গাজার দক্ষিণে স্থল অভিযান শুরু, ৮০০ ‘সন্ত্রাসী টানেল’ পাওয়ার দাবি ইসরায়েলের

Spread the love

ডেস্ক রিপোর্টঃ তিন দিনের ভারী বোমাবর্ষণ শেষে এবার গাজার দক্ষিণাঞ্চলে স্থল অভিযান শুরু করেছে ইসরায়েলি সৈন্যরা। ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর রেডিওতে প্রচারিত প্রাথমিক খবরে নিশ্চিত করা হয়েছে যে বর্তমানে তারা খান ইউনিসের উত্তরে অভিযান চালাচ্ছে।

এছাড়া খান ইউনিস শহরের কাছাকাছি জায়গায় ইসরায়েলি একটি ট্যাঙ্কের ছবিও যাচাই করেছে বিবিসি।

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী আইডিএফের প্রধান দেশটির সৈন্যদের জানিয়েছেন যে, তারা দক্ষিণ গাজায় জোরালোভাবে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর গাজা ডিভিশনের অতিরিক্ত সৈন্যদের সাথে নিজেদের সামরিক লক্ষ্যের বিষয়ে কথা বলেন আইডিএফ প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল হারজি হালেভি। এ সময় হামাস কমান্ডারদের হত্যার বিষয়েও কথা বলছিলেন তিনি।

“গাজা উপত্যকার উত্তরাঞ্চলে আমরা দৃঢ়তার সাথে জোরালোভাবে যুদ্ধ করেছি। এখন আমরা গাজা উপত্যকার দক্ষিণাঞ্চলেও একইভাবে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছি,”- বলেন ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রধান।

আইডিএফের একজন মুখপাত্রও পরে নিশ্চিত করেছেন যে, “সন্ত্রাসীদের সাথে সম্মুখ যুদ্ধ চালিয় যাওয়া” সহ পুরো গাজা উপত্যকা জুড়ে “স্থল অভিযান সম্প্রসারণ অব্যাহত রেখেছে” ইসরায়েল।

এদিকে, কাতারের মধ্যস্থতায় ইসরায়েল-গাজা যুদ্ধে যে এক সপ্তাহের বিরতি ঘোষণা করা হয়েছিল, সেটি গত শুক্রবার শেষ হয়।

এরপর গাজায় আবারও ব্যাপকভাবে বোমা হামলা শুরু করে ইসরায়েল, যেটিকে এখন পর্যন্ত হওয়া সবচেয়ে বড় হামলা হিসাবে বর্ণনা করেছেন খান ইউনিসের বাসিন্দাররা।

সাত দিনের যুদ্ধবিরতিতে হামাস ইসরায়েলি কারাগার থেকে ২৪০ জন ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দিয়েছে। আর তার বিনিময়ে হামাস ১১০ জন জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছে।

রোববার সকালে খান ইউনিসের বেশ কয়েকটি এলাকার বাসিন্দাদের দ্রুত সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।

গাজার উত্তরাঞ্চলে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর হাজার হাজার উদ্বাস্তু দক্ষিণাঞ্চলে এসে আশ্রয় নেয়। এসব উদ্বাস্তুদের মধ্যেই হামাসের সদস্যরা লুকিয়ে রয়েছে বলে বিশ্বাস করে ইসরায়েল।

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী এখন গাজার দক্ষিণাঞ্চলকে তাদের আক্রমণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করেছে।

যা বলছে জাতিসংঘ

গত কয়েকদিনে দক্ষিণাঞ্চলে যেভাবে হামলা চালানো হয়েছে এবং এর ফলে সেখানকার হাসপাতাল গুলোতে যে চিত্র দেখা গেছে, সেটি রীতিমত আতঙ্কের বলে বর্ণনা করেছেন জাতিসংঘের একজন কর্মকর্তা।

গাজার কোন হাসপাতালে আগে কখনও এমন অবস্থা দেখেননি বলে জানিয়েছেন তিনি। খান ইউনিসের নাসের মেডিকেল হাসপাতালকে “যুদ্ধক্ষেত্র” হিসেবে বর্ণনা করেছেন ইউনিসেফের কর্তকর্তা জেমস এল্ডার।

তবে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর একজন উপদেষ্টা অবশ্য বলেছেন যে, তাদের অভিযানে যেন বেসামরিক নাগরিকরা হতাহত না হন, সেজন্য “সর্বোচ্চ চেষ্টা” চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল।

ইউনিসেফের কর্তকর্তা জেমস এল্ডার বিবিসিকে বলেন, নাসের হাসপাতালের কাছে তিনি ধারাবাহিকভাবে বড় বড় বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পাচ্ছেন। গত কয়েক দিনের হামলায় শিশুদের অনেকেই গুরুতর আহত হয়েছে।

আহতদের মধ্যে অনেক শিশুর মাথায় আঘাত যেমন দেখা যাচ্ছে, তেমনি কারও কারও শরীর আগুনে খুব খারাপভাবে পুড়ে গেছে।

“এই হাসপাতালটিতে আমি নিয়মিত যাই। সেখানে ভর্তি শিশুরা এখন আমাকে চেনে। শিশুদের পরিবারের সদস্যরাও আমাকে চেনে। তারা আমার হাত ধরে অনুনয়ের সুরে বলছে যে, দয়া করে আমাদের নিরাপদ কোথাও সরিয়ে নিয়ে যান। কিন্তু কোন জায়গাটা আসলে নিরাপদ বলেন?”

তিনি আরও বলেন, “এটা খুবই দু:খজনক যে, তারা আমাকে এমন একটি প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করছে, যার একমাত্র উত্তর হচ্ছে: গাজার কোথাও নিরাপদ নয়।“

ইসরায়েলের গত কয়েকদিনের টানা বোমা হামলায় ৫০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে বলে গাজায় হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে।

আর এই যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা ১৫ হাজার ৫০০ ছাড়িয়েছে বলেও জানিয়েছেন তারা।

গাজায় অবস্থান করা ব্রিটিশ-ফিলিস্তিনি নাগরিক মোহাম্মদ গালায়নি বিবিসিকে বলেছেন যে, সেখানকার শহরের পরিস্থিতি ভয়াবহ রকম বিপর্যয়কর।

সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার আগে তিনি বিবিসিকে ফোনে বলেছিলেন, “মানুষ ৫০ দিন বা তারও বেশি সময় ধরে ইসরায়েলের নৃশংস আক্রমণ সহ্য করে চলেছে এবং জীবন ধারণের জন্য যা যা প্রয়োজন, যেমন – খাদ্য, পানি, বিদ্যুৎ, স্যানিটেশন এবং বর্জ্য পরিষেবার অবস্থা খুবই নাজুক।”

মি. গালায়নি একজন বায়ুদূষণ বিশেষজ্ঞ, যিনি যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টারে থাকেন। গত সাতই অক্টোবরের হামলার কিছুদিন আগে মাকে দেখতে তিন মাসের সফরে গাজায় এসেছিলেন তিনি। যুদ্ধ শুরু হওয়ায় এখন সেখানেই আটকো পড়ে আছেন মি. গালায়নি।

গত সাতই অক্টোবর দক্ষিণ ইসরায়েলে হামাসের হামলার পর গাজায উপত্যকায় হামলা শুরু করে ইসরায়েল। হামাসের হামলায় প্রায় ১২,০০ জন নিহত হন। এছাড়া ২৪০ জনকে জিম্মি করা হয়।

অন্যদিকে, শুক্রবার থেকে আবারও হামলা শুরু হওয়ার পর গাজা থেকে ইসরায়েলে নিয়মিত রকেট বোমা ছোড়া হচ্ছে বলে জানা গেছে।

শনিবার তেল আবিবের নিকটবর্তী হলন শহরের ২২ বছর বয়সী এক ব্যক্তি আহতও হয়েছেন, যাকে পরে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

অন্যদিকে, ইসরায়েলের নির্দেশের পর খান ইউনিসে আশ্রয় নেওয়া কয়েক লাখ মানুষের অনেকেই ইতিমধ্যে অন্যত্র সরে গেছেন।

জাতিসংঘের সর্বশেষ হিসেবে বলা হয়েছে যে, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর গাজায় প্রায় ১৮ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।

বিবিসির সাথে কথা বলার সময়, জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক প্রধান ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি বলেছেন, গাজা উপত্যকায় ফিলিস্তিনিদের “এমন একটি ছোট জায়গায় আরও বেশি করে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে, যেটি ইতিমধ্যেই খুব ছোট।”

অন্যদিকে, আইডিএফের অনলাইনে হামলার জন্য নির্ধারিত এলাকার মানচিত্র পোস্ট করা শুরু হয়েছে। সেখানে দাবি করা হয়েছে যে, গাজার সাধারণ নাগরিকদের সরে যেতে বলে বিমান থেকে লিফলেট ফেলা হয়েছে।

বিবিসির সাথে রোববার কথা হয়েছে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সিনিয়র উপদেষ্টা মার্ক রেগেভের। তিনি বলেছেন, বেসামরিক নাগরিকরা মোটেও তাদের হামলার লক্ষ্যবস্তু নয়।

কিন্তু হামাস যেহেতু ঐসব বেসামরিক এলাকায় আশ্রয় নিয়েছে, ফলে গাজার সাধারণ নাগরিকদের রক্ষা করা আরও কঠিন হয়ে পড়েছে।

গাজায় হামাসের ব্যবহৃত ৮০০টির মত “সন্ত্রাসী টানেল” পাওয়া গেছে বলে বলছে আইডিএফ। এর মধ্যে ৫০০টি ধ্বংস করা হয়েছে বলেও জানিয়েছে তারা।

আর যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর বিভিন্ন “সন্ত্রাসী লক্ষ্যবস্তুতে” প্রায় দশ হাজারের মত বিমান হামলা চালানো হয়েছে বলেও জানিয়েছে আইডিএফ।


Spread the love

Leave a Reply