ক্লাস রেখে শিক্ষকের ধান কাটল শিক্ষার্থীরা!
নাজিম উদ্দিন, বাংলাদেশ থেকেঃ ক্লাস রেখে এক সহকারী শিক্ষকের জমিতে ধান কেটেছে ময়মনসিংহের গৌরীপুরের পাছার উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সকালের নাশতায় দেয়া হয়েছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য বিতরণকৃত বিনা মূল্যের বিস্কুট আর সেমাই। গৃহস্থালি কাজের জন্যও নেয়া হয়েছে ৭-৮ জন ছাত্রী।
সোমবার ছাত্রদের ধান কাটার ছবি তোলার সময় দিগ্বিদিক ছুটাছুটি শুরু করলে এলাকায় তোলপাড় শুরু হয়।
এদিকে ছাত্রদের জোর করে আনেননি। টাকা বিনিময়ে ‘কামলা’ (শ্রমিক) হিসেবে কাজে এনেছেন উল্লেখ করে সমাধান প্লাস নামের কোচিং সেন্টারের শিক্ষক ও পাছার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আবু সাঈদ জানান, তার জমিতে ২২ জন দরিদ্র শিক্ষার্থী কাজ করছে।
এলাকাবাসী ও অভিভাবকদের অভিযোগ, প্রতি ১০ শতাংশ জমির ধান কাটা ও মাড়াই করতে প্রায় ১৫০০ টাকা খরচ হয়। ওই টাকা বাঁচাতেই প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক হয়েও আবু সাঈদ সমাধান প্লাস কোচিং সেন্টারের শিক্ষক হওয়ার সুযোগে উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রদের এনে ধান কাটাচ্ছে, যা অমানবিক।
ক্ষোভে ফুঁসছেন পাছার উচ্চ বিদ্যালয়ের অভিভাবকরাও। পাছার উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী রওনকের বাবা দুলাল মিয়া বলেন, সকালে আমার ছেলে সাঈদ স্যারের কোচিংয়ে যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হয়। পরে খবর পাই আমার ছেলেকে দিয়ে স্যার তার ক্ষেতের ধান কাটাচ্ছে। পরে বিষয়টি স্কুলের প্রধান শিক্ষককে জানালে আমার ছেলে বাড়ি ফিরে আসে।
তবে ছেলের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারি ধান কাটার জন্য স্যার তাকে কোনো টাকা দেয়নি।
ধান কাটায় নিয়োজিত কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, সাঈদ স্যারের প্রতি কাঠা জমির ধান ৭০০ টাকা চুক্তিতে কাটছি। তবে আমাদের দলের অনেকেই স্কুলে না গিয়ে টাকা ছাড়াও ধান কাটার কাজ করছে।
পাছার উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহ আরশাদুল হক বলেন, দুদিন ধরে স্কুলে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কম। পরে জানতে পারি শিক্ষার্থীরা স্কুল ফাঁকি দিয়ে এক প্রাথমিক স্কুলশিক্ষকের জমিতে ধান কাটছে। যেসব শিক্ষার্থী ধান কাটছে তাদের অধিকাংশই উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তান। কিন্তু কেন তারা পরের জমিতে ধান কাটছে বিষয়টি আমার বোধগম্য নয়। গৌরীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারহানা করিম বলেন, তদন্তে সাপেক্ষে জড়িত শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. জহির উদ্দিন জানান, এ নিয়ে তদন্ত চলছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেয়া যায়, পাছার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আবু সাঈদের বাড়ি সহনাটি ইউনিয়নের রাইশিমুল গ্রামে। তিনি শিক্ষকতার পাশাপাশি গ্রামে সমাধান প্লাস নামের কোচিং সেন্টার পরিচালনা করেন।
ওই কোচিং সেন্টারের শিক্ষার্থীদের নানা রকম প্রলোভন দেখিয়ে নিজের ধানক্ষেতে নিয়ে যান। কয়েকটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে কেউ ধান কাটছে, কেউ আনছে আবার কেউ মাড়াই কাজে ব্যস্ত। একই সঙ্গে রান্নাবান্নাসহ গৃহস্থালি কাজের জন্য ৭-৮ জন ছাত্রী তার বাড়িতে নিয়ে গেছেন।
এদিকে বোরো ধানের ক্ষেতে ছাত্রদের ধান কাটার ছবি তুলতে চাইলে ক্যামেরা দেখেই দিগ্বিদিক ছুটাছুটি করতে থাকেন।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. সাইফুল আলম বলেন, শিক্ষার্থীদের দিয়ে ধান কাটানোর বিষয়টি খোঁজ নিচ্ছি। স্কুলের প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোফাজ্জল হোসেন বলেন, যে স্কুলের শিক্ষার্থীরা ধান কাটায় অংশগ্রহণ করেছে ওই স্কুল কর্তৃপক্ষ যদি লিখিত অভিযোগ দেয় তাহলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।