২১ ফেব্রুয়ারি প্রতিবাদ মিছিলে নামে তারা। দেশের ছাত্রজনতা যোগ দেয় মিছিলে। ১৪৪ ধারা ভঙ্গের অভিযোগে মিছিলে গুলি বর্ষণ করে পুলিশ তাতেই নিহত হয় রফিক, শফিক, জব্বার, শফিউরসহ আরো কয়েকজন। শফিউর ছিলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। যার ফলে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে পুরো বিশ্ববিদ্যালয়। চাপের মুখে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হয় সরকার।

১৯৬২ শিক্ষা আন্দোলনঃ
১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলনের উত্তাল ঢাবি ক্যাম্পাস। ক্ষমতা দখলের মাত্র দুইমাসের মাথায় অর্থাৎ ১৯৫৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর আইয়ুব খান শিক্ষা কমিশন গঠন করে। এই কমিশন ১৯৫৯ সালের আগস্টে শিক্ষা রিপোর্ট প্রণয়ন করে । এই রিপোর্টে শিক্ষা ব্যবস্থায় যে সকল প্রস্তাব ছিলো তাতে আইয়ুব খানের ধর্মান্ধ, ধনবাদী, রক্ষণশীল, সাম্রাজ্যবাদী শিক্ষা সংকোচন নীতির পূর্ণ প্রতিফলন ঘটেছিল। এই নীতিতে শিক্ষা স্তরে বৈষম্যসহ উচ্চশিক্ষা ধনিক শ্রেণির জন্য সংরক্ষিত হয়েছিলো। এখানে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে স্বায়ত্বশাসন থেকে সরকারি নিয়ন্ত্রণের নেয়া, বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে রাজনীতি নিষিদ্ধ করা, ছাত্র-শিক্ষকদের কার্যকলাপের উপর তীক্ষ্ন নজর রাখা ছাড়াও শিক্ষদের কর্মঘন্টা ১৫ ঘন্টা করা হয়। রিপোর্টে বাংলা ও উর্দু হরফের পরিবর্তে রোমান বর্ণমালা ব্যবহারেরও প্রস্তাব তরা হয়।
আইয়ুব খান এই কমিশন রিপোর্টে শিক্ষাকে পণ্য হিসেবে বর্ণনা করেন। এই রিপোর্টে তার সাম্প্রদায়িক চেতনা আরো প্রকটিত হয়। এই শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলার লক্ষে ১৯৬০ এবং ১৯৬১ সালে একুশে ফেব্রুয়ারি উদযাপন করে। ১৯৬১ সালে রবীন্দ্র জন্মশতবার্ষিকী পালনে বাধা আসে। তারপরও পালিত হয়।
১৯৬২ সালের ৩০ জানুয়ারি সোহরাওয়ার্দী গ্রেফতার হলে ফেব্রুয়ারি জুড়ে আন্দোলন চাঙা থাকে। ছাত্র ধর্মঘট, রাজপথে মিছিল, প্রতিবাদ সমাবেশের মতো কর্মসূচি চলতে থাকে। ছাত্রদের প্রতিহত করতে পুলিশের পাশাপাশি সেনা মোতায়েন করা হয়। বসানো হয় ফিল্ড কামান। প্রচণ্ড বৃষ্টির মধ্যে পুলিশ বেষ্টনিতে আটকতা পড়া শিক্ষার্থীদের নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়। আর ছাত্রসমাজ জড়িয়ে পড়ে আইয়ুব খানের শিক্ষানীতির বিরোধী আন্দোলনে।
জুনে দিকে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে ঢাকা কলেজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল স্কুল, ন্যশনাল মেডিকেল ইনিস্টিটিউটসহ বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। আগস্টে ছাত্র ধর্মঘট ও সচিবালয় ঘেরাও কর্মসূচি দেয়া হয়। ১৭ সেপ্টেম্বর আন্দোলন পরিণতির দিকে যায়। দেশব্যাপি হরতাল পালিত হয়। ছাত্রদের সাথে যোগ দেয় সাধারণ মানুষ। হরতালের মিছিল নবাবপুরের দিকে যাওয়ার সময় পিছন থেকে আক্রমন করে পুলিশ ও ইপিয়ার। লাঠিচার্জ, কাঁদানে গ্যাস ছাড়াও তার গুলি চালায়। পুলিশের সাথে দ্বিতীয় দফায় সংঘর্ষ ঞয় কোর্ট এলাকায়। পুলিশের গুলিতে নিহত হয় তিন জন। বাবুল গোলাম মোস্তফা, ওয়াজিউল্লাহ। আহত হন আরও অনেকে। গ্রেফতার হয় শত শত শিক্ষার্থী। সরকার শ্রেফ এক বিবৃতি দিয়ে ধামাচাপা দেয় প্রকৃত ঘটনার।

১৯৬৯ গণঅভ্যূত্থানঃ
বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় উনসত্তরের গণঅভ্যূত্থান। ১৯৬৮ সালের নভেম্বরে ছাত্র অসন্তোষকে কেন্দ্র করে আইয়ুব খানের স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে। আর মজলুম জননেতা মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ঘোষিত গভর্নর হাউস ঘেরাওয়ের মাধ্যমে তা গণআন্দোলনে রূপ নেয়।
১৯৬৯ সালের ৪ জানুয়ারি গঠন করা হয় ‘ছাত্র সংগ্রাম কমিটি’ যারা ১১ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করে। ১১ দফার মধ্যে ১৯৬৬ সালের আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন সম্পর্কিত ৬ দফার সাথে ছাত্রদের সমস্যাকেন্দ্রিক দাবি দাওয়া এবং কৃষক-শ্রমিকদের স্বার্থকেন্দ্রিক দাবিসমূহ অন্তর্ভূক্ত করা হয়। সময়োপযোগী এই পদক্ষেপের ফলে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহারের বিষয়টিও সামনে আসে।
সরকারি নিপীড়নের বিরুদ্ধে ফুসে উঠা জনগণ ২০ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় ছাত্রসভা ও প্রতিবাদ মিছিলের কর্মসূচি হাতে নেয়। এ মিছিলে পুলিশের গুলিতে ছাত্রনেতা আসাদউজ্জামান নিহত হলে গণজাগরণ রূপ নেয় গণঅভ্যূত্থানে। ২৪ জানুয়ারি গুলিতে নবম শ্রেনির ছাত্র মতিউর এবং ছুরিকাঘাতে নিহত হলে পরিস্থিতি সরকারের নাগালের বাইরে চলে যায়। সরকার সেনাবাহিনীর উপর শহরের নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দেয় এবং অনির্দিষ্টকালের জন্য সান্ধ্য আইন জারি করা হয়। গণঅভ্যূত্থানের শেষ প্রভাবক হিসেবে নিহত হন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. শামসুজ্জোহা। অবশেষে বাধ্য হয়ে আইয়ুব খান গোলটেবিল বৈঠকের আহ্বান করেন এই গোলটেবিল বৈঠক ব্যর্থ হলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হলে ২৫ মার্চ ১৯৬৯ সালে ইয়াহিয়া খানের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। এতে করে গণঅভ্যূত্থান কিছুটা স্তমিত হলেও তৈরি হয় নতুন রাষ্ট্র গঠনের আকাঙ্খা।

১৯৭১ মুক্তিযুদ্ধঃ
যুদ্ধের ট্রেনিং নিচ্ছে কতিপয় ছাত্র। সাল ১৯৭১ বাংলাদেশের সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণে বিজয় এসেছিল মহান মুক্তিযুদ্ধে। অন্যান্য সকল আন্দোলনের মতো মুক্তিযুদ্ধেও ছিল ছাত্রদের সরব ভূমিকা। স্লোগান দেয়া থেকে শুরু করেে অস্ত্র হাতে শত্রুর মোকাবেলা কি করেনি ছাত্র সমাজ।
১৯৭১ সালের পহেলা মার্চ ইয়াহিয়া খান ২ মার্চ হতে যাওয়া গণপরিষদের অধিবেশন স্থগিত করলে বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে বাংলা। ২ মার্চ ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের এক জনসভায় প্রথম বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। একই সময় ছাত্র ইউনিয়নও এক অভিন্ন জনসভা করেন। ৩ থেকে ৬ মার্চ ছাত্ররা পরীক্ষা বন্ধ রেখে হরতাল পালন করে।
সে সময়ের নামকরা ছাত্র নেতারা ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন যুদ্ধে। ২৫ মার্চ কালো রাতে পাকিস্তানি সামরিকবাহিনী প্রথম আক্রমন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকদের উপর। যার ফলে জনমনে ক্ষোভের সঞ্চার হয় এবং সংশস্ত্র সংগ্রামে জনগণকে লিপ্ত হতে উৎসাহ দেয়। যুদ্ধের নয় মাস ছাত্ররা সারা বাংলায় শত্রুর মোকাবেলা করার সাহস জুগিয়েছে। অসংখ্য ছাত্র সীমানা পেরিয়ে ভারত চলে গেছে যুদ্ধের প্রশিক্ষণে। ফিরে এসে লড়াই করেছে। রক্তের বিনিময়ে দেশকে শত্রুমুক্ত করেছে।

১৯৯০ স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনঃ
রক্তপাতহীন এক সামরিক অভ্যূত্থানের মাধ্যমে ১৯৮২ সালের ২৪ শে মার্চ তৎকালীন সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ রাষ্ট্র ক্ষমতা গ্রহণ করেন। ক্ষমতায় বসেই তিনি সামরিক শাসন জারি করেন। সেই সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে প্রথম গর্জে ওঠে ছাত্রসমাজ। ১৯৮৩ এবং ৮৪ সালে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের মিছিলে সেনাবাহিনীর হামলায় নিহত হয় অনেক ছাত্রছাত্রী। এই ঘটনার পর থেকে এরশাদ বিরোধী ছাত্র আন্দোলন শুরু হয়। স্বৈরচার বিরোধী আন্দোলনের সমাপ্তি ঘটে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর।
১৯৯০ সালের ১০ অক্টোবর জেহাদ নামক এক ছাত্র পুলিশের গুলিতে নিহত হলে সেই মৃত লাশকে কেন্দ্র করে একত্রিত হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ছাত্র সংগঠকরা। ২৪টি ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সমর্থনে গড়ে ওঠে ‘সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য’। এর সাথে আন্দোলনে যুক্ত হয়েছিল রাজনৈতিক নেতা-কর্মীরা। ছাত্র সংগঠনের মিলিত শক্তির সামনে সেনাবাহিনী কার্যকর কিছু করে উঠতে পারেনি। ছাত্রদের আন্দোলনে জনগণ সমর্থন দেয়া মাত্রই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ ৪ ডিসেম্বর পদত্যাগের ঘোষণা দেন। এবং গণঅভ্যূত্থানের মুখে ৬ ডিসেম্বর পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। ইতিহাসে ৯০’র স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন পুরোপুরি ছাত্রদের দৃঢ়তায় সফল হয়েছিল। সে সময় ছাত্ররা নিজ নিজ রাজনৈতিক নেতাদের আদেশ উপেক্ষা করে আন্দোলন চালিয়েছিল স্বৈরাচারী শাসকের বিরুদ্ধে। পতন ঘটায় এরশাদের।

২০০৭ শিক্ষক মুক্তি আন্দোলনঃ
তত্ত্বাবধায়ক-সেনা শাসিত বাংলাদেশে জরুরি অবস্থার অজুহাতে যেখানে সেখানে ক্যাম্প করছে সেনা বাহিনী। ২০০৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যাম্প করে সেনাবাহিনী। ২০ আগস্ট বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ এবং লোকপ্রশাসন বিভাগের ছাত্রদের মধ্যে ফুটবল খেলা চলছিল্ খেলা দেখাকে কেন্দ্র করে ছাত্র ও সেনাদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। নিরস্ত্র শিক্ষার্থীদের উপর নির্মম অত্যাচার চালায় সেনা বাহিনী। প্রতিবাদ করতে গেলে লাঞ্ছিত হন লোক প্রশাসন বিভাগের শিক্ষক মোবাশ্বের মোনেম।
শিক্ষক লাঞ্ছনার প্রতিবাদে গর্জে ওঠে ক্যাম্পাস। সেনাবাহিনীকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে সেনাদের ক্ষমা চাওয়ার দাবি করা হয়। সে দাবি মেনে না নিলে ক্যাম্পাস থেকে ক্যাম্প প্রত্যাহারের দাবি করা হয়। এই অবস্থায় ২১ আগস্ট নির্যাতনের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে আসে সকল শিক্ষার্থীরা। বিক্ষোভে গুলি চালায় পুলিশ। নীলক্ষেত, টিএসসি, কার্জন হল এলাকার মো মো করে টিয়ার সেল আর রাবার বুলেটে। ২২ আগস্ট আন্দোলন দেশব্যাপি ছড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কারফিউ জারি করা হয়। সন্ধ্যার মধ্যে হল ত্যাগের নির্দেশ দেয়া হয়।
২৩ আগস্ট রাতে আটক করা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন ও অধ্যাপক হারুন-অর-রশিদকে। এছাড়া শিক্ষকদের আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করায় গ্রেফতার হয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সাইদুর রহমান, আবদুস সোবহান, মলয় কুমার ভৌমিক, দুলাল চন্দ্র বিশ্বাস, আব্দুল্লাহ আল মামুন এবং সেলিম রেজা নিউটনকে।
কারফিউর রাতে এবং পরদিন আজিজ মার্কেট, বাস টার্মিনাল, রেল স্টেশনসহ যেখানে ছাত্র পেয়েছে শারীরিক নির্যাতন করেছে সেনাবাহিনী। ঘটনার দীর্ঘ ৬৬ দিনের মাথায় ক্যাম্পাস খুলে দেয়া হয়। ফিরে এসে আরো জোরালো দাবি তোলে গ্রেফতারকৃতদের মুক্তির । প্রবল চাপের মুখে সরকার আটকৃতদের মুক্তি দিতে বাধ্য হয়।

২০১৮-২০২৪ ‘কোটা সংস্কার’ আন্দোলনঃ
২০১৮ সালে এসে আবার গর্জে উঠেছে বাংলাদেশের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। বছরের প্রথমার্ধে শুরু হওয়া সরকারি চাকরিতে বৈষম্যমূলক কোটা পদ্ধতি সংস্কারের জন্য আন্দোলনে নামে ছাত্র সমাজ। সরকারের মিথ্যে আশ্বাসের সাথে যোগ হয় সরকারদলীয় ছাত্রলীগের হামলা। প্রকাশ্যে হামলা জঘন্য নিদর্শন প্রদর্শন করে তারা। পুলিশ এবং ছাত্রলীগের নির্বিচারে কোটা আন্দোলনকারীদের উপর হামলার কোন বিচারতো দূরের কথা উল্টো তাদের বিরুদ্ধে মামলা দেয় সরকার। হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে হাড় ভেঙ্গে দেয়া, নারীদের শ্লীলতাহানি, গভীর রাতে হল থেকে বের করে দেয়া, আহতদের বিনা চিকিৎসায় হাসপাতাল থেকে বের করে দেয়ার মতো ন্যাক্কারজনক কাজ করে ক্ষমতাসীনরা। এমনকি প্রতিশ্রুতি দিয়েও তা রাখেননি স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী।

অন্যদিকে কোটা সংস্কার আন্দোলন শেষ না হতেই রাজপথে নেমে আসে স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা। রাজধানীর কুর্মিটোলায় বাস চাপায় সহপাঠী নিহতের ঘটনার প্রতিবাদে রাষ্ট্র মেরামতের কাজে হাত দেয় তারা। ফিটনেসবিহিন গাড়ি ভাংচুর, ড্রাইভিং লাইসেন্সবিহিন ড্রাইভারদের পুলিশের কাছে সোপর্দ করা ছাড়াও যানবাহনকে শৃঙ্খলিত করার দারুণ নিদর্শন প্রদর্শন করে তারা। কিন্তু সেই শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে বাগড়া সরকারের। নৌপিরিবহন মন্ত্রী হেসে উড়িয়ে দেন মৃত্যুর ঘটনা, পরিবহন বন্ধ রাখে তার সংগঠন। বিতর্কিত ‘চুমু’ খাওয়ার বাক্য ব্যবহার করেন সড়ক ও সেতুমন্ত্রী। ছাত্রলীগের উপর দায়িত্ব দেয় আন্দোলন নিয়ন্ত্রণের আর তাতেই বিধি বাম। ছাত্রলীগ ফেরে তার চিরচারিত চেহারায়। স্কুল পড়ুয়া কোমলমতি শিক্ষার্থীদের উপর আক্রমন চালায়। পুলিশও সহযোগিতার হাত বাড়ায়। ছাত্রলীগ পুলিশ যৌথ হামলায় আহতের সংখ্যা অগণিত হয়ে দাঁড়িয়েছে। রণক্ষেত্র হয়ে উঠেছে দেশ।

ভয় নেই। আমাদের ছাত্র আন্দোলনের সফলতা ইতিহাস বদলে দেবার মতো। ইতিহাস বদলাবে। দেশে শৃঙ্খলা আসবে। একেকজন শিক্ষার্থী বারুদ হয়ে জ্বলে উঠবে। তাই ওদের সুরে বলতে চাই, ‘যদি তুমি ভয় পাও তবে তুমি শেষ, যদি তুমি ঘুরে দাঁড়াও তবে তুমি বাংলাদেশ।


Spread the love

Leave a Reply