ক্যামেরনের পদত্যাগ দাবিতে লন্ডনে ব্যাপক বিক্ষোভ
বাংলা সংলাপ ডেস্ক:
পানামা পেপার্স কেলেঙ্কারীর জেরে চূড়ান্ত বিপাকে ব্রিটিশ প্রধানমনন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন। শনিবার তার পদত্যাগের দাবীতে প্রধানমন্ত্রীর বাস ভবন ১০ ডাউনিং স্ট্রিটের সামনে হাজার হাজার মানুষ বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে। পৈতৃক সম্পত্তি হিসেবে অফশোর কোম্পানির মালিকানা পেয়েছিলেন এমন স্বীকারোক্তির পর তার পদত্যাগ দাবি করেছেন বিরোধীরা।
পানামা পেপার্স ফাঁস হওয়ার পর কর ফাঁকির অভিযোগ প্রথমে অস্বীকার করলেও পরে তিনি স্বীকার করেন যে, পিতার প্রতিষ্ঠিত অফশোর কোম্পানি থেকে সুবিধাভোগ করেছেন। ক্যামেরনের বিরুদ্ধে ‘প্রতারণা’র অভিযোগ ওঠেছে। বিক্ষোভকারীদের দাবি, ক্যামেরন সৎ ও স্বচ্ছ ব্যক্তি নন। প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে তাকে পদত্যাগ করতেই হবে। লেবার পার্টির শ্যাডো চ্যান্সেলর ডোনেল বলেছেন, ক্যামেরন তার ‘বিশ্বাস’ হারিয়েছেন। তাই প্রধানমনন্ত্রী বিরুদ্ধে বিক্ষোভে নেমেছে নাগরিকরা।
লন্ডনের স্থানীয় সময় বেলা ১১টায় শুরু হওয়া বিক্ষোভে প্রায় ২ হাজার বিক্ষোভকারী অংশ নেন। সংবাদ মাধ্যমগুলোর খবরে বলা হচ্ছে, আন্দোলনকারীদের একটা বড় অংশ ফেসবুক. টুইটারসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সংগঠিত হয়েছেন। অনলাইনে ‘#রিজাইন ক্যামেরন’ এবং ‘#ক্লোজ ট্যাক্স লুপহোলস’- কে কেন্দ্র করে বিক্ষোভ সংগঠিত হয়। কর ফাঁকির দায়ে আইসল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী সিগমুন্দুরের পদত্যাগের ঘটনাকে সামনে এনে ক্যামেরনবিরোধী প্রচার চলতে থাকে।
ডাউনিং স্ট্রিটের সামনে জড়ো হওয়া বিক্ষোভকারীদের অনেকে ‘পানামা টুপি’ পরে আসেন। তাদের হাতে ব্যানার, প্লাকার্ডে লেখা ‘ক্যামেরন যাও’। মুহুর্মুহু স্লোগান ওঠে, ‘ক্যামেরনকে পদত্যাগ করতেই হবে/কর ফাঁকি দেওয়া অপরাধ।’
আলোচিত পানামা পেপারস কেলেংকারিতে বিশ্বের অনেক দেশের রাষ্ট্রপ্রধান বেহাল অবস্থায় পড়েছেন। এর প্রথম শিকার হয়েছেন আইসল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী সিগমুন্ড গুনলাগসন। আর ক্যামেরন দ্বিতীয় শিকার (রাষ্ট্রপ্রধান) হতে যাচ্ছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
পানামার আইনি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান মোসাক ফনসেকার ১ কোটি ১৫ লাখ গোপন নথি ফাঁসের পর বিশ্বজুড়ে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। রাজনৈতিক চাপের মুখে পড়েছেন অর্থ পাচারকারী রাষ্ট্রপ্রধানরা। এ তালিকায় উঠে আসে ব্রিটিশ প্রধানমনন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের বাবার নাম। এ নিয়ে প্রাথমিক সমালোচনার মুখে ক্যামেরন বলেছিলেন, বাবার অফশোর কোম্পানিতে তার পরিবার কোনো সুবিধা পায়নি।
কিন্তু ঘটনার তিন দিন পর বৃহস্পতিবার ক্যামেরন স্বীকার করেছেন, তিনি ও তার স্ত্রী সামান্থা ক্যামেরন তার বাবা ইয়ান ক্যামেরনের অফশোর ট্রাস্টের শেয়ারের মালিকানা পেয়েছিলেন। তবে ক্যামেরনের দাবি, প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগেই তিনি ওই অংশীদারিত্ব বিক্রি করে দিয়েছেন এবং লভ্যাংশের ওপর যুক্তরাজ্যের নিয়ম অনুযায়ী আয়করও দিয়েছেন।
এ ছাড়া সম্প্রতি এক জরিপে দেখা গেছে, ক্যামেরনের প্রতি জনসমর্থন ৩৪ শতাংশে নেমে এসেছে। পানামা পেপারস প্রকাশ হওয়ার পর এ জরিপ করেছে ইউগভ নামের একটি সংস্থা। ফেব্রুয়ারিতে এমন একটি জরিপে ক্যামেরনের প্রতি জনসমর্থন ছিল ৩৯ শতাংশ। অন্যদিকে লেবার পার্টির নেতা জেরেমি করবিনের জনপ্রিয়তা ২৫ শতাংশ থেকে বেড়ে ৩০ শতাংশে দাড়িয়েছে।