ডেস্ক রিপোর্টঃ হামাস নেতাদের পৃথিবী থেকে নিশ্চিহ্ন করার ঘোষণা দিয়েছেন ইসরায়েলের নেতারা এবং বলেছেন ‘গাজা আগে যা ছিলো সেই অবস্থায় আর কখনো ফিরে যাবে না’।
“প্রতিটি হামাস সদস্য একজন মৃত ব্যক্তি,” হামাস যোদ্ধাদের ইসরায়েলে হামলা চালানোর ঘটনায় ১৩০০ মানুষ নিহত হবার পর এমন মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।
গাজার সম্ভাব্য অভিযানের নাম দিয়েছে ইসরায়েল- দ্যা অপারেশন সোর্ডস অফ আয়রন। ধারণা করা হচ্ছে, গাজার ইতিহাসে যত সামরিক পরিকল্পনা এর আগে হয়েছে, এটি হবে তার যে কোনটির চেয়ে অনেক বেশি জোরালো অভিযান।
কিন্তু এটা কি বাস্তবসম্মত সামরিক অভিযান? সামরিক কমান্ডাররা কীভাবে এটিকে সফল করে তুলবেন?
গাজা উপত্যকায় স্থল অভিযান মানে হলো শহরের ঘরে ঘরে লড়াই, যা বেসামরিক নাগরিকদের জীবন ভয়াবহ ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলতে পারে।
বিমান হামলায় এর মধ্যেই শত শত মানুষের মৃত্যু হয়েছে এবং চার লাখেরও বেশি মানুষ তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে চলে গেছে।
এখন ইসরায়েলির সামরিক বাহিনীর দায়িত্ব হলো ১৫০ জন জিম্মিকে উদ্ধার করা, যাদের গাজার অজানা জায়গায় রাখা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ইসরায়েলি ডিফেন্স ফোর্স বা আইডিএফ হারজি হালেভি হামাসকে ‘বিলুপ্ত’ করে দেয়ার অঙ্গীকার করেছেন এবং এর একজন নেতাকে বিশেষভাবে চিহ্নিত করেছেন।
কিন্তু তাহলে হামাসের ষোল বছরের সহিংস শাসনের পর গাজা কেমন হবে সেটা নিয়ে কী কোন লক্ষ্য কাজ করছে ?
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর বেতারের সামরিক বিশ্লেষক আমির বার শালম বলেছেন, “ইসরায়েল হামাসের সব সদস্যকে বিলুপ্ত বা অকার্যকর করা সম্ভব হবে বলে মনে করি না। কিন্তু আপনি তাদের দুর্বল করতে পারেন যাতে করে এর কোন অভিযান চালানোর সক্ষমতা না থাকে”।
এটা হতে পারে অনেক বেশি বাস্তববাদী লক্ষ্য। হামাসের সঙ্গে চারটি যুদ্ধ করেছে ইসরায়েল। কিন্তু এর রকেট হামলা ঠেকানোর প্রতিটি চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র লেঃ কর্নেল জোনাথন কনরিকাস বলেছেন যুদ্ধের পর কোন ইসরায়েলি নাগরিককে হত্যা বা হুমকির সামরিক সক্ষমতা আর হামাসের থাকবে না।
স্থল অভিযানে যত ঝুঁকি
অনেকগুলো বিষয় আছে যা সামরিক অভিযানকে ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করতে পারে।
ইসরায়েলের আক্রমণের জন্য প্রস্তুত থাকবে হামাসের সামরিক শাখা আল কাশাম ব্রিগেড। বিভিন্ন জায়গায় বিস্ফোরক বসানো হবে। সেট করা হবে অ্যামবুশ। গাজার বিস্তৃত টানেল নেটওয়ার্ক ইসরায়েলি সৈন্যদের ওপর হামলায় ব্যবহৃত হবে।
২০১৪ সালে ইসরায়েলি পদাতিক ব্যাটালিয়ন মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়েছিলো অ্যান্টি ট্যাংক মাইন, স্নাইপার আর অ্যামবুশের কারণে। গাজা শহরের উত্তরাঞ্চলের কাছে শত শত বেসামরিক নাগরিক মারা গিয়েছিলো সেই লড়াইয়ে।
এ কারণেই ইসরায়েল এবার এগার লাখ বেসামরিক নাগরিককে দ্রুত গাজা ছাড়তে বলেছে। এরা গাজা উপত্যকার উত্তরাঞ্চলে বসবাস করে।
ইসরায়েল এবার সতর্ক করে বলেছে যুদ্ধ কয়েক মাস স্থায়ী হতে পারে। তারা রেকর্ড সংখ্যক ৩ লাখ ৬০ হাজার রিজার্ভ সেনাকে জড়ো করেছে।
প্রশ্ন হলো ফিরে যাবার জন্য আন্তর্জাতিক চাপ ছাড়াই কতদিন এটা অব্যাহত রাখতে পারবে ইসরায়েল।
জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা বলেছে গাজা দ্রুত ‘জাহান্নামের গর্তে’ পরিণত হচ্ছে। মৃত্যুর সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। পানি, বিদ্যুৎ ও তেল সরবরাহ বন্ধ আছে। এখন মোট জনসংখ্যার অর্ধেকেই গাজা ছাড়তে বলা হচ্ছে।
“সরকার ও সামরিক বাহিনী মনে করছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তাদের সাথে আছ- বিশেষ করে পশ্চিমা নেতারা। এখন চিন্তা হলো অবস্থান সংহত করো, আমাদের হাতে অনেক সময় আছে,” বলছিলেন ইসরায়েলের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা বিষয়ক সাংবাদিক ইয়সি মেলমান।
কিন্তু দ্রুত হোক আর বিলম্বেই হোক যখন ক্ষুধার্ত মানুষের ছবি আসবে তখনি ইসরায়েলের সহযোগী দেশগুলো এর মধ্যে হাত দিবে।