‘চোখ বেঁধে, হ্যান্ডকাফ পড়িয়ে তুলে নিয়ে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়’- বলেছেন নাহিদ ইসলাম

Spread the love

বাংলাদশে কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম অভিযোগ করেছেন তাকে চোখ বেঁধে তুলে নিয়ে তার ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়েছে।

ডিবি পরিচয়ে কোন একটি ‘রাষ্ট্রীয় বাহিনী’ তাকে তুলে নিয়ে যায় বলে তিনি অভিযোগ করেন।

বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন, শারীরিক নির্যাতনের কারণে তিনি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

তিনি বলেন, “আঘাতের কারণে আমার দুই কাঁধ ও বাম পায়ের রক্ত জমাট বেঁধে আছে। শুধু শারীরিক নয়, মানসিকভাবেও নির্যাতন করা হয়েছে আমাকে”।

“আন্দোলনে আমি যাতে নেতৃত্ব বা নির্দেশনা দিতে না পারি সে কারণেই হয়তো আমাকে তুলে নেয়া হয়েছিল”, বলেন মি. ইসলাম।

কোটা নিয়ে উচ্চ আদালতের রায়ের প্রতিক্রিয়া, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মধ্যে সমন্বয় কিংবা ভবিষ্যত কর্মসূচি নিয়েও বিবিসি বাংলার সাথে কথা বলেন মি. ইসলাম।

চোখ বেঁধে তুলে নিয়ে নির্যাতনের অভিযোগ

গত ২০ই জুলাই শুক্রবার মধ্যরাতে নন্দীপাড়ার এক বন্ধুর বাসা থেকে কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলামকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় বলে শনিবার বিবিসি বাংলার কাছে অভিযোগ করেছিলেন তার বাবা বদরুল ইসলাম।

রোববার সেখান থেকে মুক্ত হওয়ার পর নাহিদ ইসলাম জানান, তুলে নিয়ে যাওয়ায় সময় ওই বাসার নিচে পুলিশ ও বিজিবির গাড়িসহ তিন-চারটি গাড়ি ছিল। সেখানে থাকা একটি প্রাইভেট কার বা মাইক্রোতে তাকে ওঠানো হয়।

“সে সময় তিন থেকে চার স্তরের কাপড় দিয়ে আমার চোখ বাঁধা হয় এবং হ্যান্ডকাফ পড়ানো হয়। কিছু সময় পর গাড়ি থেকে নামিয়ে আমাকে একটি বাড়ির রুমে নেওয়া হয়। আমাকে কিছু জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় এবং পরবর্তীতে আমার উপর মানসিক ও শারীরিক টর্চার শুরু করা হয়” বলছিলেন মি. ইসলাম।

তিনি বলেন, “এক পর্যায়ে আমি অজ্ঞান হয়ে যাই। এরপর আমার কোন স্মৃতি নাই।”

নাহিদ ইসলাম বলেন, “রোববার ভোরে চারটা থেকে পাঁচটার দিকে পূর্বাচল এলাকায় আমার জ্ঞান ফেরে। পরে আলো ফুটলে কিছু দূর হেঁটে একটি সিএনজি নিয়ে বাসায় চলে আসি”।

রোববার দুপুর ১২টায় একটি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি হন তিনি। আঘাতের কারণে তার দুই কাঁধ ও বাম পায়ের রক্ত জমাট বেঁধে আছে বলে বিবিসিকে জানান নাহিদ ইসলাম।

সহিংসতার প্রেক্ষিতে কারফিউ জারি করেছে সরকার - ফাইল ছবি

‘আদালতের রায় অস্পষ্ট’

কোটা সংস্কার দাবিতে চলমান আন্দোলনের মধ্যে রোববার কোটা পুর্নবহালে হাইকোর্টের আদেশ বাতিল করে আপিল বিভাগ।

এই রায়ে বলা হয়েছে, এখন থেকে সরকারি চাকরিতে ৯৩ শতাংশ নিয়োগ হবে মেধার ভিত্তিতে। বাকি সাত শতাংশের মধ্যে পাঁচ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা, এক শতাংশ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কোটা আর এক শতাংশ প্রতিবন্ধী-তৃতীয় লিঙ্গ কোটা হিসাবে থাকবে।

এতে, সরকার চাইলে এই কোটার হার কম-বেশি করতে পারবে। অনতিবিলম্বে সরকারকে এই বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করতে বলেছে সুপ্রিম কোর্ট।

এই রায়ের রায়ের পর রোববার রাতে হাসপাতালে চিকিৎসারত অবস্থায় নাহিদ ইসলাম বিবিসি বাংলাকে বলেন, “রায়ে আমরা দেখেছি সাত শতাংশ কোটার কথা বলা হয়েছে। তবে এটা এখনো আমাদের কাছে স্পষ্ট না যে সকল গ্রেডে নাকি শুধুমাত্র প্রথম শ্রেণীর চাকরির ক্ষেত্রে”।

তিনি বলেন, “এটা যদি সকল গ্রেডের ক্ষেত্রে হয়ে থাকে সেটাকে আমরা ইতিবাচক মনে করি। আর সকল গ্রেডের না হলে আমাদের পুর্নাঙ্গ দাবিকে প্রতিফলন করে না”।

“সরকারের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত বা পরিপত্র না আসা পর্যন্ত আমরা ভরসা পাচ্ছি না” বলছিলেন মি. ইসলাম।

দেড় মাস ধরে ছাত্র ছাত্রীরা  কোটা সংস্কারের দাবীতে আন্দোলন চালাচ্ছেন - ফাইল ছবি

শাটডাউন’ নিয়ে আন্দোলনকারীদের অবস্থান

কোটা ইস্যুতে শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনের মধ্যে গত বৃহষ্পতিবার ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচী ঘোষণা করে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন।

প্রথম দিনের কর্মসূচীতে দেশজুড়ে ব্যাপক সহিংসতা ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। এরপরই আন্দোলনকারীরা এই একই কর্মসূচী চালিয়ে নেয়ার ঘোষণা দেয়। রোববার পর্যন্ত এই শাটডাউন চলছিল।

এমন অবস্থায় এই কর্মসূচী চলবে কী এমন প্রশ্ন জানতে চাওয়া হয়েছিল কোটা সংস্কার আন্দোলনের অনত্যম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলামের কাছে।

জবাবে তিনি বলেন, “আমি আজকেই মুক্ত হলাম। এই নিয়ে অন্য সমন্বয়করা কী সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তা আমার জানা নেই।”।

“দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে শাটডাউন কর্মসূচী অব্যাহত নাও থাকতে পারে” বলে বিবিসিকে জানান মি. ইসলাম।

দাবি নিয়ে আন্দোলনকারীদের অবস্থান

কোটা সংস্কার করে উচ্চ আদালত রায় দিলেও আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একটা অংশ।

সংগঠনটির বেশ কয়েকজন সমন্বয়ক বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে অনেক শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার বিচার না হওয়া পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।

সমন্বয়কদের কেউ কেউ বলছেন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলন দমন করতে এখন পর্যন্ত তিনশো’র বেশি বিক্ষোভকারীদের হত্যা করা হয়েছে। দুই জন সমন্বয়ক নিখোঁজ হয়েছে। প্রকৃত ঘটনা ধামাচাপা দিতে সরকার ইন্টারনেট সেবা বন্ধ রেখেছে।

এমন অবস্থায় কোটা অবস্থায় দু’টি পক্ষের কাছ থেকে আলাদাভাবে বেশ কয়েক দফা দাবি উপস্থাপন করা হয়েছে।

যেখানে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যাহার, সড়ক পরিবহন মন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের মুক্তি, দ্রুত ইন্টারনেট সেবা চালু ও ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি রয়েছে।

আটক অবস্থা থেকে মুক্ত হওয়ার পর নাহিদ ইসলাম বিবিসি বাংলাকে বলেন, “ইন্টারনেট বন্ধ হওয়ার আগে আমরা আমাদের দাবিগুলো পেশ করছিলাম। ইন্টারনেট বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে আমরা ফরমুলেশন করতে পারি নাই। অনেকে আবার নিরাপত্তাজনিত কারণে মোবাইল ফোন ব্যবহার থেকে বিরত থাকছে”।

তিনি জানান, যোগাযোগ করতে সমস্যা হওয়ার কারণে সমন্বিতভাকে কোন দাবি চুড়ান্ত করা যায় নি। যে কারণে বিভিন্ন সমন্বয়ক পরিস্থিতির প্রেক্ষাপট অনুযায়ী সেই কাছাকাছি দাবিগুলো বিছিন্ন বা বিক্ষিপ্তভাবে মিডিয়ায় বলেছেন।

নাহিদ ইসলাম বলেন, “এই মুহুর্তে আমাদের চাওয়াটা আইনশৃঙখলা বাহিনী প্রত্যাহার করে আমাদের ক্যাম্পাসে প্রবেশের সুযোগ দেয়া এবং সমন্বয়কদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। তাহলে সমন্বয়করা সবাই একসাথে বসে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সাথে আলোচনা করে চূড়ান্ত দাবি পেশ করতে পারবো”।


Spread the love

Leave a Reply