ক্যান্সার: ‘আমার পাকিস্তানি আত্মীয়রা মনে করতো এটা ছোঁয়াচে’
বাংলা সংলাপ ডেস্কঃ সাজ দার যখন প্রথমবার গর্ভবতী হন তখন তিনি তার ডানদিকের স্তনে হাত বুলাতে গিয়ে একটি পিণ্ড বা চাকা অনুভব করেন।
তিনি সাথে সাথেই বুঝতে পারেন যে সেটি আসলে কী। তিনি এটাও বুঝতে পারেন যে, পরীক্ষা করিয়ে সময় ক্ষেপণ করার মতো সময় তার হাতে নেই।
কিন্তু বার্কশায়ারের স্লাউ শহরে তার পাকিস্তানি সম্প্রদায়ের মধ্যে একজন কুষ্ঠরোগীর মতো চিকিৎসা নেয়ার ভয় তাকে তাড়িত করে।
বেশ কয়েক সপ্তাহ তিনি নিজের উপর অনেকটা জবরদস্তি করেই এ বিষয়ে চিন্তা করা বন্ধ রাখেন এবং স্ক্রিনিংয়ের জন্য যাননি।
কিন্তু তার মা তাকে স্থানীয় এক চিকিৎসকের কাছে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য সাক্ষাতের সময় ঠিক করে দেন এবং তখনই কেবল তার পরীক্ষা করা হয়।
এতে তিনি জানতে পারেন যে, তার আসলে ক্যান্সারের মতো একটি পিণ্ড নয় বরং তিনটি আলাদা পিণ্ড রয়েছে।
তাকে তার গর্ভাবস্থা পরিহার করে সন্তান না নেয়ার পরামর্শ দেয়া হলেও তিনি তা নাকচ করেন। কিন্তু অতিরিক্ত চিকিৎসা ও ওষুধ গ্রহণের কারণে কয়েক সপ্তাহ পরেই গর্ভপাত হয় তার।
এর পরে ১০ বছর কেটে গেছে। কিন্তু মিস দার এখনো মনে করতে পারেন যে, কিভাবে তাকে একটি পারিবারিক অনুষ্ঠানে খাবারের সময় একবার ব্যবহারযোগ্য একটি থালা দেয়া হয়েছিল।
কারণ ওই অনুষ্ঠানের আয়োজক ভেবেছিলেন যে, ক্যান্সার ছোঁয়াচে।
“তারা আসলে মনে মনে ভাবছিল যে, আমি যে থালাটি ব্যবহার করবো সেই একই থালা তারা পরবর্তীতে আবার কিভাবে ব্যবহার করবে,” তিনি বলেন।
“আপনার নিজেকে বহিরাগত মনে হবে। রুম ভর্তি মানুষ থাকলেও মনে হবে যে আমি একা। আরেকটি অনুষ্ঠানে, মিস দার বলতে শোনেন যে, তার এক আত্মীয় বলছেন গ্লাসগুলো যাতে ভালোভাবে পরিষ্কার করা হয়।”
শিক্ষার অভাব এবং উদ্বেগের কারণে তিনি এ ধরণের ভয়ংকর পরিস্থিতির মুখে পড়েছেন। তবে তরুণ প্রজন্ম এ বিষয়ে বেশ উদার এবং জানেও। কিন্তু অনেককেই বড়রা শর্ত জুড়ে দিতো।
১৯৯৯ সালে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন তিনি।
তিনি মনে করেন যে, ক্যান্সারের চিকিৎসা তাদের বৈবাহিক সম্পর্কে ভাঙনের জন্য দায়ী।
“আমরা একসাথেই থাকতাম তবে স্বামী আর স্ত্রীর মতো নয়,” বলেন মিস দার।
অনেক দেরি হয়ে যাওয়ার আগেই প্রাথমিক অবস্থাতে স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমে ক্যান্সার সনাক্ত করা সম্ভব।
কিন্তু ক্যান্সার বিষয়ক দাতব্য প্রতিষ্ঠান ম্যাকমিলানের হিসাবে, শ্বেতাঙ্গদের তুলনায় কৃষ্ণাঙ্গ এবং এশিয়দের মধ্যে স্ক্রিনিং করানোর হার বেশ কম।
দাতব্য প্রতিষ্ঠানটি মনে করে এর পেছনে রয়েছে ক্যান্সার নিয়ে কম আলোচনা, ভাষার প্রতিবন্ধকতা এবং ‘সাংস্কৃতিক স্পর্শকাতরতা’।
‘অভিশপ্ত?’
লেস্টারের আনিশা ভানমালি ক্যান্সারের জন্য চিকিৎসা নিচ্ছেন।
“আমার মনে হয় যে, অনেক মানুষই আমার কাছে আসতে চায় না,” এক সন্তানের এই জননী বলেন, যাকে শুরু থেকেই একটি সংস্থা সহায়তা দিয়ে আসছে।
“আমি দেখি যে মানুষ কানাঘুষা করছে, কিন্তু যখন আমি তাদের দিকে তাকাই, তারা তখন অন্য দিকে তাকায়। আর এটা সব সময়ই ঘটে থাকে।”
“কৃতকর্ম একটা বিশাল জিনিস। আমার মনে হয় যে এই পরিস্থিতিতে আসার পেছনে নিশ্চয়ই আমার কোন কাজ দায়ী।
“আমার একটি পরিবার ছিল যারা অন্তত এতটুকু জানতে চেয়ে বার্তা পাঠাতো যে ‘তুমি কেমন আছ?’ গত কয়েক বছর ধরে তাদের সাথে আমার কোন কথা হয়নি।
“এশিয় সম্প্রদায় মনে করে যে তাদের ক্যান্সার হবে না, যা আসলে ঠিক নয়।”
শ্বেতাঙ্গদের(১৩%) তুলনায় কৃষ্ণাঙ্গ আফ্রিকান (২৫%) এবং কৃষ্ণাঙ্গ ক্যারিবিয়দের(২২%) মধ্যে শেষ স্তরে গিয়ে ক্যান্সারের চিকিৎসা নেয়ার হার বেশি।
ইংল্যান্ডের সরকারি স্বাস্থ্য বিভাগের ২০১৬ সালের পরিসংখ্যান অন্তত সেটাই বলে।
আর ম্যাকমিলানের হিসেবে:
•শ্বেতাঙ্গদের তুলনায় দ্বিগুণ পরিমাণ কৃষ্ণাঙ্গ পেটের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়
•শ্বেতাঙ্গ পুরুষদের তুলনায় কৃষ্ণাঙ্গ পুরুষদের মূত্র থলির ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা তিনগুণ বেশি
•এশিয়দের মধ্যে যকৃতের ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কা তিন গুণ বেশি
•কৃষ্ণাঙ্গ এবং এশিয় নারী যাদের বয়স ৬৫ বা তার বেশি তারা সার্ভিক্যাল ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকে।
বিএমই ক্যান্সার কমিউনিটির প্রধান রোজ থম্পসন নিজেও একজন ক্যান্সারের রোগী যিনি স্তন ক্যান্সারে নিজের মা, জমজ এক বোন এবং ছোট আরেক বোনকে হারিয়েছেন।
মিস থম্পসন বলেন, গত কয়েক বছরে সচেতনতা কিছুটা বেড়েছে কিন্তু ক্যান্সার নিয়ে এ ধরণের মিথ কিছু কিছু ক্ষেত্রে যেমন “গোঁরা সম্প্রদায় যেখানে মানুষের তথ্য জানার সুযোগ নেই” সেখানে প্রচলিত আছে।
ক্যান্সার চ্যাম্পিয়ন
ম্যাকমিলান রিডিংয়ে একটি পাইলট প্রকল্প চালু করা হয়েছে এই সমস্যাকে সামনে তুলে ধরার জন্য।
প্রতিষ্ঠানটি ২৫ জন্য ক্যান্সার চ্যাম্পিয়নকে নিয়োগ দিয়েছে যাদের কাজ তাদের একই জাতিগত পটভূমির মানুষদের ক্যান্সারের ঝুঁকি সম্পর্কে জানানো।
“আমরা জানি যে, সাউথ রিডিংয়ের জাতিগত সংখ্যালঘু এবং বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর মানুষের মধ্যে ক্যান্সার বিষয়ে সচেতনতা এবং বোঝাপড়াটা কম,” বলেন ডা. কাজল পাটেল যিনি বার্কশায়ার ওয়েস্ট ক্লিনিক্যাল কমিশনিং গ্রুপের ক্যান্সার বিষয়ক প্রধান।
“প্রায়ই দেখা যায় যে, এসব সম্প্রদায়ের যেসব সদস্যরা ক্যান্সারের চিকিৎসা নেয় তারা একদম শেষ পর্যায়ে পৌঁছে তারপর আসে। যার কারণে বেঁচে থাকার হারও কমে যায়।”
“তার উপর, তারা যে চিকিৎসা নেয় তা ক্যান্সারের হয় না ,যা আসলে তাদের প্রয়োজন।”