জামালগঞ্জে সরকারি বিধি ভেঙ্গে ৩৩ উর্দ্ধ যুবককে গ্রাম পুলিশে নিয়োগ
সংবাদ দাতাঃ সুনামগঞ্জ জেলার জামালগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুশফিকুন নুর কতৃক সরকারি চাকুরীতে গ্রাম পুলিশ নিয়োগের অনিয়ম ও পতিত স্বৈরাচারের দোসরদের পূর্ণবাসনও নানামুখী এজেন্ডা বাস্তবায়নের বিরুদ্ধে মানববন্ধন করেন জামালগঞ্জ উপজেলাবাসী। মঙ্গলবার সকাল ১১ ঘটিকায় উপজেলা গেইটের সামনে অনুষ্ঠিত হয়। মানব বন্ধনে জামালগঞ্জ উপজেলাবাসীর অভিযোগ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মুশফিকুন নুর সরকারি নিয়োগের শর্তাবলি লঙ্ঘন করে গ্রাম পুলিশ সহ নানা নিয়োগ দিয়ে যাচ্ছেন। নিয়োগ স্বজনপ্রীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ তুলেছেন এলাকাবাসী। তারা বলেন, অবিলম্বে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অপসারণের পাশাপাশি স্বেচ্ছাচারিতা ও স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে নিয়োগ বাতিল করতে হবে।
জানা যায় সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলায় গ্রামপুলিশ নিয়োগে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুশফিকুন নূরের বিরুদ্ধে অনিয়মের প্রমাণ পাওয়া গেছে। সরকারি নিয়োগে বয়স সীমার বিধি ভেঙ্গে ৩৩ উর্দ্ধ এক যুবককে গ্রাম পুলিশ হিসাবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
জানা যায় , ২০২৪ সালের ২২শে ফেব্রুয়ারি সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুদ রানা কর্তৃক জামালগঞ্জ উপজেলায় গ্রাম পুলিশ সহ অন্যান্য পদে একটি সরকারি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির কপি অনুযায়ী দেখা যায় আবেদনের শর্তাবলীর মধ্যে উল্লেখ রয়েছে সাধারণ প্রার্থীর বয়স হতে হবে অনুর্ধ ৩০ বছর , মুক্তি যোদ্ধা কোটায় বয়স হতে হবে অনুর্ধ ৩২ বছর এবং শিক্ষাগত যোগ্যতা হতে হবে অষ্টম শ্রেণী পাশ। আবেদনের সাথে জমা দিতে হবে জাতীয় নাগরিক সনদ পত্র বা পরিচয় পত্র ও শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ।
২০২৪ সালের ২২শে ফেব্রুয়ারি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়ার পর কিছু দিনের মধ্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুদ রানা বদলি হয়ে অন্যত্র চলে যান এর স্থলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দেন মিসেস মুশফিকুন নূর। উক্ত নিয়োগটি সম্পন্ন ভাবে তদারকি করতে থাকেন নতুন নির্বাহী কর্মকর্তা মিসেস মুশফিকুন নূর। আবেদন কারীদের আবেদন সহ আনুষাঙ্গিক সকল কাগজপত্র যাচাই ও নিয়োগের সকল প্রক্রিয়া তদন্ত করে ২০২৪ সালের ১২ই ডিসেম্বর নিয়োগটি সম্পন্ন হয় এতে গ্রাম পুলিশ সহ অন্যান্য পদে মোট সাতজন নিয়োগ পান।
চূড়ান্ত নিয়োগে পত্রে দেখা যায় যে নজরুল ইসলাম পিতা- আবুল হোসেন হোসেন গ্রাম- দক্ষিণ কামলাবাজ ,ইউনিয়ন- জামালগঞ্জ সদর , সুনামগঞ্জ গ্রাম পুলিশ পদে নিয়োগ পান।
নিয়োগটি প্রকাশ্যে আসার সাথে সাথে এলাকাবাসি ও বঞ্চিত প্রার্থীদের কাছ থেকে অভিযোগ উঠে যে নজরুলের বয়স ৩৩ বছরের বেশি এবং তিনি পঞ্চম শ্রেণী পাশ। বিষয়িট সত্যতা যাচাই করতে গিয়ে দেখা যায় নজরুল ইসলামের জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন কপিতে উল্লেখ রয়েছে নজরুল ইসলামের জন্ম তারিখ ১৫ই আগস্ট ১৯৯১ সালে এবং শিক্ষাগত যোগ্যতা পঞ্চম শ্রেণী ,নজরুলের নিয়োগটি নিয়ে এলাকায় চাঞ্চল্যের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে , এলাকবাসী বলেছেন যেখানে নিয়োগের ক্ষেত্রে সরকারি বিধি বয়স হতে হবে ৩০ অনুর্ধ ও অষ্টম শ্রেণী পাশ তাহলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কিভাবে এবং কিসের বিনিময়ে সরকারি নিয়ম ভঙ্গ করে নিয়োগ প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করলেন ? প্রশ্ন রয়ে যায় জনমনে।
গ্রাম পুলিশ নিয়োগে প্রাথীর আবেদনপত্রের ভিত্তিতে ইউনিয়ন চেয়ারম্যান থানার ওসি , উপজেলা আনসার অফিসার ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবেদন পত্রের সাথে দেয়া সকল সনদ সহ সব প্রক্রিয়া যাচাই বাছাই করে থাকেন। চূড়ান্ত যাচাই বাছাই শেষে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগ টি চূড়ান্ত করে থাকেন।
এলাকাবাসী ও যোগ্যতা সম্পন্ন বঞ্চিত প্রার্থীরা প্রশ্ন তুলেছেন যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শোঃ নিয়োগ কর্তারা কি নজরুল ইসলামের সনদ গুলো দেখেন নি , তারা বলছেন ক্ষমতার অপব্যাবহার করে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের যোগ সাজসে জালিয়াতির মাধ্যমে সরকারি বিধি ভঙ্গ করে অর্থের বিনিময়ে নজরুল ইসলামকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে যা একটি আইনগত অপরাধ।
সামসুজ্জামান নামক এক বঞ্চিত প্রার্থী অভিযোগ করেন, যে বয়স ও শিক্ষাগত যোগ্যতা সহ তিনি একজন যোগ্য প্রার্থী এবং আবেদনের পর তাঁর সকল পরীক্ষাও ভালো হয়েছে কিন্তু নজরুল ইসলামকে নিয়োগ দিতে গিয়ে তাকে নিয়োগ থেকে বঞ্চিত করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুশফিকুন নূর। সামসুজ্জামান এই নিয়োগটির সঠিক তদন্ত দাবি করেন এবং অবৈধ নিয়োগ পাওয়া নজরুল ইসলামের নিয়োগ বাতিল করার অনুরধ জানান।
অভিযোগের ভিত্তিতে নিয়োগটির সাথে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করলে , জামালগঞ্জ থানার ওসি শ.ম কামাল হোসেন জানিয়েছেন তিনি সঠিক তথ্য দিয়েছেন তবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাই ভালো জানেন নিয়োগটি সম্পর্কে , অন্যরাও একই কথা বলেছেন।
এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুশফিকুন নূর কাছে জানতে গেলে তিনি সঠিক ব্যাখ্যা দিতে পারেননি। তবে তিনি বলেছে বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন।